অধ্যায় ৫

ঈশ্বর যখন মানুষের কাছে এমন কিছু দাবি করেন যা তাদের পক্ষে ব্যাখ্যা করা কঠিন, এবং যখন তাঁর বাক্য সরাসরি মানুষের হৃদয়ে আঘাত হানে ও মানুষ তাদের নিষ্ঠাবান হৃদয়কে তাঁর উপভোগের জন্য অর্পণ করে, তখন ঈশ্বর তাদের সুযোগ দেন চিন্তা করার, সংকল্প করার, এবং অনুশীলনের জন্য একটা পথের সন্ধান করার। এই উপায়ে, যারা তাঁর লোক তারা সকলে দৃঢ়সংকল্পে মুষ্টিবদ্ধ ক’রে আরও একবার তাদের সমস্ত সত্তা ঈশ্বরের কাছে নিবেদন করবে। কেউ কেউ হয়তো একটা পরিকল্পনা করতে পারে এবং দৈনিক সময়সূচী স্থাপন করতে পারে, কারণ তারা কঠোর পরিশ্রম করার জন্য নিজেদের সংহত করতে প্রস্তুতি নেয়, ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার প্রতি তাদের যে সামান্য শক্তি আছে তা উৎসর্গ করে, যাতে সেটাকে মহিমান্বিত করা যায় এবং দ্রুত সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। ঠিক যখন মানুষ এই মানসিকতা পোষণ করছে, এগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে তাদের মনে ধারণ করছে নিজেদের নৈমিত্তিক কাজকর্মের সাথে সাথে, কথা বলার ও কাজের সাথে সাথে, ঈশ্বর তখন আবার বলতে শুরু করেন: “আমার আত্মার যে কণ্ঠস্বর, তা আমার সামগ্রিক স্বভাবের এক অভিব্যক্তি। তোমরা কি তা অনুধাবন করো?” মানুষ যত বেশি দৃঢ়সংকল্প, তারা ততই বেপরোয়াভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে উপলব্ধি করতে চাইবে, এবং ততই আন্তরিকভাবে ব্যাকুল হয়ে চাইবে ঈশ্বর তাদের কাছে দাবি জানান। এই কারণে, ঈশ্বর মানুষকে তা দেবেন যা তারা চায়, তিনি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে তাদের সত্তার অন্তরতম অবকাশে তাঁর বাক্য জ্ঞাপন করবেন, যে বাক্যগুলো দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। যদিও এই বাক্যগুলো সামান্য কঠোর ও রুক্ষ মনে হতে পারে, কিন্তু মানবজাতির কাছে তা অতুলনীয় মধুর। সহসা, তাদের হৃদয় আনন্দে প্রস্ফুটিত হয়, যেন তারা স্বর্গে রয়েছে বা তাদের নিয়ে আসা হয়েছে অন্য এক জগতে—কল্পনার স্বর্গ বাস্তব হয়ে উঠেছে—বহির্জগতের বিষয় যেখানে মানবজাতির উপর আর প্রভাব ফেলতে পারে না। মানুষ অতীতে যেমন করে এসেছে, বাহ্যিকভাবে কথা বলা ও কাজ করা, এবং তার ফলে স্থিত হতে না পারা, সেই পরিস্থিতির সম্ভাবনা এড়াতে, একবার যখন মানুষ তাদের অন্তরে যা কামনা করে তা অর্জন করে ফেলে, উপরন্তু একবার যখন তারা প্রগাঢ় উৎসাহের সাথে কাজ করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে, ঈশ্বর তখনও তাদের মানসিকতা অনুযায়ী তাঁর কথা বলার ভঙ্গিকে অভিযোজিত করেন, এবং সংক্ষেপে ও বিরত না হয়ে, তারা তাদের অন্তরে যে উদ্যম ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পোষণ করে সেগুলোকে খণ্ডন করেন। ঈশ্বর যেমন বলেছেন, “এর মধ্যে নিহিত গুরুত্বকে কি তোমরা প্রকৃতই দেখতে পেয়েছ?” মানুষ কোনকিছুতে সংকল্পবদ্ধ হওয়ার আগেই হোক বা পরে, তারা ঈশ্বরের কর্ম বা তাঁর বাক্যের মধ্যে দিয়ে তাঁকে জানার বিষয়ে অধিক গুরুত্ব আরোপ করে না, বরং এই প্রশ্ন নিয়েই চিন্তা করতে থাকে, “ঈশ্বরের জন্য আমি কী করতে পারি? এটাই মূল বিষয়!” এইজন্যেই ঈশ্বর বলেছেন, “অথচ আমার সম্মুখে আমার লোক হিসাবে নিজেদের দাবি করার আত্মবিশ্বাস তোমাদের আছে—তোমাদের কোনো লজ্জা নেই, বোধবুদ্ধি তো আরোই কম!” যে মুহূর্তে ঈশ্বর এই বাক্যগুলো উচ্চারণ করেছেন, মানুষ তক্ষনই নিজেদের উপলব্ধিতে উপনীত হয়, এবং যেন তারা বৈদ্যুতিক অভিঘাত পেয়েছে, তেমন দ্রুততার সাথে নিজেদের হাত বুকের নিরাপত্তায় ফিরিয়ে নেয়, ঈশ্বরের ক্রোধকে দ্বিতীয়বারের জন্য প্ররোচিত করার ভয়ে গভীরভাবে আতঙ্কিত হয়। এর সাথে সাথে, ঈশ্বর এও বলেছেন, “আজ নাহয় কাল তোমাদের মতো মানুষেরা আমার গৃহ থেকে বহিষ্কৃত হবে! আমার হয়ে কখনো সাক্ষ্য দিয়েছ এই অজুহাত দেখিয়ে আমার সঙ্গে প্রতারণা করতে যেয়ো না!” এই ধরনের বাক্য শুনে, মানুষ আরও ভয়ভীত হয়, যেন তারা বাঘ দেখেছে। তাদের অন্তরে তারা খুব ভালোভাবেই জানে। বাঘের খাদ্য হতে তারা চায় না, অপরপক্ষে, কীভাবে অব্যাহতি পাওয়া যাবে তা নিয়েও তাদের কোনো ধারণা নেই। ঠিক সেই মুহূর্তে, মানুষের অন্তরে অবস্থিত পরিকল্পনা কোনো চিহ্ন না রেখে অদৃশ্য হয়ে যায়, চূড়ান্ত ও সম্পর্ণরূপে। আমার মনে হয় যেন ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে আমি মানবজাতির প্রতিটা লজ্জাজনক দিককে দেখতে পাই: ঝুঁকে পড়া মাথা আর দোষীসুলভ আচরণ, যেন কলেজে ভর্তির পরীক্ষায় অকৃতকার্য এক প্রার্থী, যার সুউচ্চ আদর্শ রয়েছে, সুখী পরিবার আছে, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে, রয়েছে এরকম আরও অনেক কিছুই, সেইসাথে রয়েছে ২০০০ সালের মধ্যে চতুর্বিধ আধুনিকীকরণ, যার সবই পরিণত হয়েছে শুধুই শূন্যগর্ভ কথায়, এক কল্পবিজ্ঞানের চলচ্চিত্রের কাল্পনিক দৃশ্যকল্প তৈরী করেছে। এর উদ্দেশ্য নিষ্ক্রিয় উপাদানগুলোকে সক্রিয় উপাদানের সাথে বিনিময় করা, মানুষকে তাদের নিষ্ক্রিয়তার মাঝখান থেকে উঠিয়ে সেই অবস্থানে দাঁড় করানো যা ঈশ্বর তাদের জন্য নির্ধারিত করেছেন। ব্যতিক্রমীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো এই যে মানুষ এই খেতাব হারানোর ভয়ে গভীরভাবে ভীত; এতটাই, যে তারা তাদের প্রিয় জীবনকে তাদের অফিস-ব্যাজের সাথে আঁকড়ে ধরে থাকে, গভীরভাবে ভয় পায় যে কেউ তাদের কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। মানুষ যখন এই মানসিক অবস্থায় থাকে, তখন ঈশ্বর দুশ্চিন্তা করেন না যে তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে, তাই তিনি সেই অনুযায়ী তাঁর বিচারের বাক্যগুলোকে জিজ্ঞাসাবাদ করার বাক্যে পরিবর্তিত করেন। তিনি যে মানুষকে শুধু নিঃশ্বাস নেওয়ার অবকাশ দেন তাই নয়, এখনকার আগে তাদের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলো ছিল সেগুলোকে ভবিষ্যৎ উল্লেখের জন্য সাজিয়ে নেওয়ার সুযোগও দেন: অনুপযুক্ত যেকোনোকিছুই সংশোধন করা যেতে পারে। তার কারণ এই যে ঈশ্বর এখনও তাঁর কাজ আরম্ভ করেননি—প্রভূত দুর্ভাগ্যের মধ্যে এ হলো এক টুকরো সৌভাগ্য—এবং উপরন্তু, তিনি তাদের নিন্দা করেন না। তাই আমায় আমার সমস্ত নিষ্ঠা তাঁকে অর্পণ করা অব্যাহত রাখতে দাও!

এরপর, তোমার কিছুতেই ভয়ের কারণে ঈশ্বরের বাক্যকে দূরে সরিয়ে রাখা চলবে না। একবার তাকিয়ে দেখো ঈশ্বরের কোনো নতুন দাবি আছে কি না। নিশ্চিতভাবেই তুমি এরকম একটাকিছু খুঁজে পাবে: “এই সময় থেকে শুরু করে, সকল বিষয়ে তোমাকে অনুশীলনের বাস্তবে প্রবেশ করতে হবে; অতীতের মতো শুধু কিছু অর্থহীন কথা বলে তুমি আর পার পেয়ে যেতে পারবে না।” এখানেও ঈশ্বরের প্রজ্ঞা মূর্ত হয়েছে। ঈশ্বর সবসময়েই তাঁর নিজের সাক্ষ্যপ্রদানকারীদের সুরক্ষা দিয়েছেন, এবং যখন অতীতের বাক্যের বাস্তবতা উপসংহারে উপনীত হয়েছে, তখন কেউই “অনুশীলনের বাস্তব”-এর জ্ঞানের তল খুঁজে পায়নি, সে যে-ই হোক। ঈশ্বর যা বলেছেন: “আমি এই কর্ম সম্পাদনের ভার নিজেই গ্রহণ করলাম”, তার সত্যতা প্রমাণের জন্য এটাই যথেষ্ট। দেবত্বে সম্পাদিত কাজের প্রকৃত অর্থের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে, এবং সম্পর্ক রয়েছে এই বোধের সাথেও যে মানবজাতি সূচনার এক নতুন অবস্থানে পৌঁছে তবু এখনও ঈশ্বরের বাক্যের প্রকৃত অর্থের তল পেতে অক্ষম। এর কারণ হলো, অতীতে, বিশাল সংখ্যক মানুষ ঈশ্বরের বাক্যের বাস্তবতায় আটকে রয়েছিল, এদিকে বর্তমানে অনুশীলনের বাস্তব সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই, এই বাক্যগুলোর উপরিভাগের দিকটাই তারা শুধু বোঝে, কিন্তু সেগুলোর সারমর্ম উপলব্ধি করে না। এমনকি আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, এর কারণ হলো বর্তমানে, রাজ্যের নির্মাণে, কারোরই হস্তক্ষেপ করার অনুমতি নেই, শুধু যন্ত্রমানবের মতো ঈশ্বরের নির্দেশ মান্য করার অনুমতি রয়েছে। এটা ভালো করে মনে রেখো! প্রতিবার যখন ঈশ্বর অতীতের কথা তোলেন, তিনি আজকের প্রকৃত পরিস্থিতির বিষয়ে কথা বলতে আরম্ভ করেন; এটা কথা বলার এমন এক পদ্ধতি যেটা আগে যা আসে এবং পরে যা আসে তাদের মধ্যে এক লক্ষ্যণীয় বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি করে, এবং এই কারণে তা আরও উন্নততর ফল অর্জন করতে সক্ষম হয়, মানুষকে বর্তমান ও অতীতকে পাশাপাশি স্থাপন করতে, এবং এইভাবে এই দুইয়ের মধ্যে বিভ্রান্তি এড়াতে সমর্থ করে। এটা ঈশ্বরের প্রজ্ঞার একটা দিক, এবং এর উদ্দেশ্য হল কাজের ফল অর্জন করা। এর পরে, ঈশ্বর আরও একবার মানবজাতির কদর্যতাকে প্রকাশিত করেন, যাতে মানবজাতি প্রতিদিন তাঁর বাক্য ভোজন ও পান করতে কখনও ভুলে না যায়, এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, যাতে তারা নিজেদের জানতে পারে এবং এটাকে এমন এক শিক্ষা হিসাবে নেয় যা থেকে তাদের প্রত্যেক দিন আবশ্যিকভাবে জ্ঞানলাভ করতে হবে।

এই বাক্যগুলো উচ্চারণ করার পর, ঈশ্বর সেই প্রভাব অর্জন করেছেন যা তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল। এবং তাই, মানবজাতি তাঁকে উপলব্ধি করেছে কি না সেদিকে আর কোনো মনোযোগ না দিয়ে, তিনি অল্পকিছু বাক্যেই এবিষয়টা পার হয়ে যান, কারণ শয়তানের কাজের সাথে মানবজাতির কোনো সম্পর্ক নেই—এই ব্যাপারে মানবজাতির কোনো ধারণা নেই। এবার, আধ্যাত্মিক জগৎকে পিছনে ফেলে এসে আরও গভীরভাবে এদিকে তাকাও যে ঈশ্বর কীভাবে মানবজাতির প্রতি তাঁর দাবি জানাচ্ছেন: “নিজ আবাসস্থলে বিশ্রামরত অবস্থায় আমি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করি: পৃথিবীর সমস্ত মানুষের ব্যস্ত তৎপরতা, “সারা বিশ্বের পরিভ্রমণ” এবং কর্মব্যস্ত ছোটাছুটি, সবই তাদের ভাগ্য ও ভবিষ্যতের স্বার্থে। যদিও, আমার রাজ্য নির্মাণের জন্য ব্যয় করার মতো উদ্যম কোনো একজনেরও নেই, এমনকি ততটুকু প্রচেষ্টাও নয় যতটুকু শ্বাস নেওয়ার জন্য প্রয়োজন।” মানুষের সাথে এই অমায়িক বাক্যবিনিময়ের পর, ঈশ্বর তখনও তাদের প্রতি মনোযোগ দেন না, বরং আত্মার পরিপ্রেক্ষিত থেকেই কথা বলতে থাকেন, এবং এই বাক্যগুলোর মাধ্যমে, মনুষ্য প্রজাতির জীবনের সাধারণ পরিস্থিতিগুলোকে সামগ্রিকভাবে প্রকাশ করেন। “সারা বিশ্বের পরিভ্রমণ” এবং “কর্মব্যস্ত ছোটাছুটি” থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যায় যে মানুষের জীবন সারবস্তু বর্জিত। ঈশ্বরের সর্বশক্তিসম্পন্ন পরিত্রাণের জন্য যদি না হতো, তাহলে মানুষ তাদের সমগ্র জীবনকাল ব্যর্থতার মধ্যে অতিবাহিত করতে আরও বেশি প্রবণ হতো, বিশেষত যারা ক্ষয়িষ্ণুতার মধ্যে জন্মেছে, চীনের সাম্রাজ্যের বিশাল পরিবারে, এবং পৃথিবীতে আসার চেয়ে মৃতস্থানে বা নরকে পতিত হলে তাদের পক্ষে অপেক্ষাকৃত ভালো হতো। অতিকায় লাল ড্রাগনের আধিপত্যের অধীনে নিজেদের অজান্তে তারা ঈশ্বরকে ক্ষুব্ধ করেছে, এবং সেইজন্য স্বাভাবিকভাবে ও অজান্তেই ঈশ্বরের শাস্তির মধ্যে পড়েছে। এই কারণে, ঈশ্বর “রক্ষা প্রাপ্ত” ও “অকৃতজ্ঞ”-দের নিয়ে পরস্পরের বিপরীতে তাদের স্থাপন করেন, যাতে মানুষ আরও স্পষ্টভাবে নিজেদের জানতে পারে, এইভাবে তাঁর উদ্ধারের অনুগ্রহকে মহিমান্বিত করার জন্য বৈপরীত্যের সৃষ্টি করেন। তা কি আরও কার্যকর ফলাফল উৎপন্ন করে না? অবশ্যই, আমার সুনির্দিষ্টভাবে একথা বলার প্রয়োজন নির্বিশেষে, মানুষ ঈশ্বরের উচ্চারণের বিষয়বস্তুর মধ্যে খুঁজে পেতে পারে ভর্ৎসনার উপাদান, পরিত্রাণ ও আবেদনের উপাদান, এবং দুঃখের সামান্য আভাস। এই বাক্যগুলো পড়ে, মানুষ অচেতনভাবেই উদ্বিগ্ন বোধ করতে আরম্ভ করে, এবং চোখের জল না ফেলে পারে না…। যাই হোক, কয়েকটা দুঃখজনক অনুভূতির কারণে ঈশ্বর সংযত হবেন না, অথবা সমগ্র মনুষ্য প্রজাতির ভ্রষ্টতার কারণে তিনি তাঁর লোকেদের অনুশাসিত করার ও তাদের কাছ থেকে তাঁর দাবি জানানোর কাজ পরিত্যাগও করবেন না। এই কারণে, তাঁর বিষয়বস্তুগুলো সরাসরি বর্তমানের পরিস্থিতিকে স্পর্শ করে যায়, উপরন্তু, তিনি তাঁর প্রশাসনিক ফরমানের মহিমার কথা মানবজাতির কাছে ঘোষণা করেন, যাতে তাঁর পরিকল্পনা অগ্রগতির পথে চলতে থাকে। এইজন্যেই, এরপর সমস্ত প্রাপ্য দ্রুততার সাথে এবং গরম অবস্থায় লোহাকে আঘাত করতে, ঈশ্বর সেই গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এইসময়ের জন্য একটা সংবিধান ঘোষণা করেন—এমন এক সংবিধান, যা প্রতিটা ধারার প্রতি যত্নশীল মনোযোগ দিয়ে মানবজাতিকে পড়তে হবে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে উপলব্ধি করতে পারার আগেই। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে আর যাওয়ার দরকার নেই; মানুষকে শুধু আরও মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে।

আজ, তোমরা—এখানে উপস্থিত লোকজনের এই দল—তোমরাই একমাত্র, যারা প্রকৃতই ঈশ্বরের বাক্য প্রত্যক্ষ করতে পারে। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বরকে জানার বিষয়ে, অতীত যুগের যেকোনো একজনের থেকেই বর্তমানের মানুষ অনেক পিছিয়ে আছে। এটাই যথেষ্ট পরিমাণে স্পষ্ট করে দেয় যে শয়তান এই এত হাজার বছর ধরে মানুষের উপর কী বিপুল প্রচেষ্টা বিনিয়োগ করেছে, এবং সে কী মাত্রায় মানবজাতিকে ভ্রষ্ট করেছে—সেই মাত্রা এতই বেশি যে ঈশ্বর প্রচুর বাক্য উচ্চারণ করা সত্ত্বেও মানবজাতি তাঁকে বোঝে না অথবা জানে না, বরং উঠে দাঁড়িয়ে সর্বসমক্ষে তাঁর বিরোধিতা করার সাহস করে। এবং তাই, ঈশ্বর প্রায়ই অতীত যুগের লোকদের তুলে ধরেন বর্তমানের মানুষের তুলনা হিসাবে, যাতে বর্তমানের অচৈতন্য ও স্থূলবুদ্ধি মানুষদের একটা বাস্তবসম্মত তুলনীয় মাপকাঠি দেওয়া যায়। যেহেতু মানুষের ঈশ্বর সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই, এবং যেহেতু তাঁর প্রতি প্রকৃত বিশ্বাসেরও তাদের অভাব রয়েছে, তাই ঈশ্বর সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে মানবজাতির যোগ্যতা ও চেতনার ঘাটতি রয়েছে; তাই তিনি বারংবার মানুষকে সহিষ্ণুতা দেখিয়েছেন ও তাদের পরিত্রাণ প্রদান করেছেন। এইভাবে আধ্যাত্মিক জগতে এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়: শয়তানের বৃথা আশা হলো মানবজাতিকে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় কলুষিত করা, পৃথিবীকে অমার্জিত ও মন্দ করে তোলা, এবং সেই উদ্দেশ্যে মানুষকে নিজের সাথে কাদায় টেনে নামানো ও ঈশ্বরের পরিকল্পনা ধ্বংস করা। যদিও, ঈশ্বরের পরিকল্পনা সমগ্র মানবজাতিকে এমন মানুষে পরিণত করা নয় যারা তাঁকে জানে, বরং তাঁর পরিকল্পনা সমগ্র মানবজাতির প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তাদের একটা অংশকে নির্বাচিত করা, বাকিদের বর্জনীয় পদার্থ, ত্রুটিপূর্ণ পণ্য হিসাবে ত্যাগ করা, যাদের আবর্জনার স্তূপে নিক্ষেপ করা হবে। সুতরাং, যদিও শয়তানের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে হয়তো মনে হতে পারে যে কিছু মানুষকে অধিকার করাই ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে ধ্বংস করার অপূর্ব সুযোগ, কিন্তু শয়তানের মতো স্থূলবুদ্ধি কী করে ঈশ্বরের অভিপ্রায়ের বিষয়ে জানবে? এই কারণেই ঈশ্বর বহু আগে বলেছেন, “এই পৃথিবীর দিকে তাকানোকে এড়ানোর জন্য আমি আমার মুখমণ্ডল আবৃত করেছি।” এই বিষয়ে আমরা সামান্যকিছু জানি, এবং ঈশ্বর বলেন না যে মানুষ কোনোকিছু করতে সমর্থ হোক; বরং তিনি চান তারা চিনে উঠতে পারুক যে তিনি যা করেন তা বিস্ময়কর ও অতল, এবং তাঁকে নিজেদের হৃদয়ে সসম্মানে ধারণ করুক। মানুষ যেমন কল্পনা করে, ঈশ্বরকে যদি তেমনভাবে পরিস্থিতির কথা চিন্তা না করে তাদের শাস্তি দিতে হতো, তাহলে অনেক আগেই সমস্ত পৃথিবী বিনষ্ট হয়ে যেত। তা কি ঠিক শয়তানের ফাঁদে পড়ার সমতুল্যই হতো না? আর তাই, ঈশ্বরের মস্তিষ্কে যে ফলের কথা রয়েছে তা অর্জনের জন্য তিনি শুধুই বাক্যের ব্যবহার করেন, কিন্তু কদাচিৎ সত্য আবির্ভূত হয়। ঈশ্বরের বাক্যে কি এই উদাহরণ নেই, “তোমাদের শিক্ষা, যুক্তিবোধ ও অন্তর্দৃষ্টির অভাবকে যদি আমি করুণা না করতাম তাহলে তোমরা আমার শাস্তির মাঝে বিনষ্ট হয়ে যেতে, তোমাদের অস্তিত্ব মুছে যেত। তা সত্ত্বেও, পৃথিবীতে যতদিন না আমার কাজ শেষ হবে, মানবজাতির প্রতি আমি ক্ষমাশীল থাকব”?

পূর্ববর্তী: অধ্যায় ৪

পরবর্তী: অধ্যায় ৬

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন