অপরিবর্তিত স্বভাব থাকার অর্থ হলো ঈশ্বরের প্রতি শত্রুতা

হাজার হাজার বছরের ভ্রষ্টাচারের পর মানুষ অসাড় এবং ক্ষুদ্রবুদ্ধি-সম্পন্ন হয়ে পড়েছে; সে এমনই এক ঈশ্বরবিরোধী দানবে পরিণত হয়েছে, যে মানুষের ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী মনোভাব ইতিহাসের গ্রন্থসমূহে নথিভুক্ত হয়েছে, এবং এমনকি মানুষ স্বয়ং নিজের বিদ্রোহী ব্যবহারের সম্পূর্ণ খতিয়ান পেশ করতে অক্ষম—কারণ মানুষ শয়তানের দ্বারা প্রবলভাবে ভ্রষ্ট হয়েছে, এবং শয়তানের দ্বারা সে এমনভাবে বিপথগামী হয়েছে যে সে নিজেও জানে না যে কোথায় ফিরতে হবে তাকে। এমনকি আজও, মানুষ ঈশ্বরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে: মানুষ যখন ঈশ্বরকে দেখে তখন সে তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, আবার মানুষ যখন ঈশ্বরকে দেখতে পায় না, তখনও সে তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এমনও অনেকে আছে যারা, এমনকি ঈশ্বরের অভিসম্পাত এবং ঈশ্বরের ক্রোধের সাক্ষী থাকা সত্ত্বেও, তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। এবং এই কারণেই আমি বলি, যে, মানুষের বোধ তার মূল কার্যকারিতা হারিয়েছে, এবং মানুষের বিবেকও তার মূল কার্যকারিতা হারিয়েছে। আমি আজ যে মানুষকে আমার সামনে দেখি সে মানুষের পোশাকে এক পশু, সে এক বিষধর সাপ, এবং, যতোই সে আমার নজরের সামনে অভাগা হয়ে থাকার চেষ্টা করুক না কেন, আমি কখনোই তার প্রতি ক্ষমাশীল হবো না, কারণ মানুষ সাদা এবং কালোর মধ্যে, সত্য এবং অসত্যের মধ্যে কী পার্থক্য রয়েছে তা উপলব্ধি করতে পারে না। মানুষের বোধ এত অসাড়, তবু সে আশীর্বাদ লাভের ইচ্ছা পোষণ করে; তার মানবতা এত কলঙ্কময়, তবু সে রাজার সার্বভৌমত্ব অধিকার করতে চায়। এমন বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে, সে কারই বা আর রাজা হতে পারে? এমন যার মানবতা, সে কেমন করে সিংহাসনে আরোহণ করবে? মানুষের যথার্থই কোনো লজ্জাবোধ নেই! সে দাম্ভিক ও হীন! তোমরা যারা আশীর্বাদ লাভ করতে ইচ্ছুক, আমি তাদের প্রথমে একটি আয়না সংগ্রহ করে তাতে নিজের কুৎসিত প্রতিফলনটির দিকে তাকাবার পরামর্শ দিচ্ছি—রাজা হতে হলে যা লাগে, তোমার মধ্যে কি তা রয়েছে? তোমার মুখাবয়ব কি তেমন কোনো ব্যক্তির ন্যায় যিনি আশীর্বাদ লাভের যোগ্য? তোমার স্বভাবের বিন্দুমাত্রও পরিবর্তন ঘটেনি এবং তুমি কোনো সত্যের অনুশীলন করোনি, তবু তুমি কামনা করে চলেছো এক অপূর্ব আগামীর। তুমি নিজেরই সাথে প্রবঞ্চনা করছো! এমন কলুষিত স্থানে জন্মগ্রহণ করে, মানুষ সমাজের দ্বারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে সামন্ততান্ত্রিক নৈতিকতার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, এবং সে পাঠ গ্রহণ করেছে “উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি” থেকে। পশ্চাদভিমুখী চিন্তাধারা, ভ্রষ্ট নীতিবোধ, জীবনের প্রতি সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, জীবনযাপনের ঘৃণ্য দর্শন, সম্পূর্ণভাবে মূল্যহীন অস্তিত্ব, এবং বিকৃত জীবনধারা ও রীতিনীতি—মানবহৃদয়ে এই সকল বিষয়ের উদগ্র অনুপ্রবেশ ঘটেছে, এবং তার বিবেকবোধকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং আক্রান্ত করেছে। ফলতঃ, মানুষ ঈশ্বরের থেকে আগের চেয়ে অনেক বেশি দূরে সরে গিয়েছে, এবং সে হয়ে উঠেছে পূর্বাপেক্ষা প্রবলতর ঈশ্বরবিরোধী। মানুষের স্বভাব দিনে দিনে হিংস্রতর হয়ে চলেছে, এবং এমন একজনও ব্যক্তি অবশিষ্ট নেই যে স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে কোনো কিছু ত্যাগ করবে, এমন একজনও নেই যে স্বেচ্ছায় ঈশ্বরকে মান্য করবে, উপরন্তু, এমনকি এমন একজনও নেই যে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে ঈশ্বরের আবির্ভাবের অনুসন্ধান করবে। পরিবর্তে, শয়তানের আধিপতের অধীনে, মানুষ সুখের পশ্চাৎধাবন ব্যতিরেকে আর কিছুই করে না, পঙ্কিল দেশে সে দৈহিক ভ্রষ্টাচারে লিপ্ত হয়। এমনকি অন্ধকারের সেই বাসিন্দারা সত্য শ্রবণ করলেও তা অনুশীলন করার চিন্তামাত্র করে না, এমনকি ঈশ্বরের আবির্ভাব চাক্ষুষ করলেও তারা ঈশ্বরের অনুসন্ধানে বিন্দুমাত্র উৎসাহী হয় না। যে মানবজাতি এমন ভাবে বিকৃত, তার কি আদৌ পরিত্রাণের কোনো সম্ভাবনা থাকতে পারে? যে মানবজাতি এমন ভাবে অধঃপতিত, সে কেমন ভাবে আলোকে বসবাস করবে?

মানুষের স্বভাবের পরিবর্তন আরম্ভ হয় স্বীয় সারসত্য সম্বন্ধে জ্ঞান দ্বারা এবং তার চিন্তাধারা, প্রকৃতি এবং মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমে—মৌলিক পরিবর্তনের মাধ্যমে। কেবলমাত্র এইভাবেই মানুষের স্বভাবের যথার্থ পরিবর্তনসাধন সম্ভব। মানুষের অন্তরে ভ্রষ্ট স্বভাব জাগ্রত হওয়ার মূল হেতু হল শয়তানের প্রতারণাসমূহ, কলুষ, এবং বিষ। মানুষ শয়তানের দ্বারা আবদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত, এবং সে সেই মারাত্মক ক্ষতিসাধনের ভুক্তভোগীযা শয়তান তার চিন্তাধারা, নৈতিকতা, অন্তর্দৃষ্টি এবং যুক্তিবোধের উপর আছড়ে ফেলেছে। এর মূল কারণই হলো এই, যে, মানুষের মৌলিক বিষয়গুলি শয়তান দ্বারা ভ্রষ্ট হয়ে আদিতে ঈশ্বর যেভাবে সেগুলিকে সৃষ্টি করেছিলেন তা থেকে আমূল বদলে গিয়ে এমন হয়েছে, যে, মানুষ ঈশ্বরের বিরোধিতা করে এবং সত্যকে গ্রহণ করতে পারে না। সুতরাং, মানুষের স্বভাবের পরিবর্তনসাধনের শুরু হওয়া উচিত তার চিন্তাভাবনা, অন্তর্দৃষ্টি এবং বোধের পরিবর্তনের মাধ্যমে যা ঈশ্বর এবং সত্য সম্পর্কে তার জ্ঞানে পরিবর্তন আনবে। যাদের জন্ম পৃথিবীর ভ্রষ্টতম দেশে, তারা ঈশ্বর কী, বা ঈশ্বরে বিশ্বাস করার অর্থ কী—সেই বিষয়ে আরও বেশি অজ্ঞ। মানুষ যত ভ্রষ্ট হয়, ততই তারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে কম অবগত হয়, আর ততই দৈন্যদশা প্রাপ্ত হয় তাদের বোধ এবং অন্তর্দৃষ্টি। মানুষের ঈশ্বরের বিরোধিতা এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের উৎস হলো শয়তানের দ্বারা তার ভ্রষ্ট হওয়া। শয়তানের ভ্রষ্টাচারের কারণে, মানুষের বিবেকবোধ অসাড় হয়ে পড়েছে; সে অনৈতিক, তার চিন্তাধারা অধঃপতিত, এবং তার মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি পশ্চাৎমুখী। শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হওয়ার আগে মানুষ স্বভাবতই ঈশ্বরকে অনুসরণ করতো এবং তাঁর বাক্য শ্রবণের পর তা মান্য করে চলতো। সে স্বভাবতই বোধশক্তি সম্পন্ন, বিবেকবান ও স্বাভাবিক মানবিকতার অধিকারী ছিলো। শয়তান দ্বারা ভ্রষ্ট হওয়ার পর মানুষের মূল বোধ, বিবেক ও মানবিকতা, নিস্তেজ এবং শয়তান দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল। আর এইভাবে, সে ঈশ্বরের প্রতি তার আনুগত্য এবং প্রেম হারিয়ে ফেলেছে। মানুষের বোধ বিপথগামী আর তার স্বভাব পশুসুলভ হয়ে পড়েছে এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে তার বিদ্রোহী মনোভাবের আগের চেয়ে আরও ঘন ঘন এবং মর্মান্তিক ভাবে ঘটছে। তবুও, মানুষ তা জানেও না, আর তা স্বীকারও করে না, সে কেবল অন্ধভাবে বিরোধিতা আর বিদ্রোহ করে চলে। মানুষের স্বভাব প্রকাশ পায় তার বোধ, অন্তর্দৃষ্টি এবং বিবেকের অভিব্যক্তিতে; যেহেতু তার বোধ এবং অন্তর্দৃষ্টি ত্রুটিপূর্ণ, এবং তার বিবেক অত্যন্তভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে, সেহেতু তার স্বভাব হয়ে উঠেছে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী। যদি মানুষের বোধ এবং অন্তর্দৃষ্টির পরিবর্তন না হয়, তাহলে তার স্বভাবের পরিবর্তন হওয়ার প্রশ্নই আসে না, যেমন আসে না তার ঈশ্বরের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতি রেখে চলার প্রশ্নটিও। মানুষের বোধ যদি খারাপ হয়, তবে সে ঈশ্বরের সেবা করতে পারে না এবং সে ঈশ্বরের ব্যবহারের জন্য অনুপযুক্ত। “স্বাভাবিক বোধ”-এর অর্থ ঈশ্বরকে মান্য করা এবং ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসী থাকা, ঈশ্বরের জন্য আকুল হওয়া, ঈশ্বরের প্রতি নিরঙ্কুশ এবং বিবেকবান হওয়া। এর অর্থ ঈশ্বরের সাথে সমভাব হওয়া, এবং ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের বিরোধিতা না করা। ইন্দ্রিয়বিকৃতি এরূপ নয়। যেহেতু মানুষ শয়তান দ্বারা ভ্রষ্ট হয়েছে, সেহেতু সে ঈশ্বর সম্পর্কে কিছু ধারণা তৈরি করে নিয়েছে, এবং ঈশ্বরের প্রতি তার কোনো আনুগত্য অথবা তাঁর জন্য তার কোনো আকুলতা নেই, মানুষের ঈশ্বরের প্রতি বিবেকবোধ নিয়ে কিছু বলার আর দরকার নেই। মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে এবং ঈশ্বরের বিচার করে, এবং, অধিকন্তু, তাঁর পিছনে তাঁরই বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক আক্রমণ হানে এই বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা নিয়েই, যে, তিনি স্বয়ং ঈশ্বর; মানুষের ঈশ্বরকে মান্য করার কোনো অভিপ্রায় নেই, সে কেবল অন্ধভাবে তাঁর কাছে নিজের দাবিদাওয়া ও অনুরোধগুলি করে চলে। এই ধরনের মানুষ—যাদের বোধ অধঃপতিত—তারা তাদের নিজেদের ঘৃণ্য আচরণের বিষয়ে জানতে অথবা তাদের বিদ্রোহী মনোভাবের জন্য অনুতাপ বোধ করতেও অক্ষম। যদি মানুষ নিজেকে জানতে সক্ষম হয়, তাহলে তারা কিছুটা বোধশক্তি ফিরে পায়; মানুষ, যে আজও নিজেকে জানতে অক্ষম, সে ঈশ্বরের প্রতি যত বিদ্রোহী হয়, ততই স্বল্প হয় তার বোধশক্তি।

মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাব উদ্ঘাটনের উৎসে আর কিছু নয়, রয়েছে তার নিস্তেজ হয়ে যাওয়া বিবেক, তার ক্ষতিকারক প্রকৃতি এবং তার বোধের অভাব; যদি মানুষের বিবেক এবং বোধ আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠতে সক্ষম হয়, তাহলে সে হয়ে উঠবে এমন একজন যে ঈশ্বরের সম্মুখে ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। এর কারণ হলো এই, যে, মানুষের বিবেকবোধ সর্বদা অসাড় ছিল, এবং মানুষের বোধশক্তি, যা কখনওই গভীর ছিল না, তা ক্রমশ এতই নিস্তেজ হয়ে পড়ছে, যে, মানুষ ক্রমশ ঈশ্বরের প্রতি বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে, এমনকি সে যীশুকে ক্রুশে পেরেকবিদ্ধ করেছে এবং অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের মানবদেহধারী অবতারকেও নিজের গৃহে ঢুকতে দিতে অস্বীকার করেছে, এবং সে ঈশ্বরের দেহের নিন্দা করেছে, ঈশ্বরের দেহকে নীচু চোখে দেখেছে। মানুষের মধ্যে যদি এতটুকুও মানবিকতা থাকতো, তাহলে ঈশ্বরের অবতাররূপ দেহের প্রতি তার আচরণ এতটা নিষ্ঠুর হতে পারতো না; তার যদি বিন্দুমাত্র বোধ থাকতো, তাহলে ঈশ্বরের অবতাররূপ দেহের প্রতি তার আচরণ এতটা হিংস্র হতে পারতো না, তার মধ্যে যদি বিন্দুমাত্রও বিবেকবোধ থাকতো, তাহলে সে এইভাবে ঈশ্বরের অবতারকে “ধন্যবাদ জ্ঞাপন” করতো না। ঈশ্বরের দেহধারণের যুগেই মানুষ বাস করে, তবু সে তাকে এমন একটা ভালো সুযোগ দেওয়ার জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানায় না, পরিবর্তে সে হয় ঈশ্বরের আগমনকে গালমন্দ করে, নয় ঈশ্বরের অবতাররূপ ধারণের বিষয়টিকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে, এবং, আপাতদৃষ্টিতে এই ঘটনার বিরুদ্ধাচরণ করে এবং এই বিষয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মানুষ ঈশ্বরের আগমনের বিষয়টি সম্বন্ধে যেভাবেই আচরণ করুক না কেন, ঈশ্বর, সংক্ষেপে বললে, সর্বদাই ধৈর্য সহযোগে তাঁর কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছেন—যদিও মানুষ তাঁকে সামান্যতমও স্বাগত জানায়নি, এবং অন্ধভাবে তাঁর কাছে অনুরোধ করে চলেছে। মানুষের স্বভাব চরমভাবে দুষ্ট হয়ে পড়েছে, তার বোধ চরমভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে, এবং তার বিবেক মন্দের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে পদদলিত হয়ে বহু পূর্বেই মানুষের বিবেক হিসাবে তার মূল অবস্থা থেকে অপসৃত হয়েছে। ঈশ্বর অবতাররূপে মানবজাতিকে এত প্রাণ ও অনুগ্রহ দান করা সত্ত্বেও মানুষ তাঁর প্রতি কেবলমাত্র অকৃতজ্ঞই নয়, বরং তাকে সত্য দেওয়ার জন্য ঈশ্বরের প্রতি সে বিদ্বেষপূর্ণ হয়ে পড়েছে; মানুষের সত্যের প্রতি বিন্দুমাত্র উৎসাহ না থাকার কারণে সে ঈশ্বরের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণও হয়ে উঠেছে। মানুষ যে ঈশ্বরের জন্য শুধুমাত্র নিজের জীবন দিতে অক্ষম তাই নয়, সে তাঁর কাছ থেকে অনুগ্রহ আদায়ের চেষ্টা করতে থাকে, এবং মানুষ ঈশ্বরকে যা দিয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ বর্ধিত হারে সুদ দাবি করে। এই ধরনের বিবেক এবং বোধ সম্পন্ন মানুষেরা মনে করে যে এ কোনও বড় বিষয় নয়, এবং এখনও বিশ্বাস করে যে তারা ঈশ্বরের জন্য নিজেদের অনেক কিছু ব্যয় করা সত্ত্বেও ঈশ্বর তাদের খুবই কম দিয়েছেন। এমন কিছু মানুষ আছে যারা আমাকে এক বাটি জল দিয়ে হাত বাড়িয়ে আমার থেকে দুই বাটি দুধের দাম আদায় করতে চায়, অথবা, আমাকে এক রাত্রির জন্য ঘর দিয়ে আমার থেকে বহু রাত্রির ভাড়া দাবি করে। এমন মানবিকতা ও বিবেক নিয়ে তুমি কীভাবে জীবন অর্জন করতে চাও? কি ঘৃণ্য কীট তোমরা! মানুষের মধ্যে এই ধরনের মনুষ্যত্ব এবং এই ধরণের বিবেকবোধের কারণেই ঈশ্বরের অবতারকে আশ্রয়হীন ভাবে দেশদেশান্তরে বিচরণ করতে হয়েছে। যারা প্রকৃত অর্থে বিবেক ও মানবিকতার অধিকারী তাদের উচিত ঈশ্বরের অবতাররূপের উপাসনা করা এবং সর্বান্তকরণে সেবা করা, তিনি কত কাজ করেছেন তার জন্য নয়, এমনকি তিনি যদি আদৌ কোনো কাজ না করতেন, তাহলেও। যারা সুবুদ্ধিসম্পন্ন, তাদের এমনই করা উচিত এবং এটি হলো মানুষের কর্তব্য। অধিকাংশ মানুষ ঈশ্বরের সেবায় তাদের শর্তের কথাও বলে: তিনি ঈশ্বর না মানুষ, সে বিষয়ে তাদের কোনো পরোয়া নেই, তারা শুধু নিজেদের পরিস্থিতির কথাই বলতে থাকে এবং কেবল নিজেদের ভোগবাসনা চরিতার্থ করার চেষ্টাতেই মগ্ন থাকে। তোমরা যখন আমার জন্য রান্না করো, তখন রান্নার পারিশ্রমিক দাবি করো, তোমরা যখন আমার জন্য দৌড়াও, তখন দৌড়ানোর পারিশ্রমিক দাবি করো, তোমরা যখন আমার জন্য কাজ করো, তখন কাজের পারিশ্রমিক দাবি করো, তোমরা যখন আমার জামাকাপড় ধোও তখন কাচা-ধোওয়ার খরচ দাবি করো, যখন তোমরা চার্চের জন্য সরবরাহ করো, তখন খরচ ফেরত পাওয়ার দাবি করো, তোমরা যখন কথা বলো তখন বক্তার পারিশ্রমিক দাবি করো, তোমরা যখন বই দাও তখন বিতরণের খরচ দাবি করো এবং তোমরা যখন লেখো তখন লেখার পারিশ্রমিক দাবি করো। আমি যাদের সাথে মোকাবিলা করেছি তারা আমার কাছে প্রতিদান দাবি করেছে, যাদের আমি বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি, তারা তাদের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ক্ষতিপূরণ আমার কাছ থেকে দাবি করেছে; যারা অবিবাহিত তারা হয় যৌতুক দাবি করেছে নয় হারানো যৌবনের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে; যারা মুর্গি মারে তারা কসাইয়ের খরচ দাবি করেছে, যারা খাবার ভাজে তারা ভাজার পারিশ্রমিক দাবি করেছে, এমনকি যারা স্যুপ বানায় তারা তার জন্যও খরচ দাবি করে…। এমনই হলো তোমাদের সুউচ্চ ও সুমহান মানবিকতা, এবং এমনই হলো তোমাদের উষ্ণ বিবেক-নির্দিষ্ট কর্ম। কোথায় তোমাদের বোধ? কোথায় তোমাদের মানবিকতা? আমি তোমাদের বলছি! যদি তোমরা এমন ভাবেই চলতে থাকো, তাহলে আমি তোমাদের মধ্যে আমার কাজ বন্ধ করে দেবো। আমি মানুষের পোশাকে একদল পশুর মধ্যে কাজ করবো না, আমি সেই ধরনের মানুষের জন্য এইভাবে কষ্টভোগ করবো না, যাদের সুন্দর মুখশ্রী তাদের হিংস্র হৃদয়কে আড়াল করে রাখে, পরিত্রাণের সামান্যতম সম্ভাবনাটুকুও নেই এমন একদল পশুর জন্য আমি কষ্ট সহ্য করবো না। যেদিন আমি তোমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবো সেই দিনই তোমাদের মৃত্যু ঘটবে, সেইদিন তোমাদের উপর অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে এবং তোমরা আলোকের দ্বারা পরিত্যক্ত হবে। আমি তোমাদের বলছি! তোমাদের মতো যারা পশুরও অধম, তাদের জন্য আমি কখনোই কল্যাণময় হবো না। আমার বাক্য ও কাজের সীমা আছে, এবং তোমাদের মানবিকতা এবং বিবেকবোধের যেমন অবস্থা, তাতে আমি আর কোনো কাজ করবো না, কারণ তোমাদের বিবেকবোধের বড়োই অভাব, তোমরা আমায় বড়োই বেদনা দিয়েছো, এবং তোমাদের ঘৃণ্য আচরণে আমি অত্যন্ত বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছি। যাদের মধ্যে মানবিকতা এবং বিবেকবোধের এত অভাব তাদের কখনোই পরিত্রাণের সুযোগ হবে না; আমি সেই ধরনের হৃদয়হীন এবং অকৃতজ্ঞ মানুষদের উদ্ধার করবো না। আমার দিবস আগত হলে, যে অবাধ্যতার সন্তানগণ আমার প্রবল ক্রোধের উদ্রেক করেছিলো একদা, আমি তাদের প্রতি অনন্তকালের জন্য আমার জ্বলন্ত অগ্নিশিখা বর্ষণ করবো, আমি সেই সকল পশুর উপর আমার চিরস্থায়ী শাস্তি আরোপ করবো যারা কখনো আমার প্রতি আক্রমণাত্মক গালমন্দ নিক্ষেপ করেছিলো এবং আমাকে পরিত্যাগ করেছিলো, যে অবাধ্যতার সন্তানগণ একদা আমার সাথে ভোজন এবং বসবাস করা সত্ত্বেও আমাকে অবিশ্বাস ও অপমান করেছিলো, এবং আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলো, তাদের আমি আমার ক্রোধের অনলে সর্বকালের জন্য পুড়িয়ে দিতে থাকবো। যারা আমার ক্রোধ উস্কে দিয়েছিলো তাদের সকলকে আমি আমার শাস্তির অধীন করবো, আমি আমার সমস্ত রাগ সেই সকল পশুর উপর বর্ষণ করবো যারা একদা নিজেদেরকে আমার সমকক্ষ হিসাবে গণ্য করে আমার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলো, অথচ আমার উপাসনা বা আমার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেনি; যে দণ্ড দ্বারা আমি মানুষকে আঘাত করি তা আছড়ে পড়বে সেই সকল পশুদের উপর যারা একদা আমার যত্ন এবং আমার কথিত রহস্যগুলি উপভোগ করেছিল, এবং যারা একদা আমার কাছ থেকে বস্তুগত ভোগসুখ আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। যে ব্যক্তি আমার জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করবে তাকে আমি ক্ষমা করব না; যারা আমার কাছ থেকে খাদ্য ও বস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে তাদের কাউকেই আমি রেহাই দেব না। এখনকার জন্য, তোমরা ক্ষতি থেকে মুক্ত এবং তোমরা আমার কাছে তোমাদের নাগালের বাইরে দাবি করে চলেছো। আমার ক্রোধের দিবস যেদিন আগত হবে, তোমরা আমার কাছে আর কোনো দাবিদাওয়া করতে পারবে না; সেই সময়ে, আমি তোমাদের মনের সুখে নিজেদের “উপভোগ” করতে দেবো, আমি তোমাদের মুখ মাটিতে মিশিয়ে দেবো, এবং তোমরা আর কখনোই উঠে দাঁড়াতে পারবে না! আজ না হোক কাল, আমি তোমাদের এই ঋণ “পরিশোধ” করতে চলেছি—এবং আমি আশা রাখি যে তোমরা ধৈর্য সহকারে সেই দিনটির আগমনের জন্য অপেক্ষা করবে।

এই ঘৃণ্য মনুষেরা যদি যথার্থভাবেই তাদের অসংযত কামনাসমূহ দূরে সরিয়ে রেখে ঈশ্বরের কাছে ফিরে যেতে পারে, তাহলে এখনও তাদের পরিত্রাণের সুযোগ রয়েছে; যে মানুষের হৃদয় যথার্থভাবেই ঈশ্বরের আকাঙ্খায় আকুল হয়, ঈশ্বর তাকে কখনোই পরিত্যাগ করেন না। মানুষের ঈশ্বরলাভে ব্যর্থ হওয়ার কারণ এই নয় যে ঈশ্বরের আবেগ রয়েছে, অথবা, যে, ঈশ্বর মানুষের দ্বারা অর্জিত হতে অনিচ্ছুক, বরং তার কারণ হলো এই, যে, মানুষই ঈশ্বরকে অর্জন করতে চায় না, এবং, যে, মানুষ তৎপর হয়ে ঈশ্বরের অনুসন্ধান করে না। যে যথার্থভাবেই ঈশ্বরের অনুসন্ধান করছে, সে কীভাবে ঈশ্বরের দ্বারা অভিশপ্ত হতে পারে? যার সুবিবেচনা-বুদ্ধি এবং সংবেদনশীল বিবেকবোধ রয়েছে, সে কীভাবে ঈশ্বরের দ্বারা অভিশপ্ত হতে পারে? যে যথার্থভাবে ঈশ্বরের উপাসনা এবং সেবা করে সে কীভাবে তাঁর ক্রোধের আগুনে ভস্মীভূত হতে পারে? যে ঈশ্বরের আনুগত্য করে খুশি তাকে কীভাবে ঈশ্বরের গৃহ থেকে বিতাড়ন করে দেওয়া যাবে? যে ঈশ্বরকে পর্যাপ্ত ভালবাসতে পারেনি সে কীভাবে ঈশ্বরের দণ্ডভোগ করে বাঁচতে পারে? যে ঈশ্বরের জন্য সমস্তকিছু পরিত্যাগ করে আনন্দিত হয়, এমন কীভাবে সম্ভব যে তার জন্য শেষ অবধি কিছুই পড়ে থাকবে না? মানুষ ঈশ্বরের অনুসরণ করতে, ঈশ্বরের জন্য বিষয়সম্পত্তি ব্যয় করতে, এবং ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে আজীবনের উদ্যম উৎসর্গ করতে অনিচ্ছুক; পরিবর্তে সে বলে যে ঈশ্বর বড়ো বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন, যে, মানুষের ধারণার সাথে ঈশ্বর সম্পর্কিত বিষয়গুলি খুব বেশি বিরোধপূর্ণ। এই ধরণের মানবিকতাবোধ নিয়ে, এমনকি যদি তোমরা তোমাদের প্রচেষ্টায় স্থির থাকলেও ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করতে অক্ষম হবে, তোমরা যে ঈশ্বরের অনুসন্ধান করো না সেকথা নাহয় এখানে উহ্যই রাখা হলো। তোমরা কি জানো না যে তোমরা মানবজাতির ত্রুটিপূর্ণ সামগ্রী? তোমরা কি জানো না যে তোমাদের মানবিকতার ন্যায় নীচ মানবিকতা আর দুটি নেই? তোমরা কি জানো না অন্যান্যরা কী সম্বোধনে তোমাদের সম্মান জ্ঞাপন করে? যারা ঈশ্বরকে যথার্থভাবে ভালোবাসে তারা তোমাদেরকে নেকড়ের পিতা, নেকড়ের মাতা, নেকড়ের পুত্র এবং নেকড়ের নাতি বলে ডাকে; তোমরা নেকড়ের বংশধর, নেকড়ে থেকে আগত মানুষ, এবং তোমাদের উচিত নিজেদের পরিচয় জানা ও কখনোই তা বিস্মৃত না হওয়া। এমন কখনোই ভেবো না যে তোমরা কোনো উচ্চতর ব্যক্তিত্ব: তোমরা হলে মানবজাতির মধ্যে অমানুষের জঘন্যতম গোষ্ঠী। তোমরা কি তা জানো না? তোমরা কি জানো যে তোমাদের মধ্যে কাজ করার জন্য আমি কত পরিমাণে ঝুঁকি নিয়েছি? তোমাদের বোধ যদি আবার স্বাভাবিক হয়ে না ওঠে, তোমাদের বিবেক যদি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে না পারে, তাহলে তোমাদের “নেকড়ে” নাম কখনই দূর হবে না, তোমরা অভিশাপের দিবস থেকে, তোমাদের দণ্ড-দিবসের কবল থেকে, কোনোভাবেই নিস্তার পাবে না। তোমরা জন্মেছো হীন ভাবে, মূল্যহীন বস্তু হয়ে। তোমরা স্বভাবতই এক দঙ্গল ক্ষুধার্ত নেকড়ে, ধ্বংসাবশেষ এবং আবর্জনার স্তূপ, এবং, তোমাদের মত, আমি অনুগ্রহ লাভের আশায় তোমাদের উপর কাজ করি না, করি সেই কাজের প্রয়োজন রয়েছে বলে। তোমরা এইভাবে বিদ্রোহী হয়ে চললে আমিও আমার কাজ বন্ধ করে দেবো, এবং তোমাদের উপর আর কখনোই কোনো কাজ করবো না; বরং, এর পরিবর্তে, আমার সন্তোষ অর্জন করেছে এমন কোনো গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে আমার কার্য স্থানান্তরিত করবো, এবং, এইভাবে, আমি চিরতরে তোমাদের পরিত্যাগ করে চলে যাবো, কারণ যারা আমার সাথে শত্রুতা করে আমি তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করতে অনিচ্ছুক। তাহলে, তোমরা কি আমার সাথে সুসঙ্গত হতে চাও, নাকি আমার বিরুদ্ধে শত্রুতা করতে চাও?

পূর্ববর্তী: তুমি কি সেই মানুষ যার মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়েছে?

পরবর্তী: যারা ঈশ্বরকে জানে না তারা সকলেই ঈশ্বরবিরোধী

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন