ঈশ্বরের বর্তমানের কার্যকে জানা

বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঈশ্বরের কাজকে জানার অর্থই হল, অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের অবতারের প্রধান সেবাব্রত সম্পর্কে জানা, এবং তিনি এই পৃথিবীতে কী করতে এসেছেন তা জানা। আমি আমার বাক্যের মাধ্যমে আগেই উল্লেখ করেছি যে, ঈশ্বর এই ধরাধামে (অন্তিম সময়কালে) তাঁর প্রস্থানের পূর্বে এক দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য এসেছেন। ঈশ্বর কীভাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন? তিনি তাঁর কথিত বাক্যের মাধ্যমে, এবং দেশ জুড়ে কাজ ও আলাপচারিতার মাধ্যমেই তা করেন। এটাই হল ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের কার্য; তিনি শুধু কথন করেন, যাতে এই পৃথিবী, বাক্যের বিশ্বে পরিণত হয়, প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁর বাক্যের দ্বারা বাঁচার রসদ পায় এবং আলোকিত হয়, যাতে মানুষের আত্মা জাগ্রত হয় এবং দৃষ্টির স্বচ্ছতা আসে। অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের অবতার পৃথিবীতে এসেছেন প্রধানত বাক্য উচ্চারণের জন্যই। যীশু যখন এসেছিলেন, তিনি স্বর্গ রাজ্যের সুসমাচারের প্রচার করেছিলেন, এবং ক্রুশবিদ্ধকরণের মুক্তির কার্য সম্পন্ন করেছিলেন। তিনি বিধানের যুগের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছিলেন, পুরাতন সমস্ত কিছু নির্মূল করেছিলেন। যীশুর আবির্ভাব বিধানের যুগের সমাপ্তি ঘটিয়ে অনুগ্রহের যুগের সূচনা করেছিল; অন্তিম সময়ের ঈশ্বরের অবতারের আগমন অনুগ্রহের যুগের সমাপ্তিসাধন করেছে। তিনি এসেছেন প্রধানত তাঁর বাক্য উচ্চারণের জন্য, বাক্য ব্যবহার করে মানুষকে নিখুঁত করে তোলার জন্য, তাকে প্রদীপ্ত ও আলোকিত করার জন্য, এবং তাদের অন্তর থেকে অস্পষ্ট ঈশ্বরের আসন অপসারণের জন্য। এটা যীশুর আগমনের সময়কার কাজের পর্যায় নয়। যীশু যখন এসেছিলেন, তখন তিনি অনেক অলৌকিক কার্য সম্পাদন করেছিলেন, অসুস্থদের নিরাময় করেছিলেন, অপদেবতাদের বিতাড়ন করেছিলেন এবং ক্রুশবিদ্ধকরণের মুক্তির কাজ করেছিলেন। ফলস্বরূপ, মানুষ তার ধারণায় বিশ্বাস করে যে, ঈশ্বরের এমনই হওয়া উচিত। কারণ যীশুর আগমনকালে, তিনি মানুষের অন্তর থেকে অস্পষ্ট ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি অপসারণের কাজ করেননি; আগমনের পরে তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, তিনি অসুস্থদের নিরাময় এবং অপদেবতা বিতাড়ন করেছিলেন, এবং স্বর্গরাজ্যের সুসমাচার ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এক দিকে, মানুষের ধারণায় যাতে আর অনিশ্চিত ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি না থাকে, সেজন্য ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের অবতার মানুষের ধারণা থেকে অস্পষ্ট ঈশ্বরের অধিকৃত স্থানটি মুছে দেন। তাঁর প্রকৃত কাজ ও বাক্যের মাধ্যমে, সকল ভূমি জুড়ে তাঁর গতিবিধির মাধ্যমে, এবং মানুষের মধ্যে যে ব্যতিক্রমীভাবে বাস্তব ও স্বাভাবিক কাজ তিনি করেন তার মাধ্যমে, তিনি মানুষকে ঈশ্বরের বাস্তবিকতার উপলব্ধি প্রদান করেন, এবং তাদের অন্তর থেকে অনিশ্চিত ঈশ্বরের স্থান অপসারণ করেন। অন্য দিকে, ঈশ্বর তাঁর দেহরূপের মাধ্যমে উচ্চারিত বাক্য ব্যবহার করে মানুষকে সম্পূর্ণ করেন ও সমস্ত কিছু অর্জন করেন। অন্তিম সময়ে ঈশ্বর এই কাজই সম্পন্ন করবেন।

তোমাদের অবশ্যই যা জানা উচিত:

১. ঈশ্বরের কাজ অতিপ্রাকৃতিক নয়, এবং এই বিষয়ক কোনো ধারণা তোমাদের পোষণ করা উচিত নয়।

২. এখন ঈশ্বরের অবতার প্রধান যে কাজ করতে এসেছেন, তা তোমাদের অবশ্যই বোঝা উচিত।

তিনি অসুস্থদের নিরাময় করতে বা অপদেবতা বিতাড়ন করতে বা অলৌকিক কার্য সম্পাদন করতে আসেননি, এবং অনুতাপের সুসমাচার প্রচার করতে বা মানুষকে মুক্ত করতেও তিনি আসেননি। কারণ হল, যীশু ইতিমধ্যেই এই কাজ করেছেন আর ঈশ্বর একই কাজের পুনরাবৃত্তি করেন না। আজ, ঈশ্বর অনুগ্রহের যুগের পরিসমাপ্তি ঘটাতে এবং সেই যুগের সমস্ত প্রথা পরিহার করার জন্য এসেছেন। ঈশ্বর যে বাস্তব, মূলত এটা দেখানোর জন্যই বাস্তববাদী ঈশ্বর এসেছেন। যীশু যখন এসেছিলেন, তিনি অল্প কিছু বাক্যই উচ্চারণ করেছিলেন; তিনি মুখ্যত অলৌকিক কার্য সম্পাদন করেছিলেন, কিছু সংকেত প্রদর্শন করেছিলেন ও আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটিয়েছিলেন, পীড়িতদের নিরাময় এবং অপদেবতাদের বিতাড়ন করেছিলেন, নয়তো তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যাতে মানুষকে বোঝানো যায় এবং দেখানো যায় যে তিনি সত্যই ঈশ্বর, এক নির্বিকার ঈশ্বর। পরিশেষে, তিনি ক্রুশবিদ্ধকরণের কাজ সম্পূর্ণ করেছিলেন। বর্তমানের ঈশ্বর সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শন করেন না, পীড়িতদের নিরাময় বা অপদেবতা বিতাড়নও করেন না। যীশু যখন এসেছিলেন, তখন তাঁর কাজ ঈশ্বরের একটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করেছিল, কিন্তু এইবার ঈশ্বর অবশিষ্ট কাজের পর্যায়টি সম্পূর্ণ করতে এসেছেন, কারণ ঈশ্বর একই কাজের পুনরাবৃত্তি করেন না; তিনি চিরনতুন, কখনোই পুরাতন হন না, আর তাই তুমি বর্তমানে যা কিছু দেখো, তা বাস্তববাদী ঈশ্বরের বাক্য ও কার্য ছাড়া আর কিছুই না।

অন্তিম সময়ের ঈশ্বরের অবতার প্রধানত এসেছেন তাঁর বাক্য বলতে, মানুষের জীবনে প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুর ব্যাখ্যা করতে, মানুষের কীসে প্রবেশ করা উচিত তা নির্দেশ করতে, তাদের সামনে ঈশ্বরের কাজ, প্রজ্ঞা, সর্বশক্তিমত্তা এবং চমৎকারিত্ব প্রদর্শন করতে। ঈশ্বরের কথা বলার বিবিধ উপায়ের মাধ্যমে মানুষ ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠত্ব, পরমতা এবং তদুপরি, তাঁর নম্রতা এবং প্রচ্ছন্নতা প্রত্যক্ষ করে। মানুষ দেখে যে, ঈশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি বিনয়ী এবং প্রচ্ছন্ন থাকেন, এবং সবচেয়ে অকিঞ্চিৎকরও হতে পারেন। তাঁর কিছু কথা সরাসরি আত্মার দৃষ্টিকোণ থেকে, কিছু সরাসরি মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে এবং কিছু তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে বলা হয়। এতে, এটা পরিলক্ষিত হয় যে, ঈশ্বরের কাজের ধরন ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়, এবং তিনি বাক্যের মাধ্যমেই মানুষকে তা প্রত্যক্ষ করার অনুমতি দেন। অন্তিম সময়ের ঈশ্বরের কাজ একই সঙ্গে স্বাভাবিক এবং বাস্তব, এবং এইভাবে অন্তিম সময়ের মানবগোষ্ঠী সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। ঈশ্বরের স্বাভাবিকত্ব এবং বাস্তবিকতার কারণে, সমস্ত মানুষ এই ধরনের পরীক্ষার মধ্যে প্রবেশ করেছে; অর্থাৎ মানুষ যে এই পরীক্ষার মধ্যে অবতরণ করেছে তা ঈশ্বরের স্বাভাবিকত্ব এবং বাস্তবিকতার কারণেই। যীশুর যুগে কোনো ধারণা বা পরীক্ষা ছিল না। কারণ যীশুর করা বেশিরভাগ কাজই মানুষের ধারণার সাথে সুসঙ্গত ছিল, মানুষ তাঁকে অনুসরণ করত আর তাঁর বিষয়ে তাদের মনে কোনো পূর্বধারণা ছিল না। মানুষ এতদিন পর্যন্ত যে সমস্ত পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে, তার মধ্যে বর্তমানের পরীক্ষাই সবচেয়ে কঠিন, এবং যখন বলা হয় যে, এই মানুষেরা নিদারুণ ক্লেশ অতিক্রম করে এসেছে, তখন এই ক্লেশের কথাই বলা হয়। বর্তমানে এই সমস্ত মানুষের মনে বিশ্বাস, ভালোবাসা, যন্ত্রণা স্বীকার এবং আজ্ঞাকারিতা উৎপন্ন করার জন্যই ঈশ্বর বাক্য বলেন। অন্তিম সময়ের ঈশ্বরের অবতারের বাক্য মানুষের প্রকৃতি ও নির্যাস, তার আচরণ আর আজ যার মধ্যে তার প্রবেশ করা উচিত, সেই অনুযায়ীই বলা হয়। তাঁর বাক্যগুলি একই সাথে বাস্তব ও স্বাভাবিক: তিনি যেমন আগামীর কথা বলেন না, তেমনই বিগতকালের প্রতিও ফিরে তাকান না; তিনি কেবল সেগুলির কথাই বলেন, যার মধ্যে বর্তমানে প্রবেশ করা উচিত, যেগুলির অনুশীলন করা উচিত এবং বোঝা উচিত। যদি বর্তমানকালে এমন কেউ আবির্ভূত হয় যে সংকেত ও আশ্চর্যজনক বিষয় প্রদর্শন করতে পারে, অপদেবতা বিতাড়নে ও পীড়িতদের নিরাময়ে সক্ষম হয় এবং বিবিধ অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে পারে, আর যদি সেই ব্যক্তি দাবি করে যে সে-ই হল আবির্ভূত যীশু, তাহলে সে হল মন্দ আত্মাদের সৃষ্ট যীশুর অনুকরণকারী এক নকল সত্তা। একথা মনে রেখো! ঈশ্বর একই কাজের পুনরাবৃত্তি করেন না। যীশুর কাজের পর্যায় ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়ে গেছে, এবং ঈশ্বর কখনোই সেই কাজের পর্যায়ের আর দায়িত্ব নেবেন না। ঈশ্বরের কাজ মানুষের ধারণার সাথে মেলে না; উদাহরণস্বরূপ, পুরাতন নিয়মে একজন মশীহের আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল এবং এই ভবিষ্যদ্বাণীর ফলাফল ছিল যীশুর আগমন। এটি ইতিমধ্যেই ঘটে গিয়েছে, অন্য মশীহের পুনরায় আগমন ঘটলে তা ভুল হবে। যীশু ইতিমধ্যেই একবার এসেছেন, আবারও যদি যীশু আসেন, তবে তা ভুল হবে। প্রতিটি যুগেরই এক-একটি নাম রয়েছে এবং প্রতিটি নামের মধ্যে সেই যুগের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মানুষের ধারণায়, ঈশ্বর অবশ্যই সর্বদা সংকেত এবং বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শন করবেন, সর্বদা পীড়িতদের নিরাময় করবেন, অপদেবতা বিতাড়ন করবেন এবং সর্বদাই হুবহু যীশুর মতো হবেন। তবুও এইবার ঈশ্বর একদমই সেরকম নন। অন্তিম সময়ে এসেও, ঈশ্বর যদি এখনও সংকেত ও আশ্চর্যজনক ঘটনা প্রদর্শন করেন, অপদেবতা বিতাড়ন করেন এবং পীড়িতদের নিরাময় করেন—যদি তিনি যীশুর মতো ঠিক একই কাজ করেন—তাহলে ঈশ্বর একই কাজের পুনরাবৃত্তি করবেন এবং তাহলে যীশুর কাজের কোনো তাৎপর্য বা মূল্যই থাকবে না। এইভাবে, ঈশ্বর প্রতিটি যুগে কাজের এক-একটি পর্যায় নির্বাহ করেন। একবার তাঁর কাজের একটি পর্যায় শেষ হয়ে গেলে, শীঘ্রই মন্দ আত্মারা তা অনুকরণ করে, এবং শয়তান ঈশ্বরের পথে হাঁটা শুরু করলে ঈশ্বর তাঁর পদ্ধতি পরিবর্তন করেন। ঈশ্বরের কাজের একটি পর্যায় সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, মন্দ আত্মারা তা অনুকরণ করতে শুরু করে। তোমাদের অবশ্যই এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। ঈশ্বরের বর্তমানের কাজটি কেন যীশুর কাজের থেকে আলাদা? ঈশ্বর কেন বর্তমানে সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শন করেন না, অপদেবতা বিতাড়ন করেন না ও পীড়িতদের নিরাময় করেন না? যদি যীশুর কাজটি বিধানের যুগের কাজের মতো হত, তাহলে কি তিনি অনুগ্রহের যুগের ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করতে পারতেন? তিনি কি ক্রুশবিদ্ধকরণের কাজ সম্পূর্ণ করতে পারতেন? যীশু যদি বিধানের যুগের মতো মন্দিরে প্রবেশ করতেন এবং বিশ্রামবার পালন করতেন, তাহলে কেউই তাঁকে নির্যাতন করত না, সকলেই আলিঙ্গন করত। যদি তা-ই হতো, তাহলে তিনি কি ক্রুশবিদ্ধ হতে পারতেন? তিনি কি মুক্তির কার্য সম্পন্ন করতে পারতেন? ঈশ্বরের অন্তিম সময়ের অবতার যদি যীশুর মতো সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা প্রকাশ করতেন তাহলে তাতে কী লাভ হত? একমাত্র ঈশ্বর অন্তিম সময়ে যদি তাঁর কাজের অন্য একটি অংশ, অর্থাৎ তাঁর পরিচালনামূলক পরিকল্পনার অংশের কাজ করেন, তবেই মানুষ ঈশ্বর সম্পর্কে গভীরতর জ্ঞান লাভ করতে পারে, এবং শুধুমাত্র তখনই ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনা সম্পূর্ণ হতে পারে।

অন্তিম সময়ে, ঈশ্বর তাঁর বাক্য প্রকাশ করতে এসেছেন। তিনি আত্মার দৃষ্টিকোণ থেকে, মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে, এবং তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলেন; তিনি একটি সময়কালে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে বিভিন্ন উপায়ে কথা বলেন, মানুষের ধারণা পরিবর্তন করতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন এবং মানুষের অন্তর থেকে অনিশ্চিত ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি অপসারণ করেন। এটাই হল ঈশ্বর কৃত প্রধান কাজ। যেহেতু মানুষের বিশ্বাস হল, ঈশ্বর পীড়িতদের নিরাময় করতে, অপদেবতা বিতাড়ন করতে, বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শন করতে এবং মানুষের ওপর জাগতিক আশীর্বাদ বর্ষণ করতে এসেছেন, তাই মানুষের মন থেকে এই ধরনের ধারণা মুছে ফেলতেই ঈশ্বর শাস্তিদান ও বিচারের কাজের পর্যায়টি সম্পাদন করেন—যাতে মানুষ ঈশ্বরের বাস্তবিকতা ও স্বাভাবিকত্ব সম্পর্কে জানতে পারে, যাতে তার অন্তর থেকে যীশুর প্রতিমূর্তি অপসারিত হয়ে সেখানে ঈশ্বরের নতুন প্রতিমূর্তি প্রতিস্থাপিত হতে পারে। মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি পুরনো হওয়ার সাথে সাথে, তা বিগ্রহে পরিণত হয়। যীশু যখন এসে কাজের সেই পর্যায় পরিচালনা করেছিলেন, তখন তিনি ঈশ্বরের সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করেন নি। তিনি কিছু সংকেত প্রদর্শন করেছিলেন এবং আশ্চর্যজনক কাজ করেছিলেন, কিছু বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন, এবং শেষ পর্যন্ত ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি ঈশ্বরের একটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তিনি ঈশ্বরের সমস্ত কিছুর প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন নি, বরং তিনি ঈশ্বরের কাজের একটি অংশ সম্পন্ন করার মাধ্যমে তাঁর প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তার কারণ ঈশ্বর এতই মহান, এতই বিস্ময়কর, এবং তিনি এতই অতলস্পর্শী এবং তার কারণ তিনি প্রতিটি যুগে তাঁর কাজের একটি মাত্র অংশ সম্পন্ন করেন। এই যুগে ঈশ্বরের সম্পাদিত প্রধান কাজ হল মানুষের জীবনে বাক্যের বিধান দেওয়া, মানুষের প্রকৃতি, সারসত্য এবং দুর্নীতিগ্রস্ত স্বভাবের প্রকাশ, এবং ধর্মীয় ধারণা, সামন্ততান্ত্রিক এবং সেকেলে চিন্তাভাবনা নির্মূল করা; মানুষের জ্ঞান ও সংস্কৃতিকে অবশ্যই ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারা প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে শোধিত হতে হবে। অন্তিম সময়ে ঈশ্বর মানুষকে নিখুঁত করে তোলার জন্য কোনোরকম সংকেত বা বিস্ময়কর ঘটনা না দেখিয়ে, বাক্য ব্যবহার করেন। মানুষের অনাবৃতকরণ, বিচার, শাস্তি প্রদান ও তাদের ত্রুটিমুক্ত করার জন্য তিনি তাঁর বাক্য ব্যবহার করেন, যাতে এই বাক্যের মধ্যেই মানুষ ঈশ্বরের প্রেমময়তা ও প্রজ্ঞা দেখতে পারে, তাঁর স্বভাব সম্পর্কে জানতে পারে, আর এই বাক্যের মাধ্যমেই যাতে মানুষ তাঁর কাজ প্রত্যক্ষ করতে পারে। বিধানের যুগে যিহোবা তাঁর বাক্যের মাধ্যমেই মোশিকে মিশর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, এবং তিনি ইসরায়েলীদের প্রতিও কিছু বাক্য বলেছিলেন; সেই সময়ে ঈশ্বরের কাজের কিছু অংশ প্রাঞ্জল হয়েছিল, কারণ মানুষের ক্ষমতা ছিল সীমিত এবং কোনোকিছুতেই তার জ্ঞান সম্পূর্ণ হত না, তাই ঈশ্বর বাক্য বলা ও কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন। অনুগ্রহের যুগে মানুষ আরও একবার ঈশ্বরের কাজের অংশ প্রত্যক্ষ করেছিল। যীশু সংকেত প্রদর্শন করতে ও বিস্ময়কর ঘটনা ঘটাতে, পীড়িতদের নিরাময় করতে ও অপদেবতা বিতাড়নে সক্ষম ছিলেন এবং তিনি ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন, এই ঘটনার তিন দিন পরে তাঁর পুনরুত্থান হয় আর তিনি মানুষের সামনে দেহরূপে আবির্ভূত হয়েছিলেন। ঈশ্বরের বিষয়ে মানুষ এর থেকে বেশি কিছু জানে না। ঈশ্বর মানুষকে যতটুকু দেখান, সে ততটুকুই জানে, আর যদি ঈশ্বর মানুষকে বেশি কিছু না দেখান, তাহলে তা হবে ঈশ্বরের বিষয়ে মানুষের সীমাবদ্ধতা। এইভাবে ঈশ্বর কাজ চালিয়ে যান, যাতে তাঁর বিষয়ে মানুষের জ্ঞান আরও গভীর হতে পারে, যাতে মানুষ ধীরে ধীরে ঈশ্বরের সারসত্য জানতে পারে। অন্তিম সময়ে, মানুষকে নিখুঁত করার জন্য ঈশ্বর তাঁর বাক্য ব্যবহার করেন। তোমার দুর্নীতিগ্রস্ত স্বভাব ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারাই প্রকাশিত হয় এবং ধর্মীয় ধারণাসমূহ ঈশ্বরের বাস্তবিকতা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। অন্তিম সময়ে ঈশ্বরের অবতার প্রধানত এই বাক্য পূরণের জন্য আসেন “বাক্য দেহরূপে পরিণত হল, বাক্য দেহরূপে অবতীর্ণ হল, এবং বাক্য দেহে আবির্ভূত হল,” আর এই বিষয়ে যদি তোমার পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান না থাকে, তাহলে তুমি দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে পারবে না। অন্তিম সময়ে ঈশ্বর প্রধানত কাজের একটি পর্যায় সম্পন্ন করতে আসেন যার মাধ্যমে বাক্য দেহে আবির্ভূত হয়, আর এটা ঈশ্বরের পরিচালনামূলক পরিকল্পনার একটি অংশ। এইভাবে, তোমাদের যেন অবশ্যই একটা স্পষ্ট জ্ঞান থাকে; ঈশ্বর যেভাবেই কাজ করুন না কেন, তাঁকে সীমাবদ্ধ করার অনুমতি তিনি মানুষকে দেন না। ঈশ্বর যদি অন্তিম সময়ে কাজ না করতেন, তাহলে তাঁর প্রতি মানুষের জ্ঞান আর বর্ধিত হত না। তুমি শুধু জানতে যে ঈশ্বরকে ক্রুশবিদ্ধ করা যায়, তিনি সদোমকে ধ্বংস করতে পারেন, যীশু মৃত অবস্থা থেকে উত্থিত হতে পারেন এবং পিতরের কাছে আবির্ভূত হতে পারেন… কিন্তু তুমি কখনোই বলতে না যে ঈশ্বরের বাক্য সমস্ত কিছুই সম্পন্ন করতে পারে, মানুষকেও জয় করতে পারে। এই ধরনের জ্ঞানের কথা তুমি শুধুমাত্র ঈশ্বরের বাক্যের অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই বলতে পারো, আর তুমি যতই ঈশ্বরের বাক্যের অভিজ্ঞতা লাভ করবে, তাঁর প্রতি তোমার জ্ঞান ততই পুঙ্খানুপুঙ্খ হবে। একমাত্র তখনই তুমি নিজস্ব ধারণার মধ্যে ঈশ্বরকে আর সীমাবদ্ধ করবে না। মানুষ ঈশ্বরের কাজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই তাঁকে জানতে পারে; ঈশ্বরকে জানার অন্য কোনো সঠিক উপায় নেই। বর্তমানে, বহু মানুষই সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা এবং মহাবিপর্যয় দেখার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করে না। তুমি কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করো, না মহাবিপর্যয়ে? যখন মহাবিপর্যয় আসবে তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে, এবং ঈশ্বর যদি মহাবিপর্যয় না প্রেরণ করেন, তাহলে কি তিনি ঈশ্বর নন? তুমি সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনায় বিশ্বাস করো, নাকি স্বয়ং ঈশ্বরে? যীশুকে যখন অন্যরা উপহাস করেছিল, তখন তিনি সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শন করেননি, কিন্তু তা বলে কি তিনি ঈশ্বর ছিলেন না? তুমি সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনায় বিশ্বাস করো, নাকি ঈশ্বরের সারসত্যে? ঈশ্বর-বিশ্বাস সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ভুল! বিধানের যুগে যিহোবা অনেক কিছুই বলেছিলেন, কিন্তু আজও সেগুলির মধ্যে কয়েকটি পূর্ণ হয় নি। তা বলে তুমি কি বলতে পারো, যে যিহোবা ঈশ্বর ছিলেন না?

বর্তমানে তোমাদের সকলের কাছে স্পষ্ট থাকা উচিত যে, অন্তিম সময়ে প্রধানত “বাক্য দেহে পরিণত হল”-এর বিষয়টি ঈশ্বরের দ্বারা সাধিত হয়। পৃথিবীতে আসল কাজের মাধ্যমে তিনি মানুষকে তাঁর জানান দেন ও তাঁর সাথে তাদের যুক্ত করেন এবং তাঁর প্রকৃত কাজ প্রত্যক্ষ করতে দেন। তিনি মানুষের কাছে স্পষ্ট করেন যে, তিনি যেমন সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শনে সক্ষম, তেমনই অনেক সময়েই তা করতে পারেন না; এটা যুগের ওপরেই নির্ভর করে। এর থেকে তুমি দেখতে পারো ঈশ্বর যে সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শনে অক্ষম, এমনটা নয়, বরং কাজের ধরন এবং যুগের দাবি অনুযায়ী তিনি তাঁর কাজের পদ্ধতি পরিবর্তন করেন। কাজের বর্তমান পর্যায়ে, তিনি সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা দেখান না; যীশুর যুগে তিনি কিছু সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা দেখিয়েছিলেন, কারণ সেই যুগে তাঁর কাজ ছিল ভিন্ন। ঈশ্বর বর্তমানে সেই কাজটি করেন না, আর কিছু মানুষ ভাবে যে তিনি সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শনে অক্ষম, অথবা তারা মনে করে যদি তিনি সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শন না করেন, তবে তিনি ঈশ্বর নন। এটা কি ভ্রান্তি নয়? ঈশ্বর সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শনে সক্ষম, কিন্তু ভিন্ন যুগে কাজ করার কারণে তিনি এই ধরনের কাজ করেন না। যেহেতু এটি একটি ভিন্ন যুগ, এবং যেহেতু এটি ঈশ্বরের কাজের এক ভিন্ন পর্যায়, তাই ঈশ্বরের দ্বারা স্পষ্ট ভাবে সাধিত কাজগুলিও ভিন্ন। মানুষের ঈশ্বর-বিশ্বাস কিন্তু সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনার ওপর বিশ্বাস নয়, অলৌকিক ঘটনার ওপর বিশ্বাসও নয়, বরং এই বিশ্বাস হল নতুন যুগে তাঁর করা প্রকৃত কাজের ওপর বিশ্বাস। ঈশ্বর যেভাবে কাজ করেন তার মাধ্যমেই মানুষ তাঁকে জানতে পারে, আর মানুষের এই জ্ঞানই ঈশ্বর বিশ্বাসের জন্ম দেয়, অর্থাৎ বলা হচ্ছে যে, এই বিশ্বাস হল ঈশ্বরের কাজ ও কর্মের ওপর করা বিশ্বাস। কাজের এই পর্যায়ে, ঈশ্বর প্রধানত কথা বলেন। সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা দেখার জন্য অপেক্ষা কোরো না; কারণ সেসব কিছুই দেখতে পাবে না! এর কারণ তুমি অনুগ্রহের যুগে জন্মগ্রহণ করোনি। তেমনটা হলে, তুমি সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা দেখতে পেতে, কিন্তু অন্তিম সময়ে জন্মগ্রহণ করেছ বলে, তুমি কেবলমাত্র ঈশ্বরের বাস্তবিকতা এবং স্বাভাবিকত্বই প্রত্যক্ষ করতে পারো। অন্তিম সময়ে অতিপ্রাকৃতিক যীশুকে দেখার প্রত্যাশা কোরো না। তুমি কেবল বাস্তববাদী ঈশ্বরের অবতারকেই দর্শন করতে সক্ষম, যিনি অন্য যেকোনো সাধারণ মানুষের থেকে স্বতন্ত্র কিছু নন। প্রতিটি যুগে, ঈশ্বর স্পষ্টভাবে বিভিন্ন কার্য সাধন করেন। প্রতিটি যুগে, ঈশ্বর তাঁর কাজের একটা অংশের স্পষ্ট ব্যাখ্যা করেন এবং প্রতিটি যুগের কাজ ঈশ্বরের স্বভাব এবং তাঁর কাজের একটি অংশকে দেখায়। তিনি যে কাজটিকে স্পষ্ট করেন সেটি তিনি যে যুগে কাজ করেন তার সঙ্গে পরিবর্তিত হয়, কিন্তু সেগুলি সবই মানুষকে প্রদান করে গভীরতর ঈশ্বর-জ্ঞান, আরও সত্য ও মাটির কাছাকাছি ঈশ্বর বিশ্বাস। ঈশ্বরের সমস্ত কাজের জন্যই মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করে, কারণ তিনি কতই না বিস্ময়কর, কতই না মহান, তিনি সর্বশক্তিমান এবং অতলস্পর্শী। যদি তুমি ঈশ্বরের দ্বারা সাধিত সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শনের পারদর্শিতার জন্য, পীড়িতদের নিরাময় ও অপদেবতা বিতাড়নের ক্ষমতার জন্যই তাঁকে বিশ্বাস করো, তাহলে তোমার দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক নয়, অনেকেই তোমায় বলবে, “মন্দ আত্মাও কি এগুলি করতে পারে না?” এটা কি ঈশ্বরের প্রতিমূর্তির সাথে শয়তানের প্রতিমূর্তিকে গুলিয়ে দেয় না? বর্তমানে, ঈশ্বরের বহুবিধ কর্ম, তাঁর করা প্রভূত কর্ম এবং কথনের নানা পন্থার কারণেই মানুষ তাঁর ওপর বিশ্বাস করে। ঈশ্বর তাঁর কথন ব্যবহার করে মানুষকে জয় করে নিখুঁত করেন। ঈশ্বরের সংকেত ও বিস্ময়কর ঘটনা প্রদর্শনের ক্ষমতার কারণে নয়, বরং তাঁর অনেক কাজের কারণেই মানুষ তাঁর ওপরে বিশ্বাস করে; মানুষ কেবল তাঁর কাজ প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমেই ঈশ্বরকে জানতে পারে। শুধুমাত্র ঈশ্বরের প্রকৃত কাজগুলি জেনে, তিনি কীভাবে কাজ করেন, কোন বিচক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন, কীভাবে বাক্য বলেন এবং মানুষকে নিখুঁত করে তোলেন—শুধুমাত্র এই দিকগুলি জানার মাধ্যমেই—তিনি কী পছন্দ করেন, কী ঘৃণা করেন এবং কীভাবে মানুষের উপর কাজ করেন তা জেনে তুমি তাঁর বাস্তবিকতা ও স্বভাব অনুধাবন করতে পারবে। ঈশ্বরের পছন্দ এবং অপছন্দ উপলব্ধি করে তুমি ইতিবাচক এবং নেতিবাচকের মধ্যে পার্থক্য করতে পারো এবং ঈশ্বর সম্পর্কিত জ্ঞানের মাধ্যমেই তোমার জীবনে উন্নতি হয়। সংক্ষেপে, তোমাকে অবশ্যই ঈশ্বরের কাজ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস করার বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি সোজা রাখতে হবে।

প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।

Messenger-এর মাধ্যমে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন