তোমার জানা উচিত সমগ্র মানবজাতি কীরূপে বর্তমান দিন অবধি বিকশিত হয়েছে
ছয় হাজার বছর ধরে সম্পাদিত কাজের সমগ্রতা ধীরে ধীরে, যুগযুগান্তর ধরে, পরিবর্তিত হয়েছে। বিশ্বের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং মানবসভ্যতার বিকাশের ধারার উপর ভিত্তি করেই এই পরিবর্তন ঘটেছে; পরিচালনার কাজও সেই অনুযায়ী ধীরে ধীরে বদলে গিয়েছে। সৃষ্টির আদি থেকেই সমস্তটা পরিকল্পিত ছিল না। পৃথিবী সৃষ্টির আগে, বা তার অব্যবহিত পরেও, যিহোবা তাঁর কাজের প্রথম পর্যায়, অর্থাৎ বিধানের কাজ, দ্বিতীয় পর্যায়, অর্থাৎ অনুগ্রহের কাজ, বা তৃতীয় পর্যায়, অর্থাৎ বিজয়কার্য, যেখানে তিনি প্রথমে মোয়াবের কিছু বংশধরদের দিয়ে শুরু করবেন, এবং, তার মাধ্যমে সামগ্রিক বিশ্বকে জয় করবেন, তার পরিকল্পনা করেন নি। বিশ্ব সৃষ্টির পরে তিনি কখনোই এই সকল কথা বলেন নি, প্রকৃতপক্ষে মোয়াবের পরে, বা লোটের আগে, কখনো তিনি এইসব উচ্চারণ করেন নি। ঈশ্বরের সকল কর্মই স্বতঃস্ফুর্তভাবে কৃত। ঠিক এইভাবেই তাঁর ছয় হাজার বছরের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার কাজের ধারা বিকশিত হয়েছে; পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে তাঁর কাছে “মানবজাতির বিকাশধারার সারসংক্ষেপ” নামাঙ্কিত কোনো লিখিত পরিকল্পনা ছিল না। ঈশ্বর তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে তিনি যা, তা সরাসরি বুঝিয়ে দেন; তিনি একটি পরিকল্পনা করার জন্য নিজের মস্তিষ্ককে পীড়ন করেন না। অবশ্যই, বেশ কিছু নবী অনেক মহান ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, তা সত্ত্বেও এমন বলা যায় না যে, ঈশ্বরের কাজ সর্বদা একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে; সেই ভবিষ্যৎবাণীগুলি ঈশ্বরের সেই সময়ের ক্রিয়ানুসারেই করা হয়েছিল। তিনি যে সমস্ত কাজ করেন সেগুলিই সবচেয়ে বাস্তবিক কাজ। তিনি প্রতিটি যুগের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, এবং পরিপার্শ্বের পরিবর্তনের উপরে ভিত্তি করে, তাঁর কাজ সম্পাদনা করেন। তাঁর কাছে, কাজ নির্বাহ করা হল অসুস্থতায় ঔষধসেবনের সমান; তিনি নিজের কাজ সম্পন্ন করার সময়ে নিয়ত পর্যবেক্ষণ করে চলেন, এবং সেই অনুযায়ী তাঁর কাজ চালিয়ে যান। তাঁর কাজের প্রতিটি পর্যায়ে, ঈশ্বর নিজের প্রভূত প্রজ্ঞা এবং ক্ষমতা প্রকাশ করতে সক্ষম; তিনি যে কোন বিশেষ যুগের কাজ অনুসারে তাঁর বিপুল জ্ঞান এবং কর্তৃত্ব প্রকাশ করেন, এবং সেই যুগে তাঁর দ্বারা ফিরিয়ে আনা সমস্ত মানুষকে তিনি তাঁর সম্পূর্ণ স্বভাব প্রত্যক্ষ করার অনুমতি দেন। প্রতিটি যুগে যে কাজ করা উচিত, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তিনি মানুষের প্রয়োজনের ব্যবস্থা করেন, সে তিনি যে কাজই করুন না কেন। শয়তান মানুষকে যত মাত্রায় ভ্রষ্ট করেছে, তার উপরে ভিত্তি করে ঈশ্বর মানুষকে তার যা প্রয়োজন সেই সকল সরবরাহ করেন। এটা সেরকমই, যখন যিহোবা আদিতে আদম এবং হবাকে সৃষ্টি করেছিলেন, তিনি এমনটা করেছিলেন যাতে তারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের ক্ষমতা প্রকাশ করতে পারে এবং সমগ্র সৃষ্টি জুড়ে ঈশ্বরের সাক্ষ্য বহন করতে পারে। যাইহোক, হবা সর্প দ্বারা প্রলুব্ধ হবার পরে, পাপ করেছিল, এবং আদম-ও তা-ই করেছিল; বাগানে, উভয়েই সৎ এবং অসৎ জ্ঞানদায়ী বৃক্ষের ফল খেয়েছিল। সুতরাং, যিহোবার তাদের প্রতি করণীয় অতিরিক্ত কাজ ছিল। তিনি তাদের উলঙ্গ অবস্থায় দেখে তাঁদের শরীর পশুর চামড়া দিয়ে ঢেকে দেন। পরে তিনি আদমকে বলেন, “ঐ গাছের ফল খেতে আমি তোমায় নিষেধ করেছিলাম, আমার নিষেধ না শুনে তুমি তোমার স্ত্রীর কথায় সেই গাছের ফল খেয়েছ। সেইহেতু, তোমার পক্ষে ভূমি হল অভিশপ্ত … যতদিন না তুমি ফিরে যাবে মৃত্তিকা বক্ষে; মৃত্তিকা থেকে তোমার উৎপত্তি, ধূলিমাত্র তুমি, ধূলিতেই করবে প্রত্যাবর্তন”। নারীকে তিনি বললেন, “আমি তোমার গর্ভযন্ত্রণা অতিশয় বৃদ্ধি করব, বেদনার্ত হয়ে তুমি সন্তান প্রসব করবে। স্বামীর প্রতি থাকবে তোমার আসক্তি এবং সে তোমার উপরে করবে কর্তৃত্ব”। তারপর থেকে, তিনি তাদের এদন উদ্যান থেকে নির্বাসিত করলেন এবং তাদেরকে এর বাইরে বসবাস করতে বাধ্য করলেন, ঠিক যেভাবে মানুষ বর্তমানে পৃথিবীতে বসবাস করে। ঈশ্বর যখন আদিতে মানব সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তাঁর সর্প দ্বারা মানুষের প্রলুব্ধ হওয়ার, এবং তারপর মানুষ ও সর্পকে অভিশাপ দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল না। তাঁর সত্যই এমন কোনো পরিকল্পনা ছিল না; নিছক ঘটনাপ্রবাহই তাঁকে তাঁর সৃষ্টির মাঝে করণীয় নতুন কার্য এনে দেয়। যিহোবা পৃথিবীতে আদম এবং হবার মধ্যে এই কাজ সম্পাদনা করার পর থেকে মানবজাতি বহু সহস্র বৎসর ধরে বিকাশ লাভ করে চলেছে, যতদিন না “যিহোবা দেখলেন, যে, পৃথিবীতে মানুষের দুষ্টতা হয়ে উঠেছে প্রবল, এবং, যে, তাদের অন্তরের সকল কল্পনা ও চিন্তা রয়েছে নিরন্তরভাবে মন্দতায় আবিল। যিহোবা অনুতপ্ত বোধ করলেন পৃথিবীতে মানুষকে সৃষ্টি করার জন্য, এবং অন্তর থেকে তিনি অনুভব করলেন গভীর দুঃখবোধ। … কিন্তু যিহোবার নজরে অনুগ্রহ লাভ করলেন নোহ”। এই সময়ে এই মানবজাতির জন্য যিহোবার আরো অতিরিক্ত কিছু কাজ ছিল, কারণ যিহোবার সৃষ্ট মানবজাতি সর্পের দ্বারা প্রলুব্ধ হওয়ার পরে অত্যন্ত পাপী হয়ে পড়েছিল। এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, যিহোবা সমগ্র মানবজাতির মধ্যে নোহের পরিবারকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছিলেন, এবং তারপর তিনি একটি বন্যার মাধ্যমে সৃষ্টি ধ্বংস করার কাজ সম্পাদিত করেছিলেন। মানবসভ্যতা এই পদ্ধতিতে আজ অবধি বিকশিত হয়েছে, ক্রমবর্ধমানভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং যখন মানবসভ্যতার চূড়ান্ত বিকাশের সময় আসবে, তখন এর অর্থ হবে মানবজাতির সমাপ্তি। একেবারে আদি থেকে বিশ্বের অন্তিম সময় পর্যন্ত, তাঁর কাজের অভ্যন্তরীণ সত্য সর্বদা এইরকমই থেকেছে এবং এইরকমই থাকবে। এটি ঠিক সেরকমই যেভাবে মানুষকে তার ধরন অনুযায়ী শ্রেণীবদ্ধ করা হবে; এটা একদমই এরকম নয় যে প্রতিটি মানুষ সৃষ্টির আদিকাল থেকে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য পূর্বনির্ধারিত; বরং, প্রতিটি মানুষকেই বিকাশের একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাবার পরেই ধীরে ধীরে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। শেষাবধি, যার সম্পূর্ণ পরিত্রাণ আনা যাবে না, তাকে তার “পূর্বপুরুষ”-দের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। মানবজাতির মধ্যে ঈশ্বরের কোনো কাজই জগতের সৃষ্টিকালে তৈরি করে রাখা হয় নি; বরং এটি পরিপার্শ্বের সেই বিকাশ যা ঈশ্বরকে মানবজাতির মধ্যে ধাপে ধাপে এবং আরো ব্যবহারিক ও বাস্তবসম্মতভাবে তাঁর কাজগুলি করার অনুমতি দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবা ঈশ্বর নারীকে প্রলুব্ধ করার জন্য সর্প সৃষ্টি করেন নি, এটি তাঁর প্রকৃত পরিকল্পনা ছিল না বা তা এমন কিছুও ছিল না যা তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পূর্বনির্ধারিত করে রেখেছিলেন। কেউ বলতে পারে, এটি একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল। ফলত, এই কারণেই যিহোবা আদম এবং হবাকে এদন উদ্যান থেকে বিতাড়িত করেছিলেন এবং পুনরায় মানবসৃষ্টি না করার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করেছিলেন। তথাপি, মানুষ শুধুমাত্র এই ভিত্তিতেই ঈশ্বরের প্রজ্ঞা অনুধাবন করে। ঠিক যেমন আমি আগেই বলেছি: “আমি শয়তানের চক্রান্তের উপরে ভিত্তি করে আমার বুদ্ধি প্রয়োগ করি”। মানবজাতি যতদূরই ভ্রষ্ট হোক না কেন, বা সর্প যতই তাকে প্রলুব্ধ করুক না কেন, তবুও যিহোবার প্রজ্ঞা রয়েছে; এইভাবে, তিনি পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে নতুন কাজে নিযুক্ত আছেন, এবং তাঁর কাজের কোনো পর্যায়ই কখনো পুনরাবৃত্ত হয় নি। শয়তান ক্রমাগত তার চক্রান্ত চালিয়েছে, মানবজাতি নিয়ত শয়তান দ্বারা ভ্রষ্ট হয়েছে, এবং যিহোবা ঈশ্বর বিরামহীনভাবে তাঁর প্রাজ্ঞ কাজ নির্বাহ করেছেন। পৃথিবী সৃষ্টির সময়কাল থেকে তিনি কখনোই ব্যর্থ হন নি, এমনকি তিনি কখনোই তাঁর কাজ থামিয়েও দেন নি। মানুষ শয়তান দ্বারা ভ্রষ্ট হবার পরেও তিনি মানুষের মধ্যে তাদের ভ্রষ্টাচারের উৎস যে শত্রু তাকে পরাজিত করার কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। এই যুদ্ধ আদিকাল থেকেই চলছে, এবং পৃথিবীর শেষকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এই সকল কাজের মধ্যে যিহোবা ঈশ্বর শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট মানুষকে কেবলমাত্র তাঁর মহান পরিত্রাণ পাওয়ারই নয়, বরং তাঁর প্রজ্ঞা, সর্বশক্তিমানতা, এবং কর্তৃত্ব প্রত্যক্ষ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। উপরন্তু, পরিশেষে, তিনি তাদেরকে তাঁর ধার্মিক স্বভাব দেখার অনুমতি দেবেন—মন্দকে দণ্ড দান করবেন এবং ভালোকে পুরস্কার প্রদান করবেন। তিনি শয়তানের সঙ্গে আজ অবধি যুদ্ধ করেছেন এবং কখনো পরাজিত হন নি। কারণ তিনি একজন প্রাজ্ঞ ঈশ্বর, এবং তিনি শয়তানের চক্রান্তের উপর ভিত্তি করে তাঁর বুদ্ধি প্রয়োগ করেন। সুতরাং, ঈশর যে কেবলমাত্র স্বর্গের সমস্ত কিছুকে তাঁর কর্তৃত্বের কাছে সমর্পণ করান—তা-ই নয়, বরং তিনি পৃথিবীতেও সমস্ত কিছুকে তাঁর পদতলে রাখেন, এ-ও কম কথা নয় যে, তিনি মানবজাতির আক্রমণকারী এবং হেনস্থাকারী দুষ্টদের শাস্তি দেন। এই সমস্ত কাজের ফল তাঁর প্রজ্ঞার কারণেই লব্ধ হয়। মানবজাতির অস্তিত্বের আগে তিনি কখনোই তাঁর প্রজ্ঞা প্রকাশ করেন নি, কারণ স্বর্গে, পৃথিবীতে বা সমগ্র মহাবিশ্বের কোথাও তাঁর কোনো শত্রু ছিল না, এমনকি প্রকৃতির মধ্যেও কোনো অন্ধকার শক্তির আক্রমণ ঘটে নি। মহাদূতের বিশ্বাসঘাতকতার পরে তিনি পৃথিবীতে মানবজাতির সৃষ্টি করেছিলেন, আর এই মানবজাতির জন্যই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে শয়তান তথা মহাদূতের সঙ্গে সহস্রাব্দব্যাপী যুদ্ধের সূচনা করেছিলেন—এমন এক যুদ্ধ যা প্রতিটি পর্যায়ক্রমে আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। প্রতিটি পর্যায়ে তাঁর সর্বশক্তিমানতা এবং প্রজ্ঞা বর্তমান। কেবল সেই কারণেই, স্বর্গে এবং পৃথিবীতে সমস্ত কিছু ঈশ্বরের প্রজ্ঞা, সর্বশক্তিমানতা, এবং, নির্দিষ্টভাবে, ঈশ্বরের বাস্তবিকতা প্রত্যক্ষ করতে পেরেছে। তিনি এখনো পর্যন্ত একইরকম বাস্তবিক পদ্ধতিতে তাঁর কাজ সম্পাদনা করে চলেছেন; সেই সঙ্গে যত তিনি তাঁর কাজ সম্পন্ন করছেন ততই তিনি তাঁর প্রজ্ঞা এবং সর্বশক্তিমানতা প্রকাশ করে চলেছেন। তিনি তোমাদের তাঁর কাজের প্রতিটি পর্যায়ের অভ্যন্তরীণ সত্য দেখার, ঈশ্বরের সর্বশক্তিমানতাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করতে হয় তা দেখার, এবং, উপরন্তু, ঈশ্বরের বাস্তবতার একটি নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেখার অনুমতি দেন।
যীশুর প্রতি যিহুদার বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনায়, কিছু মানুষ বিস্ময় প্রকাশ করে: এমন কি পৃথিবী সৃষ্টির আগেই পূর্বনির্ধারিত ছিল না? আসলে, পবিত্র আত্মা সেই সময়ের বাস্তবতার উপরে ভিত্তি করে এই পরিকল্পনা করেছিলেন। যিহুদা নামক কোনো ব্যক্তি ছিল যে সবসময় তহবিল আত্মসাৎ করত, সেই কারণেই সেই ব্যক্তিকে এই ভূমিকা পালনের জন্য এবং এইরূপে কাজ করার জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। এটি ছিল স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের এক যথার্থ উদাহরণ। যীশু প্রথমে এই বিষয় সম্পর্কে অবগত ছিলেন না, তিনি পরবর্তীতে যিহুদা অনাবৃত হওয়ার পরেই এই বিষয়টি জেনেছিলেন। যদি অন্য কেউ যিহুদারর পরিবর্তে এই ভূমিকা পালনে সক্ষম হত, তাহলে সেই ব্যক্তি-ই যিহুদার পরিবর্তে এমন করতে পারত। যা পূর্বনির্ধারিত করা হয়েছিল, তা আসলে এমন কিছু ছিল যা পবিত্র আত্মা সেই মুহূর্তে করেছিল। পবিত্র আত্মার কাজ সর্বদা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্পাদিত হয়; সে তার কাজের পরিকল্পনা যেকোনো সময় করতে পারে, এবং যেকোনো সময় তা সম্পন্ন করতে পারে। কেন আমি সবসময় বলি যে পবিত্র আত্মার কাজ সর্বদা বাস্তবিক, কখনো পুরাতন হয় না এবং তা সর্বশ্রেষ্ঠ মাত্রায় সতেজ? বিশ্বসৃষ্টির সময়ে ইতিমধ্যেই তার কাজ পরিকল্পিত ছিল না, এমন কিন্তু একেবারেই নয়! তার কাজের প্রতিটি পদক্ষেপ নিজ নিজ সময়ের জন্য নির্দিষ্ট প্রভাব অর্জন করে, এবং এই পদক্ষেপগুলি একে অপরকে বিঘ্নিত করে না। অনেক সময়ই তোমার মনের পরিকল্পনাগুলোর সঙ্গে পবিত্র আত্মার সর্বশেষ কাজের কোনো মিল থাকে না। মানুষ যেমন মনে করে, তার কাজ ততখানি সহজ নয়, আবার মানুষের কল্পনার মত কঠিনও নয়—তাঁর কাজ সবসময় এবং সর্বত্র মানুষকে তার প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতি রেখে সরবরাহ করে। মানুষের সারসত্য সম্পর্কে তাঁর চেয়ে স্পষ্টতর কেউই নয়, এবং তা বস্তুত এই কারণেই যে, কোনো কিছুই তাঁর কাজের মত করে মানুষের বাস্তবিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করতে পারে না। ফলত, মানবীয় দৃষ্টিকোণ থেকে মনে হয় বুঝি তাঁর কাজ কয়েক সহস্রাব্দ পূর্বে পরিকল্পিত হয়েছে। এখন তিনি তোমাদের মাঝে কার্য সম্পাদন করাকালীন, তাঁর কাজ এবং কথনের সময় লক্ষ্য রাখেন তোমরা কী অবস্থায় আছো, প্রতিটি প্রকারের অবস্থার সম্মুখীন হবার জন্য তাঁর কাছে সঠিক বাক্য আছে, যে বাক্যগুলি মানুষকে বলা প্রয়োজন। তাঁর কাজের প্রথম পর্যায়টি দেখো: শাস্তির সময়। এরপর ঈশ্বর তাঁর কাজ পরিচালনা করেছিলেন মানুষ যা প্রকাশ করেছিল—তাদের বিদ্রোহী মনোভাব, তাদের থেকে উদ্ভূত ইতিবাচক এবং নেতিবাচক অবস্থা, এবং যখন সেই নেতিবাচকতা একটা চূড়ান্ত স্তরে উত্তীর্ণ হয় তার দরুন মানুষ যে সর্বনিম্ন সীমায় পতিত হতে পারে, তার উপর ভিত্তি করে; এবং তিনি এই বিষয়গুলি গ্রহণ করেছিলেন তাঁর কাজের থেকে আরো ভালো ফলাফল লাভের জন্য। অর্থাৎ, যে কোন সময়ে তিনি মানুষের বর্তমান অবস্থা বুঝে স্থায়ী কাজ করে থাকেন; তিনি তাঁর কাজের প্রতিটি পর্যায়ই মানুষের প্রত্যক্ষ অবস্থান বুঝে সম্পাদনা করেন। সমস্ত সৃষ্টি তাঁরই হাতে; তিনি কীভাবেই বা তাদের না জেনে থাকবেন? ঈশ্বর তাঁর কাজের পরবর্তী পর্যায়, যা যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে ঘটতে পারে, তা সম্পন্ন করেন মানুষের পরিস্থিতির সাথে সঙ্গতি রেখে। কোনোভাবেই এই কাজটি সহস্র বৎসর আগে থেকে পরিকল্পিত ছিল না; এমন কেবল মানুষের ধারণা! তিনি তাঁর কাজের প্রভাব পর্যবেক্ষণ করে কাজ করেন, এবং তাঁর কাজ ক্রমাগত গভীরতা এবং বিকাশ লাভ করে; প্রত্যেকবার তিনি তাঁর কাজের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করেই তাঁর পরবর্তী কাজের পর্যায় বাস্তবায়িত করেন। তিনি ধীরে ধীরে রূপান্তর ঘটাতে এবং তাঁর নতুন কাজকে মানুষের কাছে দৃশ্যমান করতে অনেক কিছু ব্যবহার করেন। কাজের এই পদ্ধতি মানুষের চাহিদা খুব ভালো করে মেটাতে পারে, কারণ ঈশ্বর মানুষকে খুব ভালো করে জানেন। এভাবেই তিনি স্বর্গ থেকে তাঁর কাজ সম্পাদনা করেন। একইভাবে, ঈশ্বরের অবতারও তাঁর কাজ করেন—প্রত্যক্ষ পরিস্থিতি অনুযায়ী মানুষের মধ্যে কাজ এবং ব্যবস্থা করেন। তাঁর কোনো কাজই পৃথিবী সৃষ্টির আগে আয়োজিত হয় নি, সেগুলোর কোনোটাই আগে থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিকল্পিত হয় নি। পৃথিবী সৃষ্টির দুই সহস্র বছর পরে, যিহোবা দেখলেন মানবজাতি এতটাই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে যে তিনি তখন নবী যিশাইয়র মুখের দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করলেন যে, বিধানের যুগ শেষ হওয়ার পর, যিহোবা অনুগ্রহের যুগে মানবজাতির মুক্তির কাজ করে যাবেন। অবশ্যই, এই পরিকল্পনা যিহোবারই ছিল, কিন্তু এই পরিকল্পনাটিও সেই সময় তিনি যে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, তার উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছিল; তিনি আদমকে সৃষ্টি করার অব্যবহিত পরেই সেটির কথা ভাবেন নি। যিশাইয় কেবলমাত্র একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, কিন্তু যিহোবা বিধানের যুগে তাঁর কাজের আগাম প্রস্তুতি নেন নি; বরং তিনি অনুগ্রহের যুগের শুরুতে এটি চালু করেছিলেন, যখন যোষেফের স্বপ্নে দূত আবির্ভূত হয়েছিল তাকে এই কথা জানাতে যে, ঈশ্বর দেহধারণ করবেন, এবং ঠিক তখনই তাঁর অবতারের কাজ সূচিত হয়েছিল। মানুষের ধারণা অনুযায়ী ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টির পরে-পরেই তাঁর অবতারের কাজের প্রস্তুতি নেন নি; মানবতার বিকাশের মাত্রা এবং শয়তানের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধের পরিস্থিতির উপরে ভিত্তি করেই তা নির্ধারিত হয়েছে।
যখন ঈশ্বর দেহধারণ করেন, তখন তাঁর আত্মা এক মানুষের উপরে নেমে আসেন; প্রকারান্তরে বললে, ঈশ্বর নিজেকে একটি ভৌতদেহে আবৃত করেন। তিনি কিছু সীমিত পদক্ষেপসহ পৃথিবীতে কাজ করতে আসেন নি, তাঁর কাজ সত্যিই অসীম। যে কাজ পবিত্র আত্মা দেহরূপে করেন, তা এখনো তাঁর কাজের ফলাফলের দ্বারা নির্ধারিত হয়, এবং তিনি এই ধরণের বিষয়গুলি ব্যবহার করেন যাতে তিনি অবতাররূপে কত সময়কাল ধরে কাজ করবেন তা নির্ধারণ করতে পারেন। পবিত্র আত্মা তাঁর কাজ পরীক্ষা করতে করতেই সেই কাজের প্রতিটি ধাপ সরাসরি প্রকাশ করেন; এই কাজ এত অতিপ্রাকৃতিক নয় যে তা মানুষের কল্পনার সীমা ছাপিয়ে যেতে চাইবে। তা যিহোবার দ্বারা আকাশ ও পৃথিবী এবং সমস্তকিছুর সৃষ্টির কাজের মত; তিনি একইসঙ্গে পরিকল্পনা করেছিলেন এবং কাজ করেছিলেন। তিনি অন্ধকারের থেকে আলোকে বিচ্ছিন্ন করেছিলেন, এবং সকাল ও সন্ধ্যার জন্ম হয়েছিল—এমন হতে একদিন সময় লেগেছিল। দ্বিতীয় দিনে, তিনি আকাশ সৃষ্টি করেছিলেন, এবং তাতেও একদিন সময় নিয়েছিল; তারপর তিনি পৃথিবী, সমুদ্র এবং সেখানে বসবাসকারী সমস্ত জীবের সৃষ্টি করেছিলেন, তাতেও আরেকটি দিন সময় নিয়েছিল। এমন ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত চলেছিল, যখন ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেন এবং তাকে পৃথিবীর সমস্তকিছু পরিচালনা করতে দেন। তারপর সপ্তম দিনে, যখন তাঁর সমস্ত কিছু সৃষ্টি করা সমাপ্ত হয়েছিল, তিনি বিশ্রাম নিয়েছিলেন। ঈশ্বর সপ্তম দিনটিকে আশীর্বাদ করেছিলেন এবং এটিকে একটি পবিত্র দিন হিসাবে মনোনীত করলেন। তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করার পরেই এই পবিত্র দিন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তার আগে নয়। এই কাজটিও স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়েছিল; সমস্তকিছু সৃষ্টি করার আগেই তিনি ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করবেন এবং সপ্তম দিনে বিশ্রাম নেবেন এমন ভেবে রেখেছিলেন—এমন ধারণা যথাযথ নয়। তিনি এমন কিছু বলেন নি বা পরিকল্পনাও করেন নি। কোনোভাবেই তিনি এমন বলেন নি যে পৃথিবী সৃষ্টির কাজ ছয়দিনে সম্পন্ন হবে এবং তিনি সপ্তম দিনে বিশ্রাম নেবেন; বরং, সেই সময় তাঁর যা ভালো মনে হয়েছিল সেই অনুযায়ী তিনি সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর সবকিছু সৃষ্টি করতে ছয়দিন লেগেছিল। যদি তাঁর পঞ্চম দিনে সৃষ্টির কাজ সমাপ্ত হত, তাহলে তিনি ষষ্ঠ দিনটিকেই পবিত্র দিন হিসেবে ধার্য করতেন। যাইহোক, তিনি ষষ্ঠ দিনে সমস্ত সৃষ্টির কাজ সম্পন্ন করেছিলেন, এভাবেই সপ্তম দিনটি পবিত্র দিবসে পরিণত হয়, যা আজ অবধি চলে এসেছে। সুতরাং, তাঁর বর্তমান কাজও একই পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে। তিনি তোমাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনের জন্য কথা বলেন এবং সরবরাহ করেন। অর্থাৎ, আত্মা মানুষের পরিস্থিতি অনুযায়ী কথা বলেন এবং কাজ করেন; তিনি সকলের প্রতি নজর রাখেন এবং যে কোনো সময়ে যে কোনো জায়গায় কাজ করেন। আমি যা করি, বলি, তোমার কাছে রাখি এবং তোমাকে দান করি, সেসবই ব্যতিক্রমহীনভাবে যা তোমার প্রয়োজন, তাই। অর্থাৎ, আমার কোনো কাজই বাস্তববিচ্ছিন্ন নয়; এগুলি সবই বাস্তবিক, তোমরা সবাই জানো যে “ঈশ্বরের আত্মা সকলের প্রতি নজর রাখেন”। যদি এই সবকিছু সময়ের আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হত তাহলে কি তা খুব বেশি কর্তিত এবং নীরস হত না? তুমি মনে করো যে ঈশ্বর ছয় হাজার বছরের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন এবং তারপরে মানবজাতিকে অবাধ্য, প্রতিরোধী, কুটিল, শঠ এবং দৈহিক কলুষের অধিকারী হওয়ার জন্য, শয়তানোচিত স্বভাব-ধারণকারী, লালসাসিক্ত চোখের নজর ও ব্যক্তিগত ভোগের অধিকারী হওয়ার জন্য পূর্বনির্ধারিত করেছিলেন। এইসবের কোনোটাই ঈশ্বরের দ্বারা পূর্বনির্ধারিত নয়, বরং, এইসবই শয়তানের ভ্রষ্টাচারের দ্বারা ঘটেছিল। কেউ বলতে পারেন, “শয়তানও কি ঈশ্বরের মুঠোর মধ্যে ছিল না? ঈশ্বর পূর্বনির্ধারিত করেছিলেন যে শয়তান মানুষকে এইভাবেই ভ্রষ্ট করবে, এবং তারপরে মানুষের মধ্যে ঈশ্বর তাঁর সমস্ত কাজ সম্পন্ন করেন”। সত্যিই কি ঈশ্বর শয়তানের দ্বারা মানবজাতির ভ্রষ্ট হওয়া পূর্বনির্ধারিত করবেন? ঈশ্বর কেবলমাত্র মানুষকে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে দিতে আগ্রহী, তাই তিনি কি সত্যিই তাদের জীবনে হস্তক্ষেপ করবেন? যদি তাই হয়, তাহলে কি শয়তানকে পরাজিত করা এবং মানবজাতিকে উদ্ধার করার প্রচেষ্টা বিফল হবে না? মানবজাতির বিদ্রোহী মনোভাব কীভাবে পূর্বনির্ধারিত হতে পারে? যা বস্তুত শয়তানের হস্তক্ষেপ দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল, তা কেমন করে ঈশ্বরের দ্বারা পূর্বনির্ধারিত হতে পারে? ঈশ্বরের মুঠোর মধ্যে যে শয়তানের কথা তোমরা ধারণা করছ তার থেকে ঈশ্বরের হাতের মধ্যে থাকা যে শয়তানের কথা আমি বলছি, তা খুবই আলাদা। “ঈশ্বর সর্বশক্তিমান এবং শয়তান তাঁর হাতের মুঠোর মধ্যে রয়েছে”—তোমাদের এই বিবৃতি অনুযায়ী শয়তান কখনোই তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। তুমি কি ঈশ্বরকে সর্বশক্তিমান বলো নি? তোমাদের জ্ঞান খুবই বিমূর্ত, এবং বাস্তবের সঙ্গে যোগবিহীন; মানুষ কখনোই ঈশ্বরের চিন্তাধারা অনুধাবন করতে বা তাঁর প্রজ্ঞা বুঝতে পারে না! ঈশ্বর সর্বশক্তিমান; এবং তাতে কোনো মিথ্যা নেই। প্রধান দেবদূত ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল কারণ প্রাথমিকভাবে তিনি তাকে কর্তৃত্বের একজন শরিক করেছিলেন। অবশ্যই, তা এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল, যেমন ছিল হবার সর্পের প্রলোভনের কাছে আত্মসমর্পণ করা। তবে, শয়তান যেভাবেই বিশ্বাসঘাতকতা করুক না কেন, সে কখনোই ঈশ্বরের মতো সর্বশক্তিমান নয়। তোমরা যেমন বলেছ শয়তান নিছকই শক্তিশালী; সে যাই করুক না কেন, ঈশ্বরের কর্তৃত্ব সর্বদা তাকে পরাজিত করবে। এ-ই হল “ঈশ্বর সর্বশক্তিমান এবং শয়তান তাঁর মুঠোর মধ্যে থাকে।”—এই উক্তির তাৎপর্য। অতএব, শয়তানের সঙ্গে যুদ্ধ একসময়ে একধাপে করতে হবে। তদুপরি, ঈশ্বর শয়তানের ষড়যন্ত্রের প্রতিক্রিয়া হিসাবে তাঁর কাজের পরিকল্পনা করেন—অর্থাৎ, তিনি মানবজাতির জন্য পরিত্রাণ নিয়ে আসেন, এবং তাঁর সর্বশক্তিমানতা এবং প্রজ্ঞা যুগোপযোগী ভাবে প্রকাশ করেন। একইভাবে, অন্তিম সময়ের কাজ অনুগ্রহের যুগের আগে পূর্বনির্ধারিত ছিল না; পূর্বনির্ধারণগুলি এইভাবে সুশৃঙ্খলভাবে তৈরি করা হয় না: প্রথমত, মানুষের বাহ্যিক স্বভাব পরিবর্তন করা; দ্বিতীয়ত, মানুষকে তাঁর শাস্তি ও পরীক্ষার অধীন করা; তৃতীয়ত, মানুষকে মৃত্যুর বিচারের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যাওয়া; চতুর্থত, মানুষকে প্রেমময় ঈশ্বরের সময় উপলব্ধি করানো এবং একটি সৃষ্ট সত্তার সংকল্প প্রকাশ করা; পঞ্চমত, মানুষকে ঈশ্বরের ইচ্ছা প্রত্যক্ষ করার এবং তাঁকে সম্পূর্ণ জানার অনুমতি দান, এবং শেষত মানুষকে পরিপূর্ণ করা। তিনি অনুগ্রহের যুগে এইসব কিছু পরিকল্পনা করেন নি; বরং তিনি বর্তমান পর্যায়ে এসে এগুলো পরিকল্পনা করা শুরু করেছিলেন। শয়তান তার কাজ করছে, যেমন ঈশ্বরও করছেন। শয়তান তার দুর্নীতিগ্রস্ত স্বভাব ব্যক্ত করে, ঈশ্বর সরাসরি কথা বলেন এবং কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস প্রকাশ করেন। এই কাজই আজকের দিনে করা হচ্ছে, এবং কাজের নীতি সেই বহুপূর্বে, বিশ্বসৃষ্টির পরেই, যেমন প্রয়োগ করা হত, তেমনই রয়েছে।
প্রথমে ঈশ্বর আদম এবং হবার সৃষ্টি করলেন, এবং তিনি একটি সর্পও সৃষ্টি করলেন। সবকিছুর মধ্যে, এই সর্পটি সবচেয়ে বিষধর ছিল; তার শরীরে বিষ ছিল, শয়তান যা সদ্ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছিল। এই সর্পই হবাকে পাপে প্রলুব্ধ করে। হবার পরে আদম পাপ করেছিল, এবং তারা দুজনেই তখন ভালো ও মন্দের পার্থক্য করতে সক্ষম হয়েছিল। যদি যিহোবা জানতেন যে সর্প হবাকে এবং হবা আদমকে প্রলুব্ধ করবে, তাহলে কেন তিনি তাদের সকলকে একটি উদ্যানের ভিতর রেখেছিলেন? যদি তিনি এই সকল বিষয় ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারতেন, তাহলে কেন তিনি একটি সর্প সৃষ্টি করলেন এবং সেটিকে এদন উদ্যানে রাখলেন? কেনই বা এদন উদ্যানে সৎ ও অসৎ জ্ঞানদায়ী বৃক্ষের ফল থাকল? তিনি কি চেয়েছিলেন যে তারা ওই ফল খাক? যখন যিহোবা এলেন, তখন আদম বা হবা কেউই তাঁর মুখোমুখি হতে সাহস পায় নি, এবং তিনি তখনই জেনেছিলেন যে তারা সৎ ও অসৎ জ্ঞানদায়ী বৃক্ষের ফল খেয়েছে, এবং সর্পের ছলনার শিকার হয়েছে। সর্বশেষে, তিনি সর্পকে অভিশাপ দিয়েছিলেন, এবং সেই সঙ্গে তিনি আদম ও হবাকেও অভিশাপ দিয়েছিলেন। যখন তারা দুজনে সেই বৃক্ষের ফল খেয়েছিল, তখন যিহোবা জানতেন না যে তারা তেমন করছে। মানবজাতি মন্দ হওয়া এবং যৌনভাবে অশ্লীল হওয়া অবধি ভ্রষ্ট হয়েছিল, এমনকি তারা এতদূর চলে গিয়েছিল যে, তাদের হৃদয়ের সবকিছুই মন্দ, অধার্মিক এবং অপবিত্র ছিল। তাই, যিহোবা মানবজাতি সৃষ্টি করে অনুশোচনা করেছিলেন। এরপরে, তিনি একটি বন্যার দ্বারা পৃথিবী ধ্বংস করার কাজ সম্পন্ন করেন, যা থেকে নোহ এবং তার পুত্ররা বেঁচে গিয়েছিল। কিছু কিছু জিনিস মানুষের কল্পনার মত উন্নত এবং অতিপ্রাকৃতিক হয় না। কেউ জিজ্ঞাসা করবেন, “ঈশ্বর যখন জানতেন যে প্রধান দেবদূত তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন, তাও কেন তিনি প্রধান দেবদূতকে সৃষ্টি করলেন?” এটাই সত্যি যে, পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে, প্রধান দেবদূতই স্বর্গের সকল দেবদূতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিল। স্বর্গের সমস্ত দেবদূতের উপরে তার অধিকার ছিল; এই কর্তৃত্ব ঈশ্বর দ্বারা অনুমোদিত ছিল। ঈশ্বর ব্যতীত সে-ই ছিল স্বর্গের দেবদূতদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। পরবর্তীতে, ঈশ্বর যখন পৃথিবীতে মানবজাতি সৃষ্টি করলেন, তখন প্রধান দেবদূত ঈশ্বরের সঙ্গে আরো বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। আমি বলছি সে ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল কারণ, সে মানবজাতির পরিচালনা করতে এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে অতিক্রম করতে চেয়েছিল। প্রধান দেবদূতই হবাকে পাপে প্রলুব্ধ করেছিল, এবং সে এমন করেছিল কারণ সে পৃথিবীতে তার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে, এবং মানুষকে ঈশ্বরের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে তাঁর পরিবর্তে নিজের প্রতি অনুগত করতে চেয়েছিল। প্রধান দেবদূত দেখেছিল, অনেক কিছুই তাকে মেনে চলতে পারে—দেবদূতেরা যেমন পারে তেমনই পারে পৃথিবীর মানুষেরাও। পাখি, পশু, গাছ, বন, পর্বত, নদী, এবং সমস্তকিছুই পৃথিবীতে মানুষের, অর্থাৎ, আদম এবং হবার তত্ত্বাবধানে ছিল—এদিকে আদম এবং হবা প্রধান দেবদূতের অনুগত ছিল। তাই, প্রধান দেবদূত ঈশ্বরের কর্তৃত্ব অতিক্রম করতে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চেয়েছিল। এরপরে, সে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে অনেক দেবদূতকে নেতৃত্ব দিয়েছিল, যারা পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরণের অশুচি আত্মায় পরিণত হয়। আজকের দিন অবধি মানবজাতির বিকাশ কি প্রধান দেবদূতের ভ্রষ্টাচারের ফলাফল নয়? মানুষ আজ যেমন, তেমন তারা হয়েছে শুধুমাত্র প্রধান দেবদূত ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল এবং মানবতাকে ভ্রষ্ট করেছিল বলেই। এই পর্যায়ক্রমিক কাজ মানুষ যেমন কল্পনা করতে তেমন বিমূর্ত এবং সহজ একেবারেই নয়। শয়তান তার বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল এক বিশেষ কারণে, যদিও মানুষ এত সহজ এই সত্যটি বুঝতে অক্ষম। কেন ঈশ্বর, যিনি স্বর্গ, পৃথিবী এবং সমস্তকিছু সৃষ্টি করেছিলেন, তিনি শয়তানকেও সৃষ্টি করলেন? ঈশ্বর যখন শয়তানকে এতই ঘৃণা করেন, এবং শয়তান যখন তাঁর শত্রু, তাহলে তিনি কেন তবুও শয়তানকে সৃষ্টি করলেন? শয়তানকে সৃষ্টি করার মাধ্যমে কি তিনি একজন শত্রুকে সৃষ্টি করলেন না? ঈশ্বর আসলে শত্রু সৃষ্টি করেন নি; বরং তিনি একজন দেবদূত সৃষ্টি করেছিলেন, এবং পরবর্তীতে সেই দেবদূত তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। তার মর্যাদা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে সে ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চেয়েছিল। কেউ বলতে পারে যে এটি একটি কাকতালীয় ঘটনা, কিন্তু এমন অবধারিত ভাবে হতই। এটি ঠিক তেমনই, যেমন একজন মানুষ একটি চূড়ান্ত পর্যায় অবধি বিকশিত হবার পরে মৃত্যুবরণ করবে; বিষয়গুলি এই স্তর পর্যন্ত বিকশিত হয়েছে। কিছু উদ্ভট মূর্খ বলে, “শয়তান যখন আপনার শত্রু তখন কেন আপনি তাকে সৃষ্টি করলেন? আপনি কি জানতেন না যে প্রধান দেবদূত আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে? আপনি কি অনাদি থেকে অনন্তকাল দেখতে পান না? আপনি কি প্রধান দেবদূতের প্রকৃতি জানতেন না? যখন আপনি স্পষ্টতই জানতেন যে সে আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে, তখন কেন আপনি তাকে প্রধান দেবদূত করলেন? সে শুধু আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতাই করে নি, বরং অন্যান্য দেবদূতদেরকেও চালিত করেছিল, এবং মর্ত্যের পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছিল মানবতাকে ভ্রষ্ট করার জন্য, এবং আজ অবধিও আপনি ছয় হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা শেষ করতে পারেননি”। সেইসব কথা কি সত্য? তুমি যখন এইভাবে ভাবছ, তখন কি তুমি নিজেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সমস্যার মধ্যে ফেলছ না? অপরদিকে, কিছু মানুষ এইকথা বলেন, “যদি শয়তান আজকের দিন অবধি মানুষকে ভ্রষ্ট না করত, ঈশ্বর মানুষকে এইভাবে পরিত্রাণ করতে পারতেন না। অর্থাৎ, ঈশ্বরের প্রজ্ঞা এবং সর্বশক্তিমানতা অদৃশ্য হয়ে পড়ত; তাঁর প্রজ্ঞা কোথায় প্রকাশিত হত? সেজন্যই, ঈশ্বর শয়তানের জন্য একটি মানবজাতি সৃষ্টি করলেন, যাতে তিনি পরবর্তীতে তাঁর প্রজ্ঞা প্রকাশ করতে পারেন—নচেৎ মানুষ কীভাবে ঈশ্বরের প্রজ্ঞা আবিষ্কার করতে পারত? যদি মানুষ ঈশ্বরকে প্রতিরোধ না করত, এবং তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করত তাহলে তাঁর কাজ প্রকাশ করা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ত। যদি সমস্ত সৃষ্টি তাঁর উপাসনা করত এবং তাঁর প্রতি সমর্পিত হত, ঈশ্বরের করণীয় কিছুই থাকত না”। এটা বাস্তবতা থেকে আরো অনেক দূরে, কারণ ঈশ্বরের সম্পর্কে অশুচি কিছু থাকতে পারে না, তাই তিনি অশুচি সৃষ্টি করতে পারেন না। তিনি এখন শুধুমাত্র তাঁর শত্রুকে পরাজিত করার জন্য, তাঁর তৈরি করা মানুষকে বাঁচানোর জন্য, এবং যারা ঈশ্বরকে ঘৃণা করে, বিশ্বাসঘাতকতা করে, এবং প্রতিহত করে, এবং যারা আদিতে তাঁরই আধিপত্যের অধীনে ছিল এবং একান্তভাবে তাঁরই ছিল, সেইসব দানব ও শয়তানকে পরাস্ত করার জন্য তাঁর ক্রিয়াকলাপগুলি প্রকাশ করেন। ঈশ্বর এই দানবদের পরাজিত করতে চান, এবং তা করার মাধ্যমে সমস্ত কিছুর কাছে তাঁর সর্বশক্তিমানতা প্রকাশ করতে চান। মানবজাতি এবং পৃথিবীর সমস্ত কিছু বর্তমানে শয়তানের এবং দুষ্টের আধিপত্যের অধীনে রয়েছে। ঈশ্বর তাঁর ক্রিয়াকলাপ সমস্ত কিছুর কাছে প্রকাশ করতে চান যাতে মানুষ তাঁকে জানতে পারে, এবং যার ফলে তিনি শয়তানকে এবং শত্রুদেরকে পরাজিত করতে পারেন। তাঁর কাজের সম্পূর্ণতা তাঁর কাজ প্রকাশের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তাঁর সমস্ত সৃষ্টি শয়তানের আধিপত্যের অধীনে রয়েছে, তাই ঈশ্বর শয়তানকে পরাস্ত করে তাঁর সর্বশক্তিমানতা তাদের কাছে প্রকাশ করতে চান। যদি শয়তান না থাকত, তাহলে তাঁকে তাঁর কাজ প্রকাশ করতে হত না। শয়তানের হয়রানি না থাকলে, ঈশ্বর মানব সৃষ্টি করতেন এবং তাদের এদন উদ্যানে বসবাস করতে দিতেন। শয়তানের বিশ্বাসঘাতকতার আগে কেন ঈশ্বর কখনো দেবদূতদের কাছে এবং প্রধান দেবদূতের কাছে তাঁর সকল কর্ম প্রকাশ করেন নি? যদি শুরুতেই সমস্ত দেবদূত এবং প্রধান দেবদূত ঈশ্বরকে জানত এবং তাঁর প্রতি সমর্পিত হত, তাহলে ঈশ্বর সেই অর্থহীন কাজগুলি করতেনই না। শয়তান ও দানবদের উপস্থিতির কারণে, মানুষও ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করেছে, এবং তারা অবাধ্য স্বভাবে টৈটম্বুর। তাই ঈশ্বর তাঁর কাজ প্রকাশ করতে চান। যেহেতু তিনি শয়তানের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চান, তাই তাঁকে অবশ্যই তাঁর নিজ কর্তৃত্ব এবং কাজ ব্যবহার করেই শয়তানকে পরাস্ত করতে হবে; এইভাবেই, মানুষের মধ্যে যে পরিত্রাণের কাজ তিনি করেন, তা মানুষকে ঈশ্বরের প্রজ্ঞা এবং সর্বশক্তিমানতা প্রত্যক্ষ করার অনুমতি দেবে। বর্তমানে, ঈশ্বর যে কাজ করছেন তা অর্থপূর্ণ, এবং কোনোভাবেই এর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ নয় যখন লোকে বলে, “আপনি যে কাজ করছেন তা কি স্ববিরোধী নয়? এই ধারাবাহিক কাজ কি নিজের জন্য যন্ত্রণার অনুশীলন করা নয়? আপনি শয়তানকে সৃষ্টি করলেন এবং তারপর তাকে আপনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার এবং আপনাকে প্রতিহত করার অনুমতি দিলেন। আপনি মানুষ সৃষ্টি করলেন এবং তারপর তাঁদের শয়তানের কাছে হস্তান্তরিত করলেন, আদম ও হবাকে প্রলুব্ধ হতেও দিলেন। যেহেতু আপনি সমস্ত কাজ ইচ্ছাকৃতভাবে করেছেন, তাহলে আপনি কেন মানবজাতিকে ঘৃণা করেন? কেন আপনি শয়তানকে ঘৃণা করেন? এগুলি কি সবই আপনার নিজের নির্মাণ নয়? তাহলে এতে আপনার ঘৃণা করার কী আছে?” বেশ কিছু উদ্ভট লোক এমন বলে। তারা ঈশ্বরকে ভালোবাসতে চায়, কিন্তু অন্তরে তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। কী ভীষণ স্ববিরোধ! তুমি সত্য উপলব্ধি করতে পার না, তোমার অনেক বেশি অতিপ্রাকৃতিক চিন্তাভাবনা রয়েছে, এমনকি তুমি এমনও দাবি করো যে ঈশ্বর ভুল করেছেন—কী উদ্ভট তুমি! আসলে তুমি সত্য নিয়ে খেলা করছ; ব্যপারটা এমন নয় যে ঈশ্বর ভুল করেছেন! কিছু মানুষ বারংবার অভিযোগ করেন, “আপনিই শয়তানের সৃষ্টি করেছেন, এবং আপনিই শয়তানকে মানুষের মধ্যে নামিয়ে এনেছেন এবং তাদের শয়তানের কাছে হস্তান্তরিত করেছেন। একবার যখন মানুষ শয়তানোচিত স্বভাব ধারণ করল, তখন আপনি তাদের ক্ষমা করলেন না; অপরদিকে আপনি তাদের একটি নিশ্চিত মাত্রায় ঘৃণা করলেন। প্রথমে আপনি তাদের একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ভালোবাসলেন, কিন্তু বর্তমানে আপনি তাদের ঘৃণা করেন। আপনি মানবজাতিকে ঘৃণা করেন, অথচ আপনিই সেই একজন যিনি মানবজাতিকে ভালোবেসেছেন। এখানে ঠিক কী হচ্ছে? এটা কি একটি স্ববিরোধ নয়?” তোমরা যেভাবেই বিষয়কে দেখো না কেন, স্বর্গে আসলে এমনটাই ঘটেছিল; এইভাবেই প্রধান দেবদূত ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল এবং মানবজাতি ভ্রষ্ট হয়েছিল, এবং এইভাবেই মানবজাতি আজকের দিন পর্যন্ত চালিয়ে গিয়েছে। তোমরা যেভাবেই বিষয়টিকে ব্যক্ত করো না কেন, এই-ই হল সম্পূর্ণ কাহিনী। যাইহোক, তোমদের অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে, যে, ঈশ্বর আজ যে কর্ম করছেন তার মূল নিহিত উদ্দেশ্য হল তোমাদের উদ্ধার করা এবং শয়তানকে পরাজিত করা।
যেহেতু, দেবদূতরা বিশেষভাবে দুর্বল ছিল এবং তাদের বলার মতো কোনোই ক্ষমতাই ছিল না, তাই কর্তৃত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা অহংকারী হয়ে ওঠে। তা প্রধান দেবদূতের জন্য বিশেষভাবে সত্য, যার অবস্থান বাকি অন্য দেবদূতদের থেকে উচ্চতর ছিল। দেবদূতদের মধ্যে একজন রাজা হিসাবে, যে তাদের লক্ষ লক্ষ জনকে নেতৃত্ব দিয়েছিল, এবং যিহোবার অধীনে তার কর্তৃত্ব অন্য সব দেবদূতদের ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সে নানা কিছু করতে চেয়েছিল এবং পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেবদূতদের মানুষের মধ্যে নিয়ে যেতে চেয়েছিল। ঈশ্বর বলেছিলেন তিনিই সেই একজন যিনি ব্রহ্মাণ্ডের কর্তৃত্বে রয়েছেন; কিন্তু প্রধান দেবদূত দাবি করেছিল যে, সে-ই এই ব্রহ্মাণ্ডের কর্তৃত্বের অধিকারী—এরপর থেকেই, প্রধান দেবদূত ঈশ্বরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ঈশ্বর স্বর্গে অন্য একটি দুনিয়া সৃষ্টি করেছিলেন, এবং প্রধান দেবদূত সেই দুনিয়ার নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল এবং, মর্ত্যে অবতীর্ণও হতে চেয়েছিল। ঈশ্বর কি তা হওয়ার অনুমতি দিতে পারতেন? ফলত, তিনি প্রধান দেবদূতকে আঘাত করলেন, এবং তাকে মধ্য আকাশে নিক্ষেপ করলেন। যখন থেকে সে মানুষকে ভ্রষ্ট করেছে, ঈশ্বর তাদের উদ্ধার করার জন্য প্রধান দেবদূতের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন; তিনি এই ছয় হাজার বছরকে তার পরাজয়ের জন্য ব্যবহার করেছেন। একজন সর্বশক্তিমান ঈশ্বর সম্পর্কে তোমাদের যে ধারণা, তার সঙ্গে ঈশ্বর বর্তমানে যে কাজ সম্পাদনা করছেন, তা সম্পূর্ণ অসঙ্গত; তোমাদের ধারণা সম্পূর্ণত অবাস্তব এবং একটি বিষম ভ্রান্তি! আসলে, প্রধান দেবদূতের বিশ্বাসঘাতকতার পরেই ঈশ্বর তাকে তাঁর শত্রু হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। কেবলমাত্র তার বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই প্রধান দেবদূত মর্ত্যলোকে এসে মানবতাকে পদদলিত করেছিল, এবং এই কারণেই মানবজাতি এই পর্যন্ত বিকশিত হয়েছে। এমন হওয়ার পর, ঈশ্বর শয়তানের প্রতি অঙ্গীকার করেছিলেন, “আমি তোমায় পরাজিত করব এবং আমার সৃষ্ট সমস্ত মানুষকে পরিত্রাণ করব”। প্রথমে অবিশ্বাসী হয়ে শয়তান উত্তর দিয়েছিল, “সত্যি সত্যি আপনি আমার সঙ্গে কী করতে পারেন? সত্যিই কি আপনি আমায় মধ্য আকাশে নিক্ষেপ করতে পারেন? আপনি কি সত্যিই আমায় পরাজিত করতে পারেন?” ঈশ্বর তাকে মধ্য আকাশে নিক্ষেপ করার পরে তিনি প্রধান দেবদূতের প্রতি আর মনোযোগ দেন নি, এবং তারপর শয়তানের চলমান অশান্তি সত্ত্বেও মানবজাতির উদ্ধারের উদ্দেশ্যে নিজের কাজ সম্পন্ন করতে শুরু করেন। শয়তান এটা-ওটা করতে সক্ষম ছিল ঠিকই, কিন্তু তা পূর্ণতই ঈশ্বর তাকে পূর্বে যে ক্ষমতা দিয়েছিলেন তার কারণে; সে সেগুলিকেমধ্য আকাশে নিয়ে গিয়েছিল, এবং তারা আজ অবধি সেখানেই রয়েছে। প্রধান দেবদূতকে মধ্য আকাশে নিক্ষেপ করার সময়ে, ঈশ্বর তার কর্তৃত্ব ফিরিয়ে নেন নি, এবং তাই শয়তান মানবজাতিকে ভ্রষ্ট করা চালিয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে, মানবজাতি—যাকে শয়তান সৃষ্টির কিছু পরেই ভ্রষ্ট করেছিল—তা উদ্ধারের কাজ শুরু করেছিলেন ঈশ্বর। স্বর্গে থাকাকালীন ঈশ্বর তাঁর কাজ প্রকাশ করেন নি; তবে, পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে, স্বর্গে তিনি যে জগৎ সৃষ্টি করেছিলেন সেখানকার মানুষদের তিনি তাঁর কার্য প্রত্যক্ষ করার অনুমতি দিয়েছিলেন, এইভাবে স্বর্গের সেই মানুষদের পথপ্রদর্শন করেছিলেন। তিনি তাদের বুদ্ধিমত্তা এবং প্রজ্ঞা দিয়েছিলেন, এবং সেই লোকেদের পৃথিবীতে থাকার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। স্বভাবতই, তোমাদের মধ্যে কেউই এই কথা আগে শোনো নি। পরবর্তীতে, ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করার পরে প্রধান দেবদূত তাদের ভ্রষ্ট করতে শুরু করেছিল; পৃথিবীতে সমগ্র মানবজাতি বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়েছিল। ঠিক সেইসময়ই, ঈশ্বর শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরম্ভ করেন, এবং সেইসময়েই, মানুষ তাঁর কাজ দেখতে শুরু করেছিল। আদিতে এই ধরনের কাজ মানুষের থেকে গোপন রাখা হত। শয়তানকে মধ্য আকাশে নিক্ষেপ করার পরে সে তার নিজের কাজ করেছিল, এবং ঈশ্বর তাঁর নিজের কাজ—একেবারে অন্তিম সময় পর্যন্ত শয়তানের বিরুদ্ধে ক্রমাগত যুদ্ধ করা—চালিয়ে গিয়েছিলেন। এখন হল সেই সময়, যখন শয়তানের ধ্বংস হওয়া উচিত। আদিতে ঈশ্বর তাকে কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন, এবং পরবর্তীতে তিনি তাকে মধ্য আকাশে নিক্ষেপ করেছিলেন, তবুও সে বেপরোয়া ছিল। এরপরে, সে পৃথিবীতে মানবজাতিকে ভ্রষ্ট করে, কিন্তু ঈশ্বর সেখানে মানবজাতিকে পরিচালনা করছিলেন। ঈশ্বর তাঁর মানবজাতির পরিচালনা শয়তানকে পরাস্ত করতে ব্যবহার করেন। মানুষকে ভ্রষ্ট করার মাধ্যমে, শয়তান তাদের নিয়তিকে শেষ করে দেয়, এবং ঈশ্বরের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, ঈশ্বরের কাজ হল মানুষের পরিত্রাণ। ঈশ্বরের কোন পদক্ষেপটি মানবজাতির রক্ষার কথা বলে না? কোন পদক্ষেপ মানুষকে পরিশুদ্ধ করার জন্য নয়, এবং তাদের ধার্মিক আচরণ করার জন্য নয়, এবং ভালোবাসা যায় এমন এক প্রতিমূর্তি যাপন করার জন্য নয়? শয়তান কিন্তু তা করে না। সে মানবজাতিকে ভ্রষ্ট করে; সে ক্রমাগত সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে মানবজাতিকে ভ্রষ্ট করার কাজটি চালিয়ে যায়। অবশ্যই, ঈশ্বরও তাঁর নিজের কাজ করেন, শয়তানকে কোনোরকম মনোযোগ না দিয়েই। শয়তানের যতই কর্তৃত্ব থাকুক না কেন, সেই কর্তৃত্বও ঈশ্বরই তাকে দিয়েছেন; আসলে ঈশ্বর তাকে তাঁর সমস্ত কর্তৃত্ব দেন নি, তাই শয়তান যাই করুক না কেন, সে কখনোই ঈশ্বরকে অতিক্রম করতে পারবে না, এবং সর্বদা ঈশ্বরের মুঠোর মধ্যেই থাকবে। ঈশ্বর স্বর্গে থাকাকালীন তাঁর কোনো কাজই প্রকাশ করেন নি। তিনি কেবলমাত্র শয়তানকে তাঁর কর্তৃত্বের একটি ক্ষুদ্র অংশ দিয়েছিলেন, এবং সমস্ত দেবদূতদের নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। অতএব, শয়তান যাই করুক কেন, সে কখনোই ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে অতিক্রম করতে পারবে না, কারণ ঈশ্বর তাকে আদতে যে কর্তৃত্ব প্রদান করেছিলেন তা সীমিত। ঈশ্বর যেমন কাজ করেন, শয়তান তেমন বিঘ্ন ঘটায়। অন্তিম সময়ে এই বিঘ্নের অন্ত; একইভাবে, ঈশ্বরের কাজও শেষ হবে, এবং ঈশ্বর যে ধরণের মানুষষকে সম্পূর্ণ করে তুলতে চান, সেই কাজও সম্পন্ন হবে। ঈশ্বর মানুষকে ইতিবাচকতার নির্দেশ দেন; তাঁর জীবন যেন জীবন্ত জলরাশি, অপরিমেয় এবং সীমাহীন। শয়তান মানুষকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ভ্রষ্ট করেছিল; শেষ পর্যন্ত, জীবনের জীবন্ত জলরাশিই মানুষকে সম্পূর্ণ করবে, এবং শয়তানের পক্ষে হস্তক্ষেপ করা এবং কাজ সম্পন্ন করা অসম্ভব হবে। এভাবেই, ঈশ্বর এই মানুষগুলিকে সম্পূর্ণরূপে লাভ করতে সক্ষম হবেন। এমনকি শয়তান এখনো এটা মানতে অস্বীকার করে; সে ক্রমাগত ঈশ্বরের বিরুদ্ধতা করে কিন্তু তিনি কোনো মনোযোগ দেন না। ঈশ্বর বলেছেন, “আমি শয়তানের সমস্ত অপশক্তি এবং অপপ্রভাবের বিরুদ্ধে জয়ী হবো”। এই কাজটি দেহরূপ ধারণ করে করতে হবে, এবং এটি দেহরূপ ধারণ করাকেও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে: অর্থাৎ, অন্তিম সময়ে শয়তানকে পরাজিত করার কাজটি সম্পন্ন করা, এবং শয়তানের সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলা। শয়তানের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের জয় অনিবার্য! প্রকৃতপক্ষে, শয়তান বহুদিন আগেই পরাস্ত হয়েছিল। যখন অতিকায় লাল ড্রাগনের দেশে সুসমাচার ছড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করেছিল—অর্থাৎ, যখন ঈশ্বরের অবতার তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন, এবং এই কাজটি গতিশীল হয়েছিল—তখন শয়তান সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়েছিল, কারণ অবতারের উদ্দেশ্য ছিল শয়তানকে পরাজিত করা। যখনই শয়তান দেখল যে ঈশ্বর পুনরায় দেহধারণ করেছেন এবং তাঁর কাজ সম্পাদনা শুরু করেছেন, যাকে কোনো শক্তিই থামাতে পারবে না, তখন সে এই কাজ দেখে হতবাক হয়ে গেল, এবং আর কোনো অশিষ্টতা করতে সাহস পেল না। প্রথমে শয়তান ভেবেছিল যে, সেও প্রভূত প্রজ্ঞার অধিকারী, এবং সে ঈশ্বরের ক্রিয়াকলাপে বিঘ্ন সৃষ্টি করে ও হেনস্থা করে; কিন্তু সে আশা করে নি যে ঈশ্বর পুনরায় দেহধারণ করবেন, বা তাঁর কাজ করবেন, অথবা ঈশ্বর শয়তানের বিদ্রোহকে মানবজাতির জন্য একটি উদ্ঘাটন এবং বিচার হিসেবে ব্যবহার করবেন, যার ফলে মানুষকে জয় করা যাবে এবং শয়তানকে পরাজিত করা যাবে। ঈশ্বর শয়তানের চেয়ে বেশি জ্ঞানী, এবং তাঁর কাজ তাকে বহুদূরে ছাপিয়ে যায়। অতএব, আমি যেমন পূর্বে বলেছি, “আমি যা কাজ সম্পন্ন করি তা শয়তানের চক্রান্তের প্রতিক্রিয়া; শেষে আমি আমার সর্বশক্তিমানতা এবং শয়তানের শক্তিহীনতা প্রকাশ করব”। ঈশ্বর তাঁর কাজ করবেন পুরোভাগ থেকে, যেখানে শয়তান পিছিয়ে যাবে, যতক্ষণ না শেষে সে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়—এমনকি সে জানতেও পারবে না যে কী তাকে আঘাত করল! সম্পূর্ণভাবে ভেঙে চুরমার হয়ে গেলে তবেই সে এই সত্যটি উপলব্ধি করবে, এবং ততক্ষণে সে অগ্নির হ্রদে ভস্মীভূত হবে। তখন কি সে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হবে না? শয়তানের কাছে আর নিয়োগ করার মতো কোনো পরিকল্পনা থাকবে না!
এটি সেই ধাপে ধাপে করা বাস্তবসম্মত কাজ, যা প্রায়শই ঈশ্বরের হৃদয়কে মানবজাতির জন্য দুঃখে ভারাক্রান্ত করে তোলে, তাই শয়তানের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ ছয় হাজার বছর চলেছিল, এবং ঈশ্বর বলেছিলেন, “আমি আর কখনো মানবজাতির সৃষ্টি করব না, দেবদূতদের কর্তৃত্বও প্রদান করব না”। তারপর থেকে, যখন দেবদূতেরা পৃথিবীতে এসেছিল, তখন তারা শুধুমাত্র ঈশ্বরের কিছু কাজ অনুসরণ করেছে; তিনি তাদের আর কখনো কোনো কর্তৃত্ব দেন নি। ইস্রায়েলীরা যে দেবদূতদের দেখেছিল তারা কীভাবে তাদের কাজ সম্পন্ন করেছিল? তারা স্বপ্নে নিজেদের প্রকাশ করেছিল এবং যিহোবার কথাগুলি জানিয়েছিল। যখন যীশু ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার তিনদিন পরে পুনর্জীবিত হলেন, তখন দেবদূতেরাই পাথরটিকে পাশে ঠেলে সরিয়েছিল; ঈশ্বরের আত্মা সেই কাজটি ব্যক্তিগতভাবে করেন নি। দেবদূতেরা শুধুমাত্র এই ধরনের কাজ করেছিল; তারা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল, কিন্তু তাদের কোনো কর্তৃত্ব ছিল না, কারণ ঈশ্বর তাদের উপর আর কোনো কর্তৃত্ব প্রদান করবেন না। কিছুদিন কাজ করার পরে, পৃথিবীতে যাদেরকে ঈশ্বরকে ব্যবহার করেছিলেন, তারা ঈশ্বরের অবস্থান গ্রহণ করেছিল এবং বলেছিল, “আমি মহাবিশ্বকে অতিক্রম করতে চাই! আমি তৃতীয় স্বর্গে দাঁড়াতে চাই! আমরা সার্বভৌম ক্ষমতার রাশ ধরতে চাই!” তারা অনেকদিন কাজ করার পরে অহংকারী হয়ে উঠেছিল; তারা পৃথিবীতে সার্বভৌম কর্তৃত্বের অধিকারী হতে, অন্য জাতি প্রতিষ্ঠা করতে, সকল কিছুকে পদাবনত করতে, এবং তৃতীয় স্বর্গে দাঁড়াতে চেয়েছিল। তুমি কি জানো না যে তুমি ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত নিতান্ত একজন মানুষ? তুমি কী করে তৃতীয় স্বর্গে আরোহণ করতে পারো? ঈশ্বর পৃথিবীতে নীরবে এবং চিৎকার না করে কাজ করতে আসেন, এবং তারপর চুপিসারে তাঁর কাজ শেষ করে চলে যান। তিনি কখনোই মানুষের মতো চিৎকার করেন না, বরং তাঁর কাজ সম্পাদনে তিনি বাস্তববাদী। কিংবা তিনি কখনোই গির্জায় প্রবেশ করে ঘোষণা করেন না, “আমি তোমাদের সকলকে মুছে ফেলব! আমি তোমাদের অভিশাপ এবং শাস্তি দেব!” তিনি শুধুমাত্র তাঁর কাজ চালিয়ে যান, এবং শেষ হবার পরে চলে যান। যেসব ধর্মীয় যাজকেরা অসুস্থদের শুশ্রূষা করে এবং অপদেবতাদের নির্মূল করে, মঞ্চে দাঁড়িয়ে অন্যদের ভাষণ দেয়, দীর্ঘ এবং আড়ম্বরপূর্ণ বক্তৃতা দেয়, অবাস্তব বিষয়ে আলোচনা করে, তারা সবাই অন্তর থেকে অহংকারী! তারা কিন্তু প্রধান দেবদূতেরই বংশধর!
বর্তমান দিন পর্যন্ত নিজের ছয় হাজার বছরের কাজ সম্পন্ন করার পরে, ঈশ্বর ইতিমধ্যেই তাঁর অনেক কাজ প্রকাশ করেছেন, যার প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল শয়তানকে পরাজিত করা এবং মানবজাতির পরিত্রাণ করা। তিনি এই সুযোগটি ব্যবহার করছেন, যাতে স্বর্গে, পৃথিবীতে, সমুদ্রের ভিতরে, এবং ঈশ্বরের প্রতিটি সৃষ্টি যেন তাঁর এই সর্বশক্তিমানতা দেখতে পায় ও তাঁর কাজের সাক্ষী হতে পারে। তিনি শয়তানের পরাজয়ের দ্বারা প্রদত্ত সুযোগটি কাজে লাগিয়ে মানুষের কাছে তাঁর সমস্ত কাজ প্রকাশ করছেন, এবং তাঁদেরকে তাঁর প্রশংসা করতে ও শয়তানকে পরাজিত করার জন্য তাঁর প্রজ্ঞাকে উন্নত করতে সক্ষম করছেন। পৃথিবীতে, স্বর্গে, সমুদ্রের অভ্যন্তরে সমস্ত কিছু ঈশ্বরের গৌরব নিয়ে আসে, তাঁর সর্বশক্তিমানতার প্রশংসা করে, তাঁর প্রত্যেকটি কাজের প্রশংসা করে, এবং তাঁর পবিত্র নামের জয়ধ্বনি করে। এ-ই তাঁর শয়তানকে পরাজিত করার প্রমাণ; এই-ই তাঁর শয়তানকে পরাস্ত করার প্রমাণ। আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, এ-ই হল মানবজাতির প্রতি তাঁর পরিত্রাণ। ঈশ্বরের সমগ্র সৃষ্টি তাঁর জন্য গৌরব বহন করে আনে, শত্রুদের পরাজিত করার জন্য এবং শত্রুকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসার জন্য প্রশংসা করে, এবং তাঁকে মহান বিজয়ী রাজা বলে স্তুতি করে। তাঁর উদ্দেশ্য কেবলমাত্র শয়তানকে পরাজিত করা নয়, যে কারণে তাঁর কাজ ছয় হাজার বছর ধরে অব্যাহত আছে। তিনি শয়তানের পরাজয়কে মানবজাতির উদ্ধারেরর জন্য ব্যবহার করেন; তিনি শয়তানের পরাজয়কে তাঁর সমস্ত ক্রিয়াকলাপ এবং গৌরব প্রকাশের জন্য ব্যবহার করেন। তিনি গৌরব অর্জন করবেন, আর বহুসংখ্যক দেবদূত তাঁর সকল গৌরব প্রত্যক্ষ করবে। স্বর্গের দূতেরা, পৃথিবীতে মানুষেরা, সৃষ্টির সমস্ত কিছু সৃষ্টিকর্তার গৌরব প্রত্যক্ষ করবে। তিনি এই কাজই করেন। স্বর্গে এবং পৃথিবীতে তাঁর সৃষ্টি তাঁর গৌরব প্রত্যক্ষ করবে, এবং তিনি শয়তানকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে ফিরে আসবেন এবং মানবজাতিকে তাঁর প্রশংসা করার অনুমতি দেবেন, এইভাবে তিনি তাঁর কাজে দ্বিগুণ বিজয় অর্জন করবেন। পরিশেষে, সমগ্র মানবজাতি তাঁর দ্বারা বিজিত হবে, এবং যে বিদ্রোহ বা প্রতিরোধ করবে তিনি তাকেই নিশ্চিহ্ন করবেন; অন্য কথায়, যারা শয়তানের অন্তর্গত তাদের সবাইকে নিশ্চিহ্ন করবেন। তুমি বর্তমানে ঈশ্বরের অনেক ক্রিয়া প্রত্যক্ষ করছ, তাও তুমি এখনো প্রতিরোধ করো, এখনো তুমি অবাধ্য, এবং এখনো সমর্পণ করো না; তুমি তোমার মধ্যে অনেক কিছুকে জায়গা দাও এবং তোমার যা ইচ্ছা তাই করো। তুমি তোমার ব্যক্তিগত লালসা এবং পছন্দ অনুসরণ করো; এই সবই অবাধ্য চিন্তাধারা এবং প্রতিরোধ। দৈহিক ইচ্ছা তথা লালসা চরিতার্থ করার স্বার্থে, সেই সঙ্গে নিজের পছন্দের সঙ্গে মেটানোর উদ্দেশ্যে, অথবা বিশ্বচরাচরের বা শয়তানের স্বার্থে ঈশ্বরে বিশ্বাস করা হল অশুচি; তা প্রকৃতিগতভাবে প্রতিরোধী এবং বিদ্রোহী। বর্তমানে, নানা ধরনের বিশ্বাস রয়েছে: কেউ বিপর্যয়ে আশ্রয় খোঁজে, আবার কেউ আশীর্বাদ চায়; কেউ চায় রহস্য অনুধাবন করতে, আবার কেউ বা চায় অর্থ। এইসকলই প্রতিরোধের রূপ এবং এই সকলই ধর্মনিন্দা! কেউ প্রতিরোধ বা বিদ্রোহ করে—এমন বলা কি এই ধরণের আচরণের উল্লেখ করে না? আজকের দিনে বহু মানুষ অনুযোগ, অভিযোগ, অথবা বিচার করে। এইসব কাজ দুষ্টের দ্বারা সাধিত; সেগুলি মানুষের প্রতিরোধ এবং অবাধ্যতার উদাহরণ। এই মানুষেরা শয়তানের দ্বারা আবিষ্ট এবং অধিকৃত। ঈশ্বর তাদেরকেই অর্জন করেন, যারা তাঁর কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে; তারা এমন লোক যারা শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হয়েছে কিন্তু ঈশ্বরের বর্তমান কাজের দ্বারা উদ্ধার পেয়েছে তথা বিজিত হয়েছে, যারা ক্লেশ সহন করেছে, এবং যারা, পরিশেষে, ঈশ্বরের দ্বারা সম্পূর্ণরূপে প্রাপ্ত হয়েছে, যারা আর শয়তানের আধিপত্যের অধীনে থাকে না, যারা ন্যায়বিহীনতা থেকে মুক্ত, এবং যারা পবিত্রতা বজায় রাখতে ইচ্ছুক—তারাই সবচেয়ে পবিত্র; তারা প্রকৃতপক্ষেই পবিত্র ব্যক্তি। যদি তোমার বর্তমান কর্মগুলি ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তার একটি অংশের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ না নয়, তাহলে তুমি অপসারিত হবে। এটি অবিসংবাদিত। সবকিছুই বর্তমানে কী ঘটছে তার উপরে নির্ভর করে; এবং যদিও তুমি পূর্বনির্ধারিত এবং নির্বাচিত, তবুও, তোমার আজকের কর্মই তোমার পরিণাম নির্ধারণ করবে। তুমি যদি এখন অগ্রসর হওয়া বজায় রাখতে না পারো, তবে তোমাকে পরিহার করা হবে। তুমি যদি এখন অগ্রসর হওয়া বজায় রাখতে না পারো, তাহলে তুমি কীভাবে ভবিষ্যতে তা বজায় রাখবে? এত বড় অলৌকিক ঘটনা তোমার সামনে রয়েছে, তবুও তুমি বিশ্বাস করো না। তাহলে তুমি কীভাবে পরবর্তীতে ঈশ্বরে বিশ্বাস করবে, যখন তিনি সমস্ত কাজ শেষ করে ফেলবেন, এবং আর কোন কাজ করবেন না? তখন তোমার পক্ষে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা আরো অসম্ভব হয়ে পড়বে! পরবর্তীতে, ঈশ্বর তোমার মনোভাব, ঈশ্বরের অবতারের কাজ সম্পর্কে তোমার জ্ঞান, এবং তোমার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নির্ধারণ করবেন যে তুমি পাপী না ধার্মিক, বা তোমাকে নিখুঁত করে তোলা হয়েছে, না কি বহিষ্কার করা হয়েছে। তোমাকে এখন অবশ্যই স্পষ্টভাবে দেখতে হবে। পবিত্র আত্মা এইভাবে কাজ করেন: তিনি তোমার আজকের আচরণের উপরে ভিত্তি করে তোমার পরিণাম নির্ধারণ করেন। কে আজকের বাক্য বলেন? কে আজকের কাজ করেন? আজ এই সিদ্ধান্ত কে গ্রহণ করেন যে তোমাকে বহিষ্কার করা হবে? কে তোমাকে নিখুঁত করার সিদ্ধান্ত নেন? তা কি আমারই কাজ নয়? আমিই সেই, যে এই বাক্যগুলি বলছে; আমিই তিনি, যিনি এই কাজগুলি নির্বাহ করেন। অভিশাপ দেওয়া, শাস্তি দেওয়া, এবং মানুষের বিচার করা সবটাই আমার কাজের অংশ। শেষে, তোমাকে বহিষ্কার করাও আমার হাতে। এই সবই আমার কাজ! তোমাকে ত্রুটিমুক্ত করা, তোমাকে আশীর্বাদে ধন্য করা আমার কাজ! এই সব কাজই আমি করি। তোমার পরিণাম যিহোবার দ্বারা পূর্বনির্ধারিত ছিল না; তা আজকের ঈশ্বর দ্বারা নির্ধারিত হচ্ছে। তা এখনই নির্ধারিত হচ্ছে, তা একেবারেই পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে বহুকাল আগে নির্ণীত হয় নি। কিছু উদ্ভট মানুষ বলেন, “সম্ভবত আপনার চোখে কিছু সমস্যা হয়েছে, এবং আপনার আমাকে যেভাবে উচিত আপনি সেভাবে দেখছেন না। শেষ পর্যন্ত, আপনি শুধু তা-ই দেখবেন যা আত্মা প্রকাশ করেন!” যীশু মূলত যিহুদাকে তাঁর শিষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। মানুষ প্রশ্ন করে, “কী করে তিনি এমন একজনকে শিষ্য নির্বাচন করলেন, যে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে?” প্রথমে, যিহুদার যীশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার কোনো ইচ্ছা ছিল না; এটা শুধুমাত্র পরবর্তীতে ঘটেছিল। সেই সময়ে যীশু যিহুদাকে সুনজরে দেখেছিলেন; তিনি তাকে তাঁর অনুসরণ করতে বাধ্য করেছিলেন, এবং তাকে আর্থিক বিষয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যীশু যদি জানতেন যে যিহুদা আর্থিক তছরূপ করবে, তাহলে তিনি কখনোই তাঁকে এই দায়িত্ব দিতেন না। এটা বলা যেতে পারে যে, যীশু আসলে জানতেন না এই মানুষটি কুটিল এবং প্রতারক, বা সে তার ভাইবোনদের ঠকাতে পারে। পরবর্তীতে, যিহুদা কিছু সময়ের জন্য যীশুকে অনুসরণ করার পরে যীশু তাকে তার ভাইবোনদের সঙ্গে এবং ঈশ্বরের সঙ্গে অসততা করতে দেখেন। লোকজন এটাও আবিষ্কার করেছিল যে যিহুদার অর্থ অপহরণের প্রবণতা ছিল, এবং তারপর তারা সেটা যীশুকে বলেছিল। তখনই যীশু জানতে পেরেছিলেন যে কী হচ্ছে। যেহেতু যীশুকে ক্রুশারোহণের কাজটি করতে হত এবং তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য কারোর প্রয়োজন ছিল, এবং যেহেতু যিহুদা এই ভূমিকা পালন করার জন্য সঠিক ছিল, তাই যীশু বলেছিলেন, “আমাদের মধ্যে একজন থাকবে যে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। মনুষ্যপুত্র এই বিশ্বাসঘাতকতাকে ক্রুশারোহণের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন, এবং তিন দিন পরে পুনরুত্থিত হবেন”। সেইসময়ে, যীশু আসলে যিহুদাকে নির্বাচন করেন নি এই আশায় জ্যা, সে তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে; পক্ষান্তরে, তিনি আশা করেছিলেন, যিহুদা একজন অনুগত শিষ্য হবে। অপ্রত্যাশিতভাবে, যিহুদা একজন লোভী অধঃপতিত মানুষে পরিণত হয়, যে প্রভুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তাই যীশু সেই পরিস্থিতিকে ব্যবহার করেছিলেন যিহুদাকে এই কাজে নির্বাচন করার জন্য। যদি যীশুর বারোজন শিষ্যই অনুগত হত এবং তাদের মধ্যে কেউই যিহুদার মতো না হত, তাহলে শেষ পর্যন্ত, এমন কাউকে যীশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে হত, যে তাঁর শিষ্য নয়। তথাপি, সেই সময়ে শিষ্যদের মধ্যে একজন ছিল যে ঘুষ নিতে উৎসাহী ছিল: যিহুদা। তাই, যীশু তাঁর কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য যিহুদাকে ব্যবহার করলেন। কী সহজ ছিল তা! যীশু তাঁর কাজের শুরুতে এমন পূর্বনির্ধারিত করে রাখেন নি; যখন ঘটনাক্রম একটি বিশেষ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তখনই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্ত ছিল যীশুর, বলা যেতে পারে যে তা ছিল ঈশ্বরের আত্মার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। মূলত, যীশুই যিহুদাকে নির্বাচন করেছিলেন, পরে যখন যিহুদা যীশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তখন তা পবিত্র আত্মা তার নিজের উদ্দেশ্যপূরণের জন্যই করেছিল। পবিত্র আত্মার কাজ সেইসময় সম্পন্ন হয়েছিল। যখন যীশু যিহুদাকে নির্বাচিত করেছিলেন, তিনি জানতেন না যে যিহুদা তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। তিনি শুধু জানতেন যে, সে হল যিহুদা ইষ্করিয়োত। তোমাদের পরিণামও তোমাদের আজকের সমর্পণ এবং তোমাদের জীবনের বিকাশের স্তর অনুযায়ী নির্ধারিত, কখনোই তোমাদের পরিণাম, মানুষের যেমন ধারণা তা অনুযায়ী বিশ্বসৃষ্টির আগে থেকেই নির্ধারিত, এমন নয়। তোমায় এই বিষয়টির স্পষ্টত উপলব্ধি করতে হবে। এইসব কাজের কোনোটিই তোমার কল্পিত পদ্ধতিতে হয় না।