পৃথিবীতে ঈশ্বরকে কীভাবে জানা যাবে
তোমরা প্রত্যেকেই ঈশ্বরের কাছ থেকে পুরস্কৃত হওয়ার এবং তাঁর অনুগ্রহ লাভের আকাঙ্ক্ষা কর; ঈশ্বরে বিশ্বাসী হওয়ার প্রারম্ভ থেকেই তোমাদের মনে এই আশা জন্মায়, কারণ প্রত্যেকেই উচ্চতর বস্তুর সাধনায় নিমগ্ন থাকে এবং কেউই অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়তে চায় না। মানুষের স্বভাব ঠিক এমনই। আর ঠিক এই কারণেই, তোমাদের মধ্যে অনেকেই অবিরাম স্বর্গস্থ ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভের জন্য তাঁর মনোরঞ্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছো, তবুও আসলে, ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের আনুগত্য এবং অকপটতা নিজেদের প্রতি তোমাদের আনুগত্য এবং অমায়িকতার তুলনায় নগণ্য। আমি কেন এই কথা বলছি? কারণ ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের আনুগত্যকে আমি একেবারেই স্বীকার করি না, তদুপরি, আমি তোমাদের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত ঈশ্বরের অস্তিত্বকেও স্বীকার করি না। যার মর্মার্থ হল, তোমরা যে ঈশ্বরের উপাসনা কর, যে অনিশ্চিত ঈশ্বরের তোমরা গুণমুগ্ধ, আসলে তার কোনো অস্তিত্বই নেই। আমি সুনির্দিষ্টভাবে এটি বলতে পারি কারণ, সত্য ঈশ্বরের থেকে তোমরা শতহস্ত দূরে রয়েছ। তোমাদের আনুগত্যের কারণ তোমাদের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত প্রতিমা; ইতিমধ্যে, আমার ব্যাপারে, যে ঈশ্বরকে তোমরা বিশাল বা ক্ষুদ্র কোনোটাই মনে করো না, তাকে তোমরা শুধু মৌখিকভাবেই স্বীকৃতি দাও। যখন আমি তোমাদের বলি তোমরা ঈশ্বরের থেকে দূরে রয়েছ, তখন আমি বোঝাতে চাই তোমরা সত্য ঈশ্বরের থেকে অনেক দূরবর্তী, যেখানে অনিশ্চিত ঈশ্বরকে হাতের নাগালেই মনে হয়। আমি যখন বলি, “মহৎ নয়”, তার প্রাসঙ্গিকতা হল, তোমরা বর্তমানে যে ঈশ্বরে বিশ্বাসী তিনি নন কোনো মহান ক্ষমতাসম্পন্ন, অত্যুচ্চ মানুষ, বরং একজন নিতান্ত সাধারণ ব্যক্তি। আবার যখন আমি বলি “ক্ষুদ্র নয়”, তার অর্থ হল যদিও এই ব্যক্তি বাতাসকে নিয়ন্ত্রিত করতে এবং বৃষ্টিকে আদেশ দিতে পারেন না, তা সত্ত্বেও তিনি আকাশ ও পৃথিবীকে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো কাজ করার জন্য ঈশ্বরের আত্মাকে আহ্বান করতে সক্ষম হন যা মানুষকে সম্পূর্ণরূপে বিমূঢ় করে রাখে। বাহ্যিকভাবে, তোমাদের সকলকে পৃথিবীতে খ্রীষ্টের প্রতি চরম অনুগত বলে মনে হলেও, আসলে তাঁর প্রতি তোমাদের বিশ্বাস বা ভালবাসা কোনোটাই নেই। এর অর্থ হল, তোমরা যাকে প্রকৃতই বিশ্বাস কর সে আসলে তোমাদের নিজস্ব অনুভূতির সেই অনিশ্চিত ঈশ্বর, এবং তোমরা যাকে প্রকৃত অর্থে ভালোবাসো সে সেই ঈশ্বর যার আকাঙ্ক্ষায় তোমরা দিবারাত্রি মগ্ন, অথচ যাকে সামনে থেকে কখনো দেখ নি। এই খ্রীষ্টের প্রতি তোমাদের আস্থা আংশিক এবং ভালোবাসা তো নেই-ই। আস্থার অর্থ হল বিশ্বাস এবং ভরসা; ভালোবাসার অর্থ হল অন্তর থেকে বিচ্ছেদহীনভাবে বন্দনা ও শ্রদ্ধা করা। তথাপি বর্তমানে খ্রীষ্টের প্রতি তোমাদের ভালোবাসা এবং বিশ্বাস এর ধারে-পাশে আসে না। যখন আস্থার প্রসঙ্গ আসে, তোমরা কেমন করে তাঁকে বিশ্বাস কর? আবার যখন ভালোবাসার প্রসঙ্গ আসে তোমরা তাঁকে কীভাবে ভালবাসো? তোমাদের তাঁর স্বভাব সম্পর্কে বিন্দুমাত্র উপলব্ধি নেই, তাঁর সারসত্য তো আরোই কম জানো, তাহলে কীভাবে তাঁর প্রতি তোমাদের আস্থা থাকবে? তাঁর প্রতি তোমাদের আস্থার বাস্তবিকতা কোথায়? কীভাবে তোমরা তাঁকে ভালোবাসো? তাঁর প্রতি তোমাদের ভালোবাসার বাস্তবিকতা কোথায়?
আজ পর্যন্ত অনেকেই আমাকে বিনা দ্বিধায় অনুসরণ করেছে। সুতরাং তোমরাও বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে অনেক ক্লান্তি সহ্য করেছ। তোমাদের প্রত্যেকের সহজাত প্রকৃতি এবং অভ্যাস সম্পর্কে আমার স্ফটিকের ন্যায় স্বচ্ছ উপলব্ধি রয়েছে; তোমাদের প্রত্যেকের সাথে যোগাযোগ করা ভীষণ শ্রমসাধ্য ছিল। দুঃখের বিষয় এই যে, আমি তোমাদের সম্পর্কে অনেক উপলব্ধি রাখলেও, তোমরা আমায় একটুও বোঝো না। এতে আশ্চর্যের কিছুই নেই যে লোকেরা বলে, বিভ্রান্তির মুহূর্তে তোমরা কারোর প্রতারণার শিকার হয়েছিলে। সত্যিই, তোমরা আমার স্বভাব সম্পর্কে কিছুই বোঝো না, আর আমার মনের তল পাওয়া তো তোমাদের পক্ষে আরোই কঠিন। আজ, আমার সম্পর্কে তোমাদের ভুল বোঝাবুঝিগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং আমার প্রতি তোমাদের বিশ্বাস একটি বিভ্রান্তিকর বিশ্বাস রূপেই রয়ে গেছে। আমার প্রতি তোমাদের বিশ্বাস আছে, এটা বলার চেয়ে এমনটা বলা আরও বেশি সুপ্রযুক্ত হবে যে তোমরা সকলেই আমার থেকে অনুগ্রহ লাভের জন্য আমায় খুশী করতে চাইছ এবং আমার চাটুকারিতা করে চলেছো। তোমাদের উদ্দেশ্য খুবই সরল: যিনি আমাকে পুরস্কৃত করতে পারবেন আমি তাঁকেই অনুসরণ করব, এবং যিনি আমাকে চরম বিপর্যয় এড়িয়ে যেতে সাহায্য করবেন আমি তাঁকেই বিশ্বাস করব, সে তিনি ঈশ্বর অথবা কোনো নির্দিষ্ট ঈশ্বর হন না কেন। এর কোনোটাই আমাকে উদ্বিগ্ন করে না। তোমাদের মধ্যে এরকম অনেক মানুষ আছে, এবং এই অবস্থাটি খুব গুরুতর। যদি একদিন, পরীক্ষা করা হয় যে তোমাদের মধ্যে কতজন খ্রীষ্টের সারসত্যের বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টির কারণে তাঁর প্রতি বিশ্বাসী, তাহলে আমার আশঙ্কা তোমাদের মধ্যে একজনের ফলাফলও আমার কাছে সন্তোষজনক মনে হবে না। তাই, তোমরা প্রত্যেকে যদি এই প্রশ্নটি একবার বিবেচনা করো, কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না: যে ঈশ্বরকে তোমরা বিশ্বাস কর তা সম্পূর্ণরূপে আমার থেকে ভিন্ন, এবং যদি তাই হয়, তাহলে তোমাদের ঈশ্বর-বিশ্বাসের সারসত্য কী? তোমরা যত বেশী তোমাদের তথাকথিত ঈশ্বরে বিশ্বাস করবে ততই তোমরা আমার কাছ থেকে বিপথগামী হবে। তাহলে এই সমস্যার সারসত্য কী? এটা নিশ্চিত যে তোমাদের মধ্যে কেউই এই ধরণের প্রশ্ন বিবেচনা কর নি, কিন্তু এর গুরুত্ব কি কখনও তোমাদের মনে এসেছে? তোমাদের এইভাবে বিশ্বাস চালিয়ে যাওয়ার পরিণতি কী হতে পারে, তা সম্পর্কে তোমরা কি কখনও চিন্তা করেছো?
আজ তোমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছ, এবং তোমরা কেউই সমস্যার সমাধানে পারদর্শী নও। এরূপ অবস্থা চলতে থাকলে একমাত্র যারা সবকিছু হারাবে তারা হলে তোমরা নিজেরা। আমি তোমাদের সমস্যাগুলি চিহ্নিত করতে সহায়তা করব, কিন্তু সেগুলির সমাধান তোমাদের হাতেই।
যারা অন্যদের প্রতি সন্দেহপ্রবণ নয় আমি তাদের নিয়ে তৃপ্ত হই, এবং যারা সহজে সত্যকে গ্রহণ করতে পারে আমি তাদের পছন্দ করি; এই দুই ধরণের মানুষের প্রতি আমি অত্যন্ত যত্নশীল, কারণ আমার চোখে তারা সৎ মানুষ। তুমি যদি প্রতারক হও, তাহলে তুমি সব মানুষ এবং বিষয়ের প্রতি সতর্ক এবং সন্দিগ্ধ হবে এবং এইভাবে আমার প্রতি তোমাদের বিশ্বাস সন্দেহের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। আমি কখনোই এই ধরণের বিশ্বাস স্বীকার করতে পারি নি। প্রকৃত বিশ্বাসের অভাবে তোমরা আরও বেশি করে প্রকৃত ভালোবাসাশূণ্য। তুমি যদি ঈশ্বরের প্রতি সন্দেহপ্রবণ হও এবং ইচ্ছেমতো তাঁর সম্পর্কে অনুমান করতে প্রবৃত্ত হও, তাহলে সব মানুষের মধ্যে প্রশ্নাতীতভাবে তুমিই সর্বাধিক প্রতারক। তুমি অনুমান কর ঈশ্বর কখনও মানুষের মতো হতে পারেন কিনা: ক্ষমার অযোগ্য পাপী, ক্ষুদ্রমনা, ন্যায় ও যুক্তি বর্জিত, ন্যায়বিচারের বোধের অভাবযুক্ত, বিদ্বেষপূর্ণ কৌশলযুক্ত, বিশ্বাসঘাতক ও ধূর্ত, মন্দ ও অন্ধকার দ্বারা তৃপ্ত, ইত্যাদি। ঈশ্বর সম্পর্কে মানুষের ন্যূনতম জ্ঞানের অভাবের কারণেই তাদের এমন চিন্তাধারা নয় তো? এই ধরণের বিশ্বাস পাপের থেকে কোনো অংশে কম নয়! এমনও কিছু মানুষ আছে যারা বিশ্বাস করে যে মূলত তারাই আমাকে তৃপ্ত করে, যারা আমার তোষামোদ ও পদলেহন করে, এবং যাদের এই ধরণের দক্ষতার অভাব রয়েছে তারা ঈশ্বরের গৃহে অবাঞ্ছিত হবে এবং সেইখানে নিজের স্থান হারাবে। এত বছর পরেও এটাই কি তোমাদের একমাত্র লব্ধ জ্ঞান? এটাই কি তোমরা অর্জন করেছো? এবং আমার সম্পর্কে তোমাদের জ্ঞান শুধু এই ভুল বোঝাবুঝিতে থেমে থাকে না; ততোধিক খারাপ বিষয় হল ঈশ্বরের আত্মার বিরুদ্ধে তোমাদের নিন্দা ও স্বর্গের বিষয়ে কুৎসা প্রচার। সেই কারণেই আমি বলি যে তোমাদের এইরূপ বিশ্বাস তোমাদেরকে আমার কাছ থেকে কেবল আরও বিপথে চালিত করবে এবং তোমরা আমার আরও বিরোধী হয়ে উঠবে। বহু বছরের কাজের মধ্য দিয়ে তোমরা অনেক সত্য দেখেছ, কিন্তু তোমরা কি জানো আমার কানে কি এসেছে? তোমাদের মধ্যে কতজন সত্য গ্রহণে ইচ্ছুক? তোমরা সকলেই বিশ্বাস করো যে তোমরা সত্যের মূল্য চুকাতে প্রস্তুত, কিন্তু তোমাদের মধ্যে কতজন প্রকৃত অর্থে সত্যের জন্য কষ্ট সহ্য করেছো? তোমাদের হৃদয়ে অন্যায়পরায়ণতা ব্যতীত আর কিছুই নেই, যা তোমাদের ভাবতে বাধ্য করে যে প্রত্যেকে, সে যেই হোক না কেন, সমানভাবে প্রতারণাপ্রবণ এবং কুটিল—এতটাই যে তোমরা এও বিশ্বাস কর যে ঈশ্বরের অবতারও একজন সাধারণ মানুষের মতো দয়ালু হৃদয় অথবা পরোপকারী ভালোবাসা বর্জিত হতে পারেন। তদতিরিক্ত, তোমরা বিশ্বাস কর যে একটি মহৎ চরিত্র এবং একটি করুণাময়, পরোপকারী প্রকৃতি কেবলমাত্র স্বর্গস্থ ঈশ্বরের মধ্যেই বিদ্যমান। তোমরা বিশ্বাস কর যে, এইরূপ সাধুব্যক্তির কোনো অস্তিত্ব নেই, এই পৃথিবীতে কেবল অন্ধকার এবং মন্দেরই রাজত্ব, যেখানে ঈশ্বর হলেন এমন কিছু যাকে বিশ্বাস করে মানুষ ভালো এবং সুন্দরের প্রতি তাদের আকাঙ্ক্ষাকে অর্পণ করে, তাদের দ্বারা উদ্ভাবিত এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব। তোমাদের ধারণা, স্বর্গস্থ ঈশ্বর অত্যন্ত ঋজু, ধার্মিক এবং মহান, উপাসনা ও শ্রদ্ধার যোগ্য; যেখানে পৃথিবীর এই ঈশ্বর স্বর্গস্থ ঈশ্বরের একটি বিকল্প ও উপকরণ মাত্র। তোমরা বিশ্বাস কর এই ঈশ্বর স্বর্গের ঈশ্বরের সমতুল হতে পারেন না, একই নিঃশ্বাসে তাঁর সাথে নাম নেওয়া তো দূর অস্ত। যখন ঈশ্বরের মহত্ত্ব এবং সম্মানের প্রসঙ্গ আসে, সেগুলি স্বর্গস্থ ঈশ্বরের মহিমার অন্তর্গতরূপে প্রতীত হয়, কিন্তু যখন মনুষ্যোচিত প্রকৃতি এবং ভ্রষ্টাচারের প্রসঙ্গ আসে, সেগুলি পৃথিবীর ঈশ্বরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্যরূপে গণ্য হয়। স্বর্গের ঈশ্বর চিরকালীন সুউচ্চ, যেখানে পৃথিবীর ঈশ্বর সর্বদা নগণ্য, দুর্বল এবং অদক্ষ। স্বর্গের ঈশ্বরের কাছে আবেগের কোনো স্থান নেই, আছে শুধু ন্যায়পরায়ণতা, যেখানে পৃথিবীর ঈশ্বরের কোনো সততা বা যুক্তি নেই, কেবলমাত্র স্বার্থপর অভিপ্রায় আছে। স্বর্গের ঈশ্বরের ন্যূনতম কুটিলতা নেই এবং তিনি চিরকাল বিশ্বস্ত, যেখানে পৃথিবীর ঈশ্বরের সর্বদা একটি অসৎ দিক রয়েছে। স্বর্গের ঈশ্বর মানুষকে অত্যন্ত ভালোবাসেন, যেখানে পৃথিবীর ঈশ্বর মানুষের প্রতি অপর্যাপ্ত যত্ন প্রদর্শন করেন, এমনকি তাকে সম্পূর্ণরূপে অবহেলাও করেন। তোমাদের হৃদয়ে এই ভ্রান্ত ধারণা দীর্ঘকাল যাবত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা সঞ্চারিত হতে পারে। তোমরা খ্রীষ্টের সমস্ত কর্ম অধার্মিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা কর এবং তাঁর সব কাজ, এবং তাঁর পরিচয় ও সারসত্য দুষ্টের দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন কর। তোমরা একটি মারাত্মক ভুল করেছো, যে ভুল তোমাদের পূর্ববর্তীরাও কখনও করে নি। অর্থাৎ তোমরা কেবলমাত্র মুকুট-পরিহিত স্বর্গের সুউচ্চ ঈশ্বরের সেবা কর, এবং কখনোই সেই ঈশ্বরের প্রতি মনোযোগী হও না, যাকে তোমরা এতটাই তুচ্ছ মনে করো যে তিনি যেন তোমাদের কাছে অদৃশ্য। এটা কি তোমাদের পাপ নয়? এটা কি ঈশ্বরের স্বভাবের বিরুদ্ধে তোমাদের অপরাধের একটি আদর্শ উদাহরণ নয়? তোমরা স্বর্গের ঈশ্বরের উপাসনা কর। তোমরা সুউচ্চ প্রতিমূর্তির বন্দনা কর এবং যারা তাদের বাগ্মিতার জন্য বিশিষ্ট তাদের সম্মান কর। তুমি সানন্দে সেই ঈশ্বরের আদেশ মেনে চল যিনি তোমাকে ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ করে তুলতে পারেন এবং সেই ঈশ্বরের কামনা কর যিনি তোমার সমস্ত বাসনা পূরণ করেন। তোমরা একমাত্র যার উপাসনা কর না, তিনি হলেন এই ঈশ্বর যিনি সুউচ্চ নন; একমাত্র যা তুমি ঘৃণা করো তা হচ্ছে এই ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ, যে ঈশ্বরের সম্বন্ধে কেউ উচ্চ ধারণা পোষণ করতে পারে না। একমাত্র যে কাজ তুমি করতে অনিচ্ছুক, তা হল সেই ঈশ্বরের সেবা যিনি তোমাকে কখনোই একটি কপর্দকও দেন নি, এবং একমাত্র যিনি তোমাকে তাঁর জন্য আকুল করতে অক্ষম তিনি হলেন এই অনাকর্ষী ঈশ্বর। এই ঈশ্বর তোমার দিগন্তকে প্রসারিত করাতে, যেন তুমি কোনো ধন-সম্পদ খুঁজে পেয়েছো এমন অনুভব করাতে পারেন না, তোমার ইচ্ছাপূরণ তো দূর অস্ত। তাহলে কেন তুমি তাঁকে অনুসরণ কর? তুমি কি নিজেকে কখনও এইভাবে প্রশ্ন করে দেখেছো? তুমি যা কর তা যে কেবল এই খ্রীষ্টকে ক্ষুব্ধ করে তা-ই নয়; আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে তা স্বর্গের ঈশ্বরকে ক্ষুব্ধ করে। আমি মনে করি, এটা ঈশ্বরের প্রতি তোমার বিশ্বাসের উদ্দেশ্য নয়!
তোমরা কামনা কর ঈশ্বর তোমাদের নিয়ে পুলকিত হবেন, তথাপি তোমরা ঈশ্বর থেকে অনেক দূরে রয়েছো। এখানে বিষয়টা কী? তোমরা শুধু তাঁর বাক্যকেই গ্রহণ করো, তাঁর পরিচালনা বা কর্তনকে নয়, আর তাঁর প্রতিটা ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে, তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে তোমরা তো আরো কম সক্ষম। তাহলে বিষয়টা এখানে কী? চূড়ান্ত বিশ্লেষণে, তোমাদের বিশ্বাস আসলে শূন্যগর্ভ ডিমের খোলার মতো, যা কখনই কোনো মুরগিছানা উৎপাদন করতে পারবে না। কারণ তোমাদের বিশ্বাস তোমাদেরকে সত্যের নিকটবর্তী করে নি অথবা তোমাদের জীবন প্রদান করে নি, কিন্তু এর পরিবর্তে তোমাদের ভরণপোষণ এবং আশার এক অলীক অনুভূতি দিয়েছে। এই ভরণপোষণ এবং আশার অনুভূতিই হল তোমাদের ঈশ্বরে বিশ্বাস করার লক্ষ্য, সত্য এবং জীবন নয়। এইজন্যই আমি বলি যে ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের বিশ্বাসের ধারা দাসত্ব ও নির্লজ্জতার মাধ্যমে অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা ব্যতীত আর কিছুই ছিল না, এবং এটিকে কোনোভাবেই প্রকৃত বিশ্বাস রূপে গণ্য করা যায় না। এইরূপ বিশ্বাসের থেকে কীভাবে মুরগিছানা জন্ম নিতে পারে? অন্যভাবে বলতে গেলে, এই ধরনের বিশ্বাস কী সাধন করতে পারে? ঈশ্বরের প্রতি তোমাদের বিশ্বাসের উদ্দেশ্য হল নিজেদের লক্ষ্য পূরণের জন্য তাঁকে ব্যবহার করা। এটা কি ঈশ্বরের স্বভাবের বিরুদ্ধে তোমার অপরাধের আরও একটি উদাহরণ নয়? তোমরা স্বর্গে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস কর এবং পৃথিবীতে তাঁর অস্তিত্বকে অস্বীকার কর, তথাপি আমি তোমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝে উঠতে পারি না; আমি কেবল সেইসব মানুষের প্রশংসা করি যাদের পা মাটিতে থাকে এবং যারা পৃথিবীতে ঈশ্বরের সেবা করে, কিন্তু কখনই তাদের প্রশংসা করি না যারা কখনই পৃথিবীতে থাকা খ্রীষ্টকে স্বীকার করে না। স্বর্গের ঈশ্বরের প্রতি এই ধরনের মানুষেরা যতই অনুগত হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত তারা আমার হাত, যা দুষ্টদের দণ্ড দেয়, তার থেকে রেহাই পাবে না। এইসব মানুষেরা দুষ্ট; এরা মন্দ লোক যারা ঈশ্বরের বিরোধিতা করে এবং যারা কখনই সানন্দে খ্রীষ্টকে মান্যতা দেয় নি। অবশ্যই সেইসব লোকেরাও এই মানুষদের অন্তর্ভুক্ত যারা খ্রীষ্টকে জানে না, এবং তদুপরি, যারা খ্রীষ্টকে স্বীকার করে না। তুমি কি বিশ্বাস কর যে যতক্ষণ তুমি স্বর্গের ঈশ্বরের প্রতি অনুগত থাকবে, ততক্ষণ খ্রীষ্টের প্রতি নিজের খুশি মতো আচরণ করতে পার? ভুল! খ্রীষ্ট সম্পর্কে তোমার অজ্ঞতা হল স্বর্গের ঈশ্বর সম্পর্কে অজ্ঞতার নামান্তর। স্বর্গের ঈশ্বরের প্রতি তুমি যতই অনুগত হও না কেন এটি নিছক ফাঁকা বুলি এবং ছলনা, কারণ পৃথিবীর ঈশ্বর শুধু যে মানুষের সত্য গ্রহণ এবং গভীরতর জ্ঞানলাভের ক্ষেত্রে সহায়ক তা-ই নয়, বরং তার চেয়েও বেশি মানুষকে তিরস্কার করতে এবং পরবর্তীতে দুষ্টদের দণ্ড দেওয়ার জন্য তথ্য আহরণেও সহায়ক। তুমি কি এর উপকারী এবং ক্ষতিকর পরিণাম বুঝতে পেরেছো? তোমার কি এরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছে? আমি চাই তোমরা সত্বর একদিন এই সত্য অনুধাবন করো: ঈশ্বরকে জানতে হলে তোমাদের অবশ্যই কেবল স্বর্গের ঈশ্বরকেই নয়, বরং আরও গুরুত্বসহকারে পৃথিবীর ঈশ্বরকেও জানতে হবে। তোমাদের অগ্রাধিকারগুলির ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত হয়ো না অথবা গৌণ কারণকে কখনও মূল কারণের উপরে স্থান দিয়ো না। কেবলমাত্র এইভাবেই তুমি প্রকৃত অর্থে ঈশ্বরের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে, ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারবে এবং তোমার হৃদয়কে তাঁর নিকটবর্তী করতে পারবে। যদি তুমি বহু বছর ধরে বিশ্বাসী হয়ে থাকো এবং দীর্ঘকাল যাবৎ আমার সঙ্গে সংযুক্ত থাকো, তথাপি আমার থেকে দূরবর্তী থাকো, তাহলে আমাকে বলতে হয়, তুমি নিশ্চয় প্রায়শই ঈশ্বরের স্বভাবকে ক্ষুব্ধ কর, এবং তোমার পরিণতি অনুমান করা খুব কঠিন হবে। যদি দেখা যায় আমার সাথে বহু বছরের সাহচর্য তোমায় কেবল যে মানবতা এবং সত্যের অধিকারী ব্যক্তিতে পরিবর্তিত করতে ব্যর্থ হয়েছে তা-ই নয়, বরং তদুপরি তোমার মন্দ দিকগুলিকে তোমার স্বভাবের অঙ্গীভূত করে দিয়েছে, এবং তুমি কেবল পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ উদ্ধতই হও নি, বরং আমার বিষয়ে তোমার ভুল বোঝাবুঝিও বহুগুণ বেড়েছে, যার ফলে তুমি আমাকে তোমার ছোট জুড়িদার রূপে বিবেচনা করেছো, তাহলে আমি বলি যে তোমার রোগ আর কেবল উপরিগত নেই, বরং তোমার অস্থির গভীরে প্রবেশ করেছে। তোমার জন্য যা বাকি রয়েছে তা হল তোমার শেষকৃত্যের ব্যবস্থার জন্য অপেক্ষা করা। তোমার তখন তোমার ঈশ্বর হওয়ার জন্য আমাকে মিনতি করার প্রয়োজন নেই, কারণ তুমি মৃত্যুদণ্ডের উপযুক্ত এক পাপ করেছো, ক্ষমার অযোগ্য পাপ। এমনকি আমি যদি তোমার প্রতি করুণাও দেখাই, স্বর্গের ঈশ্বর কিন্তু তোমার জীবন নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকবেন, কারণ ঈশ্বরের স্বভাবের বিরুদ্ধে তোমার অপরাধ কোনো সাধারণ সমস্যা নয়, বরং এটি একটি গুরুতর সমস্যা। যখন সেই সময় আসবে, তোমাকে আগে থেকে কিছু না বলার জন্য আমাকে দোষারোপ কোরো না। পুরো বিষয়টা ঘুরে-ফিরে যা দাঁড়ায় তা হলো: যখন তুমি একজন সাধারণ ব্যক্তি হিসাবে পৃথিবীর ঈশ্বর খ্রীষ্টের সাহচর্য কর, অর্থাৎ তুমি বিশ্বাস কর যে ঈশ্বর একজন সাধারণ ব্যক্তি ব্যতীত আর কিছুই নন, তখনই তুমি ধ্বংস হবে। তোমাদের সবার প্রতি এটাই আমার একমাত্র সাবধানবাণী।
প্রতিদিন আমাদের কাছে 24 ঘণ্টা বা 1440 মিনিট সময় থাকে। আপনি কি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য তাঁর বাক্য শিখতে 10 মিনিট সময় দিতে ইচ্ছুক? শিখতে আমাদের ফেলোশিপে যোগ দিন। কোন ফি লাগবে না।