ঈশ্বর এবং মানুষ একসাথে বিশ্রামে প্রবেশ করবে

সূচনাকালে, ঈশ্বর বিশ্রামে ছিলেন। তখন পৃথিবীতে না-ছিল কোনো মানুষ, না-ছিল অন্য কোনোকিছু, এবং ঈশ্বর তখনও তাঁর কাজ শুরু করেন নি। মানবজাতি যখন থেকে অস্তিত্ব লাভ করল এবং তারপর মানবজাতি যখন দুর্নীতিগ্রস্ত হল কেবলমাত্র তখনই ঈশ্বর তাঁর ব্যবস্থাপনার কাজ আরম্ভ করলেন; তখন থেকে তিনি আর বিশ্রাম নিলেন না, বরং, তার পরিবর্তে, মানবজাতির মাঝে নিজেকে ব্যস্ত রাখা আরম্ভ করলেন। মানবজাতির দুর্নীতির কারণে, এবং তারসাথে তাঁর প্রধান দূতের বিদ্রোহের কারণেও, ঈশ্বর তাঁর বিশ্রাম হারিয়েছেন। ঈশ্বর যদি শয়তানকে পরাজিত না করেন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত মানবজাতিকে উদ্ধার না করেন, তবে তিনি আর কখনোই বিশ্রামে প্রবেশ করতে সক্ষম হবেন না। মানুষের যেমন বিশ্রামের অভাব, তেমনই ঈশ্বরেরও, এবং তিনি যখন আবার বিশ্রাম নেবেন, তখন মানুষও নেবে। বিশ্রামের মধ্যে জীবনযাপন করার অর্থ হল এমন এক জীবন যেখানে যুদ্ধ নেই, মালিন্য নেই এবং অবিরত অধার্মিকতা নেই। অর্থাৎ বলা যায়, তা শয়তানের বিশৃঙ্খলা বর্জিত (এখানে “শয়তান” বলতে শত্রুশক্তিকে বোঝানো হয়েছে) এবং শয়তানের দুর্নীতি মুক্ত এক জীবন, আর তাতে ঈশ্বরের কোনো বিরোধী শক্তির আক্রমণের প্রবণতাও নেই; এ এমন এক জীবন যেখানে সব কিছুই তার নিজস্ব ধরণকে অনুসরণ করে, এবং সৃষ্টির প্রভুকে উপাসনা করতে পারে, এবং যেখানে স্বর্গ ও পৃথিবী সম্পূর্ণ প্রশান্তিময়—“মানুষের বিশ্রামপূর্ণ জীবন” বলতে এমন-ই বোঝায়। ঈশ্বর যখন বিশ্রাম করবেন, তখন পৃথিবীতে অধার্মিকতা আর টিকে থাকবে না, শত্রু শক্তির আর কোনো আক্রমণও থাকবে না, এবং মানবজাতি এক নতুন ক্ষেত্রে প্রবেশ করবে—শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট এক মানবজাতি আর থাকবে না, বরং সেই মানবজাতি থাকবে যাকে শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হওয়ার পর উদ্ধার করা হয়েছে। মানবজাতির বিশ্রাম নেওয়ার দিনটিই হবে ঈশ্বরেরও বিশ্রামের দিন। মানবজাতির বিশ্রামে প্রবেশের অক্ষমতার কারণেই ঈশ্বর তাঁর বিশ্রাম হারিয়েছেন, এর কারণ এই নয় যে তিনি মূলত বিশ্রাম নিতে অক্ষম ছিলেন। বিশ্রামে প্রবেশের অর্থ এই নয় যে সবকিছুর গতি থেমে যাবে অথবা তাদের উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে, বা তার অর্থ এও নয় যে ঈশ্বর কাজ করা বন্ধ করে দেবেন বা মানুষ জীবনধারণ করা বন্ধ করে দেবে। বিশ্রামে প্রবেশের লক্ষণ হলো যখন শয়তান ধ্বংস হয়ে যাবে, যখন সেই দুষ্টজন যারা তার মন্দ কর্মে যোগ দিয়েছিল তাদের শাস্তি দেওয়া হবে এবং নিশ্চিহ্ন করা হবে, এবং যখন ঈশ্বরের প্রতি সকল বিরূপ শক্তির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ঈশ্বরের বিশ্রামে প্রবেশ করার অর্থ হল যে তিনি আর মানবজাতির পরিত্রাণের কার্যটি পরিচালনা করবেন না। মানবজাতির বিশ্রামে প্রবেশ করার অর্থ হল এই, যে, সমগ্র মানবজাতি ঈশ্বরের আলোর মধ্যে এবং তাঁর আশীর্বাদের অধীন হয়ে, শয়তানের কলুষতা থেকে মুক্ত হয়ে বসবাস করবে, এবং, আর কোন অধার্মিকতা সংঘটিত হবে না। ঈশ্বরের যত্নে, মানুষ পৃথিবীতে স্বাভাবিকভাবে বাস করবে। যখন ঈশ্বর এবং মানবজাতি একসাথে বিশ্রামে প্রবেশ করবে, এর অর্থ হল, মানবজাতিকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং শয়তান ধ্বংস হয়ে গেছে, মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের কাজ সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন হয়েছে। ঈশ্বর আর মানুষের মধ্যে কাজ করা চালিয়ে যাবেন না, এবং তারা আর শয়তানের আধিপত্যের অধীন হয়ে জীবনযাপন করবে না। এইভাবে, ঈশ্বর আর ব্যস্ত থাকবেন না, এবং মানুষ আর ক্রমাগত চলমান থাকবে না; ঈশ্বর এবং মানবজাতি একই সাথে বিশ্রামে প্রবেশ করবে। ঈশ্বর তাঁর আদি স্থানে ফিরে আসবেন এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের নিজ নিজ স্থানে ফিরে যাবে। এইসবই সেই গন্তব্য যেখানে ঈশ্বরের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার একবার সমাপ্তি হলে ঈশ্বর এবং মানুষ বসবাস করবে। ঈশ্বরের রয়েছে ঈশ্বরের নিজের গন্তব্য, এবং মানবজাতির রয়েছে তার নিজের গন্তব্য। বিশ্রাম করার সময়, ঈশ্বর সমস্ত মানুষকে পৃথিবীতে তাদের জীবনের পথ দেখাতে থাকবেন, এবং তাঁর আলোতে থাকাকালীন, তারা স্বর্গের একমাত্র সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করবে। ঈশ্বর আর মানবজাতির মধ্যে বসবাস করবেন না, মানুষও ঈশ্বরের গন্তব্যে তাঁর সাথে বসবাস করতে সক্ষম হবে না। ঈশ্বর এবং মানুষ একই রাজ্যে বাস করতে পারে না; বরং, উভয়েরই নিজস্ব জীবনযাপনের পদ্ধতি রয়েছে। ঈশ্বরই সেই অদ্বিতীয় যিনি সমগ্র মানবজাতিকে পথপ্রদর্শন করেন, এবং মানবজাতির সমস্তটাই হল ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার কাজের স্ফটিককরণ। মানুষ হল তারা, যাদের নেতৃত্ব দেওয়া হয়, এবং তারা ঈশ্বরের মতো একই উপাদানে তৈরী নয়। “বিশ্রাম” করার অর্থ হল নিজের আসল স্থানে ফিরে যাওয়া। অতএব, যখন ঈশ্বর বিশ্রামে প্রবেশ করেন, তার অর্থ হল, তিনি তাঁর আসল স্থানে ফিরে গেছেন। তিনি আর পৃথিবীতে বসবাস করবেন না বা মানবজাতির আনন্দ ও দুঃখ ভাগ করে নিতে তাদের মাঝে থাকবেন না। যখন মানুষ বিশ্রামে প্রবেশ করে, তার অর্থ হল, তারা সৃষ্টির প্রকৃত লক্ষ্য হয়ে উঠেছে; তারা পৃথিবীতে থেকে ঈশ্বরের উপাসনা করবে, এবং স্বাভাবিক মানবজীবন যাপন করবে। মানুষ আর ঈশ্বরের আনুগত্যহীন থাকবে না বা তাঁর প্রতিরোধ করবে না, এবং আদম ও হবার আদি জীবনে ফিরে যাবে। বিশ্রামে প্রবেশ করার পর এগুলিই হবে ঈশ্বর ও মানুষের নিজ নিজ জীবন ও গন্তব্যস্থল। শয়তানের এবং ঈশ্বরের মধ্যে যুদ্ধে শয়তানের পরাজয় এক অনিবার্য প্রবণতা। যেমন, ঈশ্বরের ব্যবস্থাপনার কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরে তাঁর বিশ্রামে প্রবেশ, এবং মানবজাতির পুর্ণাঙ্গ পরিত্রানলাভ ও বিশ্রামে প্রবেশ একইভাবে অনিবার্য প্রবণতা হয়ে উঠেছে। মানবজাতির বিশ্রামস্থান হল পৃথিবী, এবং ঈশ্বরের বিশ্রামস্থান হল স্বর্গ। যেহেতু মানুষ বিশ্রামরত ঈশ্বরের উপাসনা করে, তারা পৃথিবীতে বাস করবে, এবং যেহেতু ঈশ্বর অবশিষ্ট মানবজাতিকে বিশ্রামে নেতৃত্ব দেন, তিনি স্বর্গ থেকেই তাদের নেতৃত্ব দেবেন, পৃথিবী থেকে নয়। ঈশ্বর তখনও আত্মাই থাকবেন, এদিকে মানুষ তখনও দেহেই থাকবে। ঈশ্বর এবং মানুষ উভয়ে এক পৃথক পদ্ধতিতে বিশ্রাম নেয়। ঈশ্বর যখন বিশ্রাম করেন, তখন তিনি আসবেন ও মানুষের মধ্যে আবির্ভূত হবেন; মানুষের বিশ্রামের সময়, তারা ঈশ্বরের দ্বারা পরিচালিত হয়ে স্বর্গ পরিদর্শন করবে এবং সেইসাথে সেখানকার জীবন উপভোগ করবে। ঈশ্বর এবং মানবজাতি বিশ্রামে প্রবেশ করার পরে, শয়তানের আর অস্তিত্ব থাকবে না; একইভাবে, সেই দুষ্টজনদেরও অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে। ঈশ্বর এবং মানবজাতির বিশ্রামলাভের পূর্বে, সেই দুষ্ট ব্যক্তিরা, যারা একদা পৃথিবীতে ঈশ্বরকে নিগৃহীত করেছিল, এবং সেইসাথেযে শত্রুরা সেখানে তাঁর প্রতি আনুগত্যহীন ছিল, তারাও ইতিমধ্যেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে; অন্তিম সময়ের বিশাল বিপর্যয়গুলির দ্বারা তাদের নির্মূল করা হবে। একবার সেই দুষ্টজনেরা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে, পৃথিবী আর কখনোই শয়তানের হয়রানির সম্মুখীন হবে না। তেমন হলে তবেই মানবজাতি সম্পূর্ণ পরিত্রাণ লাভ করবে এবং ঈশ্বরের কাজ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সমাপ্ত হবে। এগুলিই হল ঈশ্বর ও মানবজাতির বিশ্রামে প্রবেশের পূর্বশর্ত।

সমস্ত কিছুর শেষের ঘনিয়ে আসা, ঈশ্বরের কাজের পরিপূর্ণতার নির্দেশ দেয়, সেইসাথে তা মানবজাতির উন্নয়নের সমাপ্তিরও ইঙ্গিত দেয়। এর মানে হল যে শয়তানের দ্বারা কলুষিত মানবজাতি তাদের উন্নতির চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হবে, এবং আদম ও হবার উত্তরসূরীরা তাদের বংশবিস্তার সম্পূর্ণ করবে। এর অর্থ এটাও যে, শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হওয়ার কারণে মানবজাতির বিকাশ অব্যাহত থাকা সম্ভব হবে না। আদিতে আদম এবং হবা ভ্রষ্ট ছিল না, কিন্তু যে আদম ও হবাকে এদন উদ্যান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল তারা ছিল শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট। যখন ঈশ্বর এবং মানুষ একসাথে বিশ্রামে প্রবেশ করবে, তখন আদম এবং হবা—যারা এদন উদ্যান থেকে বিতাড়িত হয়েছিল—এবং তাদের বংশধররা অবশেষে সমাপ্তিতে এসে পৌঁছবে। ভবিষ্যতের মানবজাতি তবুও আদম ও হবার বংশধরদের দ্বারাই গঠিত হবে, কিন্তু তারা শয়তানের আধিপত্যের অধীনে বসবাসকারী মানুষ হবে না। বরং তারা হবে সেই সব মানুষ যাদের উদ্ধার করা হয়েছে এবং পরিশোধন ঘটেছে। তা হবে এমন এক মানবজাতি যার বিচার এবং শাস্তিদান করা হয়েছে, এবং এমন এক মানবজাতি যা পবিত্র। মানবজাতি মূলত যেমন ছিল, এই মানুষেরা তেমন হবে না; প্রায় এমন বলা যেতেই পারে যে আদম ও হবার আদি মানবজাতির থেকে তারা হবে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন ধরনের এক মানবজাতি। যারা শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হয়েছিল তাদের সকলের মধ্য থেকে এই মানুষদের নির্বাচিত করা হবে, এবং তারা হবে সেই ব্যক্তি, যারা শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের বিচার ও শাস্তির সময় দৃঢ় অবস্থানে ছিল; এরাই হবে দুর্নীতিগ্রস্ত মানবজাতির মধ্যে মানুষের শেষ অবশিষ্ট দল। কেবলমাত্র এই মানুষেরাই ঈশ্বরের সাথে অন্তিম বিশ্রামে প্রবেশ করতে সক্ষম হবে। অন্তিম সময়ে—অর্থাৎ পরিশোধনের চূড়ান্ত কাজ চলার সময়—ঈশ্বরের শাস্তি ও বিচারের কাজ চলাকালীন যারা অটল থাকতে সক্ষম, তারাই হবে সেই জনগণ যারা ঈশ্বরের পাশাপাশি সর্বশেষ বিশ্রামে প্রবেশ করবে; অর্থাৎ, যারা বিশ্রামের পর্যায়ে প্রবেশ করবে, তারা শয়তানের প্রভাবমুক্ত হবে এবং ঈশ্বরের শুদ্ধিকরণের অন্তিম কাজের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর তাঁর দ্বারা অর্জিত হবে। এই মানুষেরা, যারা অবশেষে ঈশ্বরের দ্বারা অর্জিত হবে, তারাই অন্তিম বিশ্রামে প্রবেশ করবে। নির্যাসগত ভাবে, ঈশ্বরের শাস্তিবিধান ও বিচারের কাজের উদ্দেশ্য হল মানবজাতিকে চরম বিশ্রামের স্বার্থে পরিশুদ্ধ করা; এই পরিশোধন ছাড়া, মানবজাতির কাউকেই প্রকার অনুযায়ী নানা শ্রেণীতে ভাগ করা যাবে না, বা বিশ্রামে প্রবেশ করানো যাবে না। এই কাজই হল মানুষের বিশ্রামে প্রবেশ করার একমাত্র পথ। শুধুমাত্র ঈশ্বরের শুদ্ধিকরণই মানুষকে তার অ-ন্যায়পরায়ণতা থেকে পরিশুদ্ধ করবে, এবং শুধুমাত্র তাঁর শাস্তিবিধান ও বিচারের কাজই মানবজাতির সেই সব আনুগত্যহীন সদস্যদের আলোয় নিয়ে আসবে, এবং এইভাবে উদ্ধারযোগ্য মানুষদের আলাদা করবে যাদের উদ্ধার করা সম্ভব নয় তাদের থেকে, এবং, যারা থেকে যাবে তাদের আলাদা করবে যারা থাকবে না তাদের থেকে। এই কাজ শেষ হলে যাদের থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে তারা সকলেই পরিশুদ্ধ হবে এবং মানবিকতার এক উন্নততর পর্যায়ে প্রবেশ করবে যে পর্যায়ে তারা পৃথিবীতে এক সুন্দরতর দ্বিতীয় জীবন উপভোগ করবে; অর্থাৎ তারা তাদের মানব জীবনের বিশ্রামের দিন শুরু করবে ও ঈশ্বরের সঙ্গে সহাবস্থান করবে। যাদের থাকার অনুমতি দেওয়া হবে না, তাদের শাস্তিবিধান ও বিচার করার পর তাদের প্রকৃত চরিত্র সম্পূর্ণরূপে অনাবৃত হবে, যার পর তাদের সকলকে ধ্বংস করা হবে, এবং শয়তানের মতোই, আর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অনুমতি পাবে না। ভবিষ্যতের মানবজাতিতে এই ধরনের মানুষ আর অন্তর্ভুক্ত হবে না; এই ধরনের মানুষ অন্তিম বিশ্রামের দেশে প্রবেশ করার উপযুক্ত নয়, এবং ঈশ্বর ও মানুষের যৌথ বিশ্রামের দিনে অংশ নেওয়ারও উপযুক্ত নয়, কারণ তারা শাস্তির লক্ষ্য, তারা দুষ্ট ও অ-ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি। তাদের একবার মুক্তি দেওয়া হয়েছে, এবং তাদের বিচার ও শাস্তিপ্রদানও হয়েছে; তারা একবার ঈশ্বরের সেবাও করেছে। তবুও, যখন অন্তিম সময় উপস্থিত হবে, তারা তাদের পাপাচার এবং আনুগত্যহীনতা ও মুক্তিলাভের অযোগ্যতার কারণে বহিষ্কৃত ও ধ্বংস হয়ে যাবে; ভবিষ্যতের পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব আর থাকবে না, এবং ভবিষ্যতের মানবজাতির মধ্যে তারা আর বসবাস করতে পারবে না। মানবজাতির মধ্যে যারা পবিত্র তারা যখন বিশ্রামে প্রবেশ করবে, তখন সকল মন্দকর্মকারী, এবং যাদের উদ্ধার করা হয়নি, তারা মৃতদের আত্মা হোক বা তখনও দেহে বসবাসকারী মানুষ, তাদের ধ্বংস করা হবে। এই দুষ্টকর্মকারী আত্মা এবং মানুষের ক্ষেত্রে, বা ধার্মিক মানুষের আত্মা এবং যারা ন্যায়পরায়ণতার পালন করে তাদের ক্ষেত্রেও, তারা কোন যুগে আছে তা নির্বিশেষে, যারা মন্দ কাজ করবে তাদের সকলকে শেষ পর্যন্ত ধ্বংস করা হবে, এবং যারা ধার্মিক তারা টিকে থাকবে। কোন ব্যক্তি অথবা আত্মা পরিত্রাণ লাভ করবে কিনা তা যে সম্পূর্ণরূপে অন্তিম যুগের কাজের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়, তেমন নয়; বরং, তা নির্ধারিত হয় তারা ঈশ্বরের প্রতিরোধ করেছে কিনা অথবা তাঁর প্রতি আনুগত্যহীন ছিল কিনা তার ভিত্তিতে। পূর্ববর্তী যুগের যে ব্যক্তিগণ মন্দ কাজ করেছে এবং পরিত্রাণ অর্জন করতে পারেনি, নিঃসন্দেহে, তারা শাস্তির লক্ষ্যবস্তু হবে, এবং বর্তমান যুগে যারা মন্দ কাজ করে এবং যাদের উদ্ধার করা যায় না, তারাও নিশ্চিতভাবেই দণ্ডের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। মানুষকে ভালো এবং মন্দের ভিত্তিতে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়, তারা কোন যুগে বাস করে সেই ভিত্তিতে নয়। একবার এইভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়ে গেলেই যে তারা অবিলম্বে দণ্ডিত অথবা পুরস্কৃত হবে, এমন নয়; বরং, ঈশ্বর অন্তিম সময়ে তাঁর বিজয়কার্য সম্পন্ন করার পরেই কেবল দুষ্টের দণ্ডদান এবং শিষ্টের পুরস্কারদানের কার্যটি সম্পাদন করবেন। প্রকৃতপক্ষে, তিনি যখন থেকে মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য তাঁর কাজ শুরু করেছেন, তখন থেকেই তিনি মানুষকে ভালো এবং মন্দ এই দুই শ্রেণীতে পৃথক করে চলেছেন। বিষয়টা শুধু এই যে, তাঁর কার্য সমাপ্ত হলে তবেই তিনি ধার্মিকদের পুরস্কৃত করবেন এবং দুষ্টদের শাস্তি দেবেন; এমন নয় যে তাঁর কাজ শেষ হওয়ার পরে তিনি মানুষদের এই বিভাগগুলিতে বিভক্ত করবেন, এবং তারপরে অবিলম্বে দুষ্টের শাস্তিদান এবং শিষ্টের পুরস্কারদানের কাজে রত হবেন। বরং, এই কাজটি তখনই করা হবে যখন তাঁর কার্য সামগ্রিকভাবে নিষ্পন্ন হবে ঈশ্বরের দুষ্টকে শাস্তি দেওয়ার ও সাধু ব্যক্তিকে পুরস্কৃত করার চূড়ান্ত কাজের সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যই হল সমস্ত মানুষকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিশুদ্ধ করা যাতে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র এক মানবজাতিকে শাশ্বত বিশ্রাম দিতে পারেন। তাঁর এই পর্যায়ের কাজই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; এ হল তাঁর ব্যবস্থাপনার সম্পূর্ণ কাজের অন্তিম পর্যায়। ঈশ্বর যদি দুষ্টের ধ্বংসসাধন না করতেন, বরং, পরিবর্তে, তাদের থেকে যাওয়ার অনুমতি দিতেন, তাহলে সকল মানুষ এখনও বিশ্রামে প্রবেশ করতে অক্ষম থেকে যেত, এবং ঈশ্বর সমগ্র মানবজাতিকে একটি উত্তম জগতে নিয়ে আসতে সক্ষম হতেন না। সেই ধরনের কাজ সম্পূর্ণতা পেত না। যখন তাঁর কাজ শেষ হবে, সমগ্র মানবজাতি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয়ে উঠবে; কেবলমাত্র এই ভাবেই ঈশ্বর শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্রামের মধ্যে জীবনযাপন করতে সক্ষম হবেন।

মানুষ আজকালকারদিনে এখনও দৈহিক ইচ্ছাকে পরিত্যাগ করতে অক্ষম থেকে গিয়েছে; তারা দৈহিক, পার্থিব ও আর্থিক সুখ উপভোগকে অথবা তাদের কলুষিত স্বভাবকে পরিত্যাগ করতে পারে না। বেশীরভাগ মানুষই তাদের অন্বেষণের বিষয়ে অগভীর। প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের মানুষদের হৃদয়ে ঈশ্বরের স্থান একেবারেই হয় না; এমনকি আরও খারাপ ব্যপার হল, তারা ঈশ্বরকে ভয় করে না। তাদের অন্তরে ঈশ্বর নেই, এবং তাই ঈশ্বর যা করেন তা তারা উপলব্ধি করতে পারে না, এবং তাঁর উচ্চারিত বাক্যগুলি বিশ্বাস করতেও তারা অক্ষম। এই ধরনের মানুষ অত্যধিক দেহসর্বস্ব; তারা অত্যন্ত গভীরভাবে কলুষিত এবং তাদের মধ্যে সকলপ্রকার সত্যের অভাব রয়েছে। উপরন্তু, তারা বিশ্বাস করে না যে ঈশ্বর দেহে আবির্ভূত হতে পারেন। যে অবতাররূপী ঈশ্বরে অবিশ্বাস করে—অর্থাৎ, যে দৃশ্যমান ঈশ্বরে বা তাঁর কার্য ও বাক্যে বিশ্বাস করে না, এবং পরিবর্তে, স্বর্গের অদৃশ্য কোনো ঈশ্বরের উপাসনা করে—সে হল এমন ব্যক্তি যার অন্তরে ঈশ্বর নেই। এই ধরনের ব্যক্তিগণ ঈশ্বরের প্রতি বিদ্রোহী এবং প্রতিরোধী মনোভাবাপন্ন। তাদের মানবিকতা এবং যুক্তিবোধের অভাব রয়েছে, সত্যের কথা তো না বলাই ভালো। তদুপরি, এই ব্যক্তিগণ দৃশ্যমান ও স্পর্শযোগ্য ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে না, বরং অদৃশ্য ও স্পর্শাতীত ঈশ্বরকে সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য ও সবচেয়ে আনন্দদায়ক হিসাবে গণ্য করে। তারা যা খুঁজছে তা বাস্তব সত্য নয়, তা জীবনের প্রকৃত সারমর্মও নয়; এবং তা ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণও একেবারেই নয়। বরং তারা উত্তেজনা খোঁজে। যে সকল বস্তুই তাদের নিজস্ব বাসনা পূর্ণ করতে তাদের সর্বাধিকভাবে সক্ষম করে, তারা নিঃসন্দেহে সেইসকল বস্তুকেই বিশ্বাস করে এবং সেগুলিরই অনুসরণ করে। তারা কেবলমাত্র তাদের নিজেদের ইচ্ছা পূরণের জন্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, সত্যের সন্ধান করার জন্য নয়। এই ধরনের লোকেরা কি মন্দকর্মকারী নয়? তারা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী, এবং তারা বিন্দুমাত্রও বিশ্বাস করে না যে স্বর্গের ঈশ্বর তাদের মতো “ভালো লোকেদের” আদৌ ধ্বংস করবেন। পরিবর্তে, তারা বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর তাদের থেকে যাওয়ার অনুমতি দেবেন, এবং উপরন্তু, ঈশ্বরের জন্য অনেক কিছু করার, এবং তাঁর প্রতি পর্যাপ্ত “আনুগত্য” প্রদর্শনের কারণে, তিনি তাদের সুন্দরভাবে পুরস্কৃত করবেন। যদি তারা দৃশ্যমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করতো, যে মুহূর্তে তাদের বাসনা পূরণ হতো না, সাথে সাথেই তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাত করতো বা ক্রোধোন্মত্ত হয়ে উঠতো। সর্বক্ষণ নিজেদের বাসনা চরিতার্থ করতে চাওয়া নিকৃষ্ট কুকুরছানা হিসাবে তারা নিজেদেরকে প্রতিভাত হয়; তারা সত্য অন্বেষণকারী সততাপূর্ণ মানুষ নয়। এই ধরনের মানুষরাই হলো তথাকথিতভাবে খ্রীষ্টের অনুসরণ করা দুষ্টজন। যারা সত্যের অনুসন্ধান করে না হয়তো সত্যে বিশ্বাস করতেও পারে না, এবং, তারা সকলেই মানবজাতির ভবিষ্যত পরিণতি বুঝতেআরো বেশি অক্ষম, কারণ তারা দৃশ্যমান ঈশ্বরের কোনো কার্যে অথবা বাক্যে বিশ্বাস করে না—এবং এর মধ্যে রয়েছে তাদের মানবজাতির ভবিষ্যত গন্তব্যে বিশ্বাস রাখার অক্ষমতাও। অতএব, এমনকি যদি তারা দৃশ্যমান ঈশ্বরকে অনুসরণ করে চলে তাহলেও তারা মন্দকর্মই করে, এবং সত্যের সন্ধান করে না, এবং আমার যা প্রয়োজন তারা সেই সত্যের অনুশীলনও করে না। যারা বিশ্বাস করে না যে তারা ধ্বংস হতে পারে, আদতে তারাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। এই ব্যক্তিগণ সকলেই নিজেদেরকে অতিমাত্রায় বুদ্ধিমান বলে বিশ্বাস করে, এবং তারা মনে করে যে তারাই স্বয়ং সত্য অনুশীলনকারী লোক। তারা তাদের মন্দ আচরণকেই সত্য হিসাবে গণ্য করে এবং সেগুলিকেই লালন করে। এই ধরনের দুষ্ট লোকেরা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী হয়; তারা সত্যকে মতবাদ হিসাবে গ্রহণ করে এবং নিজেদের মন্দকর্মগুলিকে সত্য হিসাবে গ্রহণ করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা তারা যেমন কর্ম করেছে তেমনই ফল পাবে। মানুষ যত বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং যত বেশি অহংকারী হয়, তত বেশি করে তারা সত্য উপলব্ধি করতে অক্ষম থাকে; মানুষ যত বেশি করে স্বর্গের ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, ততই বেশি করে তারা ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে। এরাই সেই মানুষ যাদের দণ্ড দেওয়া হবে। মানবজাতি বিশ্রামে প্রবেশ করার আগে, প্রত্যেক ধরণের ব্যক্তির ক্ষেত্রেই, সেই ব্যক্তিকে দণ্ডদান দেওয়া হবে না পুরস্কৃত করা হবে, তা নির্ধারিত হবে সে সত্যের সন্ধান করেছে কিনা, ঈশ্বরকে জানে কিনা, এবং দৃশ্যমান ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে পেরেছে কিনা, তার ভিত্তিতে। যারা দৃশ্যমান ঈশ্বরের সেবা করা সত্ত্বেও তাঁকে চেনে নি বা তাঁর কাছে নিজেদের সমর্পণও করে নি, তাদের মধ্যে সত্যের অভাব রয়েছে। এই ধরনের মানুষেরা মন্দকর্মকারী, এবং মন্দকর্মকারীরা নিঃসন্দেহে দণ্ডের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে; উপরন্তু, তাদের দুষ্ট আচরণ অনুযায়ী তাদের দণ্ডদান করা হবে। ঈশ্বর মানুষের দ্বারা বিশ্বসনীয়, এবং তিনি তাদের আনুগত্যের যোগ্যও। যারা কেবল অস্পষ্ট এবং অদৃশ্য ঈশ্বরে বিশ্বাস করে তারা এমন ব্যক্তি যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না, এবং ঈশ্বরের কাছে নিজেদের সমর্পণ করতে অক্ষম। ঈশ্বরের বিজয়কার্য হওয়ার মধ্যে যদি এই ব্যক্তিরা দৃশ্যমান ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে না পারে, এবং আনুগত্যহীনই থেকে যায় ও দেহরূপে দৃশ্যমান ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করতে থাকে, তাহলে এই “অস্পষ্টবাদী” ব্যক্তিরা নিঃসন্দেহে ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। ঠিক যেমন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ—যে কোনো ব্যক্তি, যে মৌখিকভাবে ঈশ্বরের অবতারকে চিনতে পারা সত্ত্বেও ঈশ্বরের অবতারের কাছে সমর্পণের সত্য অনুশীলন করে না, পরিশেষে তাদের বহিষ্কার ও ধ্বংস করা হবে। তদুপরি, যদি কেউ দৃশ্যমান ঈশ্বরকে মৌখিকভাবে চিনতে পারা এবং তাঁর দ্বারা প্রকাশিত সত্য ভোজন ও পান করা সত্ত্বেও, অস্পষ্ট ও অদৃশ্য ঈশ্বরেরও সন্ধান চালিয়ে যায়, তাহলে সেও নিশ্চিতভাবেই ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। ঈশ্বরের কাজ শেষ হওয়ার পর যে বিশ্রামের সময় আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মানুষদের মধ্যে কেউই আর টিকে থাকতে সক্ষম হবে না, বা এই ধরনের ব্যক্তিদের মধ্যে একজনও সেই বিশ্রামের সময়ে থেকে যেতে পারবে না। দানবিক মানুষ হল তারা যারা সত্য অনুশীলন করে না; তাদের সারমর্ম হল ঈশ্বরের প্রতিরোধ ও অবাধ্যতা, এবং তাঁর কাছে সমর্পণ করার সামান্যতম অভিপ্রায়ও তাদের নেই। এই ধরণের সকল মানুষকেই ধ্বংস করা হবে। তোমার মধ্যে সত্য রয়েছে কিনা, এবং তুমি ঈশ্বরের বিরোধিতা করো কিনা, তা নির্ভর করে তোমার সারমর্মের উপর, তোমার চেহারার উপর বা তুমি মাঝে মাঝে কীভাবে কথা বলো বা আচরণ করো তার উপর নয়। কোন একজন ব্যক্তি ধ্বংস হবে কি না তা নির্ধারিত হয় তার সারমর্মের ভিত্তিতে; কোনো ব্যক্তির আচরণ এবং সত্যের সাধনার মাধ্যমে তার যে সারমর্ম প্রকাশিত হয়, সেই অনুসারেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মানুষের মধ্যে, যারা একে অপরের সাথে সমানভাবে এবং সমপরিমাণে কাজ করে চলেছে, যাদের মানবীয় সারমর্ম উত্তম এবং যারা সত্যের অধিকারী, সেই মানুষদেরই থাকতে দেওয়া হবে, পক্ষান্তরে যাদের মানবীয় সারাংশ মন্দ এবং যারা দৃশ্যমান ঈশ্বরকে অমান্য করে, তারাই ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। মানবজাতির গন্তব্যের সাথে সম্পর্কিত ঈশ্বরের সমস্ত কাজ বা বাক্য, প্রতিটি ব্যক্তির ব্যক্তিগত সারমর্ম অনুসারে যথাযথভাবে তার সাথে মোকাবিলা করবে; সামান্যতম ভ্রান্তিও এতে ঘটবে না, এবং একটিও ভুল করা হবে না। শুধুমাত্র মানুষ যখন কাজ করে, তখনই তাতে মানবীয় আবেগ বা অর্থ মিশ্রিত হয়। ঈশ্বর যে কাজ সম্পাদন করেন তা সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত; তিনি কখনোই কোনো প্রাণীকে মিথ্যা দোষারোপ করেন না। বর্তমানে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা মানবজাতির ভবিষ্যত গন্তব্য বুঝতে অক্ষম, এবং যারা আমার উচ্চারিত বাক্যগুলিতে বিশ্বাস রাখে না। যারা বিশ্বাস করে না তারা সকলে, সেইসাথে যারা সত্যের অনুশীলন করে না তারাও সকলেই দানব!

এখনকার দিনে, যারা অন্বেষণ করে এবং যারা তা করে না তারা সম্পূর্ণ পৃথক দুই শ্রেণীর মানুষ, তাদের গন্তব্যও সম্পূর্ণরূপেই ভিন্ন। যারা সত্যের জ্ঞান অনুসরণ করে চলে এবং সত্যের অনুশীলন করে, তাদের উদ্দেশ্যেই ঈশ্বর পরিত্রাণ নিয়ে আসবেন। যারা প্রকৃত পথ জানে না তারা দানব ও শত্রু; তারা প্রধান দেবদূতের বংশধর এবং তারা ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তু হবে। এমনকি যারা অস্পষ্ট ঈশ্বরকে ধার্মিকভাবে বিশ্বাস করে তারাও কি দানব নয়? যারা উত্তম বিবেকসম্পন্ন অথচ প্রকৃত পথকে গ্রহণ করে না তারাও দানব; তাদের সারমর্ম ঈশ্বরের প্রতিরোধী। যারা সত্য পথকে গ্রহণ করে না তারাই ঈশ্বরকে প্রতিরোধ করে, এবং এই ধরনের লোকেরা এমনকি যদি অনেক কষ্টও সহ্য করে থাকে, তবুও তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। যারা পৃথিবী ত্যাগ করতে ইচ্ছুক নয়, যারা তাদের পিতামাতার সাথে বিচ্ছেদ সহ্য করতে পারে না, এবং যারা তাদের নিজস্ব দৈহিক সুখভোগ থেকে নিজেদের মুক্তিলাভ সহ্য করতে পারে না, তারা ঈশ্বরের অবাধ্য, এবং তারা সকলেই ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তু হবে। যে-ই ঈশ্বরের অবতারে বিশ্বাস রাখে না, সে-ই দানবপ্রকৃতির, এবং, উপরন্তু, সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। যারা বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও সত্যের চর্চা করে না, যারা ঈশ্বরের অবতাররূপে বিশ্বাস করে না, এবং যারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে একেবারেই বিশ্বাস করে না তারাও ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তু হবে। যারা পরিমার্জনার কষ্ট সহ্য করেছে এবং দৃঢ় থেকেছে, তাদের সকলকে থাকতে দেওয়া হবে; এরাই হল সেই ব্যক্তি যারা প্রকৃতঅর্থেই বিচার সহ্য করেছে। যে ঈশ্বরকে চিনতে পারে না সেই হল শত্রু; অর্থাৎ, যে ঈশ্বরের অবতারকে চিনতে পারে না—তা সে এই স্রোতের ভিতরেই থাকুক অথবা বাইরে—সে খ্রীষ্টবিরোধী! ঈশ্বরে অবিশ্বাস করা সেই ঈশ্বর-প্রতিরোধকারীগণ ব্যতীত আর কে-ই বা শয়তান, আর কারা-ই বা দানব, আর কারা-ই বা ঈশ্বরের শত্রু? এরাই কি সেই ব্যক্তি নয় যারা ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যহীন? এরাই কি সেই মানুষ নয় যারা দাবি করে যে তাদের বিশ্বাস রয়েছে, অথচ যাদের মধ্যে সত্যের অভাব বিদ্যমান? এরাই কি সেই মানুষ নয় যারা ঈশ্বরের সাক্ষ্য বহন করতে অক্ষম হলেও কেবলমাত্র আশীর্বাদ আদায়ের চেষ্টা করে? তুমি আজও সেই দানবদের সাথে মিশছ এবং তাদের প্রতি বিবেকবানতা ও প্রীতি পোষণ করছ, কিন্তু তা করে, তুমি কি শয়তানের প্রতি তোমার শুভেচ্ছা প্রসারিত করছ না? তুমি কি সেই দানবদেরই দলভুক্ত নও? আজকালকার মানুষ যদি এখনও ভাল এবং মন্দের মধ্যে পার্থক্য করতে অক্ষম হয়, এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা অন্বেষণ করার কোনো অভিপ্রায় ছাড়াই অন্ধভাবে প্রীতিপূর্ণ ও করুনাময় হয়ে চলতে থাকে, অথবা ঈশ্বরের অভিপ্রায়কে নিজেদের বলে, আশ্রয় দিতে কোনোভাবেই সক্ষম না হয়, তাহলে তাদের করুণতর পরিণতি হবে। যে ব্যক্তিই দেহ রূপে আবির্ভূত ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস না রাখে, সে-ই ঈশ্বরের শত্রু। তুমি যদি শত্রুপক্ষের প্রতি বিবেকবান এবং প্রীতিপূর্ণ হয়ে থাকো, তাহলে কি তোমার মধ্যে ন্যায়পরায়ণতার বোধের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে না? যাদের আমি ঘৃণা করি এবং যাদের সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করি, তাদের সঙ্গেই যদি তুমি সামঞ্জস্যপূর্ণ হও, এবং তোমার মধ্যে তবুও তাদের প্রতি প্রীতি অথবা ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকে থাকে, তাহলে কি তুমি আনুগত্যহীন নও? তুমি কি ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের প্রতিরোধ করছ না? এমন ব্যক্তি কি সত্যের অধিকারী হতে পারে? মানুষ যদি যদি শত্রুপক্ষের প্রতি বিবেকবান হয়, দানবদের প্রতি প্রীতি এবং শয়তানের প্রতি করুণা পোষণ করে, তবে কি তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ঈশ্বরের কাজকে ব্যাহত করছে না? যারা শুধুমাত্র যীশুতে বিশ্বাস রাখে এবং অন্তিম সময়ের ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখে না, সেইসাথে তারাও, যারা মৌখিকভাবে ঈশ্বরের অবতারে বিশ্বাসী হওয়ার দাবি করা সত্ত্বেও মন্দ কাজ করে চলে, তারা সকলেই খ্রীষ্টবিরোধী, এবং যারা এমনকি ঈশ্বরে বিশ্বাসই করে না তাদের কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। এই সকল মানুষ ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। মানুষ অপর মানুষকে বিচার করে তাদের আচরণের মানদণ্ডে; যাদের আচরণ ভালো তারা ধার্মিক, আর যাদের আচরণ নিকৃষ্ট তারা দুষ্ট। ঈশ্বর যে মানদণ্ডের উপর ভিত্তি করে মানুষকে বিচার করেন তা হল, মনুষ্যগণ তাদের সারমর্ম তাঁর কাছে সমর্পণ করেছে কি না; যে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে সে ধার্মিক ব্যক্তি, এবং যে তা করে না সে একজন শত্রু এবং দুষ্ট ব্যক্তি, তা সেই ব্যক্তির আচরণ ভালোই হোক বা খারাপ, এবং তাদের কথাবার্তা ঠিক বা ভুল যাই হোক না কেন। কোনো কোনো ব্যক্তি ভবিষ্যতে একটি শুভ গন্তব্য অর্জনের উদ্দেশ্যে উত্তম কর্মের ব্যবহার করতে চায়, এবং কেউ কেউ শুভ গন্তব্য অর্জনের উদ্দেশ্যে উত্তম বাক্যের প্রয়োগ করতে চায়। সকলেই ভুলবশত বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর মানুষের আচরণ দেখে বা তাদের বক্তব্য শুনে তাদের পরিণাম নির্ধারণ করেন; তাই অনেকেই এর সুবিধা নিয়ে ক্ষণিক কোনো অনুগ্রহ আদায় করে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ঈশ্বরকে প্রতারিত করতে চায়। ভবিষ্যতে, যারা বিশ্রামের অবস্থায় টিকে থাকবে তারা সকলেই ক্লেশের দিন সহ্য করতে এবং ঈশ্বরের জন্য সাক্ষ্যও বহন করতে পারবে; তারা সকলেই হবে এমন মানুষ যারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে এবং যারা স্বেচ্ছায় ঈশ্বরের কাছে নিজেদের সমর্পণ করেছে। যারা কেবল সত্যের অনুশীলন এড়িয়ে যাওয়ার অভিপ্রায়ে সেবা করার সুযোগকে কাজে লাগাতে চায়, তাদের থাকতে দেওয়া হবে না। প্রত্যেক ব্যক্তির পরিণামের ব্যবস্থা করার জন্য ঈশ্বরের কাছে উপযুক্ত মানদণ্ড রয়েছে; তিনি নিছক কারো কথা এবং আচার-আচরণ অনুসারে, অথবা কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো ব্যক্তি কীভাবে কাজ করে তার উপর ভিত্তি করে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না। কোনো ব্যক্তি অতীতে তাঁর জন্য সেবাকর্ম করে থাকলেই যে তাদের দুষ্ট আচরণের বিষয়ে ঈশ্বর নমনীয় হয়ে পড়বেন, অথবা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে এককালীন ব্যয়সাধনের কারণে তিনি কাউকে মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই দেবেন, এমন একেবারেই নয়। কেউই তাদের পাপাচারের প্রতিফল এড়িয়ে যেতে পারে না, এবং কেউই তাদের মন্দ আচরণকে লুকিয়ে রেখে ধ্বংসের যন্ত্রণা থেকে অব্যাহতি পেয়ে যেতে পারে না। মানুষ যদি প্রকৃতঅর্থে তাদের নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যেতে পারে, তাহলে এর অর্থ হল, আশীর্বাদ পাক বা দুর্ভোগ সহ্য করুক, তারা চিরকালই ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে এবং পুরষ্কারের কামনা করে না। মানুষ যদি আশীর্বাদ দেখলে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে, কিন্তু কোনো আশীর্বাদ দেখতে না পেলে তাদের বিশ্বস্ততা হারিয়ে ফেলে, এবং পরিশেষে, তারা যদি তখনও ঈশ্বরের পক্ষে সাক্ষ্য বহন করতে অথবা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম থেকে যায়, তাহলে, এমনকি তারা যদি আগে কখনো একবার ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত সেবা প্রদান করে থাকে তবুও, তারা ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তু হবে। সংক্ষেপে, দুষ্টজন অনন্তকাল ধরে টিকে থাকতে পারে না, বা তারা বিশ্রামে প্রবেশ করতেও পারে না; কেবলমাত্র ধার্মিকরাই বিশ্রামের অধিকারী। মানবজাতি একবার সঠিক পথে এসে গেলে, মানুষ স্বাভাবিক মানবজীবন প্রাপ্ত হবে। তারা সকলেই তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবে এবং ঈশ্বরের প্রতি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বস্ত হবে। তারা তাদের আনুগত্যহীনতা এবং তাদের কলুষিত স্বভাব সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করবে, এবং, তাদের আনুগত্যহীনতা ও প্রতিরোধ উভয়ই বর্জন করে তারা ঈশ্বরের নিমিত্ত তথা ঈশ্বরের কারণেই জীবনযাপন করবে। তারা সকলেই ঈশ্বরের কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করতে সক্ষম হবে। এ-ই হবে ঈশ্বর ও মানবজাতির জীবন; এ-ই হবে রাজ্যের জীবন, এবং এ-ই হবে বিশ্রামের জীবন৷

যারা তাদের সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী সন্তান এবং আত্মীয়দের গির্জায় টেনে নিয়ে যায় তারা সকলেই অত্যন্ত স্বার্থপর, এবং তারা কেবল দয়া প্রদর্শন করছে। তাদের বিশ্বাস থাকা না থাকা নির্বিশেষে এবং এটা ঈশ্বরের ইচ্ছা কি না তা নির্বিশেষে, এই মানুষেরা শুধু প্রীতিপূর্ণ হওয়ার দিকেই মনোনিবেশ করে। কেউ কেউ তাদের স্ত্রীদেরকে ঈশ্বরের সামনে নিয়ে আসে, বা তাদের পিতামাতাকে ঈশ্বরের সামনে টেনে নিয়ে যায়, এবং পবিত্র আত্মা এর সাথে একমত কিনা, অথবা তাদের মধ্যে কাজ করছেন কিনা, তা নির্বিশেষে এই ব্যক্তিগণ অন্ধভাবে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে “প্রতিভাবান ব্যক্তিদের গ্রহণ করা”-র কাজটি চালিয়ে যায়। এই অবিশ্বাসীদের প্রতি দয়া প্রসারিত করে কী উপকার পাওয়া যেতে পারে? যাদের মধ্যে পবিত্র আত্মার উপস্থিতি নেই, তারা যদি এমনকি ঈশ্বরকে অনুসরণ করার জন্য সংগ্রামও করে, কেউ হয়তো বিশ্বাস করতে পারে যে তাদের উদ্ধার করা হবে, কিন্তু তবুও তা হবে না। যারা পরিত্রাণ পেতে পারে তাদের লাভ করা আসলে এত সহজ নয়। যারা পবিত্র আত্মার কাজ এবং পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায় নি, এবং যাদের ঈশ্বরের অবতার দ্বারা নিখুঁত করে তোলা হয়নি, তারা সম্পূর্ণ হয়ে উঠতে নিতান্তই অক্ষম। অতএব, যে মুহূর্ত থেকে তারা ঈশ্বরকে নামমাত্রভাবে অনুসরণ করতে শুরু করে, সেই মুহুর্ত থেকেই তাদের মধ্যে পবিত্র আত্মার উপস্থিতির অভাব প্রকট হয়। তাদের পরিস্থিতি এবং বাস্তব অবস্থার নিরিখে, তাদের কোনোমতেই সম্পূর্ণ করে তোলা যায় না। সে কারণে, পবিত্র আত্মা তাদের উপর অধিক শক্তি ব্যয় না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তিনি কোনো আলোকপ্রাপ্তিও প্রদান করেন না অথবা কোনো উপায়েই তাদের পথপ্রদর্শন করেন না; তিনি কেবল তাদের অনুসরণ করার অনুমতি দেন এবং পরিশেষে তাদের পরিণাম প্রকাশ করবেন—এটুকুই যথেষ্ট। মানবজাতির উদ্দীপনা এবং অভিপ্রায় আসে শয়তানের কাছ থেকে, এবং তা কোনোভাবেই পবিত্র আত্মার কার্য সম্পূর্ণ করতে পারে না। মানুষ যেমনই হোক না কেন, তাদের মধ্যে পবিত্র আত্মার কার্য থাকতেই হবে। মানুষ কি আদৌ মানুষকে সম্পূর্ণ করে তুলতে পারে? কেন একজন স্বামী তার স্ত্রীকে ভালোবাসে? কেন একজন স্ত্রী তার স্বামীকে ভালোবাসে? কেন সন্তানেরা তাদের পিতামাতার প্রতি কর্তব্যপরায়ণ হয়? কেন পিতামাতা তাদের সন্তানদের অন্ধভাবে ভালোবাসে? মানুষ আসলে কি ধরনের অভিপ্রায় পোষণ করে? তাদের অভিপ্রায় কি তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা এবং স্বার্থপর ইচ্ছাসমূহকে চরিতার্থ করা নয়? তারা কি প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার উদ্দেশ্যে কর্মরত হতে ইচ্ছুক? তারা কি বাস্তবিকই ঈশ্বরের কার্যের উদ্দেশ্যে কর্মরত? তাদের মধ্যে কি সৃষ্ট সত্ত্বার দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্য বিদ্যমান? যারা, তাদের ঈশ্বর-বিশ্বাসের প্রারম্ভলগ্ন থেকেই, পবিত্র আত্মার উপস্থিতি অর্জন করতে অক্ষম রয়েছে, তারা কখনোই পবিত্র আত্মার কার্য লাভ করতে পারে না; এই ব্যক্তিগণ নিশ্চিতভাবেই ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে বিবেচিত হবে। তাদের প্রতি কারুর যতই প্রীতি থাকুক না কেন, তা পবিত্র আত্মার কার্যকে প্রতিস্থাপন করতে পারে না। মানুষের উদ্যম এবং ভালোবাসা মানুষের অভিপ্রায়কে চিত্রিত করতে পারে, কিন্তু তা ঈশ্বরের অভিপ্রায়ের প্রতিরূপ হতে পারে না, এবং তা ঈশ্বরের কাজের বিকল্পও হতে পারে না। যারা নামমাত্রভাবে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস করার অর্থ কী তা না জেনেই তাঁকে অনুসরণ করার ভান করে, এমনকি কেউ সেই সকল ব্যক্তিগণের প্রতি সর্বাধিক সম্ভাব্য পরিমাণ ভালোবাসা অথবা করুণা প্রসারিত করলেও, তারা ঈশ্বরের সহানুভূতিও পাবে না, এবং তারা পবিত্র আত্মার কার্যও অর্জন করতে পারবে না। যারা আন্তরিকভাবে ঈশ্বরকে অনুসরণ করে তারা যদি এমনকি দুর্বল ধীশক্তি-সম্পন্নও হয়, এবং অনেক সত্য উপলব্ধি করতে অক্ষমও থাকে, তবুও তারা মাঝেমধ্যে পবিত্র আত্মার কার্য লাভ করতে পারে; কিন্তু, যারা পর্যাপ্ত ধীশক্তি থাকা সত্ত্বেও আন্তরিকভাবে বিশ্বাসী নয়, তারা কিছুতেই পবিত্র আত্মার উপস্থিতি লাভ করতে পারে না। এই ধরনের ব্যক্তির পক্ষে পরিত্রাণের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনাও নেই। এমনকি যদি তারা ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করে অথবা মাঝে মাঝে উপদেশ শ্রবণ করে, এমনকি যদি ঈশ্বরের স্তবগানও করে, পরিশেষে তারা বিশ্রামের সময় পর্যন্ত অস্তিত্বরক্ষা করতে সক্ষম হবে না। মানুষ আন্তরিকভাবে অনুসন্ধান করছে কিনা তা অপরে কীভাবে তাদের বিচার করছে বা আশেপাশের লোকেরা কীভাবে তাদের দেখছে তার দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং তা হয় পবিত্র আত্মা তাদের উপর কার্য করছেন কিনা, এবং তারা পবিত্র আত্মার উপস্থিতি অর্জন করেছে কিনা তার দ্বারা। তদুপরি, তা নির্ভর করে এক নির্দিষ্ট সময়কাল ধরে পবিত্র আত্মার কার্যের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর, তাদের স্বভাবের পরিবর্তন হয়েছে কিনা এবং তারা ঈশ্বরের কোনো জ্ঞান অর্জন করেছে কিনা, তার উপর। যদি পবিত্র আত্মা কোনো ব্যক্তির উপর কার্য করেন, তবে সেই ব্যক্তির স্বভাব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হবে, এবং ঈশ্বর বিশ্বাসের বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ক্রমশ শুদ্ধতর হয়ে উঠবে। মানুষ কতদিন ধরে ঈশ্বরের অনুসরণ করছে তা নির্বিশেষে, যতক্ষণ তারা পরিবর্তিত হয়, তার অর্থ পবিত্র আত্মা তাদের উপর কার্য করছেন। যদি তাদের পরিবর্তন হয় নি, তবে এর অর্থ হল পবিত্র আত্মা তাদের উপর কার্য করছেন না। এমনকি এই ব্যক্তিগণ যদি কিছু সেবাকর্মও করে, আশীর্বাদ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাই তাদের তা করতে চালিত করে। স্বভাব পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা লাভ করাকে কেবলমাত্র মাঝেমধ্যে সেবাকর্ম করা দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে না। পরিশেষে, তবুও তাদের ধ্বংস করা হবে, কারণ রাজ্যে কোনো সেবাকারীর প্রয়োজন থাকবে না, বা এমন কারও প্রয়োজনও থাকবে না যাদের স্বভাব এমনভাবে পরিবর্তিত হয়নি যাতে তারা সেই মানুষদের প্রতি সেবাময় হতে পেরেছে যাদের ত্রুটিমুক্ত করা হয়েছে এবং যারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত। অতীতে যেমন বলা হয়েছে, “যখন কেউ প্রভুকে বিশ্বাস করে, তার সমগ্র পরিবারের উপর ভাগ্যের আশীর্বাদ বর্ষিত হয়”, এ কথা অনুগ্রহের যুগের জন্যই উপযুক্ত, কিন্তু মানবজাতির গন্তব্যের সাথে সম্পর্কবিহীন। সেই কথা কেবলমাত্র অনুগ্রহের যুগে একটি পর্যায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। সেই কথার অর্থ ইঙ্গিত করত সেই শান্তি এবং বস্তুগত আশীর্বাদের দিকে যা মানুষ উপভোগ করত; এর অর্থ এই ছিল না যে, কোনো ব্যক্তি প্রভুতে বিশ্বাস করলে তার সমগ্র পরিবার উদ্ধার পাবে, বা কোনো ব্যক্তি আশীর্বাদ প্রাপ্ত হলে তার সম্পূর্ণ পরিবারকেই বিশ্রামে উপনীত করা হবে। কেউ আশীর্বাদ লাভ করবে না দুর্দশাগ্রস্ত হবে তা তার সারমর্ম অনুসারে নির্ধারিত হয়, অন্যদের সাথে ভাগ করে নেওয়া কোনো সাধারণ সারমর্ম অনুসারে নয়। এই ধরণের কথার বা নীতির রাজ্যে একেবারেই কোনো স্থান নেই। যদি কোন ব্যক্তি শেষ পর্যন্ত অস্তিত্ব রক্ষা করতে সক্ষম হয়, তবে এর কারণ হল যে তারা ঈশ্বরের চাহিদা পূরণ করেছে, এবং যদি তারা শেষ অবধি বিশ্রামের সময় পর্যন্ত থেকে যেতে অক্ষম হয়, তবে এর কারণ হল যে তারা ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যহীন ছিল এবং ঈশ্বরের চাহিদা পূরণ করেনি। প্রত্যেকের উপযুক্ত গন্তব্য রয়েছে। প্রতিটি ব্যক্তির সারমর্ম অনুযায়ী গন্তব্য নির্ধারিত হয়, এবং অন্য ব্যক্তিদের সাথে এর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। কোন সন্তানের দুষ্ট আচরণ তাদের পিতামাতার উপর স্থানান্তর করা যায় না, বা কোনো সন্তানের ন্যায়পরায়ণতার ভাগ তার পিতামাতাকে দেওয়া যায় না। এক পিতামাতার দুষ্ট আচরণ তাদের সন্তানদের উপর স্থানান্তর করা যায় না, বা কোনো পিতামাতার ন্যায়পরায়ণতার ভাগ তাদের সন্তানদের দেওয়া যায় না। প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ পাপ বহন করে এবং প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ আশীর্বাদ ভোগ করে। কোনো একজন কখনোই অন্য কারোর বিকল্প হতে পারে না; এটাই ন্যায়পরায়ণতা। মানবীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, যদি পিতামাতারা আশীর্বাদ পায়, তবে তাদের সন্তানদেরও তা পেতে সক্ষম হওয়া উচিত, এবং যদি সন্তানেরা মন্দ কাজ করে তবে তাদের পিতামাতাদেরও অবশ্যই সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। এ হল এক মানবীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং এক মানবীয় কর্মপদ্ধতি; এ ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি নয়। প্রত্যেকের পরিণতি তাদের আচরণ অনুসারে উদ্ঘাটিত সারমর্মের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়, এবং তা সর্বদা যথাযথভাবেই নির্ধারিত হয়। কেউ অপরের পাপ বহন করতে পারে না; অধিকন্তু, কেউ অপরের পরিবর্তে দণ্ডিত হতে পারে না। এটা স্থিরনিশ্চিত। সন্তানদের প্রতি পিতামাতার অন্ধ স্নেহ এমন ইঙ্গিত করে না যে তারা তাদের সন্তানদের পরিবর্তে ধার্মিক কাজ করতে পারে, বা তাদের পিতামাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্যপরায়ণ প্রীতিপূর্ণতার অর্থ এই নয় যে তারা তাদের পিতামাতার পরিবর্তে ধার্মিক কাজ সম্পাদন করতে পারে। সেকথাই প্রকৃত অর্থে বোঝানো হয়েছে এই বাক্যসমূহের মাধ্যমে, “তখন মাঠে দুজন লোক থাকলে, একজনকে তুলে নেওয়া হবে, অন্যজন পরিত্যক্ত হবে। দুজন স্ত্রীলোক জাঁতা পিষতে থাকলে, একজনকে নিয়ে যাওয়া হবে, অন্যজন পড়ে থাকবে”। মানুষ তাদের মন্দকর্মকারী সন্তানদের প্রতি গভীর ভালবাসার ভিত্তিতে সেই দুষ্ট সন্তানদের বিশ্রামে নিয়ে যেতে পারে না, বা কেউ তাদের নিজের সৎ আচরণের ভিত্তিতে তাদের স্ত্রী (বা স্বামী)-কে বিশ্রামে নিয়ে যেতে পারে না। এ হল এক প্রশাসনিক নিয়ম; কারো জন্য এর কোন ব্যতিক্রম হতে পারে না। পরিশেষে, ধার্মিক হচ্ছে ধার্মিক, এবং মন্দকর্মকারী হচ্ছে মন্দকর্মকারী। শেষ পর্যন্ত, ধার্মিকদের অস্তিত্বরক্ষার অনুমতি দেওয়া হবে, এবং অন্যায়কারীদের ধ্বংস করা হবে। যারা পবিত্র তারা পবিত্র; তারা অশুচি নয়। যারা অশুচি তারা অশুচি, এবং তাদের কোনো অংশই পবিত্র নয়। যারা দুষ্ট তাদের সকলকেই ধ্বংস করা হবে, এবং সকল ধার্মিকই অস্তিত্বরক্ষা করতে পারবে—এমনকি যদি দুষ্ট পিতামাতার সন্তান ন্যায়পরায়ণ কর্ম করে, এবং ধার্মিক সন্তানের পিতামাতা দুষ্টকর্ম করে, তবুও। একজন বিশ্বাসী স্বামী ও অবিশ্বাসী স্ত্রীর মধ্যে কোন সাযুজ্য নেই, এবং বিশ্বাসী সন্তান ও অবিশ্বাসী পিতামাতার মধ্যে কোন সাযুজ্য নেই; এই দুই ধরনের মানুষ একে অপরের সাথে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ। বিশ্রামে প্রবেশের আগে, কারোর রক্তের সম্পর্কে সম্বন্ধিত আত্মীয় থাকে, কিন্তু একবার বিশ্রামে প্রবেশ করলে, তার আর বলার মতো কোন রক্তের সম্পর্কে সম্বন্ধিত আত্মীয়-পরিজন থাকবে না। যারা তাদের দায়িত্ব পালন করে এবং যারা তা করে না তারা একে অপরের শত্রু; যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে এবং যারা তাঁকে ঘৃণা করে তারা একে অপরের বিরোধী। যারা বিশ্রামে প্রবেশ করবে এবং যারা ধ্বংস হবে, এই দুই ধরণের প্রাণী পরস্পরের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। যে সকল প্রাণী তাদের কর্তব্য পালন করে তারা অস্তিত্বরক্ষা করতে পারবে, আর যারা তাদের দায়িত্ব পালন করে না তারা ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তু হবে; উপর্যুপরি, তা অনন্তকাল স্থায়ী হবে। সৃষ্ট সত্তা হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যেই কি তুমি কি তোমার স্বামীকে ভালোবাসো? সৃষ্ট সত্তা হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যেই কি তুমি কি তোমার স্ত্রীকে ভালোবাসো? সৃষ্ট সত্তা হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যেই কি তুমি কি তোমার অবিশ্বাসী পিতামাতার প্রতি কর্তব্যপরায়ণ? ঈশ্বরবিশ্বাসের প্রসঙ্গে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কি সঠিক না ভ্রান্ত? তুমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করো? তুমি কী লাভ করতে চাও? তুমি কীভাবে ঈশ্বরকে ভালোবাসো? যারা সৃষ্ট জীব হিসাবে তাদের কর্তব্যপালনে এবং সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় রত হতে অক্ষম, তারা ধ্বংসের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। বর্তমান সময়ের মানুষের মধ্যে যেমন শারীরিক সম্পর্ক আছে, তেমনি রক্তের সম্পর্কও রয়েছে, কিন্তু ভবিষ্যতে সেসকল চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসী সঙ্গতিপূর্ণ নয়; বরং তারা একে অপরের বিরোধী। যারা বিশ্রামে প্রবেশ করবে, তারা বিশ্বাস করবে যে একজন ঈশ্বর রয়েছেন এবং তারা ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করবে, অন্যদিকে যারা ঈশ্বরের আনুগত্যহীন তারা সকলেই ধ্বংস হবে। পৃথিবীতে পরিবারের আর অস্তিত্ব থাকবে না; তখন কীভাবেই বা আর পিতামাতা অথবা সন্তানসন্ততি অথবা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক থাকবে? বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রবল অসঙ্গতিই এই ধরণের শারীরিক সম্পর্কসমূহকে চরমভাবে ছিন্ন করে দেবে!

আদিতে মানবজাতির কোন পরিবার ছিল না; কেবলমাত্র পুরুষ এবং নারীর অস্তিত্ব ছিল—দুই ভিন্ন ধরনের মানুষ। পরিবার তো ছিলই না, এমনকি কোনো দেশও ছিল না, কিন্তু মানবজাতির দুর্নীতির ফলস্বরূপ, সমস্ত ধরণের মানুষ নিজেদেরকে পৃথক পৃথক গোষ্ঠীতে সংগঠিত করে, ক্রমে দেশ এবং জাতি হিসেবে বিকশিত হয়। এই দেশ এবং জাতিসত্তাগুলি ছোট ছোট পৃথক পৃথক পরিবার নিয়ে গঠিত হয়েছিল, এবং এই পদ্ধতিতে, ভাষা এবং ভৌগলিক সীমানার পার্থক্যের ভিত্তিতে সমস্ত ধরণের মানুষ বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীতে যত জাতিই থাকুক না কেন, মানবজাতির একটিমাত্রই পূর্বপুরুষ। আদিতে, মানুষ কেবলমাত্র দুই প্রকারের ছিল, এবং সেই দুই প্রকার ছিল নারী ও পুরুষ। যদিও, ঈশ্বরের কাজের অগ্রগতি, ইতিহাসের গতিবিধি, এবং ভৌগোলিক পরিবর্তনের কারণে, বিভিন্ন মাত্রায় এই মৌলিক দুই প্রকারের মানুষ বিভিন্ন শ্রেণীতে বিন্যস্ত হয়ে বিকশিত হয়েছিল। মৌলিকভাবে, যত সংখ্যক জাতি মিলেই মানবজাতির সৃষ্টি করুক না কেন, সমগ্র মানবজাতি তবুও ঈশ্বরেরই সৃষ্টি। মানুষ যে জাতির অন্তর্ভুক্তই হোক না কেন, তারা সকলে তাঁরই প্রাণী; তারা সকলই আদম ও হবার বংশধর। যদিও তারা ঈশ্বরের হাতে নির্মিত হয়নি, তবু তারা আদম ও হবার বংশধর—যে আদম ও হবাকে ঈশ্বর ব্যক্তিগতভাবে সৃষ্টি করেছিলেন। মানুষ যে ধরনের সত্তার অন্তর্ভুক্তই হোক না কেন, তারা সকলে তাঁরই প্রাণী; যেহেতু তারা ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্ট মানবজাতির অন্তর্গত, অতএব তাদের গন্তব্যও তাই যে গন্তব্য মানবজাতির থাকা উচিত, এবং মানুষকে সংগঠিত করার নিয়ম অনুসারেই তাদের বিভক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, সমস্ত দুষ্কৃতী এবং সকল ধার্মিকই, সর্বোপরি, সৃষ্ট জীব। যে সকল সৃষ্ট জীব দুষ্ট কর্ম করে, করে তারা শেষ অবধি ধ্বংস হয়ে যাবে, এবং যে সকল সৃষ্ট জীব ধার্মিক কর্ম করে তাদের অস্তিত্ব রক্ষা পাবে। এই দুই ধরণের সৃষ্ট জীবের ক্ষেত্রেই এ হল সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত আয়োজন। মন্দকর্মকারীরা অস্বীকার করতে পারে না যে যদিও তারা ঈশ্বরের সৃষ্টি, কিন্তু তাদের আনুগত্যহীনতার কারণে তারা শয়তানের দ্বারা অধিকৃত হয়েছে, এবং তাই তাদের উদ্ধার করা সম্ভব নয়। যে সৃষ্ট জীবগণ ধার্মিকভাবে আচরণ করে, তারা যে টিকে থাকবে, এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে অস্বীকার করতে পারে না যে তারা ঈশ্বরের দ্বারা সৃষ্ট, এবং শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তারা পরিত্রাণ লাভ করেছে। মন্দকর্মকারীরা এমন জীব যারা ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যহীন; তারা এমন জীব যাদের রক্ষা করা যাবে না, এবং যারা ইতিমধ্যেই শয়তানের দ্বারা সম্যকরূপে বন্দীদশা প্রাপ্ত হয়েছে। যারা মন্দ কর্ম করে তারাও মানুষ; তারা হল তেমন মানুষ যারা চরমভাবে ভ্রষ্ট হয়েছে, এবং যাদের উদ্ধার করা যাবে না। যেহেতু সৃষ্ট জীব, তাই ধার্মিক আচরণসম্পন্ন ব্যক্তিরাও কলুষিত হয়েছে, কিন্তু তারা এমন মানুষ যারা তাদের কলুষিত স্বভাব থেকে মুক্ত হতে ইচ্ছুক, এবং তারা ঈশ্বরের কাছে সমর্পিত হতে সক্ষম হয়ে উঠেছে। ধার্মিকভাবে আচরণকারী ব্যক্তিগণ ন্যায়পরায়ণতায় পরিপূর্ণ এমন নয়; বরং, তারা পরিত্রাণ লাভ করেছে এবং তাদের কলুষিত স্বভাব থেকে মুক্ত হয়েছে; তারা ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করতে পারে। তারা অন্তিমে দৃঢ়ভাবে দণ্ডায়মান থাকবে, যদিও এর অর্থ এই নয় যে তারা কখনই শয়তানের দ্বারা কলুষিত হয়নি। ঈশ্বরের কাজ শেষ হওয়ার পরে, তাঁর সৃষ্ট সকল জীবের মধ্যে, তারাও থাকবে যাদের ধ্বংস করা হবে এবং তারাও থাকবে যারা অস্তিত্বরক্ষা করতে পারবে। এ হল তাঁর পরিচালনামূলক কার্যের এক অনিবার্যতা; কেউই তা অস্বীকার করতে পারে না। দুষ্টকর্মকারীদের অস্তিত্বরক্ষার অনুমতি দেওয়া হবে না; যারা সমর্পণ করবে এবং শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরকে অনুসরণ করে চলবে তারা নিশ্চিতভাবেই বেঁচে থাকবে। যেহেতু এ কাজ মানবজাতির পরিচালনামূলক কার্য, তাই কেউ কেউ থেকে যাবে এবং কেউ কেউ অপসারিত হবে। ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের মানুষের জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের পরিণাম, এবং সেগুলোই ঈশ্বরের সৃষ্ট জীবের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত আয়োজন। মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের চূড়ান্ত আয়োজন হল পরিবারব্যবস্থাকে ভেঙে, জাতিসত্তাকে বিচূর্ণ করে এবং রাষ্ট্রীয় সীমারেখাকে ছিন্নভিন্ন করার মাধ্যমে মানুষকে এমন এক ব্যবস্থায় নিয়ে আসা, যেখানে থাকবে না কোনো পরিবার অথবা জাতীয় সীমানার সীমাবদ্ধতা, কারণ মানুষ, সর্বোপরি, একই পূর্বপুরুষের বংশোদ্ভূত এবং ঈশ্বরের সৃষ্টি। সংক্ষেপে বললে, মন্দকর্মকারী প্রাণীরা সকলেই ধ্বংস হয়ে যাবে, এবং যে প্রাণীরা ঈশ্বরকে মান্য করে তারা বেঁচে যাবে। এইভাবে, ভবিষ্যতে আসন্ন বিশ্রামের সময়ে থাকবে না কোনো পরিবার, কোনো দেশ, এবং বিশেষতঃ, কোনো জাতিসত্তা; সেই ধরনের মানবজাতিই হবে পবিত্রতম ধরনের মানবজাতি। আদম এবং হবাকে মূলত সৃষ্টি করা হয়েছিল যাতে মানবজাতি পৃথিবীর সমস্ত কিছুর যত্ন নিতে পারে; মানুষই মূলত সকল কিছুর অধিপতি ছিল। মানুষকে সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে যিহোবার উদ্দেশ্য ছিল তাদের পৃথিবীতে অস্তিত্ব বজায় রাখতে দেওয়া এবং পৃথিবীর সকল কিছুর যত্ন নিতে দেওয়া, কারণ আদিতে মানবজাতি ভ্রষ্ট হয়নি এবং মন্দ কর্ম সংঘটনে অক্ষম ছিল। তবে, মানুষ যখন কলুষিত হয়ে পড়লো, তখন তারা আর সমস্ত কিছুর তত্ত্বাবধায়ক থাকল না। ঈশ্বরের পরিত্রাণের উদ্দেশ্য হ’ল মানবজাতির সেই কার্যকে পুনরুদ্ধার করা, মানবজাতির আদি যুক্তিবোধ এবং মূল আনুগত্যকে পুনরুদ্ধার করা; বিশ্রামরত মানবজাতি সেই পরিণামকে চিত্রিত করবে যা ঈশ্বর তাঁর পরিত্রাণের কাজের মাধ্যমে অর্জন করার আশা করেন। যদিও সেই জীবন এদন উদ্যানের জীবনের মতো হবে না, কিন্তু তাদের সারমর্ম একই হবে; মানবজাতি যে নিছকই পূর্ববৎ অকলুষিত সত্তা হয়ে উঠবে, তা নয়, বরং তা হয়ে উঠবে এমন এক মানবজাতি যা ভ্রষ্ট হওয়া সত্ত্বেও, অতঃপর পরিত্রাণ লাভ করেছে। যারা পরিত্রাণ লাভ করেছে তারা শেষ পর্যন্ত (অর্থাৎ, ঈশ্বরের কার্য শেষ হওয়ার পর) বিশ্রামে প্রবেশ করবে। একইভাবে, যাদের শাস্তি পেতে হবে তাদের পরিণতিও শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়ে যাবে, এবং ঈশ্বরের কার্য শেষ হওয়ামাত্র তাদের ধ্বংস করা হবে। প্রকারান্তরে বললে, তাঁর কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, সেই মন্দকর্মকারীরা এবং যারা পরিত্রাণ লাভ করেছে তারা সকলেই উন্মোচিত হবে, কারণ সমস্ত ধরণের মানুষকে (তা তারা মন্দকর্মকারীই হোক বা পরিত্রাণ-প্রাপক) প্রকাশিত করার কার্য প্রত্যেকের উপরেই চালিত হবে একই সাথে। একই সাথে, মন্দকর্মকারীদের বহিষ্কার করা হবে, এবং যাদের থাকতে দেওয়া হবে তাদের প্রকাশ করা হবে। অতএব, সকল প্রকার মানুষের পরিণাম একই সাথে প্রকাশ পাবে। মন্দকর্মকারীদের আলাদা করে সরিয়ে রেখে অল্প অল্প করে তাদের বিচার করার বা শাস্তি দেওয়ার আগে, যে ব্যক্তিদের পরিত্রাণে আনা হয়েছে তাদের ঈশ্বর বিশ্রামে প্রবেশ করার অনুমতি দেবেন না; তা বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। যখন মন্দকর্মকারীরা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং যারা বেঁচে থাকতে সক্ষম তারা বিশ্রামে প্রবেশ করবে, তখন সমগ্র মহাবিশ্ব জুড়ে ঈশ্বরের কার্য সম্পূর্ণ হবে। যারা আশীর্বাদ লাভ করবে এবং যারা দুর্বিপাকগ্রস্ত হবে তাদের মধ্যে কোনো অগ্রাধিকারের ক্রম থাকবে না; যারা আশীর্বাদ পাবে তারা চিরকাল বেঁচে থাকবে, এবং যারা দুর্বিপাকগ্রস্ত হবে তারা চিরকালের জন্য ধ্বংস হয়ে যাবে। এই দুই পর্যায়ের কাজ একযোগে সম্পন্ন হবে। সুনির্দিষ্টভাবে, আনুগত্যহীন ব্যক্তিগণের অস্তিত্বের কারণেই যারা নিজেদের সমর্পণ করে তাদের ন্যায়পরায়ণতা প্রকাশ পাবে, এবং যারা আশীর্বাদ লাভ করেছে, সুনির্দিষ্টভাবে তাদের কারণেই দুষ্ট আচরণের ফলে মন্দকর্মকারীদের যে দুর্ভাগ্য সহ্য করতে হয়েছে তা প্রকাশ পাবে। ঈশ্বর যদি মন্দকর্মকারীদের অনাবৃত না করতেন, তাহলে যারা আন্তরিকভাবে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করে তাদের কখনোই সূর্যদর্শনমাত্র সম্ভব হত না; যারা তাঁর প্রতি সমর্পিত তাদের যদি ঈশ্বর একটি উপযুক্ত গন্তব্যে না নিয়ে আসতেন, তাহলে যারা ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যহীন তারাও তাদের যোগ্য প্রতিফল গ্রহণ করতে সক্ষম হতো না। এই হল ঈশ্বরের কর্মপদ্ধতি। যদি তিনি দুষ্টের দণ্ড ও শিষ্টের পুরষ্কারদানের এই কর্ম সম্পাদন না করতেন, তাহলে তাঁর সৃষ্ট জীবগণ কখনই নিজ নিজ গন্তব্যে প্রবেশ করতে পারত না। মানবজাতি একবার যখন বিশ্রামে প্রবেশ করবে, তখন মন্দকর্মকারীরা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং সমগ্র মানবজাতি সঠিক পথে থাকবে; সকল ধরনের মানুষ তাদের যা করা উচিত তার সাথে সঙ্গতি রেখে নিজস্ব ধরণের মানুষদের সাথেই থাকবে। কেবলমাত্র এটাই হবে মানবজাতির বিশ্রামের দিন, মানবজাতির বিকাশের অনিবার্য ধারা, এবং যখন মানবজাতি বিশ্রামে প্রবেশ করবে কেবলমাত্র তখনই ঈশ্বরের মহান এবং চূড়ান্ত কৃতিত্ব পূর্ণতাপ্রাপ্ত হবে; এটাই হবে তাঁর কাজের চূড়ান্ত অংশ। এই কর্ম সমগ্র মানবজাতির অধঃপতিত দৈহিক জীবনের ও সেইসাথে কলুষিত মানবজাতির জীবনের অন্ত ঘটাবে। তারপর মানুষ এক নতুন জগতে প্রবেশ করবে। যদিও সমস্ত মানুষ দেহের মধ্যেই জীবনধারণ করবে, কিন্তু এই জীবনের সারমর্ম কলুষিত মানবজাতির জীবনের থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে পৃথক হবে। এই অস্তিত্বের গুরুত্ব এবং কলুষিত মানবজাতির অস্তিত্বের গুরুত্বও পৃথক। যদিও এই জীবন কোনো নতুন ধরণের মানবজীবন হবে না, তবু, বলা যেতে পারে যে তা হবে এমন এক জীবন যেখানে মানবজাতি পরিত্রাণ লাভ করেছে, সেইসাথে তা হবে এমন এক জীবন যেখানে মানবতা এবং যুক্তিবোধ ফিরে পাওয়া গেছে। এরা এমন ব্যক্তি যারা একসময় ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যহীন ছিল, যারা ঈশ্বরের দ্বারা বিজিত হয়েছে এবং তারপর তাঁর দ্বারা মুক্তি লাভ করেছে; এরা এমন ব্যক্তি যারা ঈশ্বরকে অসম্মান করেছিল এবং পরে তাঁরই সাক্ষ্য বহন করেছে৷ তাঁর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়ার এবং বেঁচে থাকার পর তাদের অস্তিত্ব হয়ে উঠবে সর্বাধিক অর্থবহ অস্তিত্ব; এরা সেই মানুষ যারা শয়তানের সামনে ঈশ্বরের সাক্ষ্য দিয়েছিল, এবং এরাই এমন মানুষ যারা বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত। যাদের ধ্বংস করা হবে তারা হল সেই ব্যক্তি যারা ঈশ্বরের সপক্ষে সাক্ষ্য দিতে পারে না এবং বেঁচে থাকার উপযুক্ত নয়। তাদের দুষ্ট আচরণের ফলে তারা ধ্বংস হয়ে যাবে, এবং এই বিনাশপ্রাপ্তিই তাদের পক্ষে সর্বোত্তম গন্তব্য। ভবিষ্যতে, যখন মানবজাতি সুন্দর জগতে প্রবেশ করবে, তখন স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে, পিতা ও কন্যার মধ্যে, অথবা মাতা ও পুত্রের মধ্যে, এরকম কোনো সম্পর্কই থাকবে না যা মানুষ কল্পনা করে যে সেখানে তারা খুঁজে পাবে। সেই সময়ে, প্রতিটি ব্যক্তি তাদের নিজস্ব ধরনের ব্যক্তিদেরই অনুসরণ করবে, এবং ইতিমধ্যেই পরিবারসমূহ চূর্ণপবিচূর্ণ হয়ে যাবে। সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার কারণে, শয়তান আর কখনও মানবজাতিকে বিরক্ত করবে না, এবং মানুষের আর কলুষিত শয়তানোচিত স্বভাবগুলি থাকবে না। সেই আনুগত্যহীন ব্যক্তিগণ ইতিমধ্যেই নির্মূল হয়ে যাবে, এবং কেবলমাত্র যারা সমর্পণ করবে তারাই থাকবে। এইভাবে, অতি স্বল্পসংখ্যক পরিবারই অটুট অবস্থায় টিকে থাকবে; তাহলে কীভাবেই বা আর শারীরিক সম্পর্কসমূহ বিদ্যমান থাকতে পারবে? মানবজাতির মানবজাতির পূর্বের দেহসর্বস্ব জীবনযাপন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ হয়ে যাবে; তাহলে মানুষের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক কীভাবেই বা আর স্থাপিত হবে? কলুষিত শয়তানোচিত স্বভাব থেকে মুক্ত হয়ে, মানবজীবন আর অতীতের সেই পুরানো জীবনের মতো থাকবে না, বরং তা হয়ে উঠবে এক নতুন জীবন। পিতামাতাগণ সন্তান হারাবে, এবং সন্তানগণ পিতামাতাদের হারাবে। স্বামীরা স্ত্রী হারাবে, আর স্ত্রীরা স্বামী হারাবে। বর্তমানে মানুষের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক বিদ্যমান, কিন্তু সকলে বিশ্রামে প্রবেশ করার পর তা আর থাকবে না। কেবলমাত্র এই ধরণের মানবজাতিই ন্যায়পরায়ণতা এবং পবিত্রতার অধিকারী হবে; কেবলমাত্র এই ধরনের মানবজাতিই ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারে।

ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের পৃথিবীতে স্থাপিত করেছেন, এবং তিনি তখন থেকেই তাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারপর তিনি তাদের উদ্ধার করলেন এবং মানবজাতির পাপস্খালনের বলি হিসাবে নিজেকে পরিবেশন করেছিলেন। পরিশেষে, তাঁকে এখনও মানবজাতিকে জয় করতে হবে, মানুষকে সম্পূর্ণরূপে উদ্ধার করতে হবে, এবং আবার তাদের মূল অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে হবে। এই হল সেই কাজ যাতে তিনি সূচনাকাল থেকেই নিয়োজিত রয়েছেন—মানুষকে তাদের মূল রূপে এবং সাদৃশ্যে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা। ঈশ্বর তাঁর রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করবেন এবং মানুষের আদি রূপটিকে পুনরুদ্ধার করবেন, যার অর্থ হল ঈশ্বর পৃথিবীতে এবং সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে তাঁর কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবেন। শয়তানের দ্বারা ভ্রষ্ট হওয়ার পর মানবজাতি তাদের ঈশ্বর-ভীত হৃদয়ের পাশাপাশি ঈশ্বরের সৃষ্ট প্রাণী হিসাবে তার দায়িত্বশীলতা হারিয়ে ফেলেছে, যার ফলে সে ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যহীন এক শত্রুতে পরিণত হচ্ছে। মানবজাতি তখন শয়তানের আধিপত্যের অধীনে বসবাস করতো এবং শয়তানের আদেশ অনুসরণ করতো; তাই, ঈশ্বরের তাঁর সৃষ্টির মাঝে কাজ করার কোনো উপায় ছিল না, এবং তিনি তাদের ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধা জয় করে নিতে অক্ষম হয়ে ওঠেন। মানবজাতিকে ঈশ্বর সৃষ্টি করেছিলেন, এবং তাদের ঈশ্বরের উপাসনা করা উচিত ছিল, কিন্তু তারা প্রকৃতপক্ষে তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল এবং পরিবর্তে শয়তানের উপাসনা করতো। শয়তানই তাদের অন্তরের বিগ্রহে পরিণত হয়েছিল। এইভাবে, ঈশ্বর তাদের হৃদয়ে তাঁর অবস্থান হারান, যার অর্থ হল, মানবজাতি সৃষ্টির পিছনে তাঁর যে উদ্দেশ্য তা তিনি হারিয়ে ফেলেন। অতএব, তাঁর মানবজাতিকে সৃষ্টির নিহিত অর্থ পুনরুদ্ধার করতে, তাঁকে অবশ্যই মানবজাতির আদি রূপটিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে, এবং মানবজাতিকে কলুষিত স্বভাব থেকে মুক্ত করতে হবে। শয়তানের কবল থেকে মানবজাতিকে পুনরুদ্ধার করতে, তাঁকে অবশ্যই তাদের পাপ থেকে উদ্ধার করতে হবে। কেবলমাত্র এইভাবে ঈশ্বর ধীরে ধীরে তাদের মূল রূপ এবং কার্য পুনরুদ্ধার করতে পারবেন, এবং অবশেষে, তাঁর রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে পারবেন। সেই অবাধ্যতার পুত্রগণের চূড়ান্ত বিনাশসাধনও সম্পাদন করা হবে, যাতে মানুষ আরও ভালোভাবে ঈশ্বরের উপাসনা করতে পারে এবং আরও ভালোভাবে পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে। যেহেতু ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, সেহেতু তিনি তাদেরকে দিয়ে তাঁর উপাসনা করাবেন; যেহেতু তিনি মানবজাতির মূল কার্যের পুনরুদ্ধার করতে চান, সেহেতু তিনি তা সম্পূর্ণরূপে এবং নিখাদভাবেই পুনরুদ্ধার করবেন। তাঁর কর্তৃত্ব পুনরুদ্ধার করার অর্থ হল মানুষকে তাঁর উপাসনা করানো এবং তাঁর কাছে সমর্পণ করানো; এর অর্থ হল ঈশ্বর এটা নিশ্চিত করবেন যেন তাঁর কারণেই মানুষ বেঁচে থাকে এবং তাঁর কর্তৃত্বের ফলস্বরূপ তাঁর শত্রুরা ধ্বংস হয়। তার অর্থ, ঈশ্বর তাঁর সম্পর্কিত সমস্ত কিছুর অস্তিত্ব মানুষের মধ্যে বজায় রাখতে বাধ্য করবেন কারো তরফ থেকে কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই। ঈশ্বর যে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চান তা তাঁর নিজের রাজ্য। তিনি যে মানবজাতির আকাঙ্ক্ষা করেন, তা এমন এক মানবজাতি যা তাঁর উপাসনা করবে, যা তাঁর প্রতি সম্পূর্ণরূপে সমর্পিত হবে, এবং তাঁর মহিমার প্রকাশ ঘটাবে। ঈশ্বর যদি কলুষিত মানবজাতিকে উদ্ধার না করেন, তাহলে তাঁর মানবজাতি সৃষ্টির পিছনে যে অর্থ নিহিত রয়েছে, তা হারিয়ে যাবে; মানুষের মধ্যে তাঁর আর কোনো কর্তৃত্ব অবশিষ্ট থাকবে না, এবং পৃথিবীতে তাঁর রাজ্যের অস্তিত্ব বহাল থাকা আর সম্ভব হবে না। ঈশ্বর যদি সেই শত্রুদের ধ্বংস না করেন যারা তাঁর প্রতি আনুগত্যহীন, তাহলে তিনি তাঁর সম্পূর্ণ মহিমা অর্জন করতে সক্ষম হবেন না, বা তিনি পৃথিবীতে তাঁর রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতেও পারবেন না। তাঁর কাজের পরিসমাপ্তির এবং তাঁর মহান কৃতিত্বের নিদর্শন হবে এইগুলো: মানবজাতির মধ্যে যারা তাঁর প্রতি আনুগত্যহীন তাদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা, এবং যাদের সম্পূর্ণ করে তোলা হয়েছে তাদের বিশ্রামে উপনীত করা। যখন মানুষকে তাদের আদি স্বরূপে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হবে, এবং যখন তারা তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে পারবে, নিজেদের সমুচিত স্থান বজায় রাখতে পারবে, এবং ঈশ্বরের সকল আয়োজনের প্রতি সমর্পিত হতে পারবে, তখন ঈশ্বর পৃথিবীতে এমন এক দল মানুষকে পাবেন যারা তাঁর উপাসনা করে, এবংসেইসঙ্গে তিনি পৃথিবীতে এমন একটি রাজত্বও প্রতিষ্ঠা করে ফেলবেন যে রাজত্ব তাঁকে উপাসনা করে। পৃথিবীতে তাঁর চিরন্তন বিজয়লাভ ঘটবে এবং যারা তাঁর বিরোধিতা করে তারা সকলেই অনন্তকালের জন্য বিনষ্ট হবে। এর থেকে মানবজাতি সৃষ্টির পিছনে নিহিত তাঁর আসল উদ্দেশ্যটিকে পুনরুদ্ধার হবে; তা সমস্তকিছুর সৃষ্টির জন্যে তাঁর অভিপ্রায়কে পুনরুদ্ধার করবে, এবং পৃথিবীতে, সমস্তকিছুর মধ্যে, এবং তাঁর শত্রুদের মধ্যে তাঁর কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে। এগুলোই হবে তাঁর সার্বিক বিজয়ের প্রতীকস্বরূপ। তারপর থেকে, মানবজাতি বিশ্রামে প্রবেশ করবে, এবং এমন এক জীবনযাপন আরম্ভ করবে যা সঠিক পথে রয়েছে। ঈশ্বরও মানবজাতির সঙ্গে অনন্ত বিশ্রামে প্রবেশ করবেন, এবং নিজের ও মানুষের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া এক অনন্ত জীবনের সূচনা ঘটাবেন। পৃথিবীর কলুষ এবং আনুগত্যহীনতা অদৃশ্য হয়ে যাবে, এবং সমস্ত অপেক্ষার অবসান হবে, এবং এই পৃথিবীতে ঈশ্বরের বিরোধিতা করে এমন যা কিছু রয়েছে সে সকলের অস্তিত্ব মুছে যাবে। অবশিষ্ট থাকবেন কেবলমাত্র ঈশ্বর এবং থাকবে সেই সকল মানুষ যাদের জন্য তিনি পরিত্রাণ নিয়ে এসেছেন; অবশিষ্ট থাকবে কেবলমাত্র তাঁর সৃষ্টি।

পূর্ববর্তী: মানুষের স্বাভাবিক জীবন পুনরুদ্ধার করা এবং তাকে এক বিস্ময়কর গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া

পরবর্তী: যতক্ষণে তুমি যীশুর আধ্যাত্মিক দেহ প্রত্যক্ষ করবে, ততক্ষণে ঈশ্বর স্বর্গ ও পৃথিবীকে নতুন করে তৈরি করে ফেলবেন

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সেটিংস

  • লেখা
  • থিমগুলি

ঘন রং

থিমগুলি

ফন্টগুলি

ফন্ট সাইজ

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

লাইনের মধ্যে ব্যবধান

পৃষ্ঠার প্রস্থ

বিষয়বস্তু

অনুসন্ধান করুন

  • এই লেখাটি অনুসন্ধান করুন
  • এই বইটি অনুসন্ধান করুন

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন