অধ্যায় ২৮
যখন আমি সিয়োন থেকে এসেছিলাম, সকল কিছু আমার অপেক্ষায় ছিল, এবং যখন আমি সিয়োনে প্রত্যাবর্তন করেছিলাম, সকল মানুষ আমায় অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। আমার আগমন ও প্রত্যাবর্তন কালে, আমার প্রতি বৈরীভাবাপন্ন বস্তুসকলের দ্বারা আমার পদক্ষেপগুলি কখনোই প্রতিহত হয়নি, এবং সেহেতু, আমার কার্য নির্ঝঞ্ঝাটে অগ্রসর হয়েছিল। আজ, আমি যখন সকল প্রাণীর মাঝে আবির্ভূত হই, সকল বস্তু নীরবেই আমায় সম্ভাষণ জ্ঞাপন করে, এই ভেবে তারা গভীর শঙ্কিত যে, আমি বুঝি আরেকবার বিদায় নেবো, এবং ফলস্বরূপ, তারা অবলম্বন হিসাবে যা ভরসা করে, তা হারাবে। সকল বস্তু আমার নির্দেশনা অনুসরণ করে, এবং সকলেই আমার হস্ত-নির্দেশিত অভিমুখে লক্ষ্য করে। আমার মুখনিঃসৃত বাক্যগুলি বহু সত্তাকে নিখুঁত করে তুলেছে, এবং অবাধ্যতার বহু সন্তানকে শাস্তি দিয়েছে। তাই, সকল মানুষ আমার বাক্যগুলির দিকে তন্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, এবং আমার মুখনিঃসৃত উচ্চারণগুলি একাগ্রচিত্তে শ্রবণ করে, এবং এই উত্তম সুযোগ হারানোর ভয়ে তারা গভীরভাবে শঙ্কিত। এই কারণেই আমি আমার কথন অব্যাহত রেখেছি, যাতে আমার কার্য দ্রুততর গতিতে সম্পন্ন হতে পারে, এবং যাতে আরো অবিলম্বে সন্তোষজনক স্থিতি এসে পৃথিবীবক্ষে সমাগত হবে এবং মর্ত্যলোকের নিরানন্দময় দৃশ্যাবলীর প্রতিবিধান করতে পারে। যখন আমি আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করি, সে সময়েই আরেকবার আমি মানবজাতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য ফিরে দাঁড়াই; নিমেষে সকল ভূভাগ প্রাণপ্রাচুর্যে পূর্ণ হয়ে ওঠে, কোনো ধূলিকণা আর বাতাসে ভাসমান থাকে না, এবং মাটির উপরে আর বিছিয়ে থাকে না পলির পুরু আস্তরণ। আমার চক্ষুযুগল তৎক্ষণাৎ জ্বলে ওঠে, যার ফলে সকল স্থানের মানুষ আমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে এবং আমাতে আশ্রয় গ্রহণ করে। আমার গৃহে যে সকল ব্যক্তিগণ উপস্থিত তাদের সহ, বর্তমান বিশ্বের মানুষদের মধ্যে কে প্রকৃত অর্থে আমার শরণ নেয়? যে মূল্য আমি পরিশোধ করেছি, তার বিনিময়ে কে তার হৃদয় নিবেদন করে? আমার গৃহের অভ্যন্তরে কে কবে শান্তিতে বসবাস করেছে? প্রকৃতই কে কোনদিন নিজেকে আমার সম্মুখে অর্পণ করেছে? মানুষের কাছে আমি যখন চাহিদা জ্ঞাপন করি, তখন সে তৎক্ষণাৎ তার “ক্ষুদ্র ভাণ্ডার”-এর দ্বার রুদ্ধ করে দেয়। যখন মানুষকে আমি প্রদান করি, তখন চুপিসারে আমার ঐশ্বর্য গ্রহণের নিমিত্ত ঝটিতি সে তার মুখগহ্বর উন্মুক্ত করে, এবং তার অন্তরে সে প্রায়শই প্রকম্পিত হয়, এই ভয়ে সে গভীরভাবে শঙ্কিত যে আমি বুঝি তাকে প্রত্যাঘাত করবো। তাই মানুষের মুখগহ্বর অর্ধোন্মুক্ত ও অর্ধনিরূদ্ধ, এবং যে ঐশ্বর্য আমি অর্পণ করি তা সে যথার্থই উপভোগ করতে অক্ষম। সহজে মানুষকে আমি দোষী সাব্যস্ত করি না, তবু সর্বদাই সে আমার হস্ত ধরে আকর্ষণ করে এবং তার উপর করুণা অর্পণ করার অনুরোধ জানায়; মানুষ যখন আমায় অনুনয় করে, কেবল তখনই আমি আরেকবার তার উপর “করুণা” বর্ষণ করি, এবং তাকে আমি আমার মুখনিঃসৃত রূঢ়তম বাক্যটি প্রদান করি, ফলে তৎক্ষণাৎ সে লজ্জিত বোধ করে, এবং, সরাসরি আমার “করুণা” লাভে অসমর্থ হয়ে, পরিবর্তে অন্যদের সে বাধ্য করে সেই করুণা তার হাতে হস্তান্তরিত করতে। সে যখন আমার সকল বাক্যের অর্থ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উপলব্ধি করে ফেলে, তখন মানুষের আত্মিক উচ্চতা আমার ইচ্ছার সঙ্গে সমানুপাতিক হয়, এবং তার অনুরোধ ফলপ্রসু হয়, এবং তা ব্যর্থ বা নিষ্ফল হয় না; মানবজাতির আন্তরিক ও ভণ্ডামিশূন্য অনুরোধগুলিকে আমি আশীর্বাদ করি।
যুগযুগান্ত ধরে আমি কর্মসাধন ও বাক্য উচ্চারণ করে চলেছি, কিন্তু মানুষ আজকের মতো এমন উচ্চারণ আর কখনো শ্রবণ করেনি, এবং পূর্বে কখনো সে আমার মহিমা ও বিচারের আস্বাদন পায়নি। যদিও অতীত জগতের কিছু মানুষ আমার বিষয়ে কিংবদন্তিসমূহ শ্রবণ করেছে, কিন্তু কেউ কখনো প্রকৃত অর্থে আমার ঐশ্বর্যের ব্যাপ্তি আবিষ্কার করে উঠতে পারেনি। আজকের মানুষ যদিও আমার মুখনিঃসৃত বাক্যাবলী শ্রবণ করে, কিন্তু আমার মুখগহ্বরে কতগুলি রহস্য নিহিত আছে সে বিষয়ে তারা অবিদিতই রয়ে যায়, আর তাই আমার মুখগহ্বরকে কোনো কল্পতরু হিসাবে বিবেচনা করে। সকল মানুষই আমার মুখগহ্বর থেকে কিছু লাভ করার ইচ্ছা পোষণ করে। সে অবস্থা বিষয়ক গোপন সত্য, কি স্বর্গ সম্পর্কিত রহস্যকথা, বা আধ্যাত্মিক জগতের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, কিংবা মানবজাতির গন্তব্য—যা-ই হোক না কেন, সকল মানুষ এজাতীয় বিষয়গুলি জানতে চায়। তাই, আমি যদি লোকজনকে একত্র সমবেত করে তাদের “গল্প” বলতে যেতাম, তাহলে আমার পথের বিষয়ে শ্রবণ করার জন্য তৎক্ষণাৎ তারা তাদের “রোগশয্যা” থেকে উঠে বসতো। মানুষের মধ্যে প্রভূত ঘাটতি রয়েছে: শুধুমাত্র “পরিপূরক পুষ্টি-উপাদানে” তার প্রয়োজন মিটবে না, আরো বেশি কিছু লাগবে, তার “মানসিক অবলম্বন” এবং একটা “আধ্যাত্মিক রসদ” দরকার। সমুদয় মানুষের মধ্যে এটারই অভাব; এটাই সকল মানুষের “রুগ্নতা”। আমি মানুষের রুগ্নতার এক প্রতিবিধান দিই যাতে উৎকৃষ্টতর ফলাফল অর্জিত হতে পারে, সকলকে যাতে সুস্বাস্থ্যে ফিরিয়ে আনা যায়, এবং যাতে তারা, আমার উপশমের কারণে, স্বাভাবিকতায় প্রত্যাবর্তন করতে পারে। তোমরা কি সত্যিই অতিকায় লাল ড্রাগনকে ঘৃণা করো? তোমরা কি তাকে প্রকৃতই, আন্তরিকভাবে ঘৃণা করো? তোমাদের এতবার কেন জিজ্ঞেস করেছি? বারংবার, তোমাদের আমি এই একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতেই থাকি কেন? তোমাদের অন্তরে অতিকায় লাল ড্রাগনের কোন প্রতিমা রয়েছে? সত্যিই কি তা অপসারিত হয়েছে? তোমরা কি সত্যিই তাকে তোমাদের জনক বলে বিবেচনা করো না? আমার প্রশ্নে প্রচ্ছন্ন অভিপ্রায়টি সকলের উপলব্ধি করা উচিত। এর উদ্দেশ্য মানুষের ক্রোধকে প্ররোচিত করা, মানুষের মধ্যে বিদ্রোহকে উস্কে দেওয়া, বা মানুষকে নিজস্ব সমাধান খুঁজে নিতে দেওয়াও নয়, বরং এর উদ্দেশ্য হল সকল মানুষকে অতিকায় লাল ড্রাগনের দাসত্ব থেকে নিজেদের মুক্ত করার সুযোগ দান করা। তবু কারো উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। সবকিছুই আমার বাক্যের দ্বারাই নিষ্পন্ন হবে; কোনো মানুষের অংশগ্রহণের দরকার নেই, যে কার্য আমার দ্বারা সম্পন্ন হবে কোনো মানুষ তা করে উঠতে পারে না। সকল ভূখণ্ডের বায়ুকে প্রক্ষালিত করে আমি নির্মল করে তুলবো এবং ধরাধাম থেকে দানবদের সকল চিহ্ন সমূলে উৎপাটন করবো। ইতিমধ্যেই আমি আরম্ভ করেছি, এবং আমার শাস্তিদানের কার্যের প্রথম ধাপটি আমি শুরু করবো অতিকায় লাল ড্রাগনের আবাসস্থলে। এভাবে দেখা যায় যে আমার শাস্তি সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উপর বর্ষিত হয়েছে, এবং অতিকায় লাল ড্রাগন ও সকল প্রকারের অপরিচ্ছন্ন আত্মারা আমার শাস্তি এড়াতে নিতান্তই অক্ষম হবে, কারণ সকল ভূখণ্ডের উপর আমি দৃষ্টি রাখি। পৃথিবীবক্ষে আমার কার্য যখন নিষ্পন্ন হয়ে যাবে, অর্থাৎ, বিচারের যুগ যখন সমাপ্ত হবে, তখনই আমি আনুষ্ঠানিকভাবে অতিকায় লাল ড্রাগনকে শাস্তিদান করবো। আমার লোকেরা সুনিশ্চিতভাবে অতিকায় লাল ড্রাগনের প্রতি আমার ধার্মিক শাস্তিদান চাক্ষুষ করবে, আমার ন্যায়পরায়ণতার কারণে অবশ্যই তারা সাধুবাদ বর্ষণ করবে, এবং আমার ন্যায়পরায়ণতার কারণে নিশ্চিতভাবেই তারা চিরকালব্যাপী আমার পবিত্র নামের মহিমাকীর্তন করবে। এখন থেকে তোমরা আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবে, এবং দেশদেশান্ত ব্যাপী, নিয়ত ও চিরকাল ধরে, আনুষ্ঠানিকভাবে আমার বন্দনা করবে!
বিচারের যুগ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হবে, তখন আমি আমার কার্যের উপসংহার টানার ক্ষেত্রে কোনো তাড়াহুড়ো করবো না, বরং তার মধ্যে আমি শাস্তিদানের যুগের সাক্ষ্যপ্রমাণ অঙ্গীভূত করবো এবং আমার সকল লোকজনকে এই সাক্ষ্যপ্রমাণ চাক্ষুষ করার সুযোগ দেবো; এতে আরো বেশি ফললাভ হবে। এই সাক্ষ্যপ্রমাণের মাধ্যমেই আমি অতিকায় লাল ড্রাগনকে শাস্তিদান করি, এবং আমার লোকজনকে আমি তা তাদের স্বচক্ষে দর্শন করাবো, যাতে তারা আমার স্বভাবের বিষয়ে আরো বেশি অবগত হয়। আমার লোকজন যখন আমায় উপভোগ করে তখনই অতিকায় লাল ড্রাগন শাস্তিপ্রাপ্ত হয়। অতিকায় লাল ড্রাগনের লোকেদের জাগ্রত করে তার বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহ করানোই হল আমার পরিকল্পনা, এবং এই পদ্ধতির দ্বারাই আমি আমার লোকজনদের নিখুঁত করে তুলি, এবং আমার সকল লোকেদের জন্য এ হল জীবনে বিকশিত হওয়ার এক প্রকৃষ্ট সুযোগ। উজ্জ্বল চন্দ্রের উদয়মাত্র প্রশান্ত রাত্রি তৎক্ষণাৎ চূর্ণবিচূর্ণ হয়। চন্দ্র যদিও বিখণ্ডিত, তবু মানুষের মেজাজ চনমনে, প্রশান্তচিত্তে জ্যোৎস্নার নিচে বসে তারা চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত মনোরম দৃশ্যটির তারিফ করে। মানুষ তার আবেগকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না; মনে হয় সে বুঝি তার চিন্তাভাবনা বিগত দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়, যেন-বা সে সম্মুখবর্তী ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে দেখতে চায়, যেন সে বর্তমান সময়কে উপভোগ করছে। তার মুখে এক স্মিত হাস্য ফুটে ওঠে, এবং স্নিগ্ধ বাতাসে একটা মন-মাতানো সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে; যখন এক মৃদুমন্দ বাতাস বইতে শুরু করে, তখন মানুষ সেই মনোরম সুগন্ধ টের পায়, এবং মনে হয় সে যেন সৌরভে বুঁদ হয়ে গেছে, উঠে দাঁড়াতেও পারছে না। ঠিক এই মুহূর্তেই আমি স্বয়ং মানুষের মাঝে এসেছি, এবং মানুষ সেই মনোমুগ্ধকর সুঘ্রাণের এক তীব্রতর অনুভূতি লাভ করে, এবং এভাবে সকল মানুষ এই সৌরভের মধ্যে স্থিতিলাভ করে। মানুষের প্রতি আমি সৌহার্দ্যপূর্ণ, মানুষ আমার সঙ্গে সুসমন্বিতভাবে বসবাস করে, আমার বিষয়ে তার মনোভাব আর অসঙ্গতিপূর্ণ নয়, মানুষের অপারগতাগুলি আমি আর কর্তন করি না, মানুষের মুখমণ্ডলে আর কোনো প্রপীড়িত ভঙ্গিমা লক্ষিত হয় না, এবং মৃত্যু এসে আর সমগ্র মানবজাতিকে বিপন্ন করে না। আজ, মানুষের সাথে একত্রে আমি বিচারের যুগের মধ্যে অগ্রসর হই, তার সাথে পাশাপাশি হেঁটে এগিয়ে চলি। আমি আমার কার্য সম্পাদন করছি, অর্থাৎ বলা যায়, মানুষের মাঝে আমার যষ্টির আঘাত নেমে আসে, এবং সেই আঘাত আছড়ে পড়ে মানুষের মধ্যে যা বিদ্রোহাত্মক, তা-র উপর। মানুষের দৃষ্টিতে, আমার যষ্টি বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন বলে বোধ হয়: তা নেমে আসে আমার সকল শত্রুর উপর এবং সহজে তাদের নিষ্কৃতি দেয় না; যারা আমার বিরোধিতা করে, তাদের সকলের উপর এই যষ্টি তার সহজাত কর্ম সম্পন্ন করে; যারা আমার হস্তগত তারা সকলেই আমার অভিপ্রায় অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব সম্পাদন করে, এবং কখনো তারা আমার ইচ্ছার অবমাননা করেনি বা তাদের উপাদান পরিবর্তন করেনি। ফলস্বরূপ, জলরাশি গর্জে উঠবে, পর্বতরাজি ধ্বস্ত হবে, সুবিশাল নদনদীগুলি একাধিক ধারায় খণ্ডিত হয়ে যাবে, মানুষ চিরকাল ঈশ্বরের রীতিনীতির পরিবর্তন আকাঙ্ক্ষা করবে, সূর্য স্তিমিত হয়ে আসবে, চন্দ্র হবে অন্ধকারাচ্ছন্ন, মানুষের শান্তিতে জীবনযাপনের দিন বিগত হবে, ভূপৃষ্ঠে আর প্রশান্তিমগ্ন কাল বিরাজ করবে না, স্বর্গ কখনো আর শান্ত ও সমাহিত রইবে না, এবং আর তারা সহ্য করবে না। সবকিছু নবায়িত হবে এবং স্ব-স্ব আদি অবয়ব ফিরে পাবে। পৃথিবীর বুকে সকল পরিবার ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, ধরাতলে সকল রাষ্ট্র খণ্ডবিখণ্ড হবে; স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে পুনর্মিলনের দিন বিগত হবে, মাতা ও পুত্রের মধ্যে কখনো আর দেখাসাক্ষাৎ হবে না, পিতা ও পুত্রী আর কখনো একত্রে সম্মিলিত হবে না। পৃথিবীর বুকে এতদিন যাকিছু ছিল সকলই আমার দ্বারা চূর্ণবিচূর্ণ হবে। মানুষকে নিজেদের ভাবাবেগগুলি মুক্ত করার সুযোগ আমি দিই না, কারণ আমি আবেগরহিত, এবং মানুষের আবেগকে আমি এক চূড়ান্ত মাত্রায় অপছন্দ করতে শুরু করেছি। মানুষের মধ্যে বিদ্যমান আবেগের কারণেই আমি একপাশে নিক্ষিপ্ত হয়েছি, এবং এইভাবে, তাদের দৃষ্টিতে আমি এক “অন্য লোক”-এ পর্যবসিত হয়েছি; মানুষে-মানুষে পারস্পরিক আবেগময়তার কারণেই আমি বিস্মৃত হয়েছি; মানুষের আবেগের হেতুই সে তার “বিবেকবোধ” তুলে ধরার সুযোগকে আঁকড়ে ধরে; মানুষের আবেগের হেতুই আমার শাস্তিদানের বিষয়ে সে সদাই ক্লান্ত; মানুষের আবেগের কারণেই সে আমায় পক্ষপাতদুষ্ট ও ন্যায়বিচারহীন বলে অভিহিত করে, এবং বলে থাকে যে বিষয়াদির পরিচালনার ক্ষেত্রে আমি নাকি মানুষের অনুভূতির প্রতি বিবেচনাবিহীন। পৃথিবীবক্ষে আমারও কি জ্ঞাতি-কুটুম্ব রয়েছে? আমার সমগ্র পরিচালনামূলক পরিকল্পনার স্বার্থে, কে কবে, আমার মতো আহার-নিদ্রার চিন্তামাত্র না করে, দিবারাত্র পরিশ্রম করেছে? মানুষ কেমন করে ঈশ্বরের সাথে তুলনীয় হতে পারে? মানুষ কীভাবে ঈশ্বরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে? ঈশ্বর, যিনি সৃজন করেন, তিনি কেমন করে, সৃজিত মানুষের সমগোত্রীয় হতে পারেন? কোন উপায়ে আমি সর্বদাই মর্ত্যলোকে মানুষের সঙ্গে একত্রে বসবাস ও কর্ম সম্পাদন করতে পারি? কে-ই বা আমার হৃদয়ের নিমিত্ত উদ্বেগ অনুভব করতে সক্ষম? মানুষের প্রার্থনা কি তা পারে? একদা আমি মানুষের সাথে মিলিত হয়ে একত্রে পথ চলতে সম্মত হয়েছিলাম—এবং হ্যাঁ, আজ অবধি মানুষ আমার প্রযত্ন ও সুরক্ষার অধীনে জীবনধারণ করেছে, কিন্তু এমন একটা দিন কি কখনো আসবে যখন মানুষ নিজেকে আমার তত্ত্বাবধান থেকে বিযুক্ত করতে পারবে? যদিও মানুষ কখনোই আমার হৃদয়ের নিমিত্ত নিজেকে দুশ্চিন্তায় ভারাক্রান্ত করেনি, তবু, কে-ই বা এক নিরালোক ভূখণ্ডে জীবনযাপন অব্যাহত রাখতে পারে? শুধুমাত্র আমার আশীর্বাদের দরুনই আজ অবধি মানুষ প্রাণধারণ করে রয়েছে।
এপ্রিল ৪, ১৯৯২