মানুষের স্বাভাবিক জীবন পুনরুদ্ধার করা এবং তাকে এক বিস্ময়কর গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া
মানুষ বর্তমানের কাজ ও ভবিষ্যতের কাজের সামান্য বোঝে, কিন্তু মানবজাতি যে গন্তব্যে প্রবেশ করবে সে বিষয়ে সে অজ্ঞ। সৃষ্ট জীব হিসাবে মানুষের এক সৃষ্ট জীবের কর্তব্য পালন করা উচিত: ঈশ্বর যা-ই করুন না কেন, মানুষের উচিত তাঁকে অনুসরণ করা; আমি যেভাবেই বলি না কেন, তোমাদের সেই পথেই এগোনো উচিত। তোমার এই সমস্ত বিষয় নিজে নিজে পরিচালনার কোনও উপায় নেই, আর তোমার নিজের ওপর কোনও কর্তৃত্ব নেই; সবকিছু অবশ্যই ঈশ্বরের সমন্বয়সাধনের ওপর ছেড়ে দিতে হবে, আর সবকিছুই তাঁর হাতের মুঠোয় ধরে রাখা আছে। যদি ঈশ্বরের কাজ মানুষকে এক সমাপ্তি প্রদান করতো, সময়ের আগেই একটা চমৎকার গন্তব্য দান করতো, এবং যদি ঈশ্বর মানুষকে প্রলুব্ধ করতে এবং তাঁকে অনুসরণ করার উপায় হিসাবে এটি ব্যবহার করতেন—যদি তিনি মানুষের সাথে একটি বোঝাপড়া করে থাকেন—তাহলে তা বিজয় হবে না, বা মানুষের জীবনের উপর সম্পাদিত কাজও হবে না। মানুষকে নিয়ন্ত্রণ ও তার হৃদয়কে অর্জন করার জন্য ঈশ্বরকে যদি মানুষের পরিসমাপ্তিকে ব্যবহার করতে হতো, তাহলে এক্ষেত্রে তিনি মানুষকে নিখুঁত করতেন না, তাকে অর্জনও করতে সক্ষম হতেন না, পরিবর্তে মানুষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য গন্তব্যকে ব্যবহার করতেন। মানুষ ভবিষ্যৎ পরিসমাপ্তি, শেষ গন্তব্য এবং সেখানে আশা করার মতো ভালো কিছু আছে কিনা, এর বেশি আর কোনো কিছুই পরোয়া করে না। বিজয়কার্যের সময় মানুষকে যদি সুন্দর আশা প্রদান করা হতো, এবং বিজয়কার্যের আগেই যদি তাকে অন্বেষণের জন্য যথাযথ গন্তব্য প্রদান করা হতো, তাহলে যে শুধু মানুষের ওপর বিজয়ের কার্য তার প্রভাব অর্জন করতো না তা-ই নয়, বরং বিজয়কার্যের ফলাফলও প্রভাবিত হতো। অর্থাৎ, বিজয়কার্য মানুষের ভাগ্য ও সম্ভাবনা হরণ করে এবং তার বিদ্রোহী স্বভাবের বিচার ও শাস্তি প্রদান করে তার প্রভাব অর্জন করে। এটা মানুষের সাথে বোঝাপড়া করে অর্থাৎ মানুষকে আশীর্বাদ এবং অনুগ্রহ প্রদান করে অর্জিত হয় না, বরং তার আনুগত্যকে প্রকাশ করার মাধ্যমে অর্জিত হয়, যা করা হয় মানুষের “স্বাধীনতা” হরণ ও তার সম্ভাবনাগুলিকে নির্মূল করার দ্বারা। এটাই হল বিজয়কার্যের সারসত্য। যদি একেবারে শুরুতেই মানুষকে এক সুন্দর আশা দেওয়া হতো, আর শাস্তি ও বিচারের কাজ পরে নির্বাহ করা হতো, তাহলে মানুষ এই ভিত্তিতেই শাস্তি ও বিচারকে গ্রহণ করতো যে তার সুসম্ভাবনা আছে, এবং পরিশেষে, সমস্ত সৃষ্ট জীবের কাছ থেকে সৃষ্টিকর্তার নিঃশর্ত আনুগত্য ও উপাসনা অর্জন করা যেত না; কেবল অন্ধ, অজ্ঞ আনুগত্যই থাকতো, অথবা মানুষ অন্ধভাবে ঈশ্বরের কাছে দাবি জানাতো, এবং মানুষের হৃদয়কে পুরোপুরি জয় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াতো। অতএব, এই ধরনের বিজয়কার্যের দ্বারা মানুষকে অর্জন করা, বা তদুপরি ঈশ্বরের সাক্ষ্য দেওয়া অসম্ভব হবে। এহেন সৃষ্ট জীবেরা তাদের কর্তব্য সম্পাদন করতে অক্ষম হবে এবং ঈশ্বরের সাথে শুধুমাত্র দর-কষাকষি করবে; এটা বিজয় হবে না, বরং করুণা এবং আশীর্বাদ হবে। মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল যে সে তার ভাগ্য ও সুসম্ভাবনা ছাড়া আর কিছুই ভাবে না, আর এই জিনিসগুলিকেই পূজা করে। মানুষ তার সৌভাগ্য ও সুসম্ভাবনার স্বার্থে ঈশ্বরের অন্বেষণ করে; সে ঈশ্বরের প্রতি তার ভালোবাসার কারণে তাঁর উপাসনা করে না। আর তাই, মানুষকে জয় করার কাজে, মানুষের স্বার্থপরতা, লোভ এবং অন্যান্য যে সমস্ত জিনিস ঈশ্বরের উপাসনায় সবচেয়ে বেশি বাধা সৃষ্টি করে, সেগুলির সাথে মোকাবিলা করতে হবে এবং সেইভাবে তাদের নির্মূল করতে হবে। তা করলেই, মানুষের বিজয়ের প্রভাব পাওয়া যাবে। ফলস্বরূপ, মানুষের বিজয়ের প্রথম পর্যায়ে, তার প্রচণ্ড উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সবচেয়ে মারাত্মক দুর্বলতাগুলিকে শুদ্ধ করা আবশ্যক, এবং এর মাধ্যমে, ঈশ্বরের প্রতি মানুষের ভালবাসা প্রকাশ করা, এবং মানবজীবন সম্পর্কে তার জ্ঞান, ঈশ্বর সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি, এবং তার অস্তিত্বের অর্থ পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এইভাবে, ঈশ্বরের প্রতি মানুষের ভালোবাসা পরিশুদ্ধ হয়, অর্থাৎ বলা যায়, মানুষের হৃদয় বিজিত হয়। কিন্তু সমস্ত সৃষ্ট জীবের প্রতি ঈশ্বরের যা মনোভাব, তাতে তিনি শুধুমাত্র বিজয় লাভের স্বার্থে বিজয়ের কাজ করেন না; বরং, তিনি মানুষকে অর্জনের জন্য, নিজের গৌরবের স্বার্থে এবং মানুষের প্রাচীন, আসল প্রকৃতি পুনরুদ্ধারের জন্যই তা করেন। তিনি যদি শুধুমাত্র বিজয়ের স্বার্থেই এই কাজ করতেন, তাহলে এই বিজয়কার্যের তাৎপর্যই হারিয়ে যেত। অর্থাৎ বলা যায়, মানুষকে জয় করার পর, ঈশ্বর যদি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন, আর তাদের জীবন-মৃত্যুর প্রতি মনোযোগ না দিতেন, তাহলে এই কাজ মানবজাতির ব্যবস্থাপনা হিসাবে গণ্য হত না, বা মানুষকে জয় করার এই কাজ তার পরিত্রাণের স্বার্থে হত না। শুধুমাত্র মানুষকে বিজয়ের পর তাকে অর্জন করা এবং এক বিস্ময়কর গন্তব্যে মানুষের চূড়ান্ত আগমনই পরিত্রাণের সমস্ত কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে, এবং শুধুমাত্র এর মাধ্যমেই মানুষের পরিত্রাণের লক্ষ্য পূরণ হতে পারে। অন্যভাবে বললে, শুধুমাত্র সুন্দর গন্তব্যে মানুষের আগমন এবং বিশ্রামে প্রবেশ, এই প্রত্যাশাই সমস্ত সৃষ্ট জীবের রাখা উচিত, এবং স্রষ্টার এই কাজই করা উচিত। মানুষকে এই কাজটি করতে হলে, তা খুবই সীমিত হবে: তা মানুষকে একটি নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু তা মানুষকে অনন্ত গন্তব্যে নিয়ে আসতে সক্ষম হবে না। মানুষ না পারে নিজের ভাগ্য নির্ধারণ করতে, আর না পারে মানুষের সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যতের গন্তব্য নিশ্চিত করতে। যদিও, ঈশ্বরের সম্পাদিত কাজ কিন্তু ভিন্ন। যেহেতু তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, তাই তিনিই তাকে নেতৃত্ব দেন; যেহেতু তিনি মানুষকে উদ্ধার করেন, তাই তিনিই তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উদ্ধার করবেন, আর তাকে সম্পূর্ণরূপে অর্জন করবেন; যেহেতু তিনি মানুষকে নেতৃত্ব দেন, তাই তিনিই তাকে সঠিক গন্তব্যে নিয়ে আসবেন; এবং যেহেতু তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ও তাকে পরিচালনা করেন, তাই তাঁকে অবশ্যই মানুষের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দায়িত্ব নিতে হবে। স্রষ্টা যে কাজ সম্পাদিত করেছেন এটাই সেই কাজ। যদিও বিজয়কার্য মানুষের ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার শোধনের মাধ্যমে অর্জিত হয়, তবু মানুষকে পরিশেষে অবশ্যই নিয়ে আসা হবে সেই যথাযথ গন্তব্যে যা ঈশ্বর তার জন্য প্রস্তুত করেছেন। এর সুনির্দিষ্ট কারণ হল, ঈশ্বর এমনভাবে মানুষের মধ্যে কাজ করেন যাতে তার গন্তব্য এবং ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হয়। এখানে, যথাযথ গন্তব্য বলতে মানুষের সেই আশা বা সম্ভাবনার কথা বোঝানো হয় নি যা সুদূর অতীতে শোধন করা হয়েছিল; এই দুটি পৃথক। মানুষ তার প্রাপ্য গন্তব্যের পরিবর্তে, বরং যে জিনিসগুলির জন্য আশা করে এবং যেগুলি সন্ধান করে সেগুলি হলো তার দেহের অসংযত বাসনার অন্বেষণ থেকে উদ্ভূত আকাঙ্খা। ইতিমধ্যে, মানুষকে শুদ্ধ করে তোলা হলে তারপর তার যা প্রাপ্য হবে, সেই আশীর্বাদ ও প্রতিশ্রুতি ঈশ্বর প্রস্তুত করে রেখেছেন, যা ঈশ্বর মানুষের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন বিশ্ব সৃষ্টি করার পরেই, এবং যা মানুষের পছন্দ, পূর্বধারণা, কল্পনা, বা দৈহিক চাহিদার দ্বারা কলঙ্কিত নয়। এই গন্তব্য কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য প্রস্তুত করা হয় নি, বরং তা হল সমগ্র মানবজাতির বিশ্রামের স্থান। আর তাই, এই গন্তব্যই হল মানবজাতির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত গন্তব্য।
সৃষ্টিকর্তা সমস্ত সৃষ্ট সত্তার মধ্যে সুসমন্বয় সাধন করতে চান। তিনি যা করেন, সেগুলিকে বাতিল বা অমান্য করা তোমার একদমই উচিত নয়, তাঁর প্রতি বিদ্রোহী মনোভাব পোষণ করাও উচিত নয়। তিনি যে কাজ করেন, তা যখন পরিশেষে তাঁর লক্ষ্য পূরণ করবে, তাতেই তিনি গৌরব অর্জন করবেন। বর্তমানে, কেন তোমাদের মোয়াবের বংশধর অথবা অতিকায় লাল ড্রাগনের উত্তরসূরি বলা হয় না? কেন মনোনীত ব্যক্তিদের বিষয়ে কোনো কথা হয় না, পরিবর্তে কেবল সৃষ্ট সত্তাদের বিষয়েই কথা বলা হয়? সৃষ্ট সত্তা—এটাই ছিল মানুষের আসল উপাধি, আর এর মধ্যেই নিহিত আছে তার আসল পরিচয়। শুধুমাত্র যুগ এবং কাজের সময়কাল পরিবর্তিত হওয়ার কারণেই নাম পরিবর্তিত হয়; প্রকৃতপক্ষে, মানুষ এক সাধারণ জীব। সমস্ত জীব, সে তারা সবচেয়ে ভ্রষ্ট বা সবচেয়ে পবিত্র, যেমনই হোক না কেন, তাদের অবশ্যই সৃষ্ট সত্তার কর্তব্য সম্পাদন করতে হবে। ঈশ্বর যখন বিজয়কার্য সম্পাদন করেন, তখন তিনি তোমার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, নিয়তি বা গন্তব্য ব্যবহার করে তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করেন না। এই ভাবে কাজ করার আসলে কোনো দরকারই নেই। বিজয়কার্যের লক্ষ্য হল মানুষকে দিয়ে এক সৃষ্ট সত্তার কর্তব্য সম্পাদন করানো, সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করানো; শুধুমাত্র এর পরেই সে বিস্ময়কর গন্তব্যে প্রবেশ করতে পারে। মানুষের নিয়তি ঈশ্বরের হাতেই নিয়ন্ত্রিত হয়। তুমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার অযোগ্য: মানুষ নিজের জন্যেই নিজেকে নিয়ে সর্বদা ব্যস্ত থাকলেও, সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষমই থেকে যায়। তুমি যদি নিজের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা জানতে পারতে, যদি তুমি তোমার নিজের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতে, তাহলে কি তুমি এখনও সৃষ্ট সত্তা হয়েই থাকতে? সংক্ষেপে বললে, ঈশ্বর কীভাবে কাজ করেন, তা নির্বিশেষে তাঁর সমস্ত কাজই মানুষের স্বার্থে। উদাহরণ হিসাবে, ধরো, আকাশ, পৃথিবী এবং সমস্ত কিছু যা ঈশ্বর মানুষকে পরিবেশনের জন্যই তৈরি করেছেন: এই চন্দ্র, সূর্য এবং নক্ষত্র যা তিনি মানুষের জন্যই তৈরি করেছেন, এই পশুপাখি ও গাছপালা, বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরত ও শীত, এবং আরও অনেক কিছু—এই সমস্তই মানুষের অস্তিত্বের স্বার্থেই তৈরি করা হয়েছে। আর তাই, ঈশ্বর কীভাবে মানুষকে শাস্তি দেন বা বিচার করেন, সেসব নির্বিশেষে, মানুষের পরিত্রাণের জন্যই এই সবকিছু করা হয়। তিনি মানুষের থেকে তার দৈহিক আশা-আকাঙ্ক্ষা উপড়ে ফেললেও, তা মানুষের শুদ্ধিকরণের স্বার্থেই করা হয়, আর মানুষের এই শুদ্ধিকরণ করা হয়, যাতে সে অস্তিত্বরক্ষা করতে পারে। মানুষের গন্তব্য সৃষ্টিকর্তার হাতে, তাই মানুষ নিজেকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে?
বিজয়কার্য একবার সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, মানুষকে এক সুন্দর পৃথিবীতে আনা হবে। এই জীবন অবশ্য তখনও পৃথিবীতেই থাকবে, কিন্তু এখনকার মানুষের জীবনের থেকে তা পুরোপুরি আলাদা হবে। সমগ্র মানবজাতি বিজিত হওয়ার পরে মানবজাতি যে জীবন লাভ করবে এটাই সেই জীবন, এটা পৃথিবীতে মানুষের জন্য এক নতুন সূচনা হবে, আর মানবজাতির এই ধরনের জীবনলাভই প্রমাণ করবে যে তারা এক সুন্দর এবং নতুন ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। এটাই হবে পৃথিবীতে ঈশ্বর ও মানুষের জীবনের সূত্রপাত। এইরকম সুন্দর জীবনের ভিত্তি অবশ্যই এমন হতে হবে, যেখানে মানুষকে শোধন ও জয় করার পর, সে সৃষ্টিকর্তার সামনে নিজেকে সমর্পণ করে। আর তাই, মানবজাতি বিস্ময়কর গন্তব্যে প্রবেশের আগে এই বিজয়কার্যই হল ঈশ্বরের কাজের অন্তিম পর্যায়। এই ধরনের জীবন হল পৃথিবীতে মানুষের ভবিষ্যতের জীবন, পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর জীবন, যে রকম জীবনের জন্য মানুষ আকাঙ্ক্ষা করে, যে ধরনের জীবন এই বিশ্বের ইতিহাসে মানুষ আগে কখনো অর্জন করে নি। এটাই ৬,০০০ বছরের ব্যবস্থাপনার কাজের অন্তিম ফলাফল; এটাই মানুষ সবচেয়ে বেশি কামনা করে, আর এটা মানুষের প্রতি ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতিও বটে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি অবিলম্বে সম্পন্ন হতে পারে না: অন্তিম সময়ের কাজ একবার সম্পন্ন হয়ে গেলে এবং মানবজাতি সম্পূর্ণরূপে বিজিত হলে, অর্থাৎ, শয়তান একবার সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হলে, তবেই কেবল মানুষ এই ভবিষ্যৎ গন্তব্যে প্রবেশ করবে। মানুষকে পরিমার্জনার পরে, ঈশ্বর শয়তানকে পরাজিত করার দরুন, মানুষের পাপী প্রকৃতি অপসৃত হবে, অর্থাৎ প্রতিকূল শক্তির দ্বারা আর কোনও আগ্রাসন থাকবে না, এবং মানুষের জৈবদেহকে আক্রমণ করার মতো কোনও প্রতিকূল শক্তিই থাকবে না। আর তাই, মানুষ স্বাধীন ও পবিত্র হবে—সে অনন্তে প্রবেশ করবে। একমাত্র অন্ধকারের প্রতিকূল শক্তিকে বন্দী করা গেলেই মানুষ সর্বত্র স্বাধীনতা লাভ করবে, আর তাই, তার মধ্যে বিদ্রোহী বা প্রতিরোধী মনোভাব থাকবে না। শয়তানকে বন্দী করে আটকে রাখতে হবে, তাহলেই মানুষের সাথে সবকিছু ঠিক থাকবে; বর্তমান পরিস্থিতির কারণ হল, শয়তান এখনও পৃথিবীর সর্বত্র বিপর্যয় সৃষ্টি করে চলেছে এবং ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার সমগ্র কাজ এখনও অন্তিম পর্বে পৌঁছায় নি। শয়তান একবার পরাজিত হয়ে গেলে, মানুষ সম্পূর্ণরূপে মুক্তি পাবে; আর মানুষ যখন ঈশ্বরকে অর্জন করবে এবং শয়তানের আধিপত্যের অধীনতা থেকে বেরিয়ে আসবে, তখন সে ন্যায়পরায়ণতার সূর্যকে দেখতে পাবে। স্বাভাবিক মানুষের প্রাপ্য জীবন আবার পুনরুদ্ধার হবে; স্বাভাবিক মানুষের কাছে যা থাকা উচিত—যেমন মন্দ থেকে ভালোকে পৃথক করার ক্ষমতা, এবং নিজের খাওয়া পরার উপলব্ধি করার ক্ষমতা, স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করার ক্ষমতা—এগুলির সমস্ত কিছুই সে ফিরে পাবে। যদি হবা সর্প দ্বারা প্রলুব্ধ না হতো, তাহলে মানুষ সূচনালগ্ন থেকেই এই রকমের জীবন প্রাপ্ত করত। সে খাবার খেত, পোশাক পরিধান করত এবং পৃথিবীতে স্বাভাবিক মনুষ্যজীবন অতিবাহিত করত। তবুও মানুষের অধঃপতিত হওয়ার পরে, এই জীবন এক অলভ্য মায়ায় পর্যবসিত হয়েছে এবং আজও পর্যন্ত মানুষ এমন কিছু কল্পনা করার সাহস পায় না। মানুষ যে সুন্দর জীবনের আকাঙ্খা করে তা আসলে অবশ্যপ্রয়োজন। মানুষের যদি এমন কোনো গন্তব্য না থাকতো, তাহলে পৃথিবীতে তার হীন জীবনের সমাপ্তি কখনোই হত না, আর যদি এমন সুন্দর জীবন না থাকতো, তাহলে শয়তানের ভাগ্য বা শয়তান যে যুগে পৃথিবীর ওপর কর্তৃত্ব করেছে, তার কোনো অবসান হত না। মানুষকে অবশ্যই অন্ধকারের শক্তির অগম্য এক ক্ষেত্রে পৌঁছাতে হবে, এবং যখন সে তা করবে, সেটাই প্রমাণ করবে যে শয়তান পরাজিত হয়েছে। এইভাবে, একবার যখন আর শয়তানের বিঘ্ন থাকবে না, তখন ঈশ্বর নিজেই মানবজাতিকে নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং মানুষের সমগ্র জীবনকে পরিচালনা করবেন ও নিয়ন্ত্রণ করবেন; শুধুমাত্র তখনই শয়তানের প্রকৃত পরাজয় ঘটবে। বর্তমানে মানুষের জীবনের বেশিরভাগ জুড়েই রয়েছে কলুষতা; এখনও তা এক যন্ত্রণাময় এবং দুর্দশাপূর্ণ জীবন। এটাকে শয়তানের পরাজয় বলা যায় না; মানুষ এখনও দুর্দশার সাগর থেকে রেহাই পায় নি, সে এখনো মানুষের জীবনের কষ্ট বা শয়তানের প্রভাব এড়াতে পারে নি, এবং তার এখনও ঈশ্বরের প্রতি জ্ঞান অতি সামান্য। মানুষের সমস্ত দুর্দশা শয়তানের দ্বারা সৃষ্ট হয়েছিল; মানুষের জীবনে যন্ত্রণা শয়তানই বয়ে এনেছে, আর শয়তানকে বন্দী করতে পারলে, তখনই মানুষ এই দুর্দশার সাগর থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পেতে পারবে। তবুও শয়তানকে বন্দী করা যায় মানুষের হৃদয় জয় ও অর্জন করার মাধ্যমে, শয়তানের সাথে যুদ্ধে মানুষকে লুন্ঠনসামগ্রী বানিয়ে।
বর্তমানে, মানুষ পৃথিবীতে স্বাভাবিক জীবন পাওয়ার আগেই যে বিষয়গুলির সন্ধান করে তা হলো জয়ী হয়ে ওঠা ও নিখুঁত হয়ে গড়ে ওঠা, এবং শয়তান বন্দী হওয়ার আগেই মানুষ এই অভীষ্টগুলির সন্ধান করে। নির্যাস হচ্ছে, মানুষের জয়ী হওয়া ও নিখুঁত হয়ে গড়ে ওঠা, অথবা অত্যন্ত ব্যবহারোপযোগী হয়ে ওঠার অন্বেষণ, এ সবই শয়তানের প্রভাব এড়ানোর জন্য: মানুষের সাধনা হলো জয়ী হয়ে ওঠা, কিন্তু চূড়ান্ত ফলাফল হবে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তিলাভ করা। শুধুমাত্র শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার পরেই মানুষ এই পৃথিবীতে স্বাভাবিক মানবজীবন যাপন করতে পারে, যে জীবন ঈশ্বরকে উপাসনার জীবন। বর্তমানে, পৃথিবীতে স্বাভাবিক মানবজীবন লাভের আগে, জয়ী এবং নিখুঁত হওয়ার বিষয়গুলিই মানুষের অন্বেষণের বস্তু। এগুলি প্রাথমিকভাবে শুদ্ধ হওয়ার স্বার্থে, সত্য অনুশীলন করার স্বার্থে, এবং সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করার স্বার্থেই অন্বেষণ করা হয়। মানুষ যদি পৃথিবীতে স্বাভাবিক মানবজীবন, অর্থাৎ কষ্ট বা দুর্দশাহীন জীবনের অধিকারী হয়, তাহলে মানুষ জয়ী হয়ে ওঠার অন্বেষণে রত হবে না। ঈশ্বর মানুষকে অন্বেষণ করার জন্য “জয়ী হয়ে ওঠা” এবং “নিখুঁত হয়ে ওঠা”-র মতো উদ্দেশ্যগুলি প্রদান করেন এবং মানুষের এই উদ্দেশ্যগুলি অন্বেষণের মাধ্যমে তিনি তাকে সত্য অনুশীলনে এবং অর্থপূর্ণ জীবনযাপন করান। এর উদ্দেশ্য হল মানুষকে পরিপূর্ণ করে তোলা এবং তাকে অর্জন করা, আর জয়ী ও নিখুঁত হওয়ার অন্বেষণ নিতান্ত এর এক উপায়মাত্র। মানুষ যদি ভবিষ্যতে বিস্ময়কর গন্তব্যে প্রবেশ করে, সেখানে জয়ী এবং নিখুঁত হওয়ার কোনও উল্লেখ থাকবে না; সেখানে থাকবে শুধুমাত্র প্রতিটি সৃষ্ট সত্তা যারা তাদের কর্তব্য সম্পাদন করে চলেছে। আজ, মানুষকে কেবল তার সুযোগ নির্ধারণ করার জন্যই এই জিনিসগুলি অন্বেষণ করানো হয়, যাতে মানুষের অন্বেষণ আরও লক্ষ্যকেন্দ্রিক এবং ব্যবহারিক হতে পারে। অন্যথায়, মানুষ অস্পষ্ট বিমূর্ততার মাঝে বাস করত এবং অনন্ত জীবনে প্রবেশের অন্বেষণ করে যেত, আর তেমনটা হলে, মানুষ কি আরও অভাগা হিসাবে গণ্য হত না? এইভাবে লক্ষ্য ও নীতি ছাড়াই অন্বেষণ করা—তা কি আত্মপ্রতারণা নয়? পরিশেষে, এই অন্বেষণ স্বাভাবিকভাবেই নিষ্ফল হবে; শেষকালে মানুষ তখনও শয়তানের আধিপত্যের অধীনেই বাস করবে এবং নিজেকে এর থেকে বার করতে অক্ষম হবে। নিজেকে এই রকম লক্ষ্যহীন অন্বেষণের বিষয় করে তার কী লাভ? মানুষ যখন অনন্ত গন্তব্যে প্রবেশ করবে, তখন সে সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করবে, এবং যেহেতু মানুষ পরিত্রাণ লাভ করেছে এবং অনন্তে প্রবেশ করেছে, তাই মানুষ কোনও উদ্দেশ্য অন্বেষণ করবে না, তদুপরি, শয়তানের দ্বারা অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়েও তাকে উদ্বিগ্ন হতে হবে না। এই সময়ে, মানুষ নিজের স্থান সম্পর্কে অবগত হবে, নিজ কর্তব্য সম্পাদন করবে, এমনকি যদি তাদের শাস্তি বা বিচার না করা হয়, তাহলেও প্রত্যেকে নিজ কর্তব্য সম্পাদন করবে। সেই সময়ে, মানুষ পরিচয় ও মর্যাদা উভয় ক্ষেত্রেই সৃষ্ট জীব হয়ে উঠবে। উচ্চ-নীচের ভেদাভেদ আর থাকবে না; প্রত্যেকে কেবল ভিন্ন ভিন্ন কাজ সম্পাদন করবে। তবুও মানুষ তখনও মানবজাতির পক্ষে সুশৃঙ্খল এবং উপযুক্ত একটি গন্তব্যে বাস করবে; সৃষ্টিকর্তার উপাসনার স্বার্থেই মানুষ তার কর্তব্য সম্পাদন করবে, আর এই মানবজাতিই অনন্তকালের মানবজাতিতে পরিণত হবে। সেই সময়ে, মানুষ অর্জন করবে এমন এক জীবন যা ঈশ্বরের দ্বারা প্রদীপ্ত, যা ঈশ্বরের পরিচর্যা ও সুরক্ষার অধীন, এবং যা ঈশ্বরের সাথে একত্রিত। মানবজাতি পৃথিবীতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে, এবং সমস্ত মানুষ সঠিক পথে প্রবেশ করবে। ৬,০০০ বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা শয়তানকে সম্পূর্ণ পরাজিত করবে, অর্থাৎ সৃষ্টির সময়ে মানুষের যে প্রতিমূর্তি ছিল ঈশ্বর তা পুনরুদ্ধার করবেন, এবং এইভাবে ঈশ্বরের আসল অভিপ্রায় পূরণ হবে। সূচনাকালে, শয়তানের দ্বারা কলুষিত হওয়ার আগে, মানবজাতি পৃথিবীতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করত। পরবর্তীকালে, যখন মানুষ শয়তানের দ্বারা কলুষিত হওয়ার পর মানুষ এই স্বাভাবিক জীবন হারিয়ে ফেললো, আর সেখান থেকেই সূত্রপাত হল ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার কাজের, এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবন পুনরুদ্ধারের জন্য শয়তানের সঙ্গে যুদ্ধের। একমাত্র যখন ঈশ্বরের ৬,০০০ বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা সমাপ্তিতে পৌঁছবে তখনই এই পৃথিবীতে সমস্ত মানবজাতির জীবনের আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে; শুধু তখনই মানুষ বিস্ময়কর জীবন লাভ করবে, এবং সূচনালগ্নে মানুষ সৃষ্টির জন্য তাঁর যে উদ্দেশ্য ছিল ঈশ্বর তা পুনরুদ্ধার করবেন, তার পাশাপাশি মানুষের আসল প্রতিমূর্তিও পুনরুদ্ধার করবেন। আর তাই, একবার পৃথিবীতে মানবজাতি তার স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করলে মানুষ আর জয়ী বা নিখুঁত হওয়ার অন্বেষণ করবে না, কারণ মানুষ তখন পবিত্র হবে। মানুষ যে “জয়ী” এবং “নিখুঁত হয়ে ওঠা”-র কথা বলে, ঈশ্বর এবং শয়তানের মধ্যে যুদ্ধের সময় সেই লক্ষ্য মানুষকে অন্বেষণ করার জন্য দেওয়া হয়, এবং শুধুমাত্র মানুষকে কলুষিত করা হয়েছে বলেই সেগুলি বিদ্যমান। তোমাকে উদ্দেশ্য প্রদান করা এবং তোমাকে দিয়ে সেই উদ্দেশ্য অন্বেষণ করানোর মাধ্যমেই শয়তান পরাজিত হবে। তোমাকে জয়ী হতে বলা, বা নিখুঁত হয়ে উঠতে বলা, বা ব্যবহৃত হতে বলার জন্য প্রয়োজন যে তুমি শয়তানকে লজ্জা দিতে সাক্ষ্য বহন করো। শেষ পর্যন্ত, মানুষ পৃথিবীতে স্বাভাবিক মানবজীবন যাপন করবে, এবং সে পবিত্র হবে; যখন তা ঘটবে, তার পরেও কি মানুষ জয়ী হওয়ার অন্বেষণ করবে? তারা সবাই কি সৃষ্ট সত্তা নয়? জয়ী হয়ে ওঠা বা নিখুঁত হয়ে ওঠার কথা বলতে গেলে, এই শব্দগুলি শয়তানকে, এবং মানুষের ঘৃন্যতাকেই নির্দেশ করে। “জয়ী” শব্দটি কি শয়তান এবং প্রতিকূল শক্তির উপর বিজয়লাভের কথাই নির্দেশ করে না? তুমি যখন বলো যে তোমাকে নিখুঁত করে তোলা হয়েছে, তখন তোমার মধ্যেকার কোন বিষয়কে নিখুঁত করা হয়েছে? এটা কি বোঝায় না, যে তুমি তোমার কলুষিত শয়তানোচিত স্বভাব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেছ, যাতে তুমি ঈশ্বরের প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা অর্জন করতে পারো? এই ধরণের কথাগুলো মানুষের ভেতরের কলুষ, এবং শয়তানের সম্পর্কেই বলা হয়; এগুলো ঈশ্বরের সম্পর্কে বলা হয় না।
তুমি যদি এখন জয়ী ও নিখুঁত হয়ে ওঠার অন্বেষণ না করো, তাহলে ভবিষ্যতে, যখন মানবজাতি পৃথিবীতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে, তখন এইরকম অন্বেষণের সুযোগ আর থাকবে না। সেই সময়ে প্রত্যেক ধরনের মানুষের সমাপ্তি প্রকাশিত হবে। সেই সময়ে স্পষ্ট হয়ে যাবে তুমি কী ধরনের বস্তু, আর তখন তুমি জয়ী বা নিখুঁত হয়ে উঠতে চাও, সেটা আর সম্ভব হবে না। শুধুমাত্র যা হবে তা হলো, মানুষের বিদ্রোহী মনোভাবের কারণে, প্রকাশিত হওয়ার পরে তাদের দণ্ড দেওয়া হতে পারে। সেই সময়ে, মানুষ অন্যান্যদের চেয়ে উচ্চতর মর্যাদার অনুসন্ধান করবে না, জয়ী হওয়া এবং নিখুঁত হয়ে ওঠা, ঈশ্বরের প্রথমজাত পুত্র বা ঈশ্বরের পুত্র হওয়া—এসবের অন্বেষণ তারা করবে না। সকলেই হবে ঈশ্বরের জীব, সকলেই পৃথিবীতে বাস করবে, এবং সকলেই ঈশ্বরের সাথে পৃথিবীতে একত্রে বসবাস করবে। এখন ঈশ্বর এবং শয়তানের মধ্যে যুদ্ধের সময়, এ এমন এক সময় যেখানে এই যুদ্ধ শেষ হওয়া বাকি আছে, যে সময়ে মানুষকে সম্পূর্ণরূপে অর্জন করা বাকি আছে; এ হল এক পরিবর্তনের সময়কাল। আর তাই, মানুষের প্রয়োজন জয়ী অথবা ঈশ্বরের জনগণের একজন হয়ে ওঠার অন্বেষণ করা। আজ মর্যাদাগত পার্থক্য আছে, কিন্তু যখন সময় আসবে তখন এই জাতীয় পার্থক্য থাকবে না: জয়ী সকল ব্যক্তির মর্যাদা একই হবে, তারা সকলেই মানবজাতির যোগ্য সদস্য হবে এবং পৃথিবীতে সমান ভাবে বাস করবে, অর্থাৎ, তারা সকলেই যোগ্য সৃষ্ট সত্তা হবে এবং সকলকেই একই জিনিস দেওয়া হবে। যেহেতু ঈশ্বরের কাজের যুগ আলাদা, এবং তাঁর কাজের উদ্দেশ্য আলাদা, তাই তোমাদের মধ্যে যদি এই কাজ করা হয়, তাহলে তোমরা নিখুঁত হয়ে ওঠার ও জয়ী হয়ে ওঠার যোগ্য হবে; এই কাজ যদি অন্য দেশে করা হতো, তাহলে সেখানকার জনগোষ্ঠী প্রথম বিজিত জনগণ হয়ে ওঠার যোগ্য হতো, এবং প্রথম নিখুঁত হয়ে ওঠার যোগ্য হতো। বর্তমানে, এই কাজটি বিদেশে করা হয় না, তাই অন্যান্য দেশের লোকেরা নিখুঁত হয়ে ওঠার এবং জয়ী ব্যক্তি হওয়ার যোগ্য নয়, এবং তাদের পক্ষে প্রথম দল হয়ে ওঠাও অসম্ভব। যেহেতু ঈশ্বরের কাজের উদ্দেশ্য ভিন্ন, ঈশ্বরের কাজের যুগ ভিন্ন, এবং এর পরিধি ভিন্ন, তাই সেখানে যেমন প্রথম দল রয়েছে, অর্থাৎ জয়ী ব্যক্তিরা আছে, তেমন একইভাবে দ্বিতীয় দলও থাকবে যাকে নিখুঁত করে তোলা হয়েছে। প্রথম দলকে নিখুঁত করা হয়ে গেলে তারা এক নমুনা এবং আদর্শ হিসাবে থাকবে, আর তাই ভবিষ্যতে নিখুঁত তোলা হয়েছে এমন দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দলও থাকবে, কিন্তু অনন্তকালের হিসাবে তারা সবাই একই থাকবে, এবং মর্যাদাগত কোনও শ্রেণীবিভাগ থাকবে না। তাদের কেবল বিভিন্ন সময়ে নিখুঁত করে তোলা হবে, এবং মর্যাদাগত কোনও পার্থক্য থাকবে না। সেই সময় যখন আসবে যেখানে সকলকেই সম্পূর্ণ করে তোলা হয়েছে, এবং সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কাজ সমাপ্ত হয়েছে, তখন মর্যাদার আর কোনও পার্থক্য থাকবে না, সকলেই সমান মর্যাদা লাভ করবে। আজ, তোমাদের মধ্যে এই কাজ করা হয়, যাতে তোমরা জয়ী ব্যক্তি হও। এ কাজ ব্রিটেনে করা হলে, সেখানেই প্রথম দলের অস্তিত্ব থাকত, ঠিক যেমন তোমরা এখন প্রথম দল হবে। তোমরা নিতান্তই বিশেষভাবে অনুগ্রহের আশীর্বাদ পেয়েছ যেহেতু আজ তোমাদের মধ্যে এই কাজ সম্পাদিত হচ্ছে, এবং যদি এই কাজটি তোমাদের মধ্যে না করা হত, তবে তোমরা হয়তো দ্বিতীয় বা তৃতীয়, বা চতুর্থ, বা পঞ্চম দল হতে। এটা শুধুমাত্র কাজের ক্রমের পার্থক্যের কারণে; প্রথম দল ও দ্বিতীয় দল এটা বোঝায় না যে তা অন্য দলের চেয়ে উচ্চ বা নিম্ন, এটি কেবল এই ব্যক্তিদের নিখুঁত করে তোলার ক্রমকেই নির্দেশ করে। আজ এই কথাগুলো তোমাদের জানানো হয়েছে, কিন্তু তা আগে জানানো হয় নি কেন? কারণ, কোনো প্রক্রিয়া না থাকলে, মানুষ চরমের দিকে ধাবিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যীশু তাঁর সময়ে বলেছিলেন: “আমি যেমন প্রস্থান করেছিলাম, তেমন ভাবেই আমি ফিরে আসব”। বর্তমানে, অনেকেই এই বাক্যের দ্বারা মুগ্ধ হয়ে রয়েছে, আর তারা কেবল সাদা পোশাক পরতে এবং স্বর্গে উন্নীত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে চায়। সুতরাং, এমন অনেক বাক্য রয়েছে, যেগুলো সময়ের আগে বলা যায় না; যদি সেগুলো আগেই বলে দেওয়া হত, তাহলে মানুষ চরমের দিকে ধাবিত হত। মানুষের আত্মিক উচ্চতা খুবই ক্ষুদ্র, এবং সে এই সকল বাক্যের প্রকৃত সত্য স্পষ্ট ভাবে বুঝতে অক্ষম।
যখন মানুষ পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃত জীবন অর্জন করবে এবং শয়তানের সমস্ত শক্তিকে বন্দী করে রাখা হবে, তখন মানুষ সহজেই পৃথিবীতে জীবনযাপন করবে। বিষয়গুলো বর্তমানের মতো এত জটিল থাকবে না: মানবিক সম্পর্ক, সামাজিক সম্পর্ক, জটিল পারিবারিক সম্পর্ক—এগুলো প্রচুর সমস্যা, প্রচুর যন্ত্রণা বহন করে আনে! এখানে মানুষের জীবন বড়ই দুর্বিষহ! একবার মানুষকে জয় করা হয়ে গেলে, তার হৃদয় ও মন পরিবর্তন হয়ে যাবে: সে এমন হৃদয়ের অধিকারী হবে যা ঈশ্বরকে সম্মান করে এবং ভালোবাসে। মহাবিশ্বে যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসতে চায় তাদের সবাইকে একবার যখন জয় করা হয়ে যাবে, অর্থাৎ একবার যখন শয়তানকে পরাজিত করা হয়ে যাবে, এবং একবার শয়তানকে—অন্ধকারের সমস্ত শক্তিকে—বন্দী করা হয়ে যাবে, তখন পৃথিবীতে মানুষের জীবন সমস্যামুক্ত হবে, এবং সে পৃথিবীতে স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারবে। মানুষের জীবন যদি দৈহিক সম্পর্ক এবং দৈহিক জটিলতাবিহীন হত, তাহলে তা অনেক সহজ হত। মানুষের দেহজ সম্পর্ক খুবই জটিল, এবং মানুষের এই ধরনের জিনিস থাকাটাই এর প্রমাণ যে তার এখনও শয়তানের প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করা বাকি আছে। যদি তোমার প্রতিটি ভাই ও বোনের সাথে তোমার একইরকম সম্পর্ক থাকত, যদি পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সাথে তোমার একই সম্পর্ক থাকত, তাহলে তোমার কোনও উদ্বেগ থাকতো না, এবং কারোর বিষয়য়েই দুশ্চিন্তা করার দরকার হত না। এর থেকে ভালো আর কিছুই হতে পারত না, আর এইভাবে মানুষ তার অর্ধেক যন্ত্রণার উপশম লাভ করতে পারত। পৃথিবীতে স্বাভাবিক মানবজীবন যাপন করার সময়, মানুষ দেবদূতের মতোই হয়ে উঠবে; যদিও তখনও সে দেহের সত্তাই থাকবে, কিন্তু সে অনেকটাই দেবদূতের মতো হয়ে উঠবে। এটাই শেষ প্রতিশ্রুতি, মানুষকে প্রদান করা অন্তিম অঙ্গীকার। আজ মানুষ শাস্তি ও বিচার সহ্য করে; তোমার কি মনে হয় এই ধরনের বিষয় সম্পর্কে মানুষের অভিজ্ঞতা অর্থহীন? বিনা কারণে শাস্তি ও বিচারের কাজ করা যেত কি? পূর্বেই বলা হয়েছে যে, মানুষকে শাস্তি দেওয়া এবং বিচার করার অর্থ হল তাকে অতল গহ্বরের মধ্যে রাখা, অর্থাৎ, তার ভাগ্য এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা হরণ করা। এটা করা হয় শুধুমাত্রএকটিই স্বার্থে: মানুষের পরিশোধন। মানুষকে ইচ্ছাকৃতভাবে অতল গহ্বরের মধ্যে রাখা হয় না, যার পরে ঈশ্বর তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন। পরিবর্তে, এটি মানুষের অন্তর্নিহিত বিদ্রোহী মনোভাবের মোকাবিলা করার জন্য করা হয়, যাতে শেষ পর্যন্ত মানুষের অন্তর্নিহিত বিষয়গুলি শুদ্ধ হয়, যাতে সে ঈশ্বরের প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে পারে এবং একজন পবিত্র ব্যক্তির মতো হয়ে উঠতে পারে। তা যদি করা হয়, তাহলেই সব সম্পন্ন হবে। প্রকৃতপক্ষে, যখন মানুষের মধ্যে মোকাবিলা করার মতো সমস্ত জিনিসকেই মোকাবিলা করা হবে, এবং মানুষ জোরালো সাক্ষ্য বহন করবে, তখন শয়তানও পরাজিত হবে, এবং এমনকি যদি তখন এর মধ্যে থেকে এমন অল্প কিছু জিনিস মানুষের মধ্যে থেকেও যায় যা প্রথম থেকে রয়েছে ও সম্পূর্ণ পরিশুদ্ধ হয়নি, শয়তানকে পরাজিত করার পরে সেগুলি আর সমস্যা সৃষ্টি করবে না, আর সেই সময়ে মানুষ সম্পূর্ণ পরিশুদ্ধ হয়ে যাবে। মানুষ এমন জীবনের অভিজ্ঞতা কখনোই লাভ করে নি, কিন্তু যখন শয়তান পরাজিত হবে, তখন সমস্ত কিছুরই নিষ্পত্তি হয়ে যাবে এবং মানুষের মধ্যে থাকা সমস্ত তুচ্ছ জিনিসেরও সমাধান হয়ে যাবে, আর একবার সেই প্রধান সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে, বাকি অন্যান্য সমস্যাও শেষ হয়ে যাবে। পৃথিবীতে ঈশ্বরের এই অবতাররূপ ধারণের সময়, তিনি যখন ব্যক্তিগতভাবে মানুষের মাঝে তাঁর কাজ করেন, তখন শয়তানকে পরাজিত করার জন্যই তাঁর সব কাজ সম্পাদিত হয়, এবং তিনি মানুষের বিজয় ও তোমাদের সম্পূর্ণ করার মাধ্যমে শয়তানকে পরাজিত করবেন। যখন তোমরা জোরালো সাক্ষ্য বহন করবে, তখন সেটাও শয়তানের পরাজয় চিহ্নিত করবে। শয়তানকে পরাস্ত করার জন্য মানুষকে প্রথমে জয় করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে নিখুঁত করে তোলা হয়। সংক্ষেপে, শয়তানের পরাজয়ের সাথে সাথে, এটা দুর্দশার সাগর থেকে সমস্ত মানবজাতির মুক্তিও প্রদান করে। কাজটা সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে সম্পাদিত হয় নাকি চীনেই সম্পাদিত হয় তা নির্বিশেষে, এটা শয়তানকে পরাজিত করার জন্য এবং সমগ্র মানবজাতিকে পরিত্রাণ এনে দেওয়ার জন্যই সম্পাদিত হয়, যাতে মানুষ বিশ্রামস্থলে প্রবেশ করতে পারে। ঈশ্বরের অবতার, এই সাধারণ দেহ, নির্দিষ্টভাবে শয়তানকে পরাজিত করার স্বার্থেই। দেহরূপে ঈশ্বরের কাজ স্বর্গের নিচের সেই সকলকে পরিত্রাণ এনে দেওয়ার জন্যই ব্যবহার করা হয় যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে, এই কাজ সমগ্র মানবজাতিকে জয় করার স্বার্থে এবং তদুপরি, শয়তানকে পরাজিত করার স্বার্থে। ঈশ্বরের সকল পরিচালনামূলক কার্যের মূল অংশ, এবং মানবজাতিকে পরিত্রান এনে দেওয়ার জন্য শয়তানের পরাজয়, এরা পরস্পরের থেকে অবিচ্ছেদ্য। এই কাজের বেশির ভাগ ক্ষেত্র জুড়ে, সবসময় কেন তোমাদের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা আলোচনা করা হয়? এবং এই সাক্ষ্য কার প্রতি নির্দেশিত? এটা কি শয়তানের দিকে উদ্দিষ্ট নয়? এই সাক্ষ্য ঈশ্বরের জন্য প্রস্তুত করা হয়, এবং ঈশ্বরের কাজ তার প্রভাব অর্জন করেছে, এমন সাক্ষ্য দেওয়ার জন্যই প্রস্তুত করা হয়। সাক্ষ্যদান করার কাজ শয়তানকে পরাজিত করার কাজের সাথে সম্পর্কিত; শয়তানের সাথে যদি কোনো যুদ্ধ না থাকতো, তাহলে মানুষের সাক্ষ্য দেওয়ার প্রয়োজন হত না। যেহেতু শয়তানকে পরাজিত করতেই হবে, তাই মানুষকে উদ্ধার করার সময় ঈশ্বর চান যে মানুষ শয়তানের সামনে তাঁর হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করুক, যা তিনি মানুষকে উদ্ধার করতে এবং শয়তানের সাথে যুদ্ধে ব্যবহার করবেন। ফলস্বরূপ, মানুষ একাধারে পরিত্রাণের লক্ষ্যবস্তু এবং শয়তানকে পরাজিত করার একটি অস্ত্র, আর তাই ঈশ্বরের সমগ্র ব্যবস্থাপনার কাজের কেন্দ্রে মানুষ রয়েছে, যেখানে শয়তান কেবলমাত্র ধ্বংসের বস্তু, শত্রু। তোমার মনে হতে পারে যে তুমি কিছুই করো নি, কিন্তু তোমার স্বভাবের পরিবর্তনের কারণে, সাক্ষ্য বাহিত হয়েছে, এবং এই সাক্ষ্য শয়তানের দিকেই উদ্দিষ্ট, মানুষের জন্য নয়। মানুষ এমন একটি সাক্ষ্য উপভোগ করার উপযুক্ত নয়। ঈশ্বরের সম্পাদিত কাজ সে কী করে উপলব্ধি করতে পারবে? ঈশ্বরের যুদ্ধের লক্ষ্যবস্তু হলো শয়তান; যেখানে মানুষ শুধুমাত্র পরিত্রাণের বস্তু। মানুষের ভ্রষ্ট শয়তানোচিত স্বভাব রয়েছে, এবং সে এই কাজ উপলব্ধি করতে অক্ষম। এর কারণ হলো শয়তানের দ্বারা মানুষের ভ্রষ্ট হওয়া এবং এটা মানুষের সহজাত নয়, বরং শয়তানের দ্বারা নির্দেশিত। বর্তমানে ঈশ্বরের প্রধান কাজ হল শয়তানকে পরাজিত করা, অর্থাৎ মানুষকে সম্পূর্ণরূপে জয় করা, যাতে মানুষ শয়তানের সামনে ঈশ্বরের চূড়ান্ত সাক্ষ্য দিতে পারে। এইভাবে, সমস্ত কিছু সম্পন্ন হবে। অনেক ক্ষেত্রে, তোমার খালি চোখে দেখে মনে হবে যে, কিছুই করা হয় নি, কিন্তু বাস্তবে কাজটি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়ে গেছে। মানুষ চায় সমস্ত কাজ সম্পূর্ণ করার বিষয়টা যেন দৃশ্যমান হয়, তবুও তোমার সামনে তা দৃশ্যমান না করেই, আমি আমার কাজ শেষ করেছি, কারণ শয়তান সমর্পণ করেছে, যার অর্থ হল সে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়েছে, ঈশ্বরের সমস্ত জ্ঞান, শক্তি এবং কর্তৃত্ব শয়তানকে পরাস্ত করেছে। ঠিক এই সাক্ষ্যই বহন করতে হবে, এবং যদিও তা মানুষের মধ্যে স্পষ্টভাবে প্রকাশিত নয়, যদিও তা খালি চোখে দেখা যায় না, তবুও শয়তান ইতিমধ্যেই পরাজিত হয়েছে। এই কাজের সম্পূর্ণ অংশই শয়তানের বিরুদ্ধে উদ্দিষ্ট এবং শয়তানের সাথে যুদ্ধের কারণেই তা নির্বাহ করা হয়েছে। আর তাই, এমন অনেক কিছু আছে যা মানুষের কাছে সফল বলে মনে হয় না, কিন্তু ঈশ্বরের দৃষ্টিতে অনেক আগেই সফলভাবে সম্পন্ন হয়ে গেছে। এটা ঈশ্বরের সমস্ত কাজের অন্তর্নিহিত সত্যগুলির মধ্যে একটা।
শয়তানকে একবার পরাজিত করলে, অর্থাৎ, মানুষকে সম্পূর্ণ জয় করে নেওয়ার পর, মানুষ তখন উপলব্ধি করতে পারবে যে এই কাজের সমস্তটাই পরিত্রাণের স্বার্থে, আর মানুষকে শয়তানের হাত থেকে ছিনিয়ে আনাই এই পরিত্রাণের উপায়। ঈশ্বরের ৬,০০০ বছরের ব্যবস্থাপনার কাজ তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত: বিধানের যুগ, অনুগ্রহের যুগ এবং রাজ্যের যুগ। কাজের এই তিনটি পর্যায়ের সমস্তটাই মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য, অর্থাৎ বলা যায় যে, এগুলি শয়তানের দ্বারা গুরুতরভাবে কলুষিত মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য। আবার একই সাথে, সেগুলি এই জন্যেও, যাতে ঈশ্বর শয়তানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারেন। এইভাবে, পরিত্রাণের কাজ যেমন তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত, তেমন শয়তানের সাথে যুদ্ধও তিনটি পর্যায়েই বিভক্ত, আর ঈশ্বরের কাজের এই দুটি দিক একইসাথে সম্পাদিত হয়। শয়তানের সাথে যুদ্ধ করা হয় কার্যত মানবজাতির পরিত্রাণের স্বার্থে, আর যেহেতু মানবজাতির পরিত্রাণের কাজ একটি একক পর্যায়ে সম্পন্ন করা যায় না, তাই শয়তানের সাথে যুদ্ধও বিভিন্ন সময়কাল ও পর্যায়ে বিভক্ত, আর মানুষের চাহিদা এবং শয়তানের দ্বারা তার ভ্রষ্ট হওয়ার মাত্রার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ভাবেই শয়তানের সাথে যুদ্ধ করা হয়। হয়তো মানুষের কল্পনায় সে বিশ্বাস করে, যেমন যুদ্ধের সময় দুই সেনাদল একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে, এই যুদ্ধে ঈশ্বর শয়তানের বিরুদ্ধে তেমন ভাবেই অস্ত্র ধারণ করবেন। মানুষের ধীশক্তি এটুকুই কল্পনা করতে সক্ষম; এটা এক অত্যন্ত অবাস্তব এবং অস্পষ্ট ধারণা, তবু এটাই মানুষ বিশ্বাস করে। আর যেহেতু আমি এখানে বলছি যে, শয়তানের সাথে যুদ্ধই হল মানুষের পরিত্রাণের উপায়, তাই মানুষ কল্পনা করে এভাবেই হয়তো যুদ্ধ পরিচালিত হয়। মানুষের পরিত্রাণের কাজের তিনটি পর্যায় রয়েছে, অর্থাৎ বলা যায়, শয়তানকে চিরতরে পরাজিত করার জন্য শয়তানের সাথে যুদ্ধকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। তবুও শয়তানের সাথে যুদ্ধের এই সম্পূর্ণ কাজের অন্তর্নিহিত সত্য হল, এর ফলাফল কাজের বিভিন্ন ধাপের মাধ্যমে অর্জিত হয়: মানুষের ওপর অনুগ্রহ বর্ষণ করা, মানুষের পাপস্খালনের বলি হয়ে ওঠা, মানুষের পাপের ক্ষমা করা, মানুষকে জয় করা, এবং তাকে নিখুঁত করা। আসলে, শয়তানের সাথে যুদ্ধের অর্থ শয়তানের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ নয়, বরং তা হলো মানুষের পরিত্রাণ, মানুষের জীবনের কাজ, এবং মানুষের স্বভাবের পরিবর্তন যাতে সে ঈশ্বরের সাক্ষ্য দিতে পারে। এইভাবেই শয়তানকে পরাজিত করা হয়। মানুষের ভ্রষ্ট স্বভাব পরিবর্তনের মাধ্যমে শয়তানকে পরাজিত করা হয়। যখন শয়তানকে পরাজিত করা হবে, অর্থাৎ মানুষকে যখন সম্পূর্ণভাবে উদ্ধার করা হবে, তখন অপমানিত শয়তান সম্পূর্ণভাবে বন্দী হবে, আর এভাবেই মানুষকে সম্পূর্ণভাবে উদ্ধার করা হবে। এইভাবে, মানুষের পরিত্রাণের সারসত্যই হল শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, আর এই যুদ্ধ প্রাথমিকভাবে মানুষের পরিত্রাণের মধ্যেই প্রতিফলিত হয়। অন্তিম সময়ের যে পর্যায়ে মানুষকে জয় করা হবে, সেটাই শয়তানের সাথে যুদ্ধের শেষ পর্যায়, আর সেইসাথে এটাই শয়তানের আধিপত্যের অধীন থেকে মানুষের সম্পূর্ণ পরিত্রাণের কাজ। মানুষের বিজিত হওয়ার অন্তর্নিহিত অর্থ হলো, বিজিত হওয়ার পর শয়তানের প্রতিমূর্তির, অর্থাৎ শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট মানুষের, স্রষ্টার কাছে প্রত্যাবর্তন, যার মাধ্যমে সে শয়তানকে পরিত্যাগ করবে এবং সম্পূর্ণভাবে ঈশ্বরের কাছে ফিরে যাবে। এইভাবে, মানুষকে সম্পূর্ণরূপে উদ্ধার করা হবে। আর তাই, এই বিজয়কার্য হল শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শেষ কাজ এবং শয়তানকে হারানোর জন্য ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার শেষ পর্যায়। এই কাজ ব্যতীত, মানুষের সম্পূর্ণ পরিত্রাণ শেষ পর্যন্ত অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে, শয়তানের সম্পূর্ণ পরাজয়ও অসম্ভব হবে, আর মানবজাতি কখনোই সুন্দর গন্তব্যে প্রবেশ করতে পারবে না, বা শয়তানের প্রভাবমুক্ত হতে পারবে না। ফলত, শয়তানের সাথে যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে মানুষের পরিত্রাণের কাজ শেষ করা যাবে না, কারণ ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার কাজের মূল অংশই হলো মানবজাতির পরিত্রাণের স্বার্থে। প্রাচীনতম মানবজাতি ঈশ্বরের হাতে ছিল, কিন্তু শয়তানের প্রলোভন এবং দুর্নীতির কারণে মানুষ শয়তানের সাথে জড়িয়ে পড়ে এবং তার হাতের মুঠোয় চলে আসে। এইভাবে, শয়তান ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার কাজে সেই লক্ষ্যবস্তু হয়ে ওঠে যাকে পরাজিত করা হবে। যেহেতু শয়তান মানুষকে অধিকার করেছিল, এবং যেহেতু মানুষই সেই মূলধন যা ঈশ্বর সকল ব্যবস্থাপনা সম্পাদনের কাজে ব্যবহার করেন, তাই মানুষকে উদ্ধার করতে হলে, তাকে অবশ্যই শয়তানের হাত থেকে ছিনিয়ে আনতে হবে, যার অর্থ হল শয়তান কাছে বন্দী থাকার পর মানুষকে অবশ্যই ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। এইভাবে, মানুষের পুরোনো স্বভাব পরিবর্তনের মাধ্যমে শয়তানকে অবশ্যই পরাজিত করতে হবে, যে পরিবর্তনগুলি মানুষের আসল যুক্তিবোধকে পুনরুদ্ধার করে। এই উপায়ে, যে মানুষদের শয়তান বন্দী করেছিল, তাদের শয়তানের হাত থেকে ছিনিয়ে আনা যেতে পারে। মানুষ যদি শয়তানের প্রভাব বা দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে যায়, তাহলে শয়তান লজ্জিত হবে, মানুষকে শেষ পর্যন্ত ফিরিয়ে নেওয়া হবে, এবং শয়তান পরাজিত হবে। এবং যেহেতু মানুষ শয়তানের অন্ধকার প্রভাব থেকে মুক্ত হয়েছে, সে এই সমগ্র যুদ্ধের লুন্ঠনসামগ্রী হয়ে উঠবে এবং যুদ্ধ শেষ হলে শয়তান সেই বস্তুতে পরিণত হবে যাকে শাস্তি দেওয়া হবে, যার পরে মানবজাতির পরিত্রাণের সমগ্র কাজ সম্পন্ন হবে।
সৃষ্ট সত্তাদের প্রতি ঈশ্বরের কোনো বিদ্বেষ নেই; তিনি শুধুমাত্র শয়তানকে পরাজিত করতে চান। তাঁর তাঁর কাজের সমস্তটাই—তা শাস্তি হোক বা বিচার—শয়তানের দিকে উদ্দিষ্ট; তা মানবজাতির পরিত্রাণের স্বার্থে সম্পাদিত হয়, এই সবই শয়তানকে পরাজিত করার জন্য, এবং এর একটিই উদ্দেশ্য রয়েছে: একদম শেষ পর্যন্ত শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা! ঈশ্বর শয়তানের উপর বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত কখনোই বিশ্রাম নেবেন না! একমাত্র শয়তানকে পরাজিত করার পরই তিনি বিশ্রাম নেবেন। যেহেতু ঈশ্বরের সম্পাদিত সমস্ত কাজ শয়তানের দিকে উদ্দিষ্ট, এবং যেহেতু যারা শয়তানের দ্বারা কলুষিত হয়েছে তারা সবাই তারা সবাই শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে ও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন না করে শয়তানের নিয়ন্ত্রণের ও তার আধিপত্যের অধীনে বাস করে, তাই শয়তান এই মানুষগুলোর উপর থেকে তার দখল শিথিল করবে না এবং তাদের অর্জনও করা যাবে না। যদি তাদের অর্জন করা না হয়, তবে তা এটাই প্রমাণ করবে যে শয়তান পরাজিত হয় নি, পরাস্ত হয়নি। আর তাই, ঈশ্বরের ৬,০০০-বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনায়, প্রথম পর্যায়ে তিনি বিধানের কাজ করেছিলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি অনুগ্রহের যুগের কাজ, অর্থাৎ ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কাজ করেছিলেন, এবং তৃতীয় পর্যায়ে তিনি মানবজাতিকে জয় করার কাজ করেন। এই সমস্ত কাজ শয়তান মানবজাতিকে যে পরিমাণে কলুষিত করেছে তার দিকেই উদ্দিষ্ট, এই সবই শয়তানকে পরাজিত করার জন্য এবং এই পর্যায়গুলির প্রতিটিই শয়তানকে পরাজিত করার স্বার্থে। ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার ৬,০০০ বছরের কাজের সারমর্ম হল অতিকায় লাল ড্রাগনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, এবং মানবজাতিকে পরিচালনা করার কাজটি শয়তানকে পরাজিত করারও কাজ, শয়তানের সাথে যুদ্ধ করার কাজ। ঈশ্বর ৬,০০০ বছর ধরে যুদ্ধ করেছেন, এবং এইভাবে তিনি ৬,০০০ বছর ধরে কাজ করে মানুষকে শেষ পর্যন্ত নতুন জগতে আনতে পেরেছেন। শয়তান পরাজিত হলে মানুষ সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন হবে। এটাই কি বর্তমানে ঈশ্বরের কাজের অভিমুখ নয়? এটিই নির্দিষ্টভাবে বর্তমানের কাজের অভিমুখ: মানুষের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা এবং মুক্তি, যাতে সে কোনও নিয়মের অধীন না হয়, অথবা কোনও বাধা বা বিধিনিষেধের দ্বারা সীমাবদ্ধ না হয়। এই সমস্ত কাজ তোমাদের আত্মিক উচ্চতা এবং তোমাদের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ভাবে করা হয়, অর্থাৎ তোমরা যা কিছু সম্পন্ন করতে পারো তার সবই তোমাদের প্রদান করা হয়। এটি তোমাদের অসাধ্যসাধন করতে বলা নয়, কোনোকিছু তোমাদের উপর আরোপ করার মতো বিষয় নয়; বরং, এই সমস্ত কাজ তোমাদের প্রকৃত প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতি রেখে সম্পাদিত হয়। কাজের প্রতিটি পর্যায় মানুষের প্রকৃত প্রয়োজন এবং চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে সম্পাদিত হয়; কাজের প্রতিটি পর্যায়ই শয়তানকে পরাজিত করার স্বার্থে। প্রকৃতপক্ষে, সূচনাকালে স্রষ্টা এবং তাঁর সৃষ্টির মধ্যে কোন অন্তরায় ছিল না। এই সব বাধা শয়তানের কারণে সৃষ্ট হয়েছিল। শয়তান যেভাবে মানুষকে বিপর্যস্ত ও কলুষিত করেছে, সেই কারণে সে কিছু দেখতে বা স্পর্শ করতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। মানুষই এর শিকার হয়েছে, প্রতারিত হয়েছে। একবার শয়তান পরাজিত হয়ে গেলে, সৃষ্ট প্রাণীরা স্রষ্টাকে প্রত্যক্ষ করবে, এবং স্রষ্টা সৃষ্ট প্রাণীদের দিকে তাকাবেন এবং ব্যক্তিগতভাবে তাদের নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। শুধুমাত্র এমন জীবনই পৃথিবীতে মানুষের থাকা উচিত। আর তাই, ঈশ্বরের কাজ প্রাথমিকভাবে শয়তানকে পরাস্ত করার জন্য, এবং একবার শয়তান পরাজিত হয়ে গেলে সবকিছুর সমাধান হয়ে যাবে। আজ, তুমি দেখেছো যে মানুষের মাঝে ঈশ্বরের আগমন কোনো সহজ বিষয় নয়। তিনি তোমাদের মধ্যে দোষ খুঁজে প্রতিটা দিন ব্যয় করার জন্য আসেন নি, এটা-সেটা বলতে আসেন নি, বা তিনি দেখতে কেমন, তিনি কীভাবে কথা বলেন এবং জীবনযাপন করেন তা তোমাদের দেখার অনুমতি দিতে আসেননি। ঈশ্বর নিতান্তই তোমাদেরকে তাঁর দিকে তাকানোর, বা তোমাদের চোখ খোলার অনুমতি দেওয়ার জন্য, অথবা তিনি যে রহস্যের কথা বলেছেন এবং তিনি যে সাতটি সীলমোহর খুলেছেন তা শোনার অনুমতি দেওয়ার জন্য দেহরূপ ধারণ করেন নি। বরং শয়তানকে পরাজিত করার জন্যই তিনি দেহরূপ ধারণ করেছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে মানুষের মধ্যে দেহরূপে এসেছেন মানুষকে বাঁচাতে এবং শয়তানের সাথে যুদ্ধ করতে; এটাই তাঁর অবতাররূপ ধারণের তাৎপর্য। যদি এটা শয়তানকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে না হত, তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই কাজটি করতেন না। ঈশ্বর পৃথিবীতে এসেছেন মানুষের মাঝে তাঁর কাজ করার জন্য, ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে মানুষের কাছে প্রকাশ করতে, এবং মানুষকে তাঁকে দেখার সুযোগ করে দিতে; এটা কি একটা ছোট ব্যাপার? এটা সত্যিই সহজ নয়! এটা মানুষের কল্পনার মত নয় যে ঈশ্বর এসেছেন বলেই মানুষ তাঁর দিকে তাকাতে পারে, যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে ঈশ্বর বাস্তব এবং অস্পষ্ট বা ফাঁপা নন, এবং ঈশ্বর সুউচ্চ কিন্তু তবুও বিনয়ী। এটা কি অত সহজ হতে পারে? সুনির্দিষ্টভাবে, যেহেতু শয়তান মানুষের দেহকে কলুষিত করেছে, এবং মানুষকেই ঈশ্বর উদ্ধার করতে চান, তাই শয়তানের সাথে যুদ্ধ করার জন্য এবং ব্যক্তিগতভাবে মানুষকে মেষপালকের মতো পথ দেখানোর জন্য ঈশ্বরকে অবশ্যই দেহরূপ গ্রহণ করতে হবে। শুধুমাত্র এটাই তাঁর কাজের জন্য উপকারী। শয়তানকে পরাজিত করার জন্য, এবং মানুষকে আরও ভালোভাবে উদ্ধার করার জন্য ঈশ্বরের দুটি দেহরূপের আগমন ঘটেছিল। এর কারণ, শয়তানের সঙ্গে যুদ্ধ কেবলমাত্র ঈশ্বরই করতে পারেন, তা ঈশ্বরের আত্মা হোক বা অবতাররূপ হোক। সংক্ষেপে, যারা শয়তানের সাথে যুদ্ধ করছে তারা দেবদূত হতে পারে না, আর মানুষ তো হতেই পারে না, যে মানুষ শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হয়েছে। দেবদূতেরা এই যুদ্ধে লড়াই করার জন্য শক্তিহীন, এবং মানুষ আরও বেশি অসমর্থ। অর্থাৎ, ঈশ্বর যদি মানুষের জীবনের উপর কাজ করতে চান, যদি তিনি ব্যক্তিগতভাবে মানুষকে উদ্ধার করার জন্য পৃথিবীতে আসতে চান, তবে ব্যক্তিগতভাবে তাঁকে দেহরূপে পরিণত হতে হবে—অর্থাৎ, তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে দেহরূপ গ্রহণ করতে হবে, এবং তার অন্তর্নিহিত পরিচয় ও অবশ্যকরণীয় কাজ সমেত তাঁকে মানুষের মাঝে আসতে হবে এবং ব্যক্তিগতভাবে মানুষকে বাঁচাতে হবে। যদি তা না হয়, যদি ঈশ্বরের আত্মা বা মানুষ এই কাজটি করে থাকে, তাহলে এই যুদ্ধের কোনো ফল কখনোই আসবে না এবং তা কখনোই শেষ হবে না। একমাত্র যখন ঈশ্বর ব্যক্তিগতভাবে মানুষের মাঝে এসে শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য দেহরূপ ধারণ করেন, তখনই মানুষের পরিত্রাণের সুযোগ থাকে। অধিকন্তু, শুধুমাত্র তখনই শয়তানকে লজ্জা দেওয়া হয় এবং তার আর শোষণের কোনো সুযোগ বা নির্বাহ করার মতো কোনো পরিকল্পনা থাকে না। ঈশ্বরের অবতারের দ্বারা সম্পাদিত কাজটি ঈশ্বরের আত্মার অসাধ্য, এবং তা ঈশ্বরের তরফে কোনো রক্তমাংসের মানুষের পক্ষে করা আরও অসম্ভব হবে, কারণ তিনি যে কাজ করেন তা মানুষের জীবনের স্বার্থে, এবং মানুষের কলুষিত স্বভাব পরিবর্তন করার জন্য। যদি মানুষ এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতো, তবে সে কেবল দুঃখজনকভাবে ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়ন করতো, এবং নিজের কলুষিত স্বভাব পরিবর্তন করতে নিতান্তই অক্ষম হতো। সে ক্রুশ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে, বা সমগ্র বিদ্রোহী মানবজাতিকে জয় করতে অক্ষম হতো, বরং কেবলমাত্র একটি সামান্য পুরানো কাজ করতে সক্ষম হতো যা নীতির বাইরে যায় না, অথবা এমন কিছু কাজ যা শয়তানের পরাজয়ের সাথে সম্পর্কিত নয়। তাহলে কেন বিব্রত হওয়া? যে কাজ মানবজাতিকে অর্জন করতে পারে না, শয়তানকে পরাজিত করতে তো পারেই না, তার কি আদৌ কোনো তাৎপর্য আছে? তাই, শয়তানের সাথে যুদ্ধ একমাত্র স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারাই সম্পাদিত হতে পারে, এবং মানুষের পক্ষে তা করা নিতান্তই অসম্ভব হবে। মানুষের কর্তব্য হল মান্য করা এবং অনুসরণ করা, কারণ মানুষ স্বর্গ ও পৃথিবী সৃষ্টির মতো কাজ করতে অক্ষম, তাছাড়া শয়তানের সাথে যুদ্ধ করার কাজও সে করতে পারে না। মানুষ শুধুমাত্র স্বয়ং ঈশ্বরের নেতৃত্বে সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করতে পারে, যার মাধ্যমে শয়তান পরাজিত হয়; এটাই একমাত্র জিনিস যা মানুষ করতে পারে। আর তাই, যখনই একটি নতুন যুদ্ধ শুরু হয়, অর্থাৎ যখনই কোনো নতুন যুগের কাজ শুরু হয়, সেই কাজ স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে সম্পন্ন হয়, যার মাধ্যমে তিনি সমগ্র যুগকে নেতৃত্ব দেন এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি নতুন পথ উন্মুক্ত করেন। প্রতিটি নতুন যুগের সূচনা হল শয়তানের সাথে যুদ্ধের একটি নতুন সূচনা, যার মাধ্যমে মানুষ একটি নতুন, আরও সুন্দর জগতে, এবং একটি নতুন যুগে প্রবেশ করে, যা ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের দ্বারাই পরিচালিত। মানুষ সব কিছুর মালিক, কিন্তু যাদের অর্জন করা হয়েছে, তারা শয়তানের সাথে সমস্ত যুদ্ধের ফল হয়ে উঠবে। শয়তান হল সমস্ত কিছুই কলুষপূর্ণ করে, যে সমস্ত যুদ্ধের শেষে পরাজিত হয় এবং যাকে এই যুদ্ধগুলির পরে শাস্তি দেওয়া হবে। ঈশ্বর, মানুষ এবং শয়তানের মধ্যে শয়তানই একমাত্র যাকে ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যান করা হবে। যারা শয়তান দ্বারা অর্জিত হয়েছিল কিন্তু ঈশ্বর তাদের ফিরিয়ে নেন নি, ইতিমধ্যে, তারাই হয়ে উঠবে সেই ব্যক্তি যারা শয়তানের পরিবর্তে শাস্তি গ্রহণ করবে। এই তিনের মধ্যে একমাত্র ঈশ্বরেরই সমস্ত কিছুর দ্বারা পূজিত হওয়া উচিত। যারা শয়তান দ্বারা কলুষিত হয়েছিল কিন্তু ঈশ্বর তাদের ফিরিয়ে নিয়েছেন এবং যারা ঈশ্বরের পথ অনুসরণ করে, তারাই ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি প্রাপ্ত হবে এবং ঈশ্বরের হয়ে দুষ্টদের বিচার করবে। ঈশ্বর অবশ্যই বিজয়ী হবেন এবং শয়তান নিশ্চয়ই পরাজিত হবে, কিন্তু মানুষের মধ্যে তারাও আছে যারা জিতবে এবং তারাও আছে যারা হেরে যাবে। যারা জিতবে তারা জয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যারা হারবে তারা পরাজিতদের দলে থাকবে; এটি ধরণ অনুযায়ী প্রত্যেকের শ্রেণীবিভাগ, এটি ঈশ্বরের সকল কাজের চূড়ান্ত সমাপ্তি। এটি ঈশ্বরের সমস্ত কাজের লক্ষ্যও, এবং এটি কখনই পরিবর্তিত হবে না। ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার প্রধান কাজের মূল বিষয়টি মানুষের পরিত্রাণের উপর দৃষ্টিনিবদ্ধ, এবং ঈশ্বর দেহ ধারণ করেন প্রাথমিকভাবে এই মূল বিষয়টির স্বার্থে, এই কাজের স্বার্থে এবং শয়তানকে পরাস্ত করার জন্যইঈশ্বর প্রথমবার দেহে পরিণত হয়েছিলেন, সেটাও ছিল শয়তানকে পরাজিত করার জন্য: প্রথম যুদ্ধের কাজ, যা ছিল মানবজাতির মুক্তির কাজ, সেটি সম্পূর্ণ করার জন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে দেহে আবির্ভূত হয়েছিলেন, এবং ব্যক্তিগতভাবে ক্রুশে পেরেকবিদ্ধ হয়েছিলেন। একইভাবে, কাজের এই পর্যায়টিও ঈশ্বরের দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে সম্পাদিত হয়, যিনি মানুষের মাঝে তাঁর কাজ করার জন্য, ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কথা বলার জন্য এবং মানুষকে তাঁকে দেখার অনুমতি দেওয়ার জন্য দেহরূপ ধারণ করেছেন। অবশ্যই, এটি অনিবার্য যে তিনি এই পথে অন্য কিছু কাজও করেন, তবে তিনি যে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কাজ সম্পাদন করেন, তার প্রধান কারণ হল শয়তানকে পরাজিত করা, সমগ্র মানবজাতিকে জয় করা, এবং এই মানুষদের অর্জন করা। সুতরাং, ঈশ্বরের অবতারের কাজ সত্যিই সহজ নয়। তাঁর উদ্দেশ্য যদি কেবল মানুষকে এটা দেখানোই হতো যে, ঈশ্বর বিনয়ী ও প্রচ্ছন্ন, এবং তিনি বাস্তব, এটা যদি কেবল এই কাজটুকুর স্বার্থেই হত, তাহলে দেহে পরিণত হওয়ার কোনো প্রয়োজনই থাকত না। এমনকি ঈশ্বর যদি দেহে পরিণত নাও হতেন, তবুও তিনি তাঁর বিনয় ও গোপনীয়তা, তাঁর মহত্ত্ব ও পবিত্রতা, সরাসরি মানুষের কাছে প্রকাশ করতে পারতেন, কিন্তু মানবজাতিকে পরিচালনা করার কাজের সাথে এই জাতীয় জিনিসগুলির কোনও সম্পর্ক নেই। সেগুলি মানুষকে উদ্ধার করতে বা তাকে নিখুঁত করতে অক্ষম, শয়তানকে পরাস্ত করতে তো পারেই না। যদি শয়তানের পরাজয় শুধুমাত্র একটি আত্মার বিরুদ্ধে আত্মার যুদ্ধ হতো, তাহলে এই ধরনের কাজের ব্যবহারিক মূল্য আরও কম হতো; তা মানুষকে অর্জন করতে অক্ষমহতো, এবং মানুষের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে নষ্ট করতো। সেই হিসেবে, ঈশ্বরের আজকের কাজের গভীর তাৎপর্য আছে। তা শুধু এই কারণে নয় যাতে মানুষ তাঁকে দেখতে পারে, অথবা যাতে মানুষের চোখ খুলে যায়, বা মানুষকে উদ্বেল ও উৎসাহিত বোধ করার সামান্য অনুভূতি প্রদান করা যায়; এই ধরনের কাজের কোন গুরুত্ব নেই। যদি তুমি শুধুমাত্র এই ধরনের জ্ঞানের কথাই বলতে পারো, তাহলে তা প্রমাণ করে যে, তুমি ঈশ্বরের অবতারের প্রকৃত তাৎপর্য জানো না।
ঈশ্বর স্বয়ং তাঁর পরিচালনামূলক পরিকল্পনার সমগ্র কাজ রূপায়ণ করেন। প্রথম পর্যায়—পৃথিবী সৃষ্টির কাজ—স্বয়ং ঈশ্বরই ব্যক্তিগতভাবে করেছেন, তা যদি না হতো, তাহলে কেউই মানবজাতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হতো না; দ্বিতীয় পর্যায় ছিল সমগ্র মানবজাতির মুক্তি, এবং তা-ও ব্যক্তিগতভাবে স্বয়ং ঈশ্বরেরই কৃত; তৃতীয় পর্যায়ের সম্পর্কে বলাই বাহুল্য: স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারাই ঈশ্বরের সকল কর্মের সমাপ্তি হওয়া অধিকতর প্রয়োজন। সমগ্র মানবজাতির মুক্তি, জয়, অর্জন এবং তাদের নিখুঁত করার কাজ স্বয়ং ঈশ্বর ব্যক্তিগতভাবেই নির্বাহ করেন। এই কাজ তিনি ব্যক্তিগতভাবে না করলে, মানুষ তাঁর পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করতে পারতো না, তাঁর কর্মও সম্পাদন করতে পারতো না। শয়তানকে পরাজিত করতে, মানবজাতিকে অর্জন করতে, এবং মানুষকে পৃথিবীতে স্বাভাবিক জীবন দান করতে, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মানুষকে নেতৃত্ব দেন এবং ব্যক্তিগতভাবে তাদের মধ্যে কাজ করেন; তাঁর সমগ্র পরিচালনামূলক পরিকল্পনার স্বার্থে, এবং তাঁর সকল কাজের স্বার্থে, তাঁকে ব্যক্তিগতভাবেই এই কাজ করতে হয়। মানুষ যদি শুধু এটাই বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর এসেছিলেন যাতে মানুষ তাঁকে দেখতে পারে, মানুষকে খুশি করার স্বার্থে, তাহলে এই ধরনের বিশ্বাসের কোন মূল্য নেই, কোন তাৎপর্য নেই। মানুষের উপলব্ধি খুবই অগভীর! এই কাজটি একমাত্র নিজে সম্পাদন করার মাধ্যমেই ঈশ্বর এই কাজটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এবং সম্পূর্ণরূপে করতে পারেন। মানুষ ঈশ্বরের হয়ে এ কাজ করতে অক্ষম। যেহেতু ঈশ্বরের পরিচয় বা তাঁর সারমর্ম মানুষের নেই, তাই সে ঈশ্বরের কাজ করতে অক্ষম, এবং এই কাজটি মানুষ করলেও তার কোনো প্রভাব থাকবে না। প্রথমবার ঈশ্বর দেহরূপ ধারণ করেছিলেন মুক্তির স্বার্থে, সমস্ত মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্ত করার জন্য, মানুষকে শুদ্ধ হতে এবং তার পাপের জন্য ক্ষমা পেতে সক্ষম করে তোলার জন্য। বিজয়ের কাজটিও মানুষের মাঝে ঈশ্বরের দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে সম্পাদিত হয়। যদি এই পর্যায়ে ঈশ্বরকে শুধুমাত্র ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করতে হত, তাহলে তাঁর স্থান গ্রহণ করার জন্য একজন ভাববাদী অথবা প্রতিভাধর কাউকে পাওয়া যেতে পারত; যদি এটা শুধুমাত্র ভবিষ্যদ্বাণীর উচ্চারণ হত, তাহলে মানুষ ঈশ্বরের জায়গায় দাঁড়াতে পারতো। কিন্তু মানুষ যদি স্বয়ং ঈশ্বরের কাজ করার চেষ্টা করত এবং মানুষের জীবনের উপর কাজ করার চেষ্টা করত, তবে এই কাজটি করা তার পক্ষে অসম্ভব হত। এটি স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারা ব্যক্তিগতভাবেই সম্পন্ন হতে হবে: এই কাজটি করার জন্য ঈশ্বরকে অবশ্যই ব্যক্তিগতভাবে দেহরূপ ধারণ করতে হবে। বাক্যের যুগে, যদি শুধুমাত্র ভবিষ্যদ্বাণীর কথা বলা হত, তাহলে যিশাইয় বা নবী এলিয়কে এই কাজটি করার জন্য পাওয়া যেত, এবং ব্যক্তিগতভাবে তা করার জন্য স্বয়ং ঈশ্বরের প্রয়োজন হত না। যেহেতু এই পর্যায়ে যে কাজটি করা হয়েছে তা শুধুই ভবিষ্যদ্বাণীর উচ্চারণ নয়, এবং যেহেতু এটি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ যে বাক্যের কাজটি মানুষকে জয় করতে এবং শয়তানকে পরাজিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়, তাই এই কাজটি মানুষ করতে পারে না এবং এটি অবশ্যই স্বয়ং ঈশ্বরকে ব্যক্তিগতভাবে করতে হবে। বিধানের যুগে যিহোবা তাঁর কাজের একটি অংশ করেছিলেন, তার পরে তিনি কিছু কথা বলেছিলেন এবং নবীদের মাধ্যমে কিছু কাজ করেছিলেন। এর কারণ হল, মানুষ যিহোবার কাজে তাঁকে প্রতিস্থাপন করতে পারত, এবং দ্রষ্টারা কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারত ও তাঁর হয়ে কিছু স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পারত। সূচনাকালে সম্পাদিত কাজটি সরাসরি মানুষের স্বভাব পরিবর্তনের কাজ ছিল না, এবং মানুষের পাপের সাথে সম্পর্কহীন ছিল, এবং মানুষের শুধুমাত্র বিধান মেনে চলার প্রয়োজন ছিল। তাই যিহোবা দেহে পরিণত হন নি এবং মানুষের কাছে নিজেকে প্রকাশ করেন নি; পরিবর্তে তিনি মোশি এবং অন্যদের সাথে সরাসরি কথা বলেছিলেন, তাদের দিয়ে তাঁর তরফে কথা বলিয়েছিলেন এবং কাজ করিয়েছিলেন, এবং তাদের মানবজাতির মাঝে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করিয়েছিলেন। ঈশ্বরের কাজের প্রথম পর্যায় ছিল মানুষকে নেতৃত্বদান। এটি ছিল শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সূচনা, কিন্তু এই যুদ্ধটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে তখনও বাকি ছিল। শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঈশ্বরের প্রথম অবতারর সাথে শুরু হয়েছিল, এবং এটি আজ অবধি অব্যাহত রয়েছে। এই যুদ্ধের প্রথম লড়াই ছিল যখন ঈশ্বরের অবতারকে ক্রুশে পেরেকবিদ্ধ করা হয়েছিল। ঈশ্বরের অবতারের ক্রুশবিদ্ধকরণ শয়তানকে পরাজিত করেছিল এবং তা ছিল যুদ্ধের প্রথম সফল পর্যায়। যখন ঈশ্বরের অবতার সরাসরি মানুষের জীবনে কাজ করতে শুরু করেছিলেন, তখন তা ছিল মানুষকে পুনরায় অর্জন করার কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা, এবং যেহেতু এটি ছিল মানুষের পুরনো স্বভাব পরিবর্তন করার কাজ, তাই তা ছিল শয়তানের সাথে যুদ্ধ করার কাজ। সূচনাকালে যিহোবা কাজের যে পর্যায়টি নির্বাহ করেছিলেন তা ছিল শুধুই পৃথিবীতে মানুষের জীবনের নেতৃত্বদান। এটি ছিল ঈশ্বরের কাজের সূচনা, এবং যদিও এতে তখনও কোনো যুদ্ধ বা কোনো বড় কাজ জড়িত ছিল না, তবে এটি আসন্ন যুদ্ধের কাজের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। পরবর্তীতে, অনুগ্রহের যুগে কাজের দ্বিতীয় পর্যায় মানুষের পুরানো স্বভাব পরিবর্তন করার কাজের সাথে জড়িত ছিল, যার অর্থ হল স্বয়ং ঈশ্বর মানুষের জীবন গঠন করেছিলেন। এটি ব্যক্তিগতভাবেই করতে হত: এর জন্য ঈশ্বরের ব্যক্তিগতভাবে দেহে পরিণত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। তিনি যদি দেহরূপ ধারণ না করতেন, তবে কাজের এই পর্যায়ে অন্য কেউ তাঁকে প্রতিস্থাপন করতে পারত না, কারণ তা শয়তানের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ের কাজের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। মানুষ যদি এই কাজটি ঈশ্বরের পরিবর্তে করত, তাহলে যখন মানুষ শয়তানের সামনে দাঁড়াত, তখন শয়তান আত্মসমর্পণ করত না এবং তাকে পরাজিত করা অসম্ভব হত। একে পরাজিত করতে ঈশ্বরের অবতারকেই আসতে হত, কারণ ঈশ্বরের অবতারের সারমর্ম এখনও ঈশ্বর, তিনি এখনও মানুষের জীবন, এবং তিনি এখনও সৃষ্টিকর্তা; যাই ঘটুক না কেন, তাঁর পরিচয় এবং সারমর্ম পরিবর্তিত হবে না। আর তাই, তিনি দেহরূপ গ্রহণ করেছিলেন এবং শয়তানকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করানোর জন্য কাজ করেছিলেন। অন্তিম সময়ের কাজের পর্যায়ে যদি মানুষকে এই কাজটি করতে হয় এবং তাকে সরাসরি বাক্য উচ্চারণ করানো হয়, তবে সে সেগুলি বলতে অক্ষম হবে, এবং যদি ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়, তবে এই ভবিষ্যদ্বাণী মানুষকে জয় করতে অক্ষম হবে। দেহ ধারণ করার মাধ্যমে, ঈশ্বর শয়তানকে পরাজিত করতে, এবং তাকে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করাতে আসেন। যখন তিনি শয়তানকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করবেন, মানুষকে সম্পূর্ণরূপে জয় করবেন, এবং মানুষকে সম্পূর্ণরূপে অর্জন করবেন, তখন কাজের এই পর্যায়টি সম্পূর্ণ হবে এবং সাফল্য অর্জিত হবে। ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনায়, মানুষ ঈশ্বরের প্রতিস্থাপক হতে পারে না। বিশেষত, যুগের নেতৃত্ব দেওয়া এবং নতুন কাজ শুরু করার বিষয়টি স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারা ব্যক্তিগতভাবে হওয়া আরও বেশি প্রয়োজন। মানুষকে উদ্ঘাটন এবং ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করা মানুষের দ্বারা হতে পারে, কিন্তু যদি এটি এমন কাজ হয় যা ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরকেই করতে হবে, যেমন স্বয়ং ঈশ্বর এবং শয়তানের মধ্যে যুদ্ধের কাজ, তাহলে এই কাজটি মানুষের দ্বারা পারে না। কাজের প্রথম পর্যায়ের সময়, যখন শয়তানের সঙ্গে কোনো যুদ্ধ ছিল না, তখন যিহোবা নবীদের বলা ভবিষ্যদ্বাণী ব্যবহার করে ব্যক্তিগতভাবে ইস্রায়েলের লোকেদেরকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে, কাজের দ্বিতীয় পর্যায় ছিল শয়তানের সাথে যুদ্ধ, এবং স্বয়ং ঈশ্বর ব্যক্তিগতভাবে দেহে পরিণত হয়েছিলেন এবং এই কাজটি করার জন্য দেহরূপে এসেছিলেন। শয়তানের সাথে যুদ্ধে জড়িত, এমন সমস্তকিছুই ঈশ্বরের অবতারের সাথেও জড়িত, যার অর্থ, এই যুদ্ধ মানুষের পক্ষে নির্বাহ করা সম্ভব নয়। মানুষকে যদি যুদ্ধ করতে হত, তবে সে শয়তানকে পরাজিত করতে অক্ষম হত। তার আধিপত্যের অধীনে থাকা অবস্থায় কীভাবে তার শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি থাকতে পারে? মানুষ মধ্যিখানে আছে: তুমি যদি শয়তানের দিকে ঝুঁকে যাও তবে তুমি শয়তানের অধিকারে, কিন্তু তুমি যদি ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করো তবে তুমি ঈশ্বরের। যদি মানুষকে চেষ্টা করতে হত এবং ঈশ্বরের পরিবর্তে এই যুদ্ধের কাজে অংশ নিতে হত, সে কি তা করতে পারতো? যদি সে এমন করত, তাহলে কি সে অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেত না? সে কি অনেক আগেই পাতালে প্রবেশ করত না? সুতরাং, মানুষ ঈশ্বরকে তাঁর কাজে প্রতিস্থাপন করতে অক্ষম, যার অর্থ হল মানুষের কাছে ঈশ্বরের সারমর্ম নেই, এবং তুমি যদি শয়তানের সাথে যুদ্ধ করতে, তবে তুমি তাকে পরাজিত করতে অক্ষম হতে। মানুষ শুধু কিছু কাজ করতে পারে; সে কিছু লোককে জয় করতে পারে, কিন্তু স্বয়ং ঈশ্বরের কাজে ঈশ্বরের পরিবর্তে দাঁড়াতে পারে না। মানুষ কিভাবে শয়তানের সাথে যুদ্ধ করতে পারে? তুমি শুরু করার আগেই শয়তান তোমাকে বন্দী করে নিয়ে যাবে। শুধুমাত্র যখন স্বয়ং ঈশ্বর শয়তানের সাথে যুদ্ধ করেন এবং মানুষ তার ভিত্তিতে ঈশ্বরকে অনুসরণ করে এবং মেনে চলে, তখনই মানুষ ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হতে পারে এবং শয়তানের বন্ধন থেকে অব্যাহতি পেতে পারে। মানুষ তার নিজের প্রজ্ঞা ও সামর্থ্য দিয়ে যা অর্জন করতে পারে তা খুবই সীমিত; সে মানুষকে সম্পূর্ণ করতে, তাকে নেতৃত্ব দিতে এবং উপরন্তু, শয়তানকে পরাজিত করতে অক্ষম। মানুষের বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা শয়তানের ষড়যন্ত্র বানচাল করতে অক্ষম, তাহলে মানুষ কীভাবে তার সাথে লড়াই করবে?
যারা নিখুঁত হয়ে উঠতে ইচ্ছুক তাদের সবার নিখুঁত হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে, তাই সবাই নিশ্চিন্ত হতে পারে: ভবিষ্যতে তোমরা সবাই গন্তব্যে প্রবেশ করবে। কিন্তু যদি তুমি নিখুঁত হয়ে উঠতে ইচ্ছুক না হও, এবং বিস্ময়কর জগতে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক না হও, তবে সেটা তোমার নিজের সমস্যা। যারা নিখুঁত হয়ে উঠতে ইচ্ছুক এবং ঈশ্বরের প্রতি অনুগত, যারা মান্য করে এবং যারা বিশ্বস্তভাবে তাদের কাজ সম্পাদন করে—এই ধরনের সমস্ত মানুষকে নিখুঁত করে তোলা যেতে পারে। আজ, যারা অনুগতভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে না, যারা ঈশ্বরের প্রতি অনুগত নয়, যারা ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে না, বিশেষ করে যারা পবিত্র আত্মার আলোকপ্রাপ্তি ও প্রদীপ্তি পেয়েছে কিন্তু তা বাস্তবে প্রয়োগ করে না—এই ধরনের সমস্ত মানুষ নিখুঁত হয়ে উঠতে অক্ষম। যারা অনুগত হতে এবং ঈশ্বরকে মান্য করতে ইচ্ছুক, তারা যদি একটু অজ্ঞও হয়, তাহলেও তাদের সবাইকে নিখুঁত করে তোলা যেতে পারে; যারা অনুসরণ করতে ইচ্ছুক তাদের সবাইকে নিখুঁত করা যেতে পারে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এই অভিমুখে অনুসরণ করতে ইচ্ছুক, তোমাকে নিখুঁত করে তোলা যেতে পারে। আমি তোমাদের মধ্যে কাউকে পরিত্যাগ বা পরিহার করতে ইচ্ছুক নই, কিন্তু মানুষ যদি ভাল করার প্রচেষ্টা না করে, তবে তুমি কেবল নিজেকেই নষ্ট করছো; তোমাকে যে অপসারিত করে সে আমি নই, তুমি নিজেই। যদি তুমি নিজে ভালো করার প্রচেষ্টা না করো—যদি তুমি অলস হও, বা তোমার দায়িত্ব পালন না করো, অথবা অনুগত না হও, সত্যের অন্বেষণ না করো এবং সর্বদা তোমার খুশিমত কাজ করো, যদি তুমি বেপরোয়া আচরণ করো, তোমার নিজের খ্যাতি এবং ভাগ্যের জন্য লড়াই করো, এবং বিপরীত লিঙ্গের সাথে তোমার আচরণে অনৈতিক হও, তাহলে তোমার পাপের বোঝা তুমি নিজে বহন করবে; তুমি কারো করুণার যোগ্য নও। আমার অভিপ্রায় হল তোমরা সকলে যাতে নিখুঁত হয়ে ওঠো, এবং অন্ততপক্ষে যাতে তোমাদের জয় করা হয়, যাতে কাজের এই পর্যায়টি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। ঈশ্বরের ইচ্ছা হল প্রত্যেক ব্যক্তি যেন নিখুঁত হয়ে ওঠে, শেষ পর্যন্ত তাঁর দ্বারা অর্জিত হয়, তাঁর দ্বারা সম্পূর্ণরূপে শুদ্ধ হয়, এবং তাঁর স্নেহের মানুষ হয়ে ওঠে। আমি তোমাদের অনগ্রসর বা স্বল্প ক্ষমতাসম্পন্ন বলি কিনা তাতে কিছু আসে যায় না—এই সবই সত্য। আমার এই কথাটি প্রমাণ করে না যে আমি তোমাদের পরিত্যাগ করতে চাই, যে আমি তোমাদের উপর আশা হারিয়ে ফেলেছি, এমন তো আরোই নয় যে আমি তোমাদেরকে উদ্ধার করতে চাই না। আজ আমি তোমাদের পরিত্রাণের কাজ করতে এসেছি, অর্থাৎ আমি যে কাজ করি, তা পরিত্রাণের কাজেরই ধারাবাহিকতা। প্রতিটি ব্যক্তির নিখুঁত হওয়ার সুযোগ রয়েছে: যদি তুমি ইচ্ছুক হও, যদি তুমি অন্বেষণ করো, তাহলে শেষ পর্যন্ত তুমি এই ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হবে, এবং তোমাদের একজনকেও পরিত্যাগ করা হবে না। তুমি যদি স্বল্প ক্ষমতাসম্পন্ন হও, তাহলে তোমার কাছে আমার চাহিদা তোমার স্বল্প ক্ষমতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে; তুমি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হলে, তোমার কাছে আমার চাহিদা তোমার উচ্চ ক্ষমতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে; তুমি যদি অজ্ঞ এবং নিরক্ষর হও, তবে তোমার কাছে আমার চাহিদা তোমার অশিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে; তুমি যদি সাক্ষর হও, তবে তোমার কাছে আমার চাহিদা তুমি যে শিক্ষিত সেই তথ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে; যদি তুমি প্রবীণ হও, তবে তোমার কাছে আমার চাহিদা তোমার বয়সের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে; তুমি আতিথেয়তা প্রদান করতে সক্ষম হলে, তোমার কাছে আমার চাহিদা এই সামর্থ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে; যদি তুমি বলো যে তুমি আতিথেয়তা দিতে পারবে না, এবং শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদন করতে পারবে, তা সুসমাচার প্রসার করা, বা গির্জার যত্ন নেওয়া, বা অন্যান্য সাধারণ বিষয়গুলিতে অংশ নেওয়াই হোক, তাহলে তুমি যে কাজ সম্পাদন করবে তার সাথে সঙ্গতি রেখেই আমি তোমাকে নিখুঁত করে তুলবো। অনুগত থাকা, একেবারে শেষ পর্যন্ত মান্য করে চলা, এবং ঈশ্বরের প্রতি সর্বোচ্চ ভালবাসার অন্বেষণ—এ তোমাকে অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে, এবং এই তিনটি জিনিসের চেয়ে ভাল অনুশীলন আর নেই। শেষ পর্যন্ত, মানুষকে এই তিনটি জিনিস অর্জন করতে হবে, এবং যদি সেগুলি সে অর্জন করতে পারে তবে সে নিখুঁত হয়ে উঠবে। কিন্তু, সর্বোপরি, তোমাকে অবশ্যই প্রকৃতভাবে অন্বেষণ করতে হবে, তোমাকে অবশ্যই সক্রিয়ভাবে এর জন্য উদ্যোগী হতে হবে এবং সেই বিষয়ে নিষ্ক্রিয় হলে হবে না। আমি বলেছি যে প্রত্যেক ব্যক্তির নিখুঁত হয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে এবং সে নিখুঁত হয়ে উঠতে সক্ষম, এবং একথা সত্য, কিন্তু তুমি তোমার সাধনায় আরও ভাল হওয়ার চেষ্টা করো না। তুমি যদি এই তিনটি মানদণ্ড অর্জন না করো, তবে শেষ পর্যন্ত তোমাকে অবশ্যই বহিষ্কার করা হবে। আমি চাই যে সবাই ব্যপারটা ধরতে পারুক, আমি চাই প্রত্যেকের কাছে পবিত্র আত্মার কাজ এবং আলোকপ্রাপ্তি থাকুক, এবং সবাই একেবারে শেষ পর্যন্ত মান্য করে চলতে সক্ষম হোক, কারণ এই কর্তব্য তোমাদের প্রত্যেকের সম্পাদন করা উচিত। যখন তোমরা সকলেই তোমাদের দায়িত্ব পালন করে ফেলবে, তখন তোমরা সকলেই নিখুঁত হয়ে উঠবে, সেই সাথে তোমরা জোরালো সাক্ষ্যের অধিকারীও হবে। যাদের সাক্ষ্য রয়েছে তারাই শয়তানের উপর বিজয়ী হয়েছে এবং ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছে, এবং তারাই বিস্ময়কর গন্তব্যে বসবাস করবে।