অভিধা ও পরিচয় সংক্রান্ত
তুমি যদি ঈশ্বরের ব্যবহারের উপযুক্ত হতে চাও, তাহলে তোমার অবশ্যই ঈশ্বরের কাজ, তাঁর পূর্বের (পুরাতন ও নতুন নিয়মে) করা কাজ, এবং, তদুপরি, তাঁর বর্তমানের কাজ সম্পর্কে জানা উচিত; অর্থাৎ, বলা হচ্ছে যে, ৬,০০০ বছর ধরে ঈশ্বর যে করা তিনটি পর্যায়ে কাজ করেছেন, সে সম্পর্কে তোমার অবশ্যই জানা উচিত। ঈশ্বরের কাজ না জানা থাকলে, তোমাকে সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ দিলেও তুমি তা করতে পারবে না। কেউ তোমাকে জিজ্ঞাসা করতে পারে যে, তোমাদের ঈশ্বর বাইবেল, পুরাতন নিয়ম এবং যীশুর সময়ের কাজ ও বাক্য সম্পর্কে কী বলেছে। তুমি তখন বাইবেলের অন্তর্নিহিত কাহিনী না বলতে পারলে, তারা সন্তুষ্ট হবে না। সেই সময়ে যীশু তাঁর শিষ্যদের পুরাতন নিয়মের অনেক কথাই বলেছিলেন। তারা পুরাতন নিয়মের থেকেই সমস্ত কিছু পড়েছিল; নতুন নিয়ম যীশুর ক্রুশবিদ্ধকরণের কয়েক দশক অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরে পরে লেখা হয়েছিল। সুসমাচার প্রচারের জন্য, তোমার প্রধানত বাইবেলের অন্তর্নিহিত সত্য, এবং ইস্রায়েলে করা ঈশ্বরের কাজ, যা যিহোবার মাধ্যমে কৃত, তা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত, এবং তোমায় যীশুর করা কাজও বুঝতে হবে। এই সমস্ত বিষয়েই মানুষ বেশি উদ্বিগ্ন, আর সেই দুটি পর্যায়ের কাজের অভ্যন্তরীণ কাহিনীর বিষয়ে তারা অবগত নয়। সুসমাচার প্রচারের সময়, সবার আগে পবিত্র আত্মার বর্তমানের কাজ বিষয়ক কথাবার্তা সরিয়ে রাখো। কাজের এই পর্যায়টি তাদের উপলব্ধি সীমার বাইরে, কারণ, তোমরা মহত্তম বিষয় অন্বেষণ করছ—ঈশ্বরের জ্ঞান, এবং পবিত্র আত্মার কাজের জ্ঞান—আর এই দুটি বিষয়ের থেকে সমুচ্চতর বস্তু আর নেই। তুমি যদি প্রথমেই মহৎ বিষয় নিয়ে বলতে শুরু করো, তাহলে কিন্তু তাদের পক্ষে তা অতিরিক্ত হয়ে যাবে, কারণ কেউই পবিত্র আত্মার এই ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করে নি; এর কোনো পূর্ব উদাহরণ নেই, আর মানুষের পক্ষে তা গ্রহণ করাও সহজ নয়। তাদের অভিজ্ঞতায় রয়েছে অতীতের কিছু পুরনো জিনিস, রয়েছে পবিত্র আত্মার সামান্য কিছু কাজ। তারা কিন্তু পবিত্র আত্মার বর্তমানের কাজ, অথবা ঈশ্বরের বর্তমানের ইচ্ছার অভিজ্ঞতা লাভ করে না। তারা নতুন আলো, নতুন বস্তু বিহনে, এখনো, পুরনো অভ্যাস অনুসারেই কাজ করে।
যীশুর যুগে, পবিত্র আত্মা যেখানে যীশুর মধ্যেই তার মূল কাজ করেছিল, সেখানে মন্দিরের যাজকীয় পোশাক পরা যিহোবার সেবাকারীরা অটল আনুগত্য সহকারে তা করেছিল। তাদের উপর পবিত্র আত্মা কাজ করলেও, তারা ঈশ্বরের বর্তমান ইচ্ছা অনুধাবন করতে পারে নি, তারা পুরনো অভ্যাস অনুসারে কেবল যিহোবার প্রতিই বিশ্বস্ত থেকে গিয়েছিল, এবং তাদের কোনো নতুন নির্দেশনা ছিল না। যীশু এসে নতুন কাজ করেছিলেন, কিন্তু তবুও মন্দিরের সেবাকারীদের কাছে না-ছিল নতুন নির্দেশনা, না-ছিল নতুন কাজ। মন্দিরে সেবার মাধ্যমে, তারা কেবল পুরনো অভ্যাসই ধরে রেখেছিল, আর মন্দির থেকে বেরিয়ে কোনোরকম নতুন কিছুতে প্রবেশে তারা নিতান্তই অক্ষম ছিল। যীশু সেই নতুন কাজ এনেছিলেন, এবং তিনি তাঁর কাজের জন্য মন্দিরে যান নি। কেবল মন্দিরের বাইরেই তিনি তাঁর কাজ করেছিলেন, কারণ ঈশ্বরের কাজের পরিসর বহু আগেই পরিবর্তিত হয়েছিল। তিনি মন্দিরের ভিতর কাজ করেন নি, এবং সেখানে ঈশ্বরের সেবা করার সময় মানুষেরা কেবলমাত্র সবকিছু যেমন রয়েছে তা বজায় রাখার জন্যই সেবা করত, এবং তারা কোনো নতুন কাজ প্রণয়ন করতে পারে নি। একইভাবে, বর্তমানের ধর্মীয় মানুষেরা এখনো বাইবেলের উপাসনা করে। তুমি যদি তাদের মধ্যে সুসমাচারের প্রচার করতে যাও, তারা তোমাকে বাইবেলের সামান্য খুঁটিনাটি জিনিস বলবে, তারা অনেক প্রমাণ খুঁজে পাবে, আর তোমাকে স্তব্ধ ও বাকরুদ্ধ করে দেবে; তারপর তারা তোমাকে চিহ্নিত করে ফেলবে, তোমাকে তোমার বিশ্বাসে মূর্খ বলে মনে করবে। তারা বলবে, “তুমি ঈশ্বরের বাক্যস্বরূপ বাইবেলটুকুও জানো না, তাহলে তুমি কীভাবে বলতে পারো যে তুমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো?” তারপর তারা তোমাকে তাচ্ছিল্য করে এটাও বলবে “তোমরা যাঁকে ঈশ্বর হিসাবে বিশ্বাস করো, তিনি তোমাদের পুরাতন ও নতুন নিয়মের বিষয়ে জানান নি কেন? তিনি নাকি তাঁর গৌরব ইস্রায়েল থেকে পূর্বদিকে নিয়ে এসেছেন, তাহলে তিনি ইস্রায়েলের কাজের বিষয়ে জানেন না কেন? তিনি যীশুর কাজ সম্পর্কে জানেন না কেন? তোমরা যদি এগুলো না জানো, তাহলে প্রমাণিত হয় যে তোমাদেরকে এইসব বলাই হয় নি; তিনি নাকি যীশুর দ্বিতীয় অবতাররূপ, তাহলে এইসব তাঁর কীভাবে অজানা থাকতে পারে? যীশুও যিহোবার কাজ সম্পর্কে জানতেন, তাহলে তিনি এসব জানেন না কেন?” সময় হলেই, তারা সকলে মিলে তোমাকে এই ধরনের প্রশ্ন করবে। তাদের মস্তিষ্ক এই ধরনের বিষয়েই পরিপূর্ণ; তাই জিজ্ঞাসা না-করে তারা কীভাবেই বা থাকতে পারে? তোমাদের মধ্যে এই প্রবাহের মধ্যে যারা রয়েছ, তারা বাইবেলে নিবদ্ধ নও, কারণ তোমরা বর্তমানের ঈশ্বরের ধাপে ধাপে করা কাজগুলির বিষয়ে ওয়াকিবহাল থেকেছ, এই পর্যায়ক্রমে করা কাজ নিজেদের চোখে দেখেছ, এবং তোমরা স্পষ্টভাবে কাজের তিনটি স্তর প্রত্যক্ষ করেছ, এবং তাই, তোমাদের বাইবেল নামিয়ে রেখে সেটির অধ্যয়ন বন্ধ করতেই হয়েছে। কিন্তু তারা এটির অধ্যয়ন না করে থাকতে পারে না, কারণ এই পর্যায়ক্রমে করা কাজে সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। কিছু লোক জিজ্ঞাসা করবে, “ঈশ্বরের অবতারের এবং অতীতের নবীদের এবং প্রেরিত-শিষ্যদের করা কাজের মধ্যে পার্থক্য কী? দাউদকেও প্রভু বলা হতো, আর যীশুও বলা হতো; তাদের করা কাজ ভিন্ন হলেও, তাঁদের একই নামে ডাকা হত। তাহলে বলো, তাদের পরিচয় অনুরূপ ছিল না কেন? যোহন যা প্রত্যক্ষ করেছিলেন তা ছিল একটা দর্শনলাভ, তা-ও কিন্তু পবিত্র আত্মার থেকেই এসেছিল, তিনিও কিন্তু পবিত্র আত্মার অভিপ্রেত বাক্য বলতে পারতেন; তাহলে যোহনের পরিচয় যীশুর থেকে পৃথক কেন?” যীশুর কথিত বাক্য ঈশ্বর এবং তাঁর কাজের সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হয়েছিল। অপরদিকে, যোহনের একটি দর্শনলাভ ঘটেছিল, এবং সে ঈশ্বরের কাজের সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করতে অক্ষম ছিল। যোহন, পিতর এবং পৌল যীশুর মতো অনেক বাক্য বললেও কেন, তাদের ও যীশুর পরিচয় অভিন্ন নয়? এর প্রধান কারণ হল, তাদের করা কাজ ছিল ভিন্নতর। যীশু ঈশ্বরের আত্মার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন এবং তিনি ঈশ্বরের আত্মাস্বরূপ সরাসরি কাজ করেছিলেন। তিনি নতুন যুগের কাজ করেছিলেন, যে কাজ আগে কেউ করে নি। তিনি একটি নতুন পথ উন্মুক্ত করেছিলেন, তিনি যিহোবার প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন, এবং স্বয়ং ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। পক্ষান্তরে পিতর, পৌল এবং দাউদ, যে নামেই তাদের ডাকা হোক না কেন, তারা শুধুমাত্র ঈশ্বর-সৃষ্ট জীবের পরিচয়েরই প্রতিনিধিত্ব করেছিল, এবং যীশু বা যিহোবার দ্বারা প্রেরিত হয়েছিল। তাই তারা যত অধিক পরিমাণে কাজই করে থাকুক না কেন, যত বড় অলৌকিক কাজই করে থাকুক না কেন, তারা নিছক ঈশ্বরের সৃষ্ট জীবই, এবং তারা ঈশ্বরের আত্মার প্রতিনিধিত্ব করতে অক্ষম। তারা ঈশ্বরের নামে কাজ করেছিল বা ঈশ্বরের দ্বারা প্রেরিত হয়ে কাজ করেছিল; তদুপরি, তারা যীশু বা যিহোবার দ্বারা সূচিত যুগে কাজ করেছিল, এবং অন্য কোনো কাজ করে নি। প্রকৃতপক্ষে, তারা ছিল নিছকই ঈশ্বরের সৃষ্ট জীব। পুরাতন নিয়মে, অনেক নবী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল অথবা ভবিষ্যদ্বাণী-সংবলিত গ্রন্থ রচনা করেছিল। কেউই বলে নি যে তারাই ঈশ্বর, কিন্তু যীশু কাজ শুরু করামাত্র ঈশ্বরের আত্মা ঈশ্বর হিসাবে তাঁর সাক্ষ্য দিয়েছিল। এমন কেন? এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, তোমার ইতিমধ্যেই তা জানা উচিত! পূর্বে, প্রেরিত-শিষ্য ও নবীগণ অনেক পত্র লিখেছিল, অনেক ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিল। পরবর্তীকালে এগুলির কিছু কিছু মানুষ বাইবেলে অন্তর্ভুক্ত করেছিল, অনেকগুলি আবার হারিয়েও গিয়েছিল। কিছু মানুষ বলে যে তাদের দ্বারা বলা সমস্ত কিছুই পবিত্র আত্মার থেকে এসেছে, তাহলে এর কিছু অংশকে ভালো এবং কিছু অংশকে খারাপ হিসাবে বিবেচনা করা হয় কেন? এবং কেন কিছু অংশ নির্বাচন করা হয়েছিল এবং অন্যগুলিকে করা হয় নি? যদি প্রকৃতপক্ষেই সেগুলি পবিত্র আত্মার দ্বারা উচ্চারিত বাক্য হত, তাহলে মানুষদের কি সেগুলি থেকে বেছে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ত? চারটি সুসমাচারের প্রতিটিতে যীশুর উচ্চারিত বাক্য এবং করা কাজের বিবরণ আলাদা কেন? এগুলি যারা নথিবদ্ধ করেছে, এটা কি তাদেরই ত্রুটি নয়? কিছু লোক জিজ্ঞাসা করবে, “যেহেতু পৌল এবং নতুন নিয়মের অন্যান্য লেখকদের লিখিত পত্র এবং করা কাজ আংশিকভাবে মানুষের ইচ্ছা থেকেই উদ্ভূত হয়েছিল, এবং তা মানুষের ধারণার দ্বারা অশুদ্ধ হয়েছিল, তাহলে বর্তমানে আপনি (ঈশ্বর) যে বাক্য বলেন তাতেও কি মানুষের অশুদ্ধতা মিশে নেই? সেগুলির মধ্যে কি সত্যিই একটুও মানুষের ধারণা নেই?” ঈশ্বরের করা কাজের এই পর্যায়টি পৌল সহ বহু প্রেরিত-শিষ্য ও নবীগণ দ্বারা কৃত কাজের থেকেই আলাদা। সেগুলির যে শুধু পরিচয় আলাদা তা-ই নয়, বরং যে কাজ সংঘটিত হয়, সেগুলিও মৌলিকভাবে ভিন্ন। পৌলআঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্রভুর সামনে পতিত হওয়ার পরে, তার কাজে পবিত্র আত্মা নেতৃত্ব দিয়েছিল, এবং সে এক প্রেরিতজন হয়ে উঠেছিল। তাই সে গির্জাগুলিতে পত্র লিখেছিল, এবং সেই পত্রগুলির প্রতিটিই যীশুর শিক্ষাকে অনুসরণ করেছিল। পৌলকে প্রভু যীশুর নামে কাজ করার জন্য প্রভু প্রেরণ করেছিলেন, কিন্তু যখন ঈশ্বর স্বয়ং এসেছিলেন, তখন তিনি কোনো নামে কাজ করেন নি, এবং তাঁর কাজে ঈশ্বরের আত্মা ব্যতীত অন্য কারোর প্রতিনিধিত্ব করেন নি। ঈশ্বর সরাসরি তাঁর কাজ করতে এসেছিলেন: তিনি মানুষের দ্বারা নিখুঁত হন নি, তাঁর কাজ কোনো মানুষের শিক্ষা অনুসারে পরিচালিত হয় নি। কাজের এই পর্যায়ে ঈশ্বর তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলে নেতৃত্ব দেন না, বরং তাঁর কাছে যা আছে, তা দিয়েই সরাসরি তাঁর কাজ সম্পাদন করেন। যেমন, সেবাদাতাদের পরীক্ষা, শাস্তির সময়কাল, মৃত্যুর পরীক্ষা, ঈশ্বরকে ভালোবাসার সময়কাল…। এই সমস্ত কাজ আগে কখনও করা হয় নি, এই কাজ মানুষের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতায় থাকা কাজ নয়, বরং বর্তমান যুগের কাজ। আমি যে বাক্য বলেছি, তাতে কোনগুলি মানুষের অভিজ্ঞতা? এগুলির সবই কি সরাসরি পবিত্র আত্মার থেকে আসে না, সেগুলি কি পবিত্র আত্মার দ্বারা জারি করা হয় নি? শুধু তোমার এত কম ক্ষমতার কারণেই তুমি সত্য দেখতে পাও না! জীবনের যে ব্যবহারিক উপায়েরর কথা আমি বলি, তা পথের নির্দেশ দেওয়ার জন্যই, তা আগে কেউ কখনো বলে নি, এই পথের অভিজ্ঞতাও কারোর নেই, এই বাস্তবিকতার বিষয়েও কেউ জানে না। আমার এই বাক্য কথনের পূর্বে, আর কেউ তা বলে নি। কেউই এই ধরনের অভিজ্ঞতার বিষয়ে কথা বলে নি, এই রকম বিশদেও কেউ বলে নি, এবং, তদুপরি, এই সমস্ত বিষয় প্রকাশের জন্য এই ধরনের অবস্থার কথাও কেউ উল্লেখ করে নি। আজ আমি যে পথের নেতৃত্ব দিচ্ছি, তা আগে কখনও কেউ দেয় নি, এবং যদি এটি মানুষের দ্বারা পরিচালিত হত, তাহলে তা নতুন পথ হত না। উদাহরণ হিসাবে পৌল এবং পিতরকেই দেখো। যীশু পথের নেতৃত্ব দেওয়ার আগে অবধি, তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছিল না। যীশু পথের নেতৃত্ব দেওয়ার পরেই তারা যীশুর কথিত বাক্য এবং তাঁর পরিচালিত পথের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল; এর থেকে তারা অনেক অভিজ্ঞতাই অর্জন করেছিল, এবং সেই পত্রগুলি লিখেছিল। এবং তাই, মানুষের অভিজ্ঞতা ঈশ্বরের কাজের মতো নয়, এবং ঈশ্বরের কাজ মানুষের ধারণা এবং অভিজ্ঞতা দ্বারা বর্ণিত জ্ঞানের মতো নয়। আমি বারবার বলেছি যে, আজ আমি একটি নতুন পথের নেতৃত্ব দিচ্ছি, নতুন কাজ করছি, আর আমার কাজ এবং কথন যোহন এবং অন্যান্য সকল নবীর থেকে আলাদা। আমি কখনোই প্রথমে অভিজ্ঞতা লাভ করে তারপরে তোমাদের তা ব্যক্ত করি—এমন নয়। যদি তাই হত, তাহলে কি তা অনেক আগেই তোমাদের বিলম্ব করে দিত না? অতীতে, অনেকের কথিত জ্ঞান উন্নীত হয়েছিল, কিন্তু তাদের সমস্ত কথাই তথাকথিত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের ভিত্তিতেই বলা হয়েছিল। এগুলি পথের দিশা দেখায় নি, বরং তাদের অভিজ্ঞতা থেকে, তারা যা দেখেছে তা থেকে এবং তাদের জ্ঞান থেকে এসেছিল। এগুলির মধ্যে কিছু কিছু ছিল তাদের ধারণা এবং কিছু কিছু ছিল তাদের অভিজ্ঞতার সারাংশ। বর্তমানে, আমার কাজের ধরন তাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আমার অন্যদের দ্বারা নির্দেশিত হওয়ার অভিজ্ঞতা হয় নি, তেমনই অন্যদের দ্বারা ত্রুটিমুক্ত হওয়াকেও আমি স্বীকার করি নি। তদুপরি, আমি যা কিছু বলেছি এবং সহকারিতা করেছি, তা বাকিদের মতো নয়, এবং তা অন্য কেউ কখনো বলে নি। বর্তমানে, তোমরা যেই হও না কেন, আমি যে বাক্য বলেছি, তার ভিত্তিতেই তোমাদের কাজ সম্পন্ন হয়। এই কথন এবং কাজ না থাকলে, কে এই জিনিসগুলি (সেবাদাতাদের পরীক্ষা, শাস্তির সময়কাল…) অনুভব করতে সক্ষম হবে, এবং কে-ই বা এই জাতীয় জ্ঞানের কথা বলতে পারবে? তুমি কি সত্যিই এটা দেখতে অক্ষম? কাজের পর্যায় যাই হোক না কেন, আমার বাক্য উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে, তোমরা আমার বাক্যের সাথে সঙ্গত হয়ে সহকারিতা শুরু করো এবং সেগুলি অনুসারে কাজ করো, আর এই উপায়ের বিষয়ে তোমাদের মধ্যে কেউ কখনো ভাবে নি। এতদূর আসার পরেও, তুমি কি এত স্পষ্ট এবং সহজ প্রশ্নটা দেখতে অক্ষম? এই পথ সম্পর্কে আগে কেউ কখনো ভাবে নি, আবার এটা কোনো আধ্যাত্মিক ব্যক্তির ভিত্তিতেও করা হয় নি। এটা একটা নতুন পথ। এবং অনেক বাক্য পূর্বে যীশু বলে থাকলেও সেগুলি আর প্রযোজ্য হয় না। আমি এক নতুন যুগের সূচনা করার কাজের কথা বলি, আর এই কাজ সবচেয়ে আলাদা; আমি যে কাজ করি, এবং যে বাক্য বলি, সেগুলি সবই নতুন। এটা কি বর্তমানের নতুন কাজ নয়? যীশুর কাজও এইরকমই ছিল। তাঁর কাজও মন্দিরের লোকেদের থেকে আলাদা ছিল, আর তাই এটা ফরিশীদের কাজের থেকেও আলাদা ছিল। আবার ইস্রায়েলের সমস্ত লোকেরা যে কাজ করেছিল, তার সাথেও এর কোনো সাযুজ্য ছিল না। তা দেখার পরে, মানুষ মনস্থির করতে পারে নি: “এ কি সত্যিই ঈশ্বরের কাজ?” যীশু যিহোবার বিধান মেনে চলেন নি; যখন তিনি মানুষকে শিক্ষা দিতে এসেছিলেন, তাঁর বলা সমস্ত কিছুই পুরাতন নিয়মের প্রাচীন সন্ত এবং নবীগণেরর বলা বিষয়ের থেকে ছিল নতুন ও ভিন্নতর, এবং সেই কারণেই মানুষ অনিশ্চিত ছিল। এটাই মানুষকে মোকাবিলা করা কঠিন করে তোলে। এই কাজের নতুন পর্যায় গ্রহণ করার আগে, তোমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ যে পথ অবলম্বন করেছিল, তা ছিল শুধুই অনুশীলন ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বের ভিত্তিতে প্রবেশ। কিন্তু বর্তমানে, আমার কাজ সম্পূর্ণ আলাদা, তাই তোমরা বুঝে উঠতে পারো না সেগুলো ঠিক না ভুল। তোমরা আগে কোন পথে হেঁটেছ, কার “খাদ্য” ভোজন করেছ অথবা কাকে তোমার “পিতা” বলে মান্য করেছ—তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। যেহেতু আমি মানুষকে পথ দেখানোর জন্য এসেছি এবং নতুন কাজ করেছি, তাই যারা আমাকে অনুসরণ করবে তাদের সবাইকে আমি যা বলব তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে হয়ে কাজ করতে হবে। তুমি যতই ক্ষমতাসম্পন্ন “পরিবার” থেকে আসো না কেন, তোমাকে অবশ্যই আমাকে অনুসরণ করতে হবে, তুমি তোমার পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী অবশ্যই কাজ করবে না, তোমার “পালক পিতা”-র সরে দাঁড়ানো উচিত, এবং নিজের প্রাপ্য অংশ খুঁজে নেওয়ার জন্য, তোমার ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হওয়া উচিত। তুমি সামগ্রিকভাবে আমার হাতে, এবং তোমার পালক পিতার প্রতি অত্যধিক অন্ধ-বিশ্বাস নিবেদন করা উচিত নয়; সে তোমাকে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। বর্তমানের কাজ সবচেয়ে আলাদা। আমি আজ যা বলছি, তা স্পষ্টতই অতীতের বুনিয়াদের উপর নির্ভর করে নয়; এ হল এক নতুন সূচনা, আর যদি বলো যে এটা মানুষের হাতে তৈরি, তাহলে তুমি এমনই এক অন্ধজন যার উদ্ধারলাভ সম্ভবপর নয়!
যিশাইয়, যিহিষ্কেল, মোশি, দাউদ, অব্রাহাম এবং দানিয়েল ছিল ইস্রায়েলের নির্বাচিত লোকেদের নেতা বা নবী। তাদের কেন ঈশ্বর বলা হয় না? পবিত্র আত্মা তাদের সাক্ষ্য দেয় নি কেন? যীশুর কাজ শুরু করার ও বাক্য বলার সাথে সাথেই, পবিত্র আত্মা কেন তাঁর কাছে সাক্ষ্য দিলেন? কেন পবিত্র আত্মা অপর কারুর কাছে সাক্ষ্য দেন নি? তারা ছিল রক্তমাংসের মানুষ, যাদের “প্রভু” বলা হত। তাদের যে নামেই ডাকা হোক না কেন, তাদের কাজ তাদের সত্তা ও সারসত্যের প্রতিনিধিত্ব করে, আর তাদের সত্তা ও সারসত্য তাদের পরিচয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের সারসত্য কিন্তু তাদের অভিধাসমূহের সাথে সম্পর্কিত নয়; বরং তাদের প্রকাশিত ও যাপিত বিষয় দ্বারাই উপস্থাপিত হয়। পুরাতন নিয়মে, প্রভু অভিধায় পরিচিত হওয়া বেশ সাধারণ ব্যাপার ছিল, আর কাউকে যে কারণেই এই নামে ডাকা হোক না কেন, তার সারসত্য এবং নিহিত পরিচয় কিন্তু অপরিবর্তনীয় ছিল। সেই সকল ভণ্ড খ্রীষ্ট, ভণ্ড নবী এবং প্রতারকদের মধ্যেও কি এমন কেউ কেউ নেই যাদের “ঈশ্বর” বলে ডাকা হয়? এবং তারা কেন ঈশ্বর নয়? কারণ তারা ঈশ্বরের কাজ করতে অক্ষম। ভিত্তিমূলে, তারা মানুষ, ঈশ্বর নয়, বরং মানুষের মধ্যে বিদ্যমান প্রতারক, এবং তাই, তাদের মধ্যে ঈশ্বরের পরিচয় নেই। বারোটি উপজাতির দ্বারা দাউদকেও কি প্রভু বলে ডাকা হত না? যীশুকেও প্রভু বলে ডাকা হত; কেন শুধু যীশুকেই ঈশ্বরের অবতার বলা হয়? যিরমিয়কেও কি মনুষ্যপুত্র অভিধায় ডাকা হত না? আবার যীশুও কি মনুষ্যপুত্র বলে পরিচিত ছিলেন না? যীশুকে কেন ঈশ্বরের নিমিত্তে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল? তা কি তাঁর সারসত্য ভিন্ন ছিল বলেই নয়? তা কি তাঁর করা কাজ ভিন্ন ছিল বলেই নয়? উপাধি কি আদৌ গুরুত্বপূর্ণ? যীশুকে মনুষ্যপুত্রও বলা হলেও, তিনি ছিলেন ঈশ্বরের প্রথম অবতার, তিনি ক্ষমতা গ্রহণ করতে এবং মুক্তির কাজ সম্পন্ন করতে এসেছিলেন। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে, অনেককেই মনুষ্যপুত্র বলে ডাকা হলেও, যীশুর পরিচয় এবং সারসত্য অন্যদের থেকে আলাদা ছিল। আজ, তোমাদের মধ্যে কার এমন বলার স্পর্ধা হবে যে, পবিত্র আত্মা দ্বারা ব্যবহৃত ব্যক্তিদের কথিত সমস্ত বাক্যই পবিত্র আত্মার থেকেই এসেছে? এমন বলার স্পর্ধা কি কারো হবে? যদি তোমরা এই ধরনের কথা বলো, তাহলে কেন ইষ্রার ভবিষ্যদ্বাণীর বইটি বাতিল করা হয়েছিল, এবং প্রাচীন সন্ত ও নবীদের গ্রন্থের ক্ষেত্রেও কেন সেই একই জিনিস করা হয়েছিল? তারা সকলেই পবিত্র আত্মা থেকেই এসে থাকলে, তোমরা এই ধরনের খামখেয়ালীভাবে বাছাই করার সাহস করো কেন? তুমি কি পবিত্র আত্মার কাজ বাছাই করার যোগ্য? ইস্রায়েলের অনেক কাহিনীও বাতিল করা হয়েছিল। আর যদি তুমি বিশ্বাস করো, যে, অতীতের এই লেখাগুলির সমস্তটাই পবিত্র আত্মার থেকে এসেছে, তবে কেবল কিছু বই বাতিল করা হয়েছিল কেন? সেগুলির সবই পবিত্র আত্মার থেকে এসে থাকলে, তাদের সবকটাই রেখে দেওয়া, এবং ভাইবোনেদের পাঠ করার জন্য সেগুলিকে গির্জায় পাঠানো উচিত ছিল। সেগুলি মানুষের ইচ্ছামত বেছে নেওয়া বা বাতিল করা উচিত হয়নি; এমন করা ভুল। পৌল ও যোহনের অভিজ্ঞতাও তাদের ব্যক্তিগত অন্তর্দৃষ্টি মিশ্রিত ছিল—এই কথা বলার মানে এই নয় যে, তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান শয়তানের থেকে এসেছে, বরং বলা যেতে পারে যে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও দর্শন থেকেই বিষয়গুলি উদ্ভূত হয়েছিল। তাদের জ্ঞান সেই সময়কার বাস্তবিক অভিজ্ঞতার পটভূমি অনুসারেই ছিল, এবং কে আত্মবিশ্বাসী হয়ে বলতে পারে যে এর সমস্তটাই পবিত্র আত্মার থেকে এসেছে? যদি চারটি সুসমাচার পবিত্র আত্মার থেকেই আসত, তাহলে মথি, মার্ক, লুক এবং যোহন প্রত্যেকেই যীশুর কাজ সম্পর্কে আলাদা আলাদা বিষয় বলেছে কেন? তোমাদের এতে বিশ্বাস না হলে, বাইবেলের বিবরণে দেখো পিতর কীভাবে তিনবার প্রভুকে অস্বীকার করেছিল: সেগুলি সকলই আলাদা, এবং প্রত্যেকটির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অনেক অজ্ঞ ব্যক্তি বলে, “ঈশ্বরের অবতারও একজন মানুষ, তাহলে তিনি যে বাক্য বলেন, তা কি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র আত্মা থেকে আসতে পারে? পৌল এবং যোহনের বাক্যে যদি মানুষের ইচ্ছা মিশ্রিত থাকে, তাহলে তাঁর বলা বাক্যে কি আসলে মানুষের ইচ্ছা মিশ্রিত নেই?” এমন কথা যারা বলে তারা অন্ধ ও অজ্ঞ! ভালোভাবে চারটি সুসমাচার পড়ো, যীশুর কর্মকাণ্ড এবং কথিত বাক্য সম্পর্কে সেখানে কী লেখা আছে পড়ো। প্রতিটি বিবরণই সম্পূর্ণরূপেই পৃথক, এবং প্রত্যেকটিরই স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। যদি এই গ্রন্থগুলির রচনাকারদের দ্বারা রচিত সকল বিষয়ই পবিত্র আত্মার থেকে আসত, তাহলে এগুলি সকলই অভিন্ন এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হত। তাহলে এই ত্রুটি দেখা যাচ্ছে কেন? মানুষ কি এতোই মূর্খ, যে এগুলো দেখতে পায় না? যদি তোমায় ঈশ্বরের কাছে সাক্ষ্য দিতে বলা হয়, তাহলে তুমি কী ধরনের সাক্ষ্য দিতে পারো? এই ধরনের উপায়ে ঈশ্বরকে জানার মাধ্যমে কি তাঁর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য বহন করা সম্ভব? অন্যরা যদি তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, “যদি যোহন এবং লুকের নথিবদ্ধ জিনিসগুলি মানুষের ইচ্ছার দ্বারা মিশ্রিত হয়, তবে তোমাদের ঈশ্বরের বাক্যও কি মানুষের ইচ্ছা মিশ্রিত নয়?” তুমি কি পরিষ্কার জবাব দিতে পারবে? লুক এবং মথি, যীশুর কথা শুনে এবং তাঁর কাজ প্রত্যক্ষ করার পরে, তাঁর কাজের কিছু ঘটনার বিবরণ স্মৃতিচারণ করে তাদের নিজস্ব জ্ঞানের কথা বলেছিল। তুমি কি বলতে পারো, যে তাদের জ্ঞান সম্পূর্ণরূপে পবিত্র আত্মা দ্বারাই প্রকাশিত হয়েছিল? বাইবেলের বাইরে, তাদের চেয়ে উচ্চতর জ্ঞানের অধিকারী অনেক আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ছিল, তাহলে তাদের কথা পরবর্তী প্রজন্ম কেন গ্রহণ করেনি? তারাও কি পবিত্র আত্মা দ্বারা ব্যবহৃত হয় নি? জেনে রেখো, বর্তমানের কাজে, আমি যীশুর কাজের ভিত্তিতে আমার নিজস্ব অন্তর্দৃষ্টির কথা বলছি না, আবার যীশুর কাজের পটভূমিতে আমার নিজস্ব জ্ঞানের কথাও বলছি না। যীশু সেই সময়ে কোন কাজ করেছিলেন? আর আজ আমি কোন কাজ করছি? আমার কাজ ও কথনের কোনও পূর্ব উদাহরণ নেই। আমি বর্তমানে যে পথে চলি, তাতে আগে কেউ পা রাখে নি, অতীতের যুগ ও প্রজন্মের কেউই কখনো এতে হাঁটে নি। বর্তমানে এর সূচনা হয়েছে, এবং এও কি পবিত্র আত্মার কাজ নয়? এই কাজ পবিত্র আত্মার হলেও, অতীতের সকল নেতৃবৃন্দ অপরের কর্মের ভিত্তিতে তাদের নিজেদের কার্যোদ্ধার করেছে; তবে, স্বয়ং ঈশ্বরের কাজ আলাদা। যীশুর কাজের পর্যায় একইরকম ছিল: আগত হয়ে, তিনি এক নতুন পথ উন্মুক্ত করেছিলেন। তিনি এসে স্বর্গরাজ্যের সুসমাচার প্রচার করেছিলেন, এবং বলেছিলেন যে মানুষের অনুতপ্ত হওয়া উচিত, দোষ স্বীকার করা উচিত। যীশু তাঁর কাজ শেষ করার পর, পিতর, পৌল এবং অন্যান্যরা যীশুর কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। যীশু ক্রুশবিদ্ধ হয়ে স্বর্গারোহণের পর, আত্মা তাদের ক্রুশের পথের প্রচারের জন্য প্রেরণ করেছিল। পৌলের বাক্যগুলি মহিমান্বিত করা হলেও, সেগুলি যীশুর বাক্যের স্থাপিত বুনিয়াদের উপরেই ভিত্তি করে, যেমন ধৈর্য, ভালোবাসা, যন্ত্রণা, মাথা আবৃত করা, বাপ্তিষ্ম বা অন্যান্য মতবাদ অনুসরণ করা, প্রভৃতির মাধ্যমে বিদ্যমান হয়েছে। এই সকলই যীশুর বাক্যের ভিত্তিতেই বলা হয়েছিল। তারা নতুন পথ উন্মুক্ত করতে সমর্থ ছিল না, কারণ তারা সকলেই ছিল ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত মানুষ।
যীশুর সেই সময়ের কথন ও কাজ কোনও মতবাদের অনুসারী ছিল না, তিনি পুরাতন নিয়মের আইনের কাজ অনুসারেও স্বীয় কর্ম সম্পাদন করেন নি। অনুগ্রহের যুগে যে কাজ করা উচিত, তা অনুসারেই সেই কাজ সম্পাদিত হয়েছিল। তিনি যে কাজ প্রকাশ করেছিলেন, সেই অনুসারেই পরিশ্রম করেছিলেন, তাঁর নিজের পরিকল্পনা ও সেবাব্রত অনুযায়ীই তা হয়েছিল; তিনি পুরাতন নিয়মের বিধান অনুসারে কাজ করেন নি। তিনি কোনও কাজেই পুরাতন নিয়মের বিধান অনুসরণ করেন নি, তিনি নবীদের কথা পূরণ করতেও আসেন নি। ঈশ্বরের কাজের প্রতিটি পর্যায় স্পষ্টরূপে, প্রাচীন নবীদের ভবিষ্যদ্বাণী পূরণ করার জন্য সম্পাদিত হয় নি এবং তিনি মতবাদ মেনে চলতে অথবা ইচ্ছাপূর্বক প্রাচীন নবীদের ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত করতে আসেন নি। তবুও তাঁর কর্মধারা প্রাচীন নবীদের ভবিষ্যদ্বাণীকে ব্যাহত করে নি, তেমনই সেগুলিও তাঁর পূর্বকৃত কার্যেও বাধা সৃষ্টি করেনি। কোনও মতবাদের অনুসারী না হওয়াটাই ছিল তাঁর কাজের প্রধান বিষয়, পরিবর্তে তিনি নিজের করণীয় কাজটিই করেছিলেন। তিনি কোনো নবী অথবা ভবিষ্যতদ্রষ্টা ছিলেন না, বরং ছিলেন এমন কেউ যিনি কাজ করেন, যিনি আদতেই নিজের করণীয় কাজ করতে এসেছিলেন, এবং তিনি তাঁর নতুন যুগের সূচনা ঘটাতে এবং তাঁর নতুন কাজ সম্পাদন করতে এসেছিলেন। স্বভাবতই, যীশু যখন তাঁর কাজ করতে এসেছিলেন, তখন তিনি পুরাতন নিয়মের প্রাচীন নবীদের কথিত অনেক বাক্যও পূরণ করেছিলেন। তাই বর্তমানের কাজ পুরাতন নিয়মের প্রাচীন নবীদের ভবিষ্যদ্বাণীও পূরণ করেছে। আমি “পুরানো পঞ্জিকা” ধরে বসে থাকি না, ব্যস এটুকুই। কারণ আমার আরও অনেক অবশ্যকরণীয় কাজ রয়েছে, অনেক বাক্য রয়েছে যা তোমাদেরকে অবশ্যই বলতে হবে, এবং এই কাজ এবং বাক্য বাইবেলের অনুচ্ছেদ ব্যাখ্যা করার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ, তোমাদের কাছে এই ধরনের কাজের কোনও মহৎ তাৎপর্য অথবা মূল্য নেই, তা তোমাদের সহায়ক নয়, বা তোমাদের পরিবর্তনও করতে পারে না। আমার নতুন কাজ করার উদ্দেশ্যে বাইবেলের কোনও অনুচ্ছেদ পূরণ করা নয়। যদি ঈশ্বর শুধুমাত্র বাইবেলের প্রাচীন নবীদের বাক্য পূরণ করার জন্যই এসে থাকতেন, তাহলে এদের মধ্যে কে মহান, ঈশ্বরের অবতার নাকি সেই প্রাচীন নবীগণ? আসলে, নবীগণ কি ঈশ্বরের পরিচালক, নাকি ঈশ্বরই নবীগণের পরিচালক? এই বাক্যগুলি তুমি কীভাবে ব্যাখ্যায়িত করো?
সূচনাকালে, যখন আনুষ্ঠানিকভাবে যীশুর সেবাব্রত আরম্ভ হয়নি, তখন তাঁর অনুগামী শিষ্যদের মতোই, তিনিও কখনো কখনো সভায় যোগ দিতেন, এবং স্তোত্র গাইতেন, স্তুতি করতেন ও মন্দিরে পুরাতন নিয়ম পাঠ করতেন। বাপ্তিষ্ম এবং উন্নীত হওয়ার পরে, আত্মা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর মধ্যে অবতীর্ণ হয় এবং তাঁর পরিচয় ও করণীয় সেবাব্রত প্রকাশ করে কাজ করতে শুরু করে। এর আগে পর্যন্ত, মরিয়ম ছাড়া কেউই তাঁর পরিচয় জানত না, এমনকি যোহনও নয়। বাপ্তিষ্ম হওয়ার সময় যীশুর বয়স ছিল ২৯। তাঁর বাপ্তিষ্ম সম্পূর্ণ হওয়ার পরে স্বর্গ উন্মুক্ত হয়েছিল, এবং একটি কণ্ঠ বলেছিল: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, আমার পরম প্রীতির পাত্র”। যীশুর বাপ্তিষ্ম হয়ে যাওয়ার পর থেকে, এই উপায়ে পবিত্র আত্মা তাঁর সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেছিল। ২৯ বছর বয়সে বাপ্তিষ্ম হওয়ার আগে পর্যন্ত, তিনি এক সাধারণ মানুষের জীবনই যাপন করেছিলেন, তাঁর যা ভোজন করা উচিত তাই করলেন, স্বাভাবিকভাবেই নিদ্রারত হচ্ছিলেন, পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান করছিলেন, অন্যান্যদের থেকে আলাদা কিছুই ছিল না তাঁর মধ্যে, যদিও অবশ্যই, এসকল মানুষ চর্মচক্ষু দ্বারা দেখাটুকুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মাঝে মাঝে তিনিও দুর্বল হয়েছেন, তিনিও জিনিস বুঝতে পারেন নি, ঠিক যেমনটা বাইবেলে লেখা রয়েছে: তাঁর বুদ্ধিমত্তা বয়সের সাথে সাথে বর্ধিত হয়েছিল। এই বাক্য নিছকই দেখায় যে, তিনি এক সাধারণ এবং স্বাভাবিক মানবতার অধিকারী ছিলেন এবং তিনি অন্যান্য সাধারণ মানুষের থেকে বিশেষভাবে আলাদা ছিলেন না। তিনি এক সাধারণ মানুষের মতোই বেড়ে উঠেছিলেন, এবং তাঁর মধ্যে কোনও বিশেষত্ব ছিল না। তবুও তিনি ঈশ্বরের পরিচর্যা ও সুরক্ষার মধ্যেই ছিলেন। বাপ্তিষ্ম হওয়ার পরে তিনি প্রলুব্ধ হতে শুরু করেন, তারপরে তিনি তাঁর সেবাব্রত এবং কাজ করতে শুরু করেন এবং ক্ষমতা, প্রজ্ঞা ও কর্তৃত্বের অধিকারী হন। তার মানে কিন্তু এই নয়, যে পবিত্র আত্মা তাঁর বাপ্তিষ্ম হওয়ার আগে তাঁর মধ্যে কাজ করেন নি, বা তাঁর মধ্যে অবস্থান করেন নি। তাঁর বাপ্তিষ্ম হওয়ার আগে, পবিত্র আত্মা তাঁর মধ্যে অবস্থান করলেও, আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন নি। কারণ ঈশ্বর যখন কাজ করেন, তখন কিছু সময়গত সীমাবদ্ধতা থাকে, তদুপরি, স্বাভাবিক মানুষের বেড়ে ওঠার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া থাকে। পবিত্র আত্মা সর্বদাই তাঁর মধ্যে বাস করেছেন। যীশুর জন্মগ্রহণের সময় থেকেই, তিনি অন্যদের থেকে আলাদা ছিলেন, এবং তাঁর জন্মের আগে প্রভাতী তারার আবির্ভাব হয়েছিল; একজন দেবদূত স্বপ্নে যোষেফকে দেখা দিয়ে তাকে বলেছিল যে মরিয়ম এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেবে এবং শিশুটি পবিত্র আত্মার দ্বারা গর্ভে এসেছে। যীশুর বাপ্তিষ্ম হওয়ার পর, পবিত্র আত্মা তাঁর কাজ শুরু করেছিল, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে পবিত্র আত্মা যীশুর উপর নিতান্তই নিছকভাবে নেমে এসেছিল। কথিত রয়েছে যে, স্বীয় সেবাব্রতর আনুষ্ঠানিক আরম্ভণ ঘটাতে, পবিত্র আত্মা তাঁর ওপর কপোতের ন্যায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ঈশ্বরের আত্মা তাঁর মধ্যে আগে থেকে অবস্থান করলেও, তাঁর কাজ তখনো শুরু করেন নি, কারণ উপযুক্ত সময় তখনও আসে নি আর পবিত্র আত্মা তাড়াহুড়ো করে কাজ শুরু করে নি। বাপ্তিষ্ম হওয়ার মাধ্যমেই আত্মা তাঁর কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তিনি জল থেকে ওঠার পরে, আত্মা তাঁর মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ করতে শুরু করেছিলেন, যার মাধ্যমে ঈশ্বরের অবতার তাঁর সেবাব্রত আনুষ্ঠানিকভাবে পূরণ করার সূচনা ঘটিয়েছিলেন, মুক্তির কাজের সূচনা করেছিলেন, অর্থাৎ অনুগ্রহের যুগের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল। আর তাই, ঈশ্বর যে কাজই করুন না কেন, তাঁর কাজের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। বাপ্তিষ্ম হওয়ার পরে, যীশুর মধ্যে কোনো বিশেষ পরিবর্তন হয় নি; তিনি তখনও তাঁর মূল দেহরূপেই ছিলেন। শুধু বিষয়টা হল যে, তিনি তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন, পরিচয় প্রকাশ করেছিলেন এবং তাঁর মধ্যে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা পরিপূর্ণ ছিল। এই হিসাবে, তিনি আগের থেকে আলাদা ছিলেন। তাঁর পরিচয় ছিল আলাদা, অর্থাৎ তাঁর মর্যাদায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছিল; এটাই ছিল পবিত্র আত্মার সাক্ষ্য এবং তা কোনো মানুষের করা কাজ ছিল না। শুরুর দিকে মানুষ জানত না, এবং পবিত্র আত্মা এইভাবে যীশুর প্রতি সাক্ষ্য দেওয়ার পরে তারা শুধু একটুখানিই জানতে পেরেছিল। যীশু যদি পবিত্র আত্মার সাক্ষ্যদানের পূর্বে, ঈশ্বরের নিজের সাক্ষ্য ছাড়াই মহান কাজ করতেন, তাহলে তিনি যত বড় কাজই করুন না কেন, মানুষ কিন্তু কখনোই তাঁর পরিচয় জানতে পারত না, কারণ চর্মচক্ষুর দ্বারা এইসকল দেখা সম্ভবপর নয়। পবিত্র আত্মার সাক্ষ্যদানের পদক্ষেপ বিহনে, কেউই তাঁকে ঈশ্বরের অবতার বলে চিনতে পারত না। যদি পবিত্র আত্মা যীশুর প্রতি সাক্ষ্যদান করার পরেও, তিনি কোনো পরিবর্তন ছাড়াই একইরকম ভাবে কাজ করে যেতেন, তাহলে তা সে’অর্থে প্রভাবশালী হত না, এবং এই বিষয়টির মাধ্যমে প্রধানত পবিত্র আত্মার কার্য প্রদর্শিত হয়েছে। সাক্ষ্যদানের পর পবিত্র আত্মাকে নিজেকে দেখাতে হয়েছিল, যাতে তুমি স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করতে পারো যে তিনিই ছিলেন ঈশ্বর, তাঁর মধ্যেই ছিল ঈশ্বরের আত্মা; ঈশ্বরের সাক্ষ্য ভ্রান্ত ছিল না, এবং এর থেকেই প্রমাণ হতে পারে যে তিনি সঠিক সাক্ষ্যই দিয়েছিলেন। পবিত্র আত্মার সাক্ষ্যদানের আগে এবং পরে তাঁর কাজ যদি একই রয়ে যেত, তবে তাঁর অবতার রূপে সংঘটিত সেবাব্রত এবং পবিত্র আত্মার কার্য জোরালো হত না, এবং এইভাবে, কোনো সুস্পষ্ট পার্থক্য না থাকায়, মানুষ পবিত্র আত্মার কাজকে স্বীকৃতি দিতে অক্ষম হত। সাক্ষ্যদানের পর, পবিত্র আত্মাকে এই সাক্ষ্য বহাল রাখতে হয়েছিল, এবং, সেই কারণেই, তাঁকে যীশুর মধ্যে স্বীয় জ্ঞান এবং কর্তৃত্বর প্রকাশ করতে হয়েছিল, যা অতীতকালের থেকে আলাদা ছিল। অবশ্যই, তা বাপ্তিস্মের প্রভাব ছিল না—বাপ্তিষ্ম হল নিছকই এক অনুষ্ঠান—যা আদতে তাঁর সেবাব্রত সম্পাদন করার সময় এসে গিয়েছে, এমন দেখানোর একটি উপায়মাত্র। ঈশ্বরের ক্ষমতা স্পষ্ট করার জন্য, পবিত্র আত্মার সাক্ষ্যদান স্পষ্ট করার জন্যই, এই ধরনের কাজ করা হয়েছিল, এবং এই সাক্ষ্যদানের দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত পবিত্র আত্মাই নেবে। সেবাব্রত সম্পাদনের আগে যীশুও ধর্মোপদেশ শুনতেন, বিভিন্ন স্থানে সুসমাচারের প্রচার ও প্রসার করতেন। তাঁর সেবাব্রত সম্পাদনের সময় না আসায়, তিনি কোনো বড় কাজ করেন নি। ঈশ্বরও তখন নম্রভাবে দেহরূপে আত্মগোপন করেছিলেন, উপযুক্ত সময় না হওয়া পর্যন্ত তিনি কোনো কাজ করেন নি। দুটি কারণের জন্য তিনি বাপ্তিষ্ম হওয়ার আগে কাজ করেন নি: প্রথম কারণ, পবিত্র আত্মা তখনও কাজ করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর উপর অবতীর্ণ হয় নি (যার অর্থ হল, পবিত্র আত্মা যীশুকে এই ধরনের কাজ করার ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব প্রদান করে নি), আর তিনি যদি তাঁর নিজের পরিচয় জানতেনও, তাহলেও যীশু তাঁর পরবর্তীকালের করণীয় কার্য সম্পন্ন করতে সক্ষম হতেন না, তাঁকে বাপ্তিষ্ম হওয়ার দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতই। এ ছিল ঈশ্বরের নির্ধারিত সময়, এবং কেউই তা লঙ্ঘন করতে সক্ষম ছিল না, এমনকি যীশু নিজেও নয়; স্বয়ং যীশুও তাঁর নিজ কার্যে বাধা দিতে পারেন নি। অবশ্যই এ ছিল ঈশ্বরের নম্রতা, এবং তাঁর কাজের নিয়মও বইকি; যদি ঈশ্বরের আত্মা কাজ না করতেন, তবে কেউই তাঁর কাজ করতে পারত না। দ্বিতীয় কারণ, বাপ্তিষ্ম হওয়ার আগে, তিনি একজন খুব সহজ ও সাধারণ মানুষ ছিলেন এবং অন্যান্য সাধারণ এবং স্বাভাবিক মানুষের থেকে কোনোমতেই আলাদা ছিলেন না; এটাই হল ঈশ্বরের অবতারের অতিপ্রাকৃত না হওয়ার একটি দিক। ঈশ্বরের অবতার ঈশ্বরের আত্মার ব্যবস্থা লঙ্ঘন করেন নি; তিনি সুশৃঙ্খল ও সাধারণভাবে কাজ করেছিলেন। বাপ্তিষ্ম হওয়ার পরেই তাঁর কাজে কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা এসেছিল। অর্থাৎ বলা যায় যে, ঈশ্বরের অবতার হলেও, তিনি কোনো অতিপ্রাকৃতিক কাজ করেন নি, এবং আর পাঁচজন সাধারণ মানুষ যেভাবে বড় হয়, সেভাবেই তিনি বড় হয়ে উঠেছিলেন। যীশু যদি ইতিমধ্যেই তাঁর নিজের পরিচয় জানতেন, বাপ্তিষ্ম হওয়ার আগেই সারা দেশে মহান কাজ করতেন, সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা হতেন, নিজেকে অসাধারণ হিসাবে প্রতিপন্ন করতেন, তবে সেটা যেমন যোহনের পক্ষে তার কাজ করা অসম্ভব করে তুলত, তেমনই ঈশ্বরের কাছেও তাঁর কার্যের পরবর্তী পর্যায়টি আরম্ভ করার কোনো উপায় থাকত না। সুতরাং এতে প্রমাণিত হয়ে যেত যে ঈশ্বর যা করেছিলেন, তা ভুল এবং মানুষ দেখত যে ঈশ্বরের আত্মা এবং ঈশ্বরের অবতাররূপের উৎস ভিন্নতর। সুতরাং, বাইবেলে লিপিবদ্ধ থাকা যীশুর কাজটি ছিল তাঁর বাপ্তিষ্ম হওয়ার পরে সম্পাদিত কাজ, যা তিন বছর ধরে করা হয়েছিল। বাপ্তিষ্ম হওয়ার আগে তিনি কী করেছিলেন, তা বাইবেলে লিপিবদ্ধ নেই, কারণ তিনি বাপ্তিষ্ম হওয়ার আগে সেই কাজ করেন নি। তিনি ছিলেন নিছকই একজন সাধারণ মানুষ, এবং একজন সাধারণ মানুষেরই প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন; যীশু তাঁর সেবাব্রত সম্পাদন শুরু করার আগে পর্যন্ত সাধারণ মানুষের থেকে কোনোভাবেই আলাদা ছিলেন না, অন্যান্যরাও তাঁর মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখে নি। ২৯ বছর বয়সের পরেই যীশু জেনেছিলেন যে তিনি ঈশ্বরের কাজের একটি পর্যায় সম্পূর্ণ করতে এসেছেন; এর আগে তিনি নিজেও তা জানতেন না, কারণ ঈশ্বরের করা কাজ অতিপ্রাকৃতিক ছিল না। তিনি যখন বারো বছর বয়সে সমাজগৃহে একটি সভায় যোগদান করেছিলেন, তখন মরিয়ম তাঁকে খুঁজছিল, তিনি তখন অন্যান্য শিশুর মতো একইভাবে একটি বাক্য বলেছিলেন: “মা! তুমি কি জানো না যে আমাকে আমার পিতার ইচ্ছাকেই সকলের উপরে স্থান দিতে হবে?” যীশু পবিত্র আত্মার দ্বারা গর্ভস্থ হয়েছিলেন, তাই তিনি কি কোনোভাবেই বিশেষ নন? কিন্তু তাঁর বিশেষত্বের অর্থ এই নয় যে তিনি অতিপ্রাকৃতিক ছিলেন, বরং তিনি ঈশ্বরকে অন্য যেকোনো শিশুর চেয়ে বেশিমাত্রায় ভালোবাসতেন, কেবল এইটুকুই। তাঁর চেহারা মানুষের হলেও, তাঁর সারসত্য ছিল সবিশেষ এবং অন্যদের থেকে পৃথক। তথাপি, বাপ্তিষ্মের পরে তিনি যথার্থই অনুভব করেছিলেন যে পবিত্র আত্মা তাঁর মধ্যে কাজ করছে, উপলব্ধি করেছিলেন যে তিনি নিজেই ঈশ্বর। ৩৩ বছর বয়সে পৌঁছনোর পরেই তিনি যথাযথভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন যে পবিত্র আত্মা তাঁর মাধ্যমে ক্রুশবিদ্ধকরণের কাজটি সম্পাদন করতে চেয়েছিল। ৩২ বছর বয়সে তিনি কিছু অন্তর্নিহিত সত্য জানতে পেরেছিলেন, যেমনটা মথির সুসমাচারে লিখিত রয়েছে: “শিমোন, পিতর বললেন, আপনি স্বয়ং খ্রীষ্ট, জীবনময় ঈশ্বরের পুত্র। ” (মথি ১৬:১৬), এবং “যীশু সেই সময় থেকে তাঁর শিষ্যদের স্পষ্টভাবেই বলতে লাগলেন যে তাঁকে অবশ্যই জেরুশালেমে যেতে হবে। সেখানে প্রাচীনবর্গ প্রধান পুরোহিত ও শাস্ত্রীদের হাতে নানাভাবে নির্যাতন ভোগ করে মৃত্যুবরণ করতে হবে। তৃতীয় দিনে তিনি পুনরুত্থিত হবেন ” (মথি ১৬:২১) তাঁকে কী করতে হবে তা তিনি আগে থেকে জানতেন না, কিন্তু সেটা যে এক নির্দিষ্ট সময়ে করতে হবে, তা জানতেন। তিনি এ বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে জানতেন না যে জন্মের সাথে সাথেই পবিত্র আত্মা তাঁর মধ্যে ধীরে ধীরে কাজ করেছিলেন এবং তাঁর কাজের একটি প্রক্রিয়া ছিল। যদি একেবারে শুরু থেকেই তিনি জানতেন যে তিনি ঈশ্বর, তিনি খ্রীষ্ট, মনুষ্যপুত্রের অবতার, তাঁকে ক্রুশবিদ্ধকরণের কাজ সম্পন্ন করতে হবে—তাহলে তিনি কেন আগে কাজ করেন নি? কেন তাঁর শিষ্যদের তাঁর সেবাব্রত সম্পর্কে বলার পরেই যীশু দুঃখ অনুভব করেছিলেন এবং এর জন্য আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করেছিলেন? তাঁর ইতিপূর্বে অনুপলব্ধ প্রভূত বিষয়ে উপলব্ধি করার আগেই, যোহন কেন তাঁর জন্য পথ উন্মুক্ত করেছিল এবং তাঁর বাপ্তিষ্ম করেছিল? এর থেকেই প্রমাণিত হয় যে, তা ছিল দেহরূপে অবতীর্ণ ঈশ্বরের কাজ, এবং তাই তাঁকে বোঝার জন্য, অর্জন করার জন্য আলাদা প্রক্রিয়া ছিল, কারণ তিনি ছিলেন ঈশ্বরের অবতারের দেহরূপ, যার কাজ ছিল আত্মার সরাসরি কাজের থেকে আলাদা।
ঈশ্বরের কাজের প্রতিটি ধাপ এই এক ও অভিন্ন ধারাকেই অনুসরণ করে, এবং তাই ঈশ্বরের ছয়-হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনায়, বিশ্ব-প্রতিষ্ঠা থেকে আজ অবধি প্রতিটি ধাপ আগের ধাপটিকে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করে চলে। যদি পথ প্রশস্ত করার মতো কেউ না থাকত, তবে পরে আসার মতো আর কেউ থাকত না; যেহেতু পরে আসার মত লোক আছে, তাই পথ প্রশস্ত করার লোকও রয়েছে। এভাবে ধাপে ধাপে কাজ শেষ হয়েছে। একটি ধাপ অন্যটিকে অনুসরণ করে, এবং পথ উন্মুক্ত করার জন্য কেউ না-থাকলে, কাজ শুরু করাই অসম্ভব থেকে যেত, এবং ঈশ্বরের স্বীয় কার্য এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোন উপায়ই থাকত না। কোনো ধাপই অপরটির বিরোধিতা করে না এবং একই প্রবাহ সৃষ্টি করতে ক্রমান্বয়ে একে অপরটিকে অনুসরণ করে; এ’সকল একই আত্মার দ্বারা সম্পন্ন হয়। কিন্তু কেউ পথ খুলে দিক বা না দিক, অথবা অন্যের কাজ চালিয়ে নিয়ে যাক বা না যাক, তা তাদের পরিচয় নির্ধারণ করে না। এটা কি ঠিক নয়? যোহন পথ উন্মুক্ত করেছিলেন, এবং যীশু তার কাজ চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাহলে তার মানে কি এটা দাঁড়ায় যে যীশুর পরিচয় যোহনের চেয়ে ছোট? যিহোবা যীশুর আগেই তাঁর কাজ সম্পাদন করেছিলেন, তাই তুমি কি বলতে পারো, যে যিহোবা যীশুর চেয়ে মহানতর? তারা পথ প্রশস্ত করেছে নাকি অন্যদের কাজ চালিয়ে নিয়ে গেছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়; সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তাদের কাজের সারসত্য, এবং তা যে পরিচয় উপস্থাপিত করে। এ কি ঠিক নয়? যেহেতু ঈশ্বর মানুষের মাঝে কাজ করতে চেয়েছিলেন, সেহেতু তাঁকে পথ প্রশস্ত করার মত লোকদের লালনপালন করতে হত। যখন যোহন সবেমাত্র প্রচার শুরু করেছিল, তখন বলেছিল, “তোমরা প্রভুর জন্য প্রস্তুত কর পথ, সুগম করে দাও তাঁর আগমনের সরণি।” “অনুতাপ কর: কারণ স্বর্গরাজ্য সমাগত”। এইভাবে সে প্রথম থেকেই এই বাক্য বলেছিল, এবং সে এই বাক্য কীভাবে বলতে সক্ষম হয়েছিল? এই বাক্যের বক্তব্য-ক্রম অনুসারে, যোহনই সর্বপ্রথম স্বর্গরাজ্যের সুসমাচারের কথা বলেছিল, তারপরে যীশু বলেছিলেন। মানুষের ধারণা অনুসারে, যোহন নতুন পথ উন্মুক্ত করেছিল, তাই যোহন অবশ্যই যীশু অপেক্ষা মহত্তর। কিন্তু যোহন বলে নি যে, সে-ই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরও তার প্রতি এই মর্মে সাক্ষ্য দেন নি, যে, সে-ই ঈশ্বরের পুত্র, বরং শুধুমাত্র তাকে পথ উন্মুক্ত করার জন্য এবং প্রভুর জন্য পথ প্রস্তুত করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। সে যীশুর জন্য পথ প্রশস্ত করলেও যীশুর হয়ে কাজ করতে পারে নি। মানুষের সকল কাজ পবিত্র আত্মার দ্বারাও প্রতিপালিত হয়েছিল।
পুরাতন নিয়মের যুগে যিহোবাই পথের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, এবং তাঁর কার্যই পুরাতন নিয়মের যুগে কৃত সকল কার্য, এবং ইস্রায়েলে করা সমস্ত কাজের প্রতিনিধিত্ব করেছিল। মোশি নিতান্তই তাঁর কাজ পৃথিবীতে তুলে ধরেছিল, আর তাঁর পরিশ্রমই মানুষ প্রদত্ত সহযোগিতারূপে বিবেচিত হয়েছিল। সেই সময়, যিহোবাই কথা বলেছিলেন, মোশিকে আহ্বান করেছিলেন ও তাকে ইস্রায়েলের মানুষদের মধ্যে উত্থিত করেছিলেন, মানুষকে মরুভূমি ও কনানে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশিত করেছিলেন। এটা মোশির নিজের কাজ ছিল না, বরং তা স্বয়ং যিহোবার দ্বারা নির্দেশিত হয়েছিল, এবং, সেই কারণেই, মোশিকে ঈশ্বর বলা যাবে না। মোশিও বিধান জারি করেছিল, কিন্তু এই বিধানও স্বয়ং যিহোবার দ্বারাই জারি হয়েছিল। তিনি শুধুমাত্র মোশির মাধ্যমে সেগুলিকে প্রকাশ করেছিলেন। যীশুও আদেশসমূহ সৃষ্টি করেছিলেন, এবং তিনি পুরাতন নিয়মের আইন বিলুপ্ত করে নতুন যুগের আদেশ জারি করেছিলেন। যীশু কেন স্বয়ং ঈশ্বর? কারণ এখানে একটা পার্থক্য রয়েছে। সেই সময়ে, মোশির করা কাজ সেই যুগের প্রতিনিধিত্ব করে নি, নতুন পথও উন্মুক্ত করে নি। তিনি যিহোবার দ্বারাই সামনের দিকে চালিত হয়েছিলেন, তিনি ছিলেন ঈশ্বরের ব্যবহৃত এক ব্যক্তিমাত্র। যীশুর আগমনকালে, যোহন পথ প্রশস্ত করার যে পর্যায়, সেই পর্যায়ের কার্য করেছিল, এবং স্বর্গরাজ্যের সুসমাচার প্রসার করতে আরম্ভ করেছিল (পবিত্র আত্মাই তা আরম্ভ করেছিলেন)। যীশু যখন এসেছিলেন, তিনি সরাসরি তাঁর নিজের কাজ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর কাজ এবং মোশির কাজের মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিল। যিশাইয়ও প্রভূত পরিমাণে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, তবুও কেন সে স্বয়ং ঈশ্বর ছিল না? যীশু তত সংখ্যক ভবিষ্যদ্বাণী না করলেও, কেন তিনি স্বয়ং ঈশ্বর ছিলেন? সেই সময়ে যীশুর সমস্ত কাজ পবিত্র আত্মার থেকে এসেছে, একথা কেউ সাহস করে বলে নি, বা এটাও বলার স্পর্ধা রাখে নি, যে, সেই সকলই মানুষের ইচ্ছা থেকে আগত, অথবা, যে, তা আদ্যোপান্ত ঈশ্বরেরই কর্ম। মানুষের কাছে এই ধরনের বিশ্লেষণ করার কোনো উপায় ছিল না। এমন বলা যেতে পারে যে যিশাইয় যে ধরনের কাজ এবং যে ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, তার সমস্তটাই পবিত্র আত্মার থেকে এসেছিল; সরাসরি যিশাইয়র কাছ থেকে আসে নি, বরং সেগুলি ছিল যিহোবার থেকে প্রকাশিত বিষয়। যীশু প্রচুর কাজ করেন নি, অনেক বাক্য বা অনেক ভবিষ্যদ্বাণীও প্রকাশ করেন নি। মানুষের কাছে তাঁর ধর্মপ্রচার নির্দিষ্টভাবে উন্নীত ছিল না, তবু তিনি ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর, এবং তা এই বিষয়টা মানুষের ব্যাখ্যাতীত। কেউই যোহন, যিশাইয় বা দাউদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে নি, বা তাদের ঈশ্বর বলে অভিহিতও করে নি, ঈশ্বর দাউদ বা ঈশ্বর যোহন—এইভাবে কেউ কখনো ডাকে নি, শুধুমাত্র যীশুকেই খ্রীষ্ট বলে ডাকা হয়েছিল। এই শ্রেণীবিভাগ ঈশ্বরের সাক্ষ্য, তাঁর করা কাজ ও পরিচালিত সেবাব্রতের ভিত্তিতেই করা হয়েছে। বাইবেলের মহান ব্যক্তিত্বদের নিরিখে—যেমন আব্রাহাম, দায়ূদ, যিহোশূয়, দানিয়েল, যিশাইয়, যোহন এবং যীশুর করা কাজ প্রত্যক্ষ করেই, তুমি বলতে পারবে যে কে স্বয়ং ঈশ্বর, কোন ধরনের মানুষেরা ভাববাদী আর কারাই বা বাণীপ্রচারক। কারা ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিল, আর কে স্বয়ং ঈশ্বর-এই পার্থক্যও তাদের সারসত্য ও করা কাজের দ্বারাই নির্ধারিত হয়। তুমি যদি এই পার্থক্য বলতে না পারো, তাহলে প্রমাণিত হয় যে ঈশ্বর-বিশ্বাস বলতে কী বোঝায়, তা তুমি জানো না। যীশু ঈশ্বর কারণ তিনি অনেক বাক্য বলেছিলেন, অনেক কাজ করছিলেন, বিশেষত তিনি অনেক বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শন করেছিলেন। তেমনই যোহনও অনেক কাজ করেছিল, অনেক বাক্য প্রকাশ করেছিল, যেমনটা মোশিও করেছিল; তাহলে তাদের কেন ঈশ্বর বলা হয় নি? আদম সরাসরি ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট; তাকে কেন ঈশ্বর বলা হয় নি, তাকে কেন শুধুমাত্র সৃষ্ট জীবই বলা হয়? কেউ যদি তোমাকে বলে, “বর্তমানে ঈশ্বর অনেক কাজ করেছেন, অনেক বাক্য বলেছেন; তিনি স্বয়ং ঈশ্বর। তাহলে মোশিও তো অনেক বাক্য বলেছিল, তাহলে সে-ও নিশ্চয়ই স্বয়ং ঈশ্বর!” তোমার তাদের প্রত্যুত্তরে জিজ্ঞাসা করা উচিত “সেই সময়ে, ঈশ্বর কেন যীশুর প্রতি নিজেই ঈশ্বর হওয়ার সাক্ষ্যদান করেছিলেন, যোহনের প্রতি দেন নি কেন? যোহন কি যীশুর আগে আসেন নি? যোহন নাকি যীশু, কার কর্ম মহত্তর? মানুষের কাছে, যোহনের কাজ যীশুর থেকে মহান বলে মনে হয় ঠিকই, কিন্তু, তা-ই যদি হবে, তাহলে পবিত্র আত্মা কেন যীশুর প্রতি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, অথচ যোহনের প্রতি দেন নি?” আজকেও সেই একই জিনিস হচ্ছে! যখন মোশি ইস্রায়েলের মানুষদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তখন যিহোবা মেঘের মধ্যে থেকে তার সাথে কথা বলেছিলেন। মোশি সরাসরি কথা বলেনি, পরিবর্তে যিহোবার দ্বারা চালিত হয়েছিল। এটাই হল পুরাতন নিয়মে ইস্রায়েলে করা কাজ। মোশির মধ্যে আত্মা ছিল না, ঈশ্বরের অস্তিত্বও ছিল না। সে সেই কাজ করতে পারত না, আর তাই তার এবং যীশুর করা কাজের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আর সেই কারণেই তাদের করা কাজও ছিল আলাদা! কেউ ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত, নাকি নবী, নাকি প্রেরিত-শিষ্য—তা তার কাজের প্রকৃতি থেকেই নির্ধারিত হয়, এবং তা-ই তোমার সন্দেহ দূরীভূত করতে পারে। বাইবেলে লেখা রয়েছে যে কেবলমাত্র মেষশাবকই সাতটা সিলমোহর উন্মোচিত করতে পারেন। যুগে যুগে, মহান ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অনেকেই ধর্মগ্রন্থের ব্যাখ্যাকারী ছিল, কিন্তু তা থেকেই কি তুমি বলতে পারো যে তারা সকলেই মেষশাবক? তুমি কি বলতে পারো যে তাদের সমস্ত ব্যাখ্যা ঈশ্বরের কাছ থেকেই আসে? তারা নিছকই ব্যাখ্যাকারী; তাদের মেষশাবকের পরিচয় নেই। তারা কীভাবে সাতটি সিলমোহর খোলার যোগ্য হতে পারে? এটা সত্য যে “কেবল মেষশাবকই সাতটি সিলমোহর খুলতে পারেন”, কিন্তু তিনি কেবল সাতটি সীলমোহর খোলার জন্যই আসেন নি; সেই কাজের কোনো প্রয়োজন নেই, তা ঘটনাক্রমেই সাধিত হয়। তিনি নিজের কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণ স্পষ্ট, ধর্মগ্রন্থের ব্যাখ্যা করার জন্য তাঁর কি অনেক সময় ব্যয় করার প্রয়োজন আছে? ছয় হাজার বছরের কাজের সাথে আবার “শাস্ত্রের ব্যাখ্যাকারী মেষশাবকের যুগ”-কেও যোগ করতেই হবে নাকি? তিনি নতুন কাজ করতে আসেন, সাথে সাথে অতীতের কাজ সম্পর্কিত কিছু বিষয়েও প্রকাশ ঘটান, যাতে মানুষ ছয় হাজার বছরের কাজের সত্যতা বুঝতে পারে। বাইবেল থেকে প্রচুর অনুচ্ছেদ ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই; বর্তমানের কাজই হল মূল, এটাই হল গুরুত্বপূর্ণ। তোমার জানা উচিত যে ঈশ্বর সবিশেষভাবে সাতটি সিলমোহর ভাঙাবেন বলেই যে এসেছেন—এমনটা নয়, বরং পরিত্রাণের কাজ করতেই তাঁর আগমন।
তুমি কেবল জানো যে অন্তিম সময়ে যীশু অবতীর্ণ হবেন, কিন্তু ঠিক কীভাবে তিনি অবতীর্ণ হবেন? তোমাদের মতো একজন পাপী, যাকে সদ্য মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যাকে ঈশ্বর এখনও পরিবর্তিত অথবা ত্রুটিমুক্ত করেন নি, সে কীভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারবে? তোমার ক্ষেত্রে, যে কিনা এখনও তার পুরনো সত্তাতেই রয়েছ, একথা সত্যি, যে, যীশু তোমাকে উদ্ধার করেছিলেন এবং ঈশ্বরের পরিত্রাণের কারণে তোমাকে পাপী হিসাবে গণ্য করা হয় না, কিন্তু তাই বলে এর থেকে এমন প্রমাণ হয় না যে তুমি পাপী নও, এবং অশুদ্ধ নও। তোমাকে যদি পরিবর্তিত না করা হয়, তাহলে তুমি কীভাবে সাধুচরিত্র হবে? তোমার অন্তরে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে অশুদ্ধতা, স্বার্থপরতা এবং সঙ্কীর্ণতা, তা সত্ত্বেও তুমি যীশুর সঙ্গে অবতীর্ণ হওয়ার ইচ্ছা রাখ—এমন সৌভাগ্য তোমার কীভাবে হবে? ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে তুমি একটি ধাপ হারিয়ে ফেলেছ: তোমাকে কেবল মুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু তোমাকে পরিবর্তিত করা হয় নি। তোমাকে যদি ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হয়, তাহলে স্বয়ং ঈশ্বরকেই ব্যক্তিগতভাবে তোমাকে পরিবর্তিত এবং পরিশোধিত করতে হবে; তুমি যদি শুধুমাত্রই মুক্ত হও, তাহলে তুমি পবিত্রতা অর্জনে অক্ষম হবে। এইভাবে তুমি ঈশ্বরের শুভ আশিসের ভাগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য বিবেচিত হবে, কারণ ঈশ্বরের মানুষকে পরিচালনার কার্যের একটি পর্যায়ক্রম থেকে তুমি বঞ্চিত হয়েছ, যা ছিল তোমায় নিখুঁত করে তোলার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তাই, সদ্য মুক্তি লাভ করা একজন পাপী হিসাবে, তুমি প্রত্যক্ষভাবে ঈশ্বরের উত্তরাধিকার লাভ করতে অক্ষম।
কাজের নতুন পর্যায়ের সূচনা না হলে, কে জানে তোমাদের মতো ধর্মপ্রচারক, প্রচারকারী, ব্যাখ্যাকারী এবং তথাকথিত মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বরা কতদূর যেত! কাজের এই নতুন পর্যায় শুরু না হলে, তোমাদের বলা কথাগুলো অচল হয়ে যেত! এগুলো হয় সিংহাসনে আরোহন সম্পর্কিত, নতুবা রাজা হওয়ার জন্য আত্মিক উচ্চতা প্রস্তুত করার সাথে সম্পর্কিত; হয় নিজেকে অস্বীকার করা নতুবা দেহকে বশীভূত করা বিষয়ক; হয় ধৈর্যশীল হয়ে থাকা নয়তো সমস্ত কিছু থেকে শিক্ষা নেওয়া বিষয়ক; হয় বিনয় নয় প্রীতি সম্পর্কিত। এটা সেই একই পুরনো সুর বারংবার ভেঁজে যাওয়ার মতো বিষয় নয় কি? এ যেন সেই একই জিনিসকে নিত্যনতুন নামে ডাকার মতো। হয় মাথা ঢাকা ও রুটি ভাঙা, নতুবা করজোড়ে প্রার্থনা করা, অসুস্থদের নিরাময় করা ও অপদেবতা বিতাড়ন করা। আর কি কোনও নতুন কাজ থাকতে পারে? বিকাশের কি কোনও নতুন সম্ভাবনা থাকতে পারে? এইভাবে চলতে থাকলে, তুমি অন্ধভাবে মতবাদ অনুসরণ করবে, বা নিয়ম মেনে চলবে। তোমাদের মনে হয় যে তোমাদের কাজ বেশ উচ্চমানের, কিন্তু তোমরা কি জানো না যে এর সমস্তটাই প্রাচীনকালের “প্রবীণ ব্যক্তিগণ” করে গিয়েছিল এবং শিখিয়েছিল? তোমাদের বলা কথা কি প্রবীণ ব্যক্তিদের বলা শেষ কথাই নয়? তোমাদের বলা কথা কি মৃত্যুর পূর্বে প্রবীণ ব্যক্তিদের বলা কথাগুলিই নয়? তুমি কি ভাবো যে তোমাদের কর্ম অতীতের প্রেরিত-শিষ্য এবং নবীগণের কর্মকে ছাপিয়ে গিয়েছে, সমস্ত কিছু অতিক্রম করে গেছে? কাজের এই পর্যায়ের সূচনাটি, সাক্ষী লী-র রাজা হয়ে সিংহাসনে আরোহণের ইচ্ছার কাজের প্রতি তোমাদের যে ভক্তি রয়েছে, তা সমাপ্ত করেছে। এটা তোমাদের ঔদ্ধত্য এবং তর্জন-গর্জনকে প্রতিহত করেছে, যাতে তোমরা কাজের এই পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করতে অক্ষম হও। কাজের এই পর্যায়টি না থাকলে, তোমরা মুক্তি পাওয়ার অযোগ্য হিসাবে পরিণত হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত, ক্রমশ গভীর থেকে আরো গভীরে ডুবে যেতে। তোমাদের মধ্যে পুরনো অনেক কিছু রয়ে গিয়েছে! সৌভাগ্যবশত, বর্তমানের কাজ তোমাদেরকে ফিরিয়ে এনেছে; অন্যথায় তোমরা যে কোন দিকে যেতে কে জানে! ঈশ্বর হলেন চিরনবীন, তিনি কখনো পুরনো হন না, তাহলে তুমিই বা কেন নতুন জিনিসের অন্বেষণ করো না? কেন সব সময় পুরনো জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকো? এবং সেই কারণেই তাই, বর্তমানে পবিত্র আত্মার কার্য সম্বন্ধে অবগত হওয়া প্রবলভাবে গুরুত্ববাহী!