ঈশ্বরের প্রতিদিনের বাক্য: কর্মের তিনটি পর্যায় | উদ্ধৃতি 23

যদিও যীশু তাঁর অবতাররূপ পরিগ্রহকালে একেবারেই আবেগ বর্জিত ছিলেন, তবু তিনি সর্বদা তাঁর শিষ্যদের সান্ত্বনা দিতেন, তাদের জন্য সংস্থান প্রদান করতেন, সাহায্য করতেন, এবং সমর্থন করতেন। তবে তিনি যত কাজই করুন অথবা যত কষ্টই সহ্য করুন, কখনোই মানুষদের কাছে অতিরিক্ত দাবি করেন নি, বরং তাদের পাপের বিষয়ে সর্বদা এতটাই শান্ত ও সহনশীল ছিলেন যে, অনুগ্রহের যুগে মানুষ তাঁকে ভালবেসে “প্রেমময় পরিত্রাতা যীশু” রূপে ডাকত। সেই সময়ের মানুষের কাছে—সমস্ত মানুষের কাছে—যীশুর যা ছিল এবং তিনি যেমন ছিলেন—তা ছিল সম্পূর্ণই করুণা ও প্রেমময় উদারতা। তিনি কখনোই মানুষের অধর্ম মনে রাখেন নি; এবং তাদের প্রতি তাঁর আচরণ কখনোই এই অধর্মের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় নি। যেহেতু সেই যুগ ছিল অন্যরকম, তিনি প্রায়শই মানুষদের পেট ভরানোর জন্য প্রচুর খাদ্য প্রদান করতেন। তিনি তাঁর সকল অনুগামীদের সাথেই অনুগ্রহপূর্বক আচরণ করেছিলেন, অসুস্থদের নিরাময় করেছিলেন, অপদেবতাদের বিতাড়ন করেছিলেন, মৃতদের বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। মানুষ যাতে তাঁকে বিশ্বাস করে এবং দেখে যে তিনি সমস্ত কাজই আন্তরিকভাবে এবং অকপটে করেছেন, তার জন্য তিনি এতদূর এগিয়েছিলেন যে পচা মৃতদেহকেও পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন, তাদের দেখিয়েছিলেন যে তাঁর হাতে এমনকি মৃতব্যক্তিও আবার জীবিত হয়ে উঠতে পারে। এইভাবে তিনি নিঃশব্দে সহ্য করে গেছেন এবং তাঁর মুক্তির কাজ তাদের মধ্যে নির্বাহ করেছেন। ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগেই, যীশু ইতিমধ্যেই মানবজাতির পাপ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন এবং মানবজাতির জন্য পাপস্খালনের বলিতে পরিণত হয়েছিলেন। ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার আগেই, তিনি মানবজাতিকে উদ্ধারের জন্য ক্রুশের পথ উন্মুক্ত করেছিলেন। পরিশেষে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিলো, তিনি ক্রুশের জন্য আত্মবলিদান দিয়েছিলেন, এবং মানবজাতির উদ্দেশ্যে অর্পণ করেছিলেন তাঁর সমস্ত করুণা, প্রেমময় উদারতা এবং পবিত্রতা। মানবজাতির প্রতি তিনি কখনোই প্রতিহিংসাপরায়ণ ছিলেন না, ছিলেন সর্বদা সহনশীল, তাদের পাপের প্রতি ক্ষমাশীল, তিনি তাদের অনুতপ্ত হতে উৎসাহ দিয়েছিলেন, এবং ধৈর্য, সহনশীলতা ও ভালবাসার, তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করার, এবং ক্রুশের জন্য আত্মত্যাগ করার শিক্ষা দিয়েছিলেন। ভ্রাতা ও ভগিনীদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা, মরিয়মের প্রতি তাঁর ভালবাসাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তিনি তাঁর কাজের নীতিতে অসুস্থদের নিরাময় এবং অপদেবতা বিতাড়নকে গ্রহণ করেছিলেন, সবই তাঁর মুক্তির জন্য। তিনি যেখানেই গেছেন, তাঁর অনুগামীদের সকলের সাথে অনুগ্রহপূর্বক আচরণ করেছেন। তিনি দরিদ্রকে ধনীতে পরিণত করেছেন, পঙ্গুকে চলৎশক্তি প্রদান করেছেন, অন্ধকে দৃষ্টিশক্তি দিয়েছেন, এবং বধিরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি। এমনকি তিনি অধম, নিঃস্ব, পাপীদেরও তাঁর সাথে একই টেবিলে বসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তাদের কখনোই এড়িয়ে না গিয়ে সর্বদা ধৈর্য্যশীল ছিলেন, এমনকি তিনি বলেছেন: একজন রাখাল যখন একশোটির মধ্যে একটি মেষ হারিয়ে ফেলে, তখন সে নিরানব্বইটি মেষকে ছেড়ে সেই হারানো একটির সন্ধানে চলে যায় এবং তাকে খুঁজে পেয়ে সে খুবই আনন্দ পায়। একটি মেষ তার শাবককে যেমন ভালোবাসে, তিনি তাঁর অনুগামীদের তেমনই ভালোবাসতেন। যদিও তারা ছিল মূর্খ ও অজ্ঞ, এবং তাঁর চোখেও তারা ছিল পাপী, আর তদুপরি তারা ছিল সমাজের নিচু শ্রেনীর সদস্য, তবুও তিনি সেই পাপীদের, যাদের সকলে অবজ্ঞা করতো, তাদের তাঁর চোখের মণির মতো বিবেচনা করতেন। যেহেতু তিনি তাদের অনুগ্রহ করেছিলেন, তাই তাদের জন্য জীবন ত্যাগ করেছিলেন, ঠিক যেমন বেদীতে মেষশাবক উৎসর্গ করা হত। তিনি তাদের মধ্যে এমনভাবে মিশে গিয়েছিলেন যেন তিনি তাদের দাস, তাদের কাছে নিঃশর্ত বশ্যতা স্বীকার করে তাদের দ্বারা নিজেকে ব্যবহৃত হতে ও তাঁর হত্যা সাধন করতে দিয়েছিলেন। তাঁর অনুগামীদের কাছে তিনি ছিলেন প্রেমময় পরিত্রাতা যীশু, কিন্তু ফরিশী—যারা উচ্চ পদ থেকে লোকেদের বক্তৃতা দিত, তাদের প্রতি তিনি করুণা ও স্নেহময়তা নয়, বরং ঘৃণা ও বিরক্তি প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি ফরিশীদের মধ্যে খুব বেশি কাজ করেননি, কেবল মাঝে মধ্যে তাদের বক্তৃতা ও তিরস্কার করতেন; তিনি তাদের মধ্যে মুক্তির কাজ করতেও যাননি, বা প্রতীকী ও বিস্ময়কর কাজও করেননি। তিনি তাঁর সমস্ত করুণা এবং স্নেহময়তা অনুগামীদের প্রতি বর্ষণ করেছিলেন, এই পাপীদের জন্য শেষ অবধি অর্থাৎ ক্রুশবিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত সহ্য করেছিলেন, এবং সমস্ত মানবজাতিকে সম্পূর্ণরূপে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত সমস্ত অপমান সহ্য করেছিলেন। এই ছিল তাঁর কাজের মোট সারাংশ।

যীশুর মুক্তি ব্যতীত মানবজাতি চিরকালের জন্য পাপের মধ্যেই থেকে যেত, এবং পরিণত হত পাপের বংশধর, অপদেবতাদের উত্তরসূরিতে। এইভাবে চললে, সমগ্র বিশ্ব শয়তানের আবাসে, তার বাসভূমিতে পরিণত হত। মুক্তির কাজে মানবজাতির প্রতি করুণা ও প্রেমময় উদারতার প্রয়োজন ছিল; শুধুমাত্র এইভাবেই মানবজাতি ক্ষমা পেতে পারতো এবং পরিশেষে ঈশ্বরের দ্বারা সম্পূর্ণ হওয়ার ও সম্যকভাবে অর্জিত হওয়ার অধিকার লাভ করতে পারতো। কাজের এই পর্যায় ব্যতীত, ছয় হাজার বছরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা এগোতে পারত না। যদি যীশু ক্রুশবিদ্ধ না হতেন, যদি তিনি কেবলমাত্র অসুস্থদের নিরাময় করতেন বা অপদেবতা বিতাড়ন করতেন, তাহলে মানুষ তাদের পাপের সম্পূর্ণ ক্ষমা পেত না। যীশু এই পৃথিবীতে সাড়ে তিন বছরের কার্য নির্বাহকালে কেবলমাত্র মুক্তির কাজের অর্ধেক সম্পন্ন করেছিলেন; তারপরে, ক্রুশবিদ্ধ হয়ে, পাপী শরীরের সমতুল্য হয়ে, দুষ্টের হাতে সমর্পিত হয়ে তিনি ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কাজ সম্পূর্ণ করেন এবং মানুষের নিয়তির প্রভু হয়ে ওঠেন। শয়তানের হাতে তাঁকে তুলে দেওয়ার পরেই তিনি মানবজাতিকে মুক্ত করেছিলেন। সাড়ে তেত্রিশ বছর ধরে তিনি পৃথিবীতে কষ্ট সহ্য করেছিলেন, উপহাসের পাত্র হয়েছিলেন, তাঁকে অপবাদ দেওয়া হয়েছিল, ত্যাগ করা হয়েছিল, এমনকি তাঁর মাথা গোঁজার কোনো জায়গা ছিল না, বিশ্রামের জায়গা ছিল না, এবং পরবর্তীকালে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল। তাঁর সমগ্র সত্তার সাথে সাথে তাঁর পবিত্র ও নিষ্পাপ শরীর ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিল। তিনি সব ধরনের কষ্ট সহ্য করেছিলেন। ক্ষমতাসীন লোকেরা তাঁকে উপহাস করেছিল, চাবুক মেরেছিল, এবং এমনকি সৈন্যরা তাঁর মুখে থুতুও ফেলেছিল; তবুও তিনি ছিলেন নীরব এবং শেষ পর্যন্ত সহ্য করে গেছিলেন, মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত নিঃশর্তভাবে মেনে নিয়েছিলেন, যার ফলে তিনি সমস্ত মানবজাতিকে মুক্তি দিয়েছিলেন। কেবলমাত্র তার পরেই তাঁকে বিশ্রামের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। যীশু যে কাজ করেছিলেন তা কেবলমাত্র অনুগ্রহের যুগের প্রতিনিধিত্ব করে; তা বিধানের যুগের প্রতিনিধিত্ব করে না, অথবা তা অন্তিম সময়ের কাজের বিকল্পও নয়। এটিই হল অনুগ্রহের যুগে, অর্থাৎ মানবজাতি যে দ্বিতীয় যুগটি অতিক্রম করেছে, সেই মুক্তির যুগে যীশুর কাজের সারসত্য।

—বাক্য, খণ্ড ১, ঈশ্বরের আবির্ভাব ও তাঁর কার্য, মুক্তির যুগের কাজের নেপথ্যে থাকা সত্য ঘটনা

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

সম্পর্কিত তথ্য

ঈশ্বরের প্রতিদিনের বাক্য: অন্তিম সময়ের বিচার | উদ্ধৃতি 79

বিচারের কাজটি ঈশ্বরের নিজস্ব, তাই স্বাভাবিকভাবেই এটি স্বয়ং ঈশ্বরের দ্বারাই সম্পন্ন হওয়া উচিত; তাঁর পরিবর্তে মানুষ তা করতে পারে না। যেহেতু...

ঈশ্বরের প্রতিদিনের বাক্য: কর্মের তিনটি পর্যায় | উদ্ধৃতি 26

অন্তিম সময়ের কার্য হল বাক্য উচ্চারণ করা। বাক্যের দ্বারা মানুষের মধ্যে অসামান্য পরিবর্তন আনা যায়। বাক্য গ্রহণের মাধ্যমে এখন মানুষের মধ্যে যে...

ঈশ্বরের প্রতিদিনের বাক্য: ঈশ্বরের কাজ সম্বন্ধে জানা | উদ্ধৃতি 206

পূর্ববর্তী দুটি যুগের মধ্যে এক পর্বের কাজ হয়েছিল ইসরায়েলে, অন্য পর্বটি যিহুদীয়াতে। সাধারণভাবে বলতে গেলে, এই কাজের কোনোটিই ইসরায়েলের বাইরে...

ঈশ্বরের প্রতিদিনের বাক্য: ধর্মীয় ধারণা প্রকাশ করা | উদ্ধৃতি 294

যারা ঈশ্বরের কাজের উদ্দেশ্য বোঝে না তারা প্রত্যেকে ঈশ্বরবিরোধী, আর যে ঈশ্বরের কাজের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছে কিন্তু এখনও তাঁকে সন্তুষ্ট করার...

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন