ঈশ্বরের বিষয়ে তোমার উপলব্ধি কী?
মানুষ দীর্ঘকাল ঈশ্বরে বিশ্বাস করেছে, তবুও তাদের বেশীরভাগেরই “ঈশ্বর” শব্দটি কী বোঝায় সে বিষয়ে কোনো উপলব্ধি নেই, তারা শুধুমাত্র বিহ্বলভাবে অনুসরণ করে যায়। ঠিক কী কারণে মানুষের ঈশ্বরে বিশ্বাস করা উচিত, অথবা ঈশ্বর কী, সে বিষয়ে তাদের কোনো সূত্র নেই। যদি মানুষ ঈশ্বর কী তা না জেনেই ঈশ্বরকে শুধু বিশ্বাস এবং অনুসরণ করতে জানে, এবং যদি তারা ঈশ্বরকেও না চেনে, তাহলে এটা কি কেবল খুব বড় পরিহাস নয়? যদিও, এতদূর এসে মানুষ অনেক স্বর্গীয় রহস্যের সাক্ষী হয়েছে এবং পূর্বের অ-বোধগম্য অনেক গভীর জ্ঞান শুনেছে, তবুও তারা মানুষের দ্বারা পূর্বে অচিন্তিত সর্বাপেক্ষা মৌলিক সত্যের মধ্যে অনেকগুলির সম্পর্কেই অজ্ঞ। কেউ কেউ বলতে পারে, “আমরা বহু বছর ধরে ঈশ্বরে বিশ্বাস করেছি। ঈশ্বর কী, তা আমরা কীভাবে না জেনে থাকতে পারি? এই প্রশ্নটি কি আমাদের ছোট করে না?” বাস্তবে, মানুষ আজ আমাকে অনুসরণ করলেও, তারা বর্তমানের কাজের কিছুই জানে না, এমনকি তারা সবচেয়ে স্পষ্ট এবং সরল প্রশ্নগুলিও উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়, ঈশ্বরের বিষয়ে এই ধরনের অত্যন্ত জটিল প্রশ্নগুলির উপলব্ধি করা তো আরও দূরের বিষয়। জেনে রাখো তোমার যে সমস্ত প্রশ্নের বিষয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই, যেগুলিকে তুমি শনাক্ত করোনি, সেগুলি বোঝা তোমার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তুমি শুধুই ভিড়কে অনুসরণ করতে জানো, আসলে নিজেকে কী দিয়ে সজ্জিত করা উচিত সে বিষয়ে তুমি কোনো মনোযোগ দাও না বা পরোয়া করো না। তুমি কি সত্যিই জানো কেন তোমার ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস থাকা উচিত? তুমি কি সত্যিই জানো ঈশ্বর কী? তুমি কি সত্যিই জানো মানুষ কী? একজন ঈশ্বরবিশ্বাসী হিসাবে যদি তুমি এই বিষয়গুলি বুঝতে অসমর্থ হও, তাহলে তুমি কি একজন ঈশ্বরবিশ্বাসীর মর্যাদা হারাও না? আমার বর্তমানের কাজ হল: মানুষদের নিজ সারসত্য বোঝানো, আমি যা করি তার সমস্তটা বোঝানো এবং ঈশ্বরের প্রকৃত মুখকে জানানো। এটা আমার পরিচালনামূলক পরিকল্পনার অন্তিম কার্য, আমার কাজের শেষ পর্যায়। এই কারণেই আমি জীবনের সকল রহস্য তোমাদের আগেই বলে দিচ্ছি, যাতে তোমরা আমার থেকে সেগুলি গ্রহণ করতে পারো। এটা অন্তিম যুগের কাজ হওয়ায় আমাকে অবশ্যই তোমাদের জীবনের সমস্ত সত্য বলতে হবে যা তোমরা আগে কখনো গ্রহণ করতে সক্ষম ছিলে না, যদিও তোমরা অত্যন্ত অভাবগ্রস্ত এবং অত্যন্ত অ-সজ্জিত হওয়ার কারণে তা বুঝতে বা বহন করতে অক্ষম। আমি আমার কাজ শেষ করব; আমার করণীয় কাজটি আমি সম্পূর্ণ করব এবং তোমাদের প্রতি যে সমস্ত দায়িত্ব অর্পণ করেছি তা বলবো, পাছে অন্ধকার নেমে আসার পরে তোমরা আবার বিপথগামী হয়ে পড়ো এবং শয়তানের পরিকল্পনায় পতিত হও। এমন অনেক পথ আছে যা তোমরা বোঝো না, অনেক বিষয়েই তোমাদের জ্ঞান নেই। তোমরা এত অজ্ঞ; আমি তোমাদের উচ্চতা এবং ত্রুটিগুলির বিষয়ে ভালই জানি। অতএব, অনেক বাক্য তোমাদের অবোধ্য হলেও আমি তোমাদের এই সমস্ত সত্য বলতে ইচ্ছুক, যেগুলি তোমরা আগে কখনও গ্রহণ করতে সক্ষম ছিলে না, কারণ বর্তমান আত্মিক উচ্চতায় তোমরা আমার কাছে তোমাদের সাক্ষ্যে দৃঢ় থাকতে সক্ষম কিনা-এটা নিয়ে আমি চিন্তায় থাকি। এমনটা নয় যে আমি তোমাদের সামান্য মনে করি; তোমরা হলে সেই সকল পশু যাদের এখনও আমার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যাওয়া বাকি, এবং তোমাদের অন্তরে কতটুকু মহিমা রয়েছে তা একেবারেই আমার চোখে পড়ে না। আমি তোমাদের ওপর কাজ করতে আমার অনেক শক্তি ব্যয় করলেও তোমাদের মধ্যে ইতিবাচক উপাদানের বস্তুত অস্তিত্ব নেই বলেই মনে হয় আর নেতিবাচক উপাদানগুলো আঙুলে গোনা যায়, এবং সেগুলো কেবলমাত্র শয়তানকে লজ্জিত করার সাক্ষ্য হিসাবে কাজ করে। তোমাদের মধ্যে আর যা কিছু আছে তা হল শয়তানের বিষ। তোমরা আমার দিকে এমনভাবে তাকাও যেন তোমরা পরিত্রাণের ঊর্ধ্বে। বিষয়গুলি যেমন, তাতে আমি তোমাদের বিভিন্ন অভিব্যক্তি এবং আচরণ দেখি এবং পরিশেষে, তোমাদের প্রকৃত আত্মিক উচ্চতা জানি। এই কারণেই আমি সর্বদা তোমাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি: নিজেদের মতো করে জীবনযাপনের জন্য ছেড়ে দেওয়ার পর, মানুষেরা কি সত্যিই বর্তমানে যেমন আছে তার মতো বা তার থেকে ভালো থাকতে পারবে? তোমাদের অপরিণত আত্মিক উচ্চতা কি তোমাদের উদ্বিগ্ন করে না? তোমরা কি সত্যিই ইসরায়েলের মনোনীত মানুষদের মতো হতে পারবে—যারা সর্বদা আমার প্রতি এবং কেবল আমার প্রতিই অনুগত? তোমাদের মধ্যে পিতামাতার কাছ থেকে পথভ্রষ্ট হওয়া শিশুদের দুষ্টুমি প্রকাশিত হয় নি, বরং মালিকের চাবুকের নাগালের বাইরে থাকা পশুদের থেকে বিস্ফোরিত পশুত্ব প্রকাশিত হয়েছে। তোমাদের নিজেদের প্রকৃতি জানা উচিত, যা তোমাদের সকলের মধ্যে থাকা দুর্বলতাও বটে; এটা তোমাদের সকলেরই এক সাধারণ অসুখ। সুতরাং, আজ তোমাদের প্রতি আমার একমাত্র উপদেশ হল আমার কাছে তোমাদের সাক্ষ্যে দৃঢ় হয়ে থাকো। কোনো পরিস্থিতিতেই পুরনো ব্যাধিকে আবার মাথাচাড়া দিতে দিও না। সাক্ষ্য দেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—এটাই আমার কাজের মূল। যেভাবে মরিয়ম তার স্বপ্নে আসা যিহোবার উদ্ঘাটন গ্রহণ করেছিল, তোমাদেরও আমার বাক্যগুলি সেইভাবে গ্রহণ করতে হবে: প্রথমে বিশ্বাস আর তারপর সেগুলি মান্য করার দ্বারা। শুদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এটাই মান্য বলে বিবেচিত হয়। কারণ তোমরাই আমার বাক্য সবচেয়ে বেশি শ্রবণ কর, তোমরাই আমার দ্বারা সর্বাপেক্ষা আশীর্বাদপ্রাপ্ত। আমি তোমাদের আমার সমস্ত মূল্যবান সম্পদ প্রদান করেছি, তোমাদের ওপর সমস্ত কিছু অর্পণ করেছি, তা সত্ত্বেও তোমরা ইসরায়েলের মানুষদের থেকে কত ব্যাপকভাবে ভিন্ন উচ্চতায় রয়েছ; তোমাদের মধ্যে নিতান্ত আকাশ-পাতাল তফাত। কিন্তু তাদের তুলনায় তোমরা অনেক বেশি পেয়েছ; যেখানে তারা আমার আবির্ভাবের জন্য আকুল হয়ে অপেক্ষা করে, তোমরা সেখানে আমার সঙ্গে সুখে দিনযাপন করো, আমার ধন ভাগ করে নাও। এই পার্থক্যের পরিপ্রেক্ষিতে, কোন বিষয়টি তোমাদেরকে আমার সাথে বাকবিতণ্ডা করার এবং আমার সম্পত্তিতে অংশ দাবি করার অধিকার দেয়? তোমরা কি প্রচুর অর্জন করোনি? আমি তোমাদেরকে এত কিছু দিয়েছি, কিন্তু বিনিময়ে তোমরা আমাকে দিয়েছ শুধুই হৃদয়বিদারক দুঃখ ও উদ্বেগ, অদম্য বিরক্তি এবং অসন্তোষ। তোমরা এত বিদ্বেষী—তবুও করুণার যোগ্য, তাই তোমাদের প্রতি আমার সমস্ত বিরক্তি অবদমিত করে বারবার আপত্তি জানানো ছাড়া আমার আর কোনও উপায় নেই। হাজার হাজার বছরের কাজে, আমি মানবজাতির সঙ্গে কখনও আপত্তি করিনি কারণ আমি আবিষ্কার করেছি যে, মানবজাতির বিকাশের সর্বত্র, তোমাদের মধ্যে থাকা কেবলমাত্র “প্রতারকরাই” সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে, ঠিক প্রাচীন যুগের বিখ্যাত পূর্বপুরুষদের দ্বারা ছেড়ে যাওয়া মূল্যবান সম্পত্তির মতো। আমি সেইসব অর্ধমানব শূকর এবং কুকুরদেরকে কতই না ঘৃণা করি। তোমাদের মধ্যে বিবেকবোধের খুব অভাব! তোমাদের চরিত্র খুবই নিম্নমানের! তোমাদের হৃদয় অত্যন্ত কঠিন! আমি ইসরায়েলীদের কাছে এই ধরনের বাক্য ও কাজ নিয়ে গেলে, অনেক আগেই গৌরব অর্জন করে ফেলতাম। কিন্তু তোমাদের মধ্যে এটা অসাধ্য; তোমাদের মধ্যে রয়েছে কেবল নিষ্ঠুর অবহেলা, নিরুত্তাপ মনোভাব আর অজুহাত। তোমরা খুবই অনুভূতিহীন এবং একেবারেই মূল্যহীন!
তোমাদের সমস্ত কিছু আমার কাজে নিবেদন করা উচিত। তোমাদের সেই কাজ করা উচিত যাতে আমার উপকার হয়। তোমরা যা কিছু বোঝো না তার সমস্তটাই আমি ব্যাখ্যা করতে ইচ্ছুক যাতে তোমরা তোমাদের অভাব থাকা সমস্ত কিছু আমার থেকে অর্জন করতে পারো। যদিও তোমাদের খুঁত অসংখ্য, তবুও আমি তোমাদের ওপর আমার করণীয় কাজ করে যেতে ইচ্ছুক, আমি তোমাদেরকে আমার চূড়ান্ত করুণা প্রদান করছি যাতে তোমরা আমার থেকে উপকার পেতে পারো এবং তোমাদের মধ্যে যে গরিমার অভাব রয়েছে তা অর্জন করতে পারো, যা এই পৃথিবী আগে কখনো দেখেনি। বহু বছর ধরে কাজ করা সত্ত্বেও কোনো মানুষই আমাকে চেনেনি। আমি তোমাদের সেই গোপন বিষয়গুলি জানাতে চাই যা আমি অন্য কাউকে কখনো বলিনি।
মানুষদের মধ্যে, আমিই ছিলাম সেই আত্মা যাকে তারা দেখতে পায়নি, যার সাথে তারা কখনো জড়িত হতে পারেনি, পৃথিবীতে আমার তিনটি পর্যায়ের কাজের কারণে (এই জগত সৃষ্টি, মুক্তিদান এবং ধ্বংসসাধন), তাদের মধ্যে আমার কাজ করার উদ্দেশ্যে আমি তাদের মাঝে বিভিন্ন সময়ে আবির্ভূত হয়েছিলাম (কখনোই জনসমক্ষে নয়)। প্রথম আমি মানবজাতির মধ্যে অবতীর্ণ হয়েছিলাম মুক্তির যুগে। অবশ্যই আমি একটি ইহুদি পরিবারে অবতীর্ণ হয়েছিলাম; সেই অর্থে ইহুদিরাই সর্বপ্রথম পৃথিবীতে ঈশ্বরের আগমন দেখেছিল। আমার ব্যক্তিগতভাবে এই কাজটি করার উদ্দেশ্য হল আমি আমার দেহরূপী অবতারকে আমার মুক্তির কার্যে পাপস্খালনের বলি হিসাবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম। এইভাবে, অনুগ্রহের যুগে ইহুদিরাই আমাকে প্রথম দেখেছিল। সেই প্রথমবার আমি দেহরূপে কাজ করেছিলাম। রাজ্যের যুগে, আমার কাজ হল জয় করা এবং নিখুঁত করা, তাই আমি আবার দেহরূপে পথপ্রদর্শকের কাজ করি। এটা আমার দ্বিতীয় বার দেহরূপে করা কাজ। কাজের শেষ দুটি পর্যায়ে, মানুষেরা আর অদৃশ্য, অস্পষ্ট আত্মার সঙ্গে জড়িত থাকে না, বরং দেহরূপে প্রতীত আত্মার সঙ্গে জড়িত হয়। এইভাবে, মানুষের চোখে আমি আবার মানুষ হয়ে উঠি, যার মধ্যে ঈশ্বরের চেহারা এবং অনুভূতির কিছুই নেই। তদুপরি, মানুষেরা যে ঈশ্বরকে দেখে তিনি কেবল পুরুষই নন, তিনি নারীও, যে বিষয়টি তাদের কাছে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক এবং বিভ্রান্তিকর। বারবার আমার অসাধারণ কাজ বহু বছরের লালিত পুরনো ধ্যান-ধারণা ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। মানুষ বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে! ঈশ্বর শুধুমাত্র পবিত্র আত্মা, আত্মা, সাতগুণ তীব্রতর আত্মা বা সর্বব্যাপী আত্মা নয়, বরং একজন মানুষও বটে—একজন সাধারণ মানুষ, একজন ব্যতিক্রমী সাধারণ মানুষ। তিনি শুধু পুরুষই নন, বরং একজন নারীও বটে। তাঁরা শুধুমাত্র মানুষের কাছে জন্ম নেওয়ার কারণেই একে অন্যের অনুরূপ এবং তাঁদের পার্থক্যের বিষয় হল একজন পবিত্র আত্মা দ্বারা প্রসূত আর অপরজন মানুষের কাছে জন্মগ্রহণ করলেও সরাসরি আত্মা থেকে আনিত। তাঁরা এই কারণে অনুরূপ যে উভয়েই হলেন পিতা ঈশ্বরের কাজ সম্পন্নকারী, ঈশ্বরের দেহরূপী অবতার। এবং তাঁদের পার্থক্য হল একজন মুক্তির কার্য সমাধা করেছিলেন আর অপরজন জয়ের কাজ করেন। তাঁরা উভয়েই পিতা ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করেন, কিন্তু একজন হলেন প্রেমময় উদারতা ও করুণায় পরিপূর্ণ মুক্তিদাতা আর অপরজন হলেন ক্রোধ ও বিচারে পূর্ণ ন্যায়পরায়ণতার ঈশ্বর। একজন হলেন মুক্তির কার্যের সূচনাকারী সর্বোচ্চ অধিনায়ক, অন্যজন হলেন জয়ের কাজ সম্পন্নকারী ন্যায়পরায়ণ ঈশ্বর। একজন হলেন শুরু, অপরজন শেষ। একজন পাপবর্জিত দেহরূপ, অপরজন হলেন সেই দেহরূপ যিনি মুক্তি সম্পন্ন করেন, কাজ চালিয়ে যান এবং কখনও পাপাচারী হন না। উভয়ই একই আত্মা, কিন্তু তাঁরা ভিন্ন দেহরূপে বাস করেন এবং বিভিন্ন জায়গায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তাদের মধ্যে রয়েছে কয়েক হাজার বছরের ব্যবধান। তবুও, তাঁদের সমস্ত কাজ পারস্পরিকভাবে একে অন্যের পরিপূরক, কখনোই পরস্পরবিরোধী নয় এবং সেগুলি একই সঙ্গে উচ্চারিত হতে পারে। দুজনেই মানুষ, তবে একজন ছিল একটি শিশু বালক এবং অপরজন ছিল একজন শিশু বালিকা। এত বছর ধরে মানুষ যা দেখেছে তা শুধুমাত্র আত্মাই নয় এবং নিছকই একজন মানুষ অথবা কোনো একজন পুরুষই নয়, বরং এমন অনেক বিষয়ও যা মানুষের ধারণাগুলির সঙ্গে অসঙ্গত নয়; অর্থাৎ, মানুষ কখনোই আমাকে পুরোপুরি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়নি। তারা আমাকে অর্ধেক বিশ্বাস আর অর্ধেক অবিশ্বাস করে—যেন আমার অস্তিত্ব আছে, তা সত্ত্বেও আমি যেন এক অলীক স্বপ্ন—এই কারণেই বর্তমানে এখনও মানুষ জানে না যে ঈশ্বর কী। তুমি কি একটা সরল বাক্যে আমার সংক্ষিপ্তসার দিতে পারবে? তুমি কি সত্যিই সাহস করে বলতে পারবে, “যীশু ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ নন আর ঈশ্বর যীশু ছাড়া আর কেউ নন”? তুমি কি সত্যিই এত সাহসী যে বলতে পারে, “ঈশ্বর আত্মা ছাড়া আর কেউ নন, এবং আত্মা ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ নন”? তুমি কি স্বচ্ছন্দে বলতে পারবে, “ঈশ্বর হলেন শুধুই দেহরূপে নিহিত একজন মানুষ”? তোমার কি সত্যিই দৃঢ়ভাবে বলার সাহস আছে যে, “যীশুর প্রতিমূর্তিই হল ঈশ্বরের মহান প্রতিমূর্তি”? ঈশ্বরের স্বভাব এবং প্রতিমূর্তিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ব্যাখ্যা করতে তুমি কি তোমার বাগ্মিতা ব্যবহার করতে সক্ষম? তুমি কি সত্যিই বলার সাহস রাখো যে, “ঈশ্বর তাঁর নিজের প্রতিমূর্তি অনুসারে শুধুমাত্র পুরুষদের সৃষ্টি করেছেন, নারীদের নয়”? তুমি যদি এটা বলো, তাহলে আমার মনোনীতদের মধ্যে কোনো নারী থাকবে না, নারীদের মানবজাতির এক শ্রেণীতে পড়া তো আরোই দূরের কথা। এখন তুমি কি সত্যিই জানো ঈশ্বর কী? ঈশ্বর কি মানুষ? ঈশ্বর কি আত্মা? ঈশ্বর কি সত্যিই একজন পুরুষ? শুধুমাত্র যীশুই কি আমার কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারে? যদি আমার সারসত্যকে সংক্ষেপে বলার জন্য উপরোক্ত বিষয়গুলির মধ্যে শুধুমাত্র একটিকে তুমি বেছে নাও, তাহলে তুমি একজন অত্যন্ত অজ্ঞ অনুগত বিশ্বাসী। আমি যদি একবার, শুধুমাত্র একবারই দেহরূপী অবতার হিসাবে কাজ করতাম, তোমরা কি আমাকে সীমাবদ্ধ করতে? তুমি কি সত্যিই এক নজরে আমাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝতে পারো? তোমার জীবনকালে যা যা তোমার সামনে প্রকাশিত হয়েছে তার ভিত্তিতে কি তুমি আমার সম্পূর্ণ সংক্ষিপ্তসার দিতে পারো? আমি যদি আমার উভয় অবতাররূপে অনুরূপ কাজ করতাম তাহলে তোমরা আমাকে কীভাবে অনুভব করতে? তোমরা কি আমাকে চিরতরে ক্রুশবিদ্ধ করে রেখে যেতে? তুমি যেরকম দাবি করছ, ঈশ্বর কি ততটাই সরল হতে পারেন?
তোমাদের বিশ্বাস অত্যন্ত আন্তরিক হলেও তোমাদের মধ্যে কেউই আমার সম্পূর্ণ বিবরণ দিতে পারবে না, কেউই তোমাদের দেখা সমস্ত তথ্যের সম্পূর্ণ সাক্ষ্য দিতে পারবে না। এই বিষয়ে চিন্তা করো: বর্তমানে তোমাদের বেশীরভাগই নিজেদের দায়িত্ব অবহেলা করো, পরিবর্তে তোমরা দৈহিক সুখের অনুসরণ করছ, দেহকে তৃপ্ত করছ আর লোভাতুর ভাবে দেহ উপভোগ করছ। তোমরা সামান্য সত্যের অধিকারী। তাহলে তোমরা কীভাবে তোমাদের দেখা সমস্ত কিছুর সাক্ষ্য দেবে? তোমরা কি সত্যিই আত্মবিশ্বাসী যে তোমরা আমার সাক্ষী হতে পারবে? যদি এমন এক দিন আসে যেদিন তুমি বর্তমানে দেখা সমস্ত কিছুর সাক্ষ্য দিতে অক্ষম, সেদিন তুমি সৃষ্ট সত্তা হিসাবে তোমার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলবে এবং তোমার অস্তিত্বের কোনও অর্থই থাকবে না। মানুষ হওয়ার অযোগ্য হয়ে যাবে তুমি। এটাও বলা যায় যে তুমি আর মানুষই থাকবে না! আমি তোমাদের ওপর অপরিমেয় কাজ করেছি, কিন্তু যেহেতু বর্তমানে তুমি কিছুই শিখছ না, কোনও কিছুর বিষয়েই সচেতন নও এবং কাজের বেলা অকার্যকর, তাই যখন আমার কাজ প্রসারের সময় আসে, তখন তুমি কেবল শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকো, নিঃশব্দে এবং একেবারে অপদার্থের মতো। এটি কি তোমাকে সর্বকালের জন্য পাপী করে তুলবে না? যখন সেই সময় আসবে, তুমি কি গভীরতম অনুশোচনায় ভুগবে না? হতাশায় ডুবে যাবে না? আমার বর্তমানের সমস্ত কাজ আলস্য এবং একঘেয়েমি থেকে করা নয়, বরং তা করা হয় আমার ভবিষ্যতের কাজের ভিত্তি স্থাপন করার জন্য। এমন নয় যে আমি অচলাবস্থায় আছি এবং নতুন কিছু আমাকে নিয়ে আসতে হবে। আমি যে কাজ করি তা তোমাকে বুঝতে হবে; এটা কোনো শিশুর রাস্তায় খেলতে খেলতে করা কাজ নয়, বরং আমার পিতার প্রতিনিধিত্বে করা একটি কাজ। তোমাদের জানা উচিত যে আমি নিজে এই সব করছি না; বরং, আমি আমার পিতার প্রতিনিধিত্ব করি। এদিকে তোমাদের ভূমিকা হল কঠোরভাবে অনুসরণ করা, মান্য করা, পরিবর্তিত হওয়া, এবং সাক্ষ্য দেওয়া। কেন তোমাদের আমার ওপর বিশ্বাস করা উচিত তা তোমাদের বোঝা উচিত; এটি তোমাদের প্রত্যেকের বোঝার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমার পিতা, তাঁর গৌরবের স্বার্থে, বিশ্বসৃষ্টির মুহূর্ত থেকে তোমাদের সকলকে আমার জন্য পূর্বনির্ধারিত করেছেন। তিনি যে তোমাদের পূর্বনির্ধারিত করেছেন তা ছিল আমার কাজ এবং তাঁর মহিমার জন্য। আমার পিতার কারণেই তোমরা আমার ওপর বিশ্বাস করো; তাঁর পূর্বনির্ধারণের কারণেই তোমরা আমাকে অনুসরণ করো। এগুলির কোনোটাই তোমাদের নিজের পছন্দ নয়। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তোমাদের এই বিষয়টা বোঝা, যে আমার কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার উদ্দেশ্যে আমার পিতা আমার কাছে তোমাদের অর্পণ করেছেন। যেহেতু তিনি তোমাদের আমার কাছে প্রদান করেছেন, তাই আমি তোমাদের যে পথগুলি অর্পণ করেছি, সেই সাথে আমি যে উপায় এবং বাক্যগুলি শিখিয়েছি তা তোমাদের মেনে চলা উচিত, কারণ আমার পথ মান্য করা তোমাদের কর্তব্য। এটাই আমার ওপর তোমাদের বিশ্বাসের আসল উদ্দেশ্য। অতএব, আমি তোমাদের বলছি: তোমরা হলে শুধুমাত্র সেই মানুষেরা, যাদের আমার পিতা আমার পথ মেনে চলার জন্য অর্পণ করেছেন। যাইহোক, তোমরা আমাকে শুধুমাত্র বিশ্বাস করো; তোমরা আমার আপন লোক নও কারণ তোমরা ইসরায়েলী পরিবারভুক্ত নও, বরং তোমরা হলে প্রাচীন সর্পের মতো। আমি তোমাদের শুধুমাত্র আমার জন্য সাক্ষ্য দিতে বলছি, কিন্তু বর্তমানে তোমাদের অবশ্যই আমার পথে চলতে হবে। এসবই ভবিষ্যতের সাক্ষ্যের স্বার্থে। যদি তোমরা কেবলমাত্র আমার পথের কথা শোনা মানুষদের মতো কাজ করো, তাহলে তোমাদের কোনও মূল্যই থাকবে না এবং আমার পিতার তোমাদেরকে আমার কাছে অর্পণ করার তাৎপর্যই হারিয়ে যাবে। আমি তোমাদের যা জোর দিয়ে বলছি তা হল: তোমাদের আমার পথে চলা উচিত।